ম্যাডাম
পর্ব(০২)
#Writer_Nandita_priti
চুপচাপ বসে আছি নিজের রুমে।মা একটু পর পর এসে বলছে অফিসের টাইম হয়ে গেছে।তবে আমি পণ করেছি।আজকে থেকে আর আমি জীবনেও আর ওই অফিসে চৌকাঠ মারাবো না।এই বদ মহিলার কাজ আমাকে চরম বিরক্তিতে ফেলছে।
কিরে দিগন্ত অফিসের টাইম পেরিয়ে গেছে।তুই যাবি কবে?শরীর টরীল ঠিক আছেতো তোর?
আমি মায়ের মুখের উপর বললাম
মা আমি আর ওই অফিসে যাবো না।
মা অবাক হয়ে বলল
যাবি না মানে?
মানে আমি কাজটা ছেড়ে দিয়েছি।
কি বলছিস দিগন্ত?এত ভালো একটা চাকরি ছেড়ে দিয়েছিস?
হ্যাঁ।
কিন্তু কেন?
আমি চুপ হয়ে গেলাম।কারণ ওই মহিলা গতকাল যা করছে তা বলার মতো না।প্রথমদিন যে ব্যবহার করছে তারচেয়েও আরো খারাপ ব্যবহার করছে।অধরে অধর ছুইয়েছে।ছিহ ছিহ।আজকাল ছেলেদের নিরাপত্তা কোথায়?ওই মেয়ের মুখ দর্শন করাও পাপ।এত স্পর্ধা মেয়ের।
কিরে দিগন্ত বল?কেন চাকরিটা ছেড়েছিস?
মা আমার ওই চাকরিটা ভালো লাগে না।তাই করবো না।দরকার পড়লে আমি ভিক্ষে করে খাবো।ওই অফিসে আমি আর পা রাখবো না।সসম্মানে ভিক্ষা করাও ভালো।
কিন্তু প্রথম কথা দিগন্ত ভিক্ষা সসম্মানের পেশা নয়।দ্বিতীয় কথা কে তোকো অসম্মান করলো?
পড়লাম মহা ঝামেলায়।মাকেতো আর এসব কথা বলা যায় না।আমি ইতস্তত করে বললাম
মা তোমার ছেলেকে ওই অফিসের এমডি অসম্মানিত করেছে।সবার আগেতো সম্মান তাই না?আমার সম্মান আছে বলেই আমি আর ওই অফিসে যাবো না।
কাজ ঠিকঠাক না করলেতো অসম্মান করবেই।
মা মা আমি কাজে ফাঁকি দেই না তুমি জানো?এসব কিছু নয়।
তাহলে কিসব দিগন্ত?
উফ মা তুমি যাওতো।
দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া শেষে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম।ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।কলিংবেল চাপতে গেলে লক্ষ্য করলাম।দরজা খোলা।আজবতো।এমনটাতো কখনো হয় নি।তাহলে আজ খোলা কেন?আমি মা মা ডেকে ড্রয়িংরুম পেরিয়ে কিচেনে এলাম।কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম
মা দরজা খোলা কেন রেখেছো?জানো না শহরে চোরটোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে?
মা ফিরতে আমি টাসকি খেলাম।একি মা কোথায়?এতো অফিসের সেই ম্যাডাম। ম্যাডাম খয়েরী রঙের একটা শাড়ি পড়েছেন।আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছেন।আমার মনে হচ্ছে এটা সত্য নয়।তাই দু হাত দিয়ে চোখটা ভালো করে ঘষলাম। এবার তাকিয়ে দেখলাম মা কিচেন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।মা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
কিরে দিগন্ত।কি হয়েছে?
আমি নিজে নিজেকে গালি দিলাম।কিসব উদ্ভট চিন্তা ভাবনা।ওই ম্যাডামকে নিয়ে ভাবার কুফল। ডাক্তার বলেছিল আমাকে চশমা নিতে।আমার চোখের পাওয়ার কম তাই।হয়তো চশমা না নেওয়ার জন্য চোখের সমস্যা হচ্ছে।কি দেখতে কি দেখছি।
রাতের ডিনারে বসে আবার একি কান্ড। আমি মা ডিনারে বসেছি।ওমা দেখি ম্যাডামও আমাদের সঙ্গে বসেছেন।আমার সামনাসামনি চেয়ারটায়।ম্যাডাম আপনমনে খাচ্ছেন।আর আমি তাকালেই চোখ মারছেন।বিরক্ত লাগছে আমার কিসব হচ্ছে?কালকে গিয়েই চশমা নিতে হবে।
কিরে দিগন্ত ওই চেয়ারের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস?
না মা কোথায়?কিছুনাতো।
আমি আবার আড়চোখে তাকালাম ম্যাডামের চেয়ারটার দিকে।না চেয়ারটায় উনি আর নেই।আমি আশপাশে তাকালাম।না কোথাও নেই।
সকাল হতেই ছুটলাম ডাক্তারের কাছে।ডাক্তার আমার চোখ চেক করে চশমা দিলো।আমি চশমার দোকানে গিয়ে চশমা কিনলাম।বাসায় ফিরে আসলাম।বাসায় এসে আয়নায় বারবার নিজেকে দেখছি।চশমা চোখে পড়ার বিদুঘুটে লাগছে।অবশ্য ওই ম্যাডামকে দেখার চেয়ে বিদুঘটে লাগাই ভালো।
দিগন্ত তুই চশমা নিলে হঠাৎ?ডাক্তার অনেকদিন আগে বলেছিলো চশমা নিতে আজ আচমকা নিলি যে?
পেছন ফিরে দেখি মা আমার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি কি বলবো মাকে?আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
না মা আসলে চোখে সমস্যা করছিলোতো তাই।
ওহ।
মা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণপর অফিসের টেলিফোন থেকে আমার ফোনে কল এলো।আমি সাত পাঁচ না ভেবে কল ধরতে ওপাশ থেকে ম্যাডামের আওয়াজ শুনলাম।ম্যাডাম বলছেন
এই তুমি অফিসে আসছো না কেন?
আমি ম্যাডামের কথাটা শুনামাত্র নেটওয়ার্ক সমস্যা করছে এমনভাব করে বললাম
হ্যালো হ্যালো কে বলছেন?শুনতে পাচ্ছি না আমি।হ্যালো হ্যালো…
দিলাম ফোনটা কেটে।প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে থাকালাম।মুহূর্তে আমার প্রশান্তি উড়ে আকাশে চলে গেল।এটা কে?বাইরে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়চেন।আমি তাড়াতাড়ি বিছানার উপর থেকে চশমাটা চোখে দিয়ে আবার তাকালাম।না এখনতো আর বাইরে কেউ নেই।বুঝেছি এই চশমাটা খুলা যাবে না।যতই যা হউক।
——
চলবে**