#মেঘের_পালক
পর্ব-৩
অরিন প্রশ্ন করল, “জি আমি অরিন। আপনি কে?”
তার প্রশ্নের জবাবে ফোনের ওপাশের লোকটা বলল, “চিনতে পারছেন না?”
অরিন কাঁপা গলায় বলল, “প্লাবন?”
ওপাশ থেকে খিকখিক হাসির শব্দ ভেসে এলো। সেই হাসি থামতে একটু সময়ও লাগল। ফিচেল গলায় ছেলেটা বলল, “প্লাবন না আমি সাইক্লোন!”
চিনে ফেলল অরিন। চেঁচিয়ে উঠে বলল, “অর্নব! ফাজিল কোথাকার!”
“হি হি হি। তুই তো পুরাই গেছিস!”
“ফোন করছিস কেন? এটা কার নাম্বার?”
“আমারই, নতুন নিয়েছি। তুই হঠাৎ চলে গেলি, আর আমিও সময় পাইলাম এতক্ষণে। তাই ফোন দিলাম।”
“ওহ।”
“পার্টি শেষে সবার জন্য কিছু না কিছু গিফট ছিল। তুই তো পেলি না। মেয়েদের জন্য দুইটা অপশন ছিল, শাড়ি নয়তো চকোলেট। সব এরকম র্যাপিং করা ছিল, যার ভাগ্যে যেটা পড়ছে। তোর জন্য খোলা অপশন৷ কোনটা চাই বল। কালকে নিয়া যাব।”
অরিন কিছু না ভেবেই বলল, “শাড়ি।”
“কী মামা! তোমারে তো জোর করেও শাড়ি পরানো যায় না। সবাই পরে, তুমি কখনো পরো না। এখন যে সেধে শাড়ি চাইতেছ?”
“তোর জিনিস, তুই দিলে দিবি না দিলে নাই। এত কৈফিয়ত দিতে পারব না। রাখি।”
“আরেহ রাগ করিস কেন। এমনি বললাম। শাড়িই আনব।”
“আচ্ছা।”
“প্লাবন ফোন দিতে পারে। আমার কাছ থেকে নাম্বার নিলো।”
অরিনের ইচ্ছে হলো প্লাবনের কথা জিজ্ঞেস করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত করল না৷ অর্নবের ঠোঁটকাটা। কী বলবে ঠিক নেই। কিন্তু অর্নব যে সমস্যা তৈরি করে দিল তার সমাধান কী? সে তো এখন ঘুমাতেও পারবে না। প্লাবনের ফোনের অপেক্ষা করতে থাকবে। কখন ফোন করবে বা আদৌ করবে কি না কে জানে! কী অসহ্য যন্ত্রণা!
★
অরিনকে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না। প্লাবনের ফোন এলো রাত সাড়ে বারোটায়। সে সুন্দর করে বলল, “হ্যালো, আমি প্লাবন। আপনি কি অরিন বলছেন?”
অরিনের গলা কাঁপতে শুরু করল। কেমন যেন অবশ অবশ অনুভূতি! কী বলবে? কেমন করে বলবে? লজ্জায় এদিকে মাথা নুইয়ে আসছে।
প্লাবন গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, “হ্যালো…শুনছেন?”
“জি, শুনছি।”
“কেমন আছেন?”
“ভালো। আপনি?”
প্লাবন একটু গম্ভীর গলায় বলল, “মোটেও ভালো নেই। শুনুন, আপনি কি আমার সাথে দেখা করবেন?”
অরিনের ইচ্ছে হলো আজকের ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে তারপর কথা এগোনোর। সে বলল, “গত সন্ধ্যায় যা হলো তারপর…আসলে…আমি কিছু বুঝতে পারছি না!
প্লাবন একটু হেসে বলল, ” আমিও না। বাদ দিন। চলুন দেখা করি। ধরুন আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড, মোটামুটি অপরিচিত। আমরা শুধু পরিচিত হব, কথাবার্তা বলব। ঠিক আছে?”
“কিন্তু কেন?”
“সন্ধ্যার ঘটনাটার একটা এসপার ওসপার করার জন্য। যা হয়েছে ঝোঁকের বশে, কিন্তু সিরিয়াসলি ভাবতে তো হবে। নয়তো ঝুলে থাকবে বিষয়টা।”
“জি। কিন্তু আপনি আমাকে হঠাৎ প্রপোজ করলেন কেন? প্রথমবার দেখেই এভাবে…”
“আপনিও তো সেরকমই উত্তর দিলেন। একই প্রশ্ন আমিও করতে পারি। উত্তর আছে আপনার কাছে?”
অরিন উত্তর দিতে পারল না৷ প্লাবন বলল, “তাহলে সকালে দেখা হচ্ছে। সাড়ে দশটার দিকে আমি থাকব অরণ্যকন্যা উদ্যানে। পৌঁছে যাবেন যেন।”
“ঠিক আছে।”
রাতে অরিনের এক ফোটাও ঘুম হলো না। মাছের মতো খোলা চোখে তাকিয়ে রইল সিলিং এর দিকে। পেটের ভেতর কী একটা যেন পাক খেয়ে আসছে। জীবনের প্রথমবার সে ডেট করতে যাবে! তাও তার ক্রাশের সাথে! কী বলবে তাকে? কিভাবে কথা বলবে? উফ! ভাবতেই শরীর শিরশির করছে!
সকালে অরিন পড়ল আরেক সমস্যায়। কোনো জামাই ভালো লাগছে না৷ কোনটা পরবে সেটা ঠিক করতে একেবারে কালঘাম ছুটে যাওয়ার অবস্থা! এত জামা, অথচ পরার মতো কিছু নেই!
শেষ পর্যন্ত লটারি করে ঠিক করা হলো। তাও প্রথম দফায় লটারিতে যেটা উঠল সেটা ওর মোটেও যুতসই মনে হলো না। আবার চেষ্টা করল। এভাবে করতে করতে শেষে মেরুন রঙের একটা জামা তার চলনসই মনে হলো।
এরপর সাজতে গিয়ে আরও বিপত্তি। সাজ কয়েকবার ধোঁয়া হলো, আবার সাজা হলো। এসব করতে করতে অরিন দেখল ঘড়িতে বাজে পৌনে দশটা। অরণ্যকন্যায় পৌঁছুতে তাদের বাড়ি থেকে সময় লাগে এক ঘন্টা। এদিকে সময় আছে পয়তাল্লিশ মিনিট। সে এক চোখে কাজল নিয়েই সামনে পাওয়া একটা লিপস্টিক তুলে ব্যাগে ভরে দৌড় দিল। লেট করলে ছেলেটা যদি চলে যায়?
যেতে যেতেই লিপস্টিক লাগিয়ে নিল অরিন। রঙটা কেমন যেন কটকটে লাগছে। থাকুক, তার জামাও তো গাঢ়।
অরণ্যকন্যায় অরিন পৌঁছুল এগারোটায়। গেট দিয়ে ঢুকে সোজা হেঁটে ইটের পায়েচলা পথের মাথায় লেকের ধারে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াল। এখানেই দাঁড়াবার কথা ছিল। এবার চারদিক ঘুরে তাকিয়ে প্লাবনকে খুঁজল। কিন্তু তার টিকিটিরও দেখা মিলল না৷ একটু আশ্বস্ত হলো অরিন। যাক, অন্তত তার দিক থেকে দেরি হয়নি৷ উল্টে সময় সুযোগমতো প্লাবনকে সময়-জ্ঞান নিয়ে একটা লেকচার দেয়া যাবে। কেমন যেন পৈশাচিক আনন্দ হলো কথাটা ভেবে।
তার আনন্দ অবশ্য বেশিক্ষণ টিকল না। প্রচন্ড গরম পড়েছে আজ। তার মেকআপের স্তর ঘেমে গলে পানি হয়ে পড়ল খুব অল্প সময়ের মধ্যে। এদিকে প্লাবনের দেখা নেই। ঘড়ির কাটা এগারোটা ছাড়িয়ে সাড়ে এগারোটার পথ ধরেছে।
অরিন ফোন করল কয়েকবার। প্লাবন ফোন ধরল না। অরিন এবার পায়চারি শুরু করল। একবার গেট পর্যন্ত যায়, আবার লেকের কাছে ফিরে আসে। এভাবে কেটে গেল আরও অনেকক্ষণ। অরিন সাড়ে বারোটা পর্যন্ত থেকেও প্লাবনকে পেল না৷ এবার তার ভীষণ কান্না পেল। দাঁতে দাঁত চেপে হনহন করে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো সে৷
চোখে পানি এসে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। সামনে সব অন্ধকার দেখতে থাকল অরিন। রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ একটা ধাক্কায় ছিটকে পড়ল সে। হাতটা গিয়ে লাগল কাটাতারের বেড়ায়। কেটে গেল অনেকখানি। বুঝতে পারল একটা সাইকেলের সাথে সংঘর্ষ হয়েছে।
(চলবে)
সুমাইয়া আমান নিতু
* স্বপ্নছায়ার বালুকাবেলায় কিছুদিন পর কন্টিনিউ করব৷ আপাতত এইটা পড়ুন। *