মায়ার_বাধঁন-১
আমি সায়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি!মনে মনে চিন্তা করছি উনি কীসের শূন্যতার কথা বলছেন?
“আমি একটা বাচ্চার শূন্যতা অনুভব করছি সাফা।তুমি আপওি না করলে আমি আবার বিয়ে করতে চাই।অনেক তো অপেক্ষা করলাম।
সায়ানের মুখে এ কথাটি শুনার সাথে সাথে উনার হাতটা ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে বসলাম।
মনের অজান্তে চোখে জল চলে আসলো।উনি আমার পাশে এসে আমার চোখের জল মুছে দিলেন।আমি রাগ করে উনার হাতটা সরিয়ে দিলাম।
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।বাচ্চাদের মতো কাঁদছি আমি।আচ্ছা আমার কী মা ডাক শুনতো ইচ্ছা করে না!সবাই বলতে বলতে আজ উনিও……………….
আজ পরিস্থিতির কাছে আমি বড় অসহায়।
উনার থেকে আমি এমন কথা আশা করি নি।আমি চিনতে পারছি না উনাকে!এ কয়েকদিনে উনি এত পাল্টে গেছেন।
আহ কান্না বন্ধ করো তো!
উনার ডাকে আমি চোখের জল মুছে মুখে হাসির রেখা ফুঁটিয়ে বললাম,আচ্ছা এ বিষয়ে পরে কথা বলছি!এশার আযান হয়ে গেছে আমি নামায পড়তে যাচ্ছি আপনিও মসজিদে চলে যান।আর কিছু না বলে চোখটা ভাল করে মুছে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
অযু করে নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে দুই হাত উঠিয়ে দোয়া করছি!এই নিভৃতে একান্তে,
লোকচক্ষুর আড়ালে রবের সাথে
সুন্দর কিছু মুহুর্তই আমার ভেতরের কষ্টটা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি মনে মনে ভাবছি
আল্লাহ যা করেন মানুষের মঙ্গলের জন্যই করেন।এটা আমার আল্লাহর ফয়সালা।
আল্লাহর ফয়সালারর উপর প্রত্যেক মুমিনদের ভরসা করা উচিত।
কারণ উনিই উত্তম ফায়সালাকারী।
নামায পড়ে তেলাওয়াত করে মনটা অনেক হালকা হয়েছে।
সবার জন্য খাবার রেডী করে আমি রুমে আসতে যাবো এমন সময় আমার শাশুরী মা আমার হাতটা ধরে জিঙ্গেস করেন,-কী রে মা কোথায় যাচ্ছিস খাবার খাবি না!
আমি মুচকী হাসি দিয়ে মাথা নাড়ালাম।
‘উত্তম চরিত্রের একটি দিক হলো মুচকি হাসি দিয়ে অন্যের সাথে কথা বলা।’
—হাবিব ইবনু আবি সাবিত (রাহিমাহুল্লাহ)
[ইবনু হিব্বান, রাওদ্বতুল উক্বালা: ১/৭৭]
.
আবু যার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন—
.
لا تحْقِرَنَّ من المعرُوفِ شيْئًا ، ولوْ أنْ تلْقَى أخاكَ بوجْهٍ طلْقٍ
.
“তুমি নেকির কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করো (তবে, এটিকেও পুণ্যের কাজ হিসেবে গুরুত্ব দাও)।” (সহীহ মুসলিম: ২৬২৬”)
শাশুরী মা আমাকে উনার পাশে বসিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,তোর শরীর খারাপ নাকি!আমি স্লান হেসে বললাম, না মা তেমনটা নয়!আসলে একটু মাথা ব্যাথা করছে।
-সে কী তোর মাথা ব্যাথা করছে আর তুই আমাকে এখন বলছিস!এখানে বসে চুপচাপ একটু খেয়ে একটা ঘুম দেয়।দেখবি ভাল লাগবে।
আমি মুচকী হেসে বললাম,আচ্ছা মা।
মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিচ্ছি এমন একজন শাশুরী মায়ের ছেলের বউ হতে পেরেছি বলে!শশুরবাড়ির সবাই যদি বিপক্ষেও চলে যায় শুধু স্বামী আর শাশুরী যদি বউয়ের পক্ষে থাকে তাহলে মেয়েরা শত প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করতে পারে।
রাতের খাবার খেয়ে সবকিছু গুছিয়ে রুমে আসার সময় লক্ষ্য করলাম সায়ানের সাথে আমার বড় জা আর সানা হেসে হেসে কথা বলছে!আমি রুমে এসে শুয়ে শুয়ে কাঁদছি।একটুপর সায়ান রুমে এসে আমাকে এক নজর দেখে বারান্দায় চলে যান।
উনার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে উনি অনুতপ্ত।কিন্ত উনিও বা আর কত অপেক্ষা করবেন!আজ বিয়ের চার বছর হতে চললো!উনি এখনো বাবা ডাক শুনতে পান নি?উনারও তো ইচ্ছে করে বাবা ডাক শুনতে!একটা দ্রীর্ঘশ্বাস ফেলে পাশ ফিরতেই দেখি উনি এসে পাশে শুয়ে পরেছেন।কিচুক্ষণ নিরবে শুয়ে থাকার পর হঠাৎ জিঙ্গেস করলেন,ঐ বিষয়ে কিছু ভেবেছো!
আমি কিছুই বললাম না।উনি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কোন উওর না পেয়ে পাশ ফিরে শুতে গেলে আমি অনেক কষ্টে বললাম,-আমি রাজি।
উনি কিছুটা অবাক হয়ে পেছন ফিরে বললেন,-সত্যি!মন থেকে বলছো তো?
আমি উনার চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষণ নিরব দৃষ্টিতে তাকিঁয়ে রইলাম।তারপর একটা দ্রীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললাম,-হুম।
তারপর দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিঁয়ে আছি।হঠাৎ উনার ফোন আসায় আমাদের ধ্যান ভঙ্গ হয়।
অবচেতন মন তো আর মানে না,চোখ চলে যায় ফোনের স্কিনে!স্কিনে নাম দেখে তো আমি অবাক!
।
।
চলবে ইনশাআল্লাহ
লেখাঃ জান্নাত_রুবি