মেঘের_আড়ালে_মেঘ”৩৪”
#জেরিন_আক্তার_নিপা

ইরফান মেহরীনের পেছনে যাবে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠল। বাবা ফোন দিয়েছে।

“হ্যাঁ বাবা বলো।”

“মেহরীনকে পেয়েছিস ইরফান। আয়াম ঘুম থেকে উঠেই কান্না করে যাচ্ছে। মাম্মীকে ছাড়া সে কিছুই করবে না।”

“পেয়েছি। কিন্তু তোমার বউমা তো আমাকে চিনতে পারছে না বাবা।”

“হ্যাঁ?”

“হুম। আমাকে বলছে, আপনি কে? আপনাকে কি আমি চিনি।”

“বলবে না! তোকে তো মাঝ রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কপাল বরাবর গুলি করে মারা উচিত। মেয়েটাকে কম কষ্ট দিসনি তুই। এবার বোঝ মজা। আমার বউমাকে ছাড়া বাড়ি ফিরলে আজ বাড়িতে তোর জায়গা হবে না বলে দিলাম। যেভাবে পারিস মেহরীনকে নিয়ে ফিরবি।”

“আচ্ছা তাহলে রাখো। তোমার বউমা চলে যাচ্ছে।”

“হুম।”

ফোন পকেটে রেখে ইরফান মেহরীনের পেছনে দৌড়ে গেল। মেহরীনের পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে বলল,

“তুমি কি সত্যিই আমাকে চিনতে পারছো না? মানছি আমার ভুল হয়েছে। তাই বলে এভাবে ভুলে যাবে আমাকে? আচ্ছা আমাকে নাহয় মনে নেই। তোমার ছেলে আয়ামের কথাও কি মনে নেই? আয়াম তোমাকে ছাড়া কেমন আছে একবার জানতে চেয়েছ। তুমি তো জানো ও তোমাকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারে না। সেখানে আজ তিন দিন হয়ে গেল তুমি বাড়ি নেই।”

আয়ামের কথা মনে হতেই মেহরীনের বুক ফেটে কান্না আসছে। কিন্তু তাই বলে সে আয়ামের জন্য ও বাড়িতে ফিরে যাবে না। ইরফান তার সাথে যা করেছ তা মেহরীন কখনও ভুলতে পারবে না। ইরফানের ভুলের কোন ক্ষমা নেই। সে মেহরীনের বিশ্বাস ভেঙেছে। তার আত্মসম্মানে আঘাত করেছে। তাকে বাজারের পন্য বানিয়ে দিয়েছে। দরদাম করে তাকে কেনাবেচা করেছে। মেহরীন মনকে শক্ত করল। ইরফানের কোন কথায় যেন তার উপর প্রভাব পড়ছে না। সে একই ভাবে হেঁটে যাচ্ছে।

“মেহরীন আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও। আমি তোমাকে অভিযোগ করার কোন সুযোগ দেব না। আমার সব ভুল শুধরে নেব। কথা দিচ্ছি।”

মেহরীন হেঁটেই যাচ্ছে। ইরফান এসে ওর হাত ধরে।

“আমার কথাটা তো শোনো।”

“হাত ছাড়ুন।”

“না।”

“ছাড়ুন বলছি।”

“আগে তুমি আমাকে ক্ষমা করো।”

“দেখুন আমি কিন্তু চিৎকার করে মানুষ জড়ো করব। আর সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।”

“করো চিৎকার। আমিও দেখি কে আমার কী করতে পারে। আইনগত ভাবে তুমি এখনও আমার বউ। আমাদের কিন্তু ডিভোর্স হয়নি। তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি চাইলে তোমাকে জোর করে নিয়ে যেতে পারি।”

মেহরীন তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

“বউ! হাহ্, যে সম্পর্কের শুরু মিথ্যে দিয়ে হয়। সেই সম্পর্কের কোন দাম নেই আমার কাছে।”

“তোমার কাছে না থাকলেও আমার কাছে আছে।”

“শুধু শুধু আপনি সময় নষ্ট করছেন। আমি আপনার সাথে ফিরব না। নিজের পথ আমি দেখে নিয়েছি। এখন আমার আর কোন পিছুটান নেই। সব সম্পর্কের মায়া থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছি আমি। আমাকে ছাড়া থাকতে কিছুদিন হয়তো আয়ামের কষ্ট হবে। কিন্তু সে একসময় ঠিক বুঝে নিবে, আমি ওর মা না।”

মেহরীনকে এতটা শক্ত হতে দেখে ইরফানের নিজেকে অসহায় লাগছে। মেহরীন তার জায়গায় ঠিক আছে। তার রাগটাও জায়েজ। তা বলে কি সে আয়ামকেও ভুলে থাকবে!

“আমার হাত ছাড়ুন। যেতে দিন আমাকে।”

“না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। ছাড়বেন না। ধরে রাখুন।”

ইরফানের বিশ্বাস মেহরীন মুখে যতই বলুক, সে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করে তাকে অপমান করতে পারবে না। যতই রাগ করুক এখনও সে ইরফানকেই ভালোবাসে। মেহরীন ইরফানের বিশ্বাস ভুল প্রমাণ করে সত্যি সত্যিই সে চিৎকার করতে লাগল। এতে রাস্তার কয়েকজন মানুষ ওদের কাছে চলে এলো৷ একজন লোক বলল,

“কী হচ্ছে এখানে? সিস্টার এই লোক আপনাকে ডিস্টার্ব করছে? এইযে হিরো, চেহারা দেখে তো ভদ্র ঘরের ছেলেই মনে হয়। তা রাস্তায় মেয়েদের বিরক্ত না করে ঘরে বউয়ের কাছে যাও না।”

ইরফান রাগে কটমট করে বলল,

“আমি আমার বউয়ের কাছেই আছি। আপনি বরং নিজের চরকায় তেল দিন গিয়ে। আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপনার নাক না গলালেও চলবে।”

“স্বামী স্ত্রী! সিস্টার কাহিনী সত্য? সত্যিই ইনি আপনার স্বামী?”

মেহরীন চোখ মুখ খিঁচিয়ে বলল,

“স্বামী! কে কার স্বামী! আমি তো এই লোককে চিনিই না। আগে কখনও দেখিনি। আমি এই লোকের বউ হবো কী করে? যত সব পাগলের প্রলাপ। আমি কারো স্ত্রী নই ভাই৷ এই লোক মিথ্যে বলছে।”

ইরফান কিড়মিড় করে দাঁতে দাঁত চেপে উচ্চারণ করল,

“মেহরীন! ”

“কি হিরো, ম্যাডাম তো দেখি অন্য কথা বলছে। রাস্তা ঘাটে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তাকে বউ ভাবতে ইচ্ছে করে।”

লোকটার উপর ইরফানের যতটা না রাগ হচ্ছে তার থেকে দ্বিগুণ রাগ হচ্ছে মেহরীনের উপর। মেহরীন সত্যি সত্যিই বলেছে, সে তাকে চেনে না। লোকটা উল্টাপাল্টা কথা বলছে শুনেও সে চুপ আছে।
তিন চারজন লোক ইরফানকে ঘিরে ধরলে মেহরীন সেই ফাঁকে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চলে আসে। ইরফান লোকগুলোর সাথে তর্কাতর্কি করছে। মেহরীন সেদিকে তাকাল না। বুকের ভেতর ভীষণ কষ্ট হলেও সে নিজেকে আর কারো মায়ায় জড়াবে না।
.
অনন্ত আজ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। তিনদিন পর বাইরে বেরিয়ে সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। মদ খেয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। বিল্ডিংয়ের লোকজন ধরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যায়। দুই দিন ঘোরের মধ্যে ছিল সে। আজ তৃতীয় দিন অবস্থা একটু ভালো হলে ডাক্তার তাকে ডিসচার্জ করে দেয়। বাইরে বেরিয়ে সবার আগে মেহুর কথা মনে পড়ে তার।

“তোকে আমি খুঁজে বের করব মেহু। আমার কাছে নিয়ে আসব তোকে। তুই আমাকে ভুল বুঝতে পারিস না। আমি এতসব কার জন্য করেছি হ্যাঁ? তোর জন্যই তো। তবুও তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।”

অনন্ত বাড়ি না ফিরে মেহুর খুঁজে বেরিয়ে পড়ল। অনন্ত যে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ না তা এখন তার আচরণ দেখে যে কেউ বলে দিতে পারবে।

বাড়ি ফিরে মেহরীন মাথায় পানি ঢালল। সে যতই সব ভুলে যেতে চাইছে ততই ইরফান তার জন্য সবকিছু কঠিন করে দিচ্ছে।

“আমাকে একা কেন ছাড়ছেন না আপনি? বারবার কেন আমার পেছনে আসছেন? সবকিছু ভুলে যেতে চাই আমি।”

মেহরীনের গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে উঠছে। ইরফানকে মানুষের সামনে এভাবে অপদস্ত করতে তার নিজেরও কি অনেক ভালো লেগেছে? সে ইরফানকে আজ বুঝিয়ে দিয়েছে তার জন্য এখন আর মেহরীনের মনে অনুভূতি নেই। তাইতো এতটা শক্ত হতে পেরেছে সে।
.
রাতে মেহরীন রান্না করছে। দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। মাত্র ঘুম ভাঙার পর ফ্রেশ হয়ে এসে ভাত বসিয়েছে। খিদে পেটের নাড়িভুড়ি মুচড় দিচ্ছে।

“এত ঘুম কোত্থেকে এলো আমার চোখে। ঘুমের জন্য রান্নাও হয়নি। এদিকে খিদেয় বাপ দাদার নাম ভুলে যাচ্ছি।”

কলিংবেল বাজছে। ভাতের মাড় ফেলে মেহরীন বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতে গেল।

“রাতবিরেতে কে বিরক্ত করতে চলে এলো। খিদে পেয়েছে আমার। রান্নাটাও সারতে দিল না।”

দরজা খুলে মেহরীন সামনের মানুষটাকে না দেখেই বলল,

“কে? কী চায় এখানে? ”

ইরফান মেহরীনকে ঠেলে ভেতরে চলে আসে। মেহরীন কিছু বলার বা করার আগেই ইরফান মেহরীনের হাত চেপে ধরে এক ঝটকায় তাকে দেয়ালের সাথে মিলিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।
মেহরীন যেন সকালের মত এবারও চেঁচাতে না পারে তাই মুখ চেপে ধরল।

“আমাকে চেনো না তুমি? আমি তোমার স্বামী না? আমাকে আগে কখনও দেখোনি? তুমি আমার বউ হবে কী করে! পাগলের প্রলাপ বকছিলাম তখন আমি! ”

ইরফান মেহরীনের মুখ চেপে ধরে রাখায় সে কোন কথা বলতে পারছে না। ধস্তাধস্তি করে সে ইরফানের থেকে ছাড়া পেতে চাইছে। ইরফান তাকে ছাড়লে তো! ইরফানের শক্তির সাথে সে কোথায় পেরে উঠবে!

“রাস্তায় ওই লোকগুলোর সামনে তুমি আমাকে চেনো না বলে চলে এলে। ওরা যদি মেরে আমার হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙে দিত তখন! আমার জন্য একটুও চিন্তা হয়নি তোমার? এতটা নিষ্ঠুর তুমি! বরকে মার খাওয়ার জন্য লোকের হাতে ছেড়ে এলে!”

মেহরীন দুই হাতে ইরফানের বুকে ধাক্কা দিয়ে ওকে সরিয়ে দেয়। হঠাৎ এমন ধাক্কায় টাল হারিয়ে ফেলে ইরফান। মেহরীন চেঁচিয়ে বলে,

“আমার জীবনটা কি আপনার কাছে নাটক মনে হয়? যখন যেমন ইচ্ছে তেমন করে আমাকে নাচাবেন। আমি কি আপনাদের হাতের পুতুল? আপনি জানতেন আমি আপনাকে ভালোবাসি। তবুও আপনি আমার কাছে কিছুই বললেন না। সব লুকিয়ে গেলেন। আয়ামের জন্য আমাকে আপনার কিনতে হতো! আপনি একটা বার আমাকে বলতেন। আমি তো প্রথম দিন থেকেই আয়ামের জন্য মমতা অনুভব করতাম। মা হারা এতটুকু একটা বাচ্চার জন্য আমি সব করতে পারতাম। এই খেলার কোন দরকারই ছিল না।”

মেহরীন কাঁদছে। ইরফান তাকে বাধা দিচ্ছে না। কাঁদুক। তাকে আরও কথা শোনাক।

” দুটা রাত ধরে আমি ঘুমোতে পারি না। বারবার ভাবি আয়াম আমাকে খুঁজছে। ও হয়তো আমার জন্য কাঁদছে। আমি যতক্ষণ না ওর পাশে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে না দিতাম, ততক্ষণ আয়াম ঘুমোতো না। ওকে ছেড়ে থাকতে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে তা শুধু আমিই জানি।”

মেহরীন অনেকক্ষণ কাঁদল। চোখ মুছে সে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইরফান হালকা বলল,

“আমার জন্য না হয় আয়ামের জন্য আমার সাথে চলো।”

“কী করে যাব! আপনি যে আমার বিশ্বাস ভেঙেছেন। এত সহজে কী করে সব ভুলে যাব বলুন তো! আমিও তো একটা মানুষ। আমার কি কষ্ট হয়না? আমার কি অপমানবোধ থাকতে নেই?”
.
ইরফান নিয়ম করে রোজ সব কাজ বাদ দিয়ে দু’বেলা করে এসে মেহরীনের রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে। মেহরীন কখনও দরজা খুলে তাকে ভেতরে যেতে দেয়৷ কখনো বা দরজা খুলেও আবার মুখের উপর লাগিয়ে দেয়। আবার কখনও দরজা খুলেই না। ইরফান মন ভার করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে ফিরে যায়।
.
হঠাৎ একদিন ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরিয়েই মেহরীন অনন্তর সামনে পড়ে যায়। ঘৃণায় মেহরীন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হাঁটতে থাকে। অনন্ত তার পেছন পেছন আসছে। কী কী যেন বলছে। মেহরীন ওসবে কান দিল না। অনন্ত তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

“মেহু, তুই কি এখন আমার কথাও শুনবি না! এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন আমাকে?”

মেহরীন জবাব দিল না। অনন্তকে দেখে তার বমি আসে। এর থেকে বেশি কিছু নয়।

” তুই আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু তোর সামনে গাড়ির নিচে ঝাপ দেব।”

এই কথাটা শুনে মেহরীন খুশি হয়ে গেল।

“সত্যি দেবে! আচ্ছা আমি দাঁড়াচ্ছি। তুমি বড় একটা ট্রাকের নিচে পড়ো। ওসব সিএনজি টিএনজির নিচে পড়ে তুমি মরবে না। উল্টো বেচারাদের ক্ষতি হবে। কাউকে খুন করা যদি পাপ না হতো, তাহলে আমিই তোমাকে খুন করতাম। যেহেতু আমি এই কাজ পারব না। তাই তুমি বরং আমার চোখের সামনে আত্মহত্যা করো। দেখে আমার কলিজা ঠান্ডা হোক। এমনিতেও তোমার মত নরকের কিট বেঁচে থেকেই বা কী করবে। যতদিন বাঁচবে ততদিন অন্যের জীবন নিয়ে খেলা করবে।”
.
আজ মেহরীন কয়েক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছে। তাই ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল। দুই জায়গা থেকে তো মুখের উপরই না করে দিয়েছে। অন্য এক জায়গায় বেশ ভালো ইন্টারভিউ হয়েছে। চাকরিটা হবে নাকি বুঝতে পারছে না। সব প্রশ্নের উত্তরই তো সে ভালো ভাবে দিতে পেরেছে। চাকরি হয়ে যাবারই কথা। আল্লাহ ভরসা। চাকরি হয়ে গেলে ভালো। না হলেও তেমন কোন অসুবিধা নেই। নাচের ক্লাস থেকে যা পায় তা দিয়েই মেহরীনের চলে যাবে। ক্লান্ত পায়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে হয়েছে। সকালেই লিফট নষ্ট হয়েছে। ফুপিকে বলতে হবে। মেহরীন অন্যমনস্ক হয়ে
ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকার সাথে সাথে ওর পেছনে ইরফানও এসে ঢুকে পড়ল।

“এই, এই আপনি এখানে! আমার ফ্ল্যাটে আপনি কী করেন হ্যাঁ? বের হোন। বের হোন বলছি। আজব লোক! যার তার বাড়িতে ঢুকে পড়ছে!”

ইরফান শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে মুচকি হেসে বলল,

“কার ভাবনায় এতটা মগ্ন ছিলে? সিঁড়ি থেকে পেছন পেছন আসছি। এতক্ষণ খোঁজ পেলে না। ফ্ল্যাটে ঢুকে গেছি মাত্র দেখছো তুমি! এতক্ষণ সত্যিই দেখোনি? নাকি দেখেও না দেখার ভান করে ছিলে। আসলে তুমিও মনে মনে চেয়েছ আমি তোমার পেছন পেছন আসি।”

“মোটেও না। আমি এমনটা কেন চাইব? আমার কি আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই!”

“হুম দেখতেই তো পারছি কত কাজ তোমার! কাজের চিন্তার ঠেলায় আশেপাশে তাকানোর সময় পর্যন্ত পাও না।”

“আপনি রোজ রোজ কেন আমাকে জ্বালাতে চলে আসেন বলুন তো।”

“জ্বালাতে আসি না গো। আমি তো আমার বউয়ের রাগ ভাঙাতে আসি। দেখো না কতভাবে চেষ্টা করছি তবুও বউয়ের রাগ ভাঙে না।”

“আপনার মনে হয় এভাবে আমার রাগ ভাঙবে?”

“ভাঙবে না?”

“উঁহু। রেগে থাকলে হয়তো এতদিনে রাগ ভাঙাতে পারতেন। কিন্তু আমি তো আপনার উপর রেগে নেই। আপনি আমার বিশ্বাস ভেঙেছেন। বিশ্বাস, মন এই জিনিসগুলো একবার ভাঙলে কি আর এত সহজে জোড়া লাগানো যায়?”

মেহরীন ইরফান দু’জনই গম্ভীর হয়ে রইল। ইরফান মেহরীনের মুখের দিকে তাকিয়ে ওকে বোঝার চেষ্টা করছে। মেহরীনের চোখের কোনে পানি চলে এসেছে। সে ইরফানের সামনে কেঁদে ফেলার আগে নিজেকে শক্ত করে নিল।

“যান, যান। বের হোন আমার বাড়ি থেকে। সারাদিন কাজ খুজে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছি আমি। এখন আপনার সাথে নাটক করতে পারব না। আপনারা দু’টা পুরুষ মিলে তো আর আমার জীবনটা নিয়ে কম নাটক রচনা করলেন না। এবার একটু আমাকে একা ছেড়ে দিন। আমি একটু নিজের মত করে শান্তিতে বাঁচি। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিই। নাকি এই স্বাধীনতাটুকুও আমার প্রাপ্য না।”

ইরফান আর তর্ক করল না। সে মেহরীনকে একা ছেড়ে দিল। না, সে হাল ছেড়ে দেয়নি। মেহরীন তাকে যতই ফিরিয়ে দিক। তবুও সে রোজ আসবে। যতদিন না মেহরীন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার সাথে ফিরে না যাবে, ততদিন সে মেহরীনের দরজায় এসে দাঁড়াবে। সে-ও দেখবে মেহরীনের অভিমান কতদিন টেকে। যতই হোক মেহরীন তাকে ভালোবেসে। দেখা যাক, কয়দিন সে তাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে?
মেহরীন দরজা বন্ধ করে রুমে আসার সাথে সাথে আবার ডোরবেল বাজে। সে বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। রাগে বিড়বিড় করতে করতে দরজা খুলে দিয়ে বলে,

“আপনি আবার এসেছেন? একবার বললে শুনতে পান না আপনি? আপনার গায়ে কি কথা লাগে না? লজ্জা শরম বলতে আল্লাহ আপনাকে কিচ্ছু দেয়নি, তাই না? একবার না করার পরও বেহায়া হয়ে বারবার চলে আসেন। আমি তো বলেছি…

সামনে অনন্ত দাঁড়িয়ে আছে। মেহরীন অনন্তকে দেখে চুপ হয়ে গেল। সে ভেবেছিল আবার হয়তো ইরফান এসেছে। ইরফানকে কয়েকটা কড়া কথা শোনাতে চেয়েছিল সে। অনন্তকে দেখে সে আরও বেশি বিরক্ত হলো।

” তুমি এখানে? কেন এসেছ?”

অনন্ত খপ করে মেহরীনের হাত চেপে ধরে বলল,

“তুই বলেছিলি না আমি যেন তোর সামনে সুইসাইড করি। আমাকে মরতে দেখে তুই শান্তি পাবি। তোর কলিজা ঠান্ডা হবে। চল, তোর সামনে মরব আমি। না, শুধু আমি একা কেন মরব? তোকে সাথে নিয়ে মরব। আমি তোকে ভালোবাসি মেহু। হয় বাঁচলে আমরা দু’জন একসাথে বাঁচব। আর যদি মরতে হয় তাহলেও দু’জন একসাথে মরব। তোকে রেখে আমি একা যেমন বাঁচব না। তেমনি একা মরবও না। তুই আমার জীবন মরণের সাথী মেহু।”

অনন্ত মেহরীনের হাত ধরে ওকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে। মেহরীন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলছে,

“ছাড়ো আমাকে। তোমার সাথে কোথাও যাব না আমি। তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! অনন্ত আমার হাত ছাড়ো বলছি। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ তুমি? ”

চলবে___

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/107175347372111/posts/540574410698867/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here