#মরিচিকা
পর্ব-২
#তানিশা_লাবন্য

আজকে অনেকদিন পর আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখলাম। চোখের নিচে গাঢ় করে ডার্ক সার্কেল পড়ে গেছে। তলপেট টা থল থলে কিছুটা ঝুলে গেছে। মুখের আনাচে কানাচে অসংথ্য দাগ। মুটিয়ে শরিলটা কেমন যেন বালিশের মত এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে। চুলের কি ছিরি। এতদিন সংসার এর দিকে খাটতে খাটতে নিজের দিকে তাকানোর সুযোগ পাইনি। দুধে আলতা রং কেমন যেন ফেকাশে হয়ে গেছে। যেই রুপে পাগল হয়ে আমাকে বিয়ে করেছিল সেটা এখন নেই।বিয়ের পর ভালো একটা ক্রিম কিনতে কিপটেমি করতাম। ভাবতাম শুধু শুধু অপচয় এই টাকাটা ফিউচারে কাজে দিবে।এইবলে টাকা সেভ করতাম। নিজের জন্য ভালো একটা থ্রিপিস পর্যন্ত কিনিনি। বাসার সবাই দামি জামা কাপড় পরলেও আমি কম দামি গজ কাপড়ের থ্রিপিস দিয়ে চালিয়ে দিতাম।ভাবতাম সারাদিন বাসায় থাকি এত ভালো জামা কাপড় দিয়ে হবে কি??? বুয়া রাখার সামর্থ্য থাকার পরেও নিজেই দিন থেকে রাত সব কাজ করতাম। ভাবতাম নিজেই করি বুয়াকে টাকা দিব কেন??

এখন দেখি যেই কাজটা ফিউচারের কথা চিন্তা করে করেছিলাম আজ সব পানিতে গেল। এখন স্বামী তার ফিউচার অন্য কাউকে নিয়ে সাজাতে চায়। তাই এখন একটু নিজেকে নিয়ে ভাবার সময়। এতদিন সব শখ আল্লাদ বিসর্জন দিয়েছি কিন্তু আর না। কার জন্য ভাববো??? বিয়ের সময় আমার বয়স ছিল ১৮ এখন ২৮। আমার সাথের অনেক মেয়েদের এখনও বিয়েই হয়নি। আর আমি দুই বাচ্চার মা যাইহোক আজকে থেকে নিজের আর বাচ্চাদের খেয়াল রাখব শুধু। কোন বেইমানের না। তাই ঠিক করলাম আজকে একটা ডায়েটিশিয়ান এর কাছে যাব। শরিলের বাড়তি ওজন কমানো খুব প্র‍য়োজন। সাথে নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করার প্রয়োজন। বয়সের তুলনায় বেশি দেখচ্ছে। আর অন্যদিকে আসিফ ফিট। দেখলে মনে হয় এখনও সেই ছাব্বিশ বছরের তাগড়া যুবক অথচ বয়স ৩৭ চলে। নামি দামি ব্র‍্যানড এর কাপড় আর জুতা ছাড়া কিছু পরেনা। প্রত্যেক উইকে নিজের জন্য একটা দিন বরাদ্দ রাখে সেইদিন পুরুষ পার্লারে যেয়ে বিভিন্ন সার্ভিস নিয়ে আসে। কখনও বাধা দেইনি আরও খুশি হতাম যে আমার স্বামী মাশাল্লাহ। কিন্তু এখন দেখছি সেই রুপ দেখিয়ে অবিবাহিত মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে।

যাইহোক আজকে সকাল আসিফ আর ওর মা বাসা থেকে চলে গেছে। আর এই একতালার বাড়িটা আগে থেকেই আমার নাম এ ছিল। বছর খানেক আগে করেছে। দুইটা ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। যাওয়ার সময় ৫০ হাজার টাকা আমাকে দিয়ে গেছে। আর বলে গেছে মাসে একবার এসে টাকা দিয়ে যাবে আর ছেলে মেয়েদের দেখে যাবে। বিয়ের তারিখ এখনও ফাইনাল হয়নি হলে নাকি জানাবে। আমি যাওয়ার সময় শুধু একটা হাসি দিয়ে বললাম দোয়া করি তোমার দাম্পত্য জীবন সুখের হোক। আসিফ অবাক হয়ে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে ছিল। আমাকে ভাংতে না দেখে হয়ত বারবার অবাক হচ্ছে। আসলে ও শান্তি পাচ্ছিল না কেন আমি এত স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছি তাই হয়ত তাকে ভাবাচ্ছে। ও চাচ্ছিল আমি কাদি ওর কাছে ভিক্ষা চাই ভালোবাসা হয়ত তখন ও সুখ পেত।যারা আমাদের দুঃখ দেয় তারা চায় আমরা আসলেই দুঃখ পাই। যখন দেখে তা বিপরিত তখন তারা উন্মাদ হয়ে যায়। কিন্তু আমি সেই পৈশাচিক শান্তি কখন ও আসিফকে দিবনা। ওকে বুঝাতে চাই তোমায় ছাড়া আমার দিব্যি চলে যাবে৷ তুমি থাকা না থাকার ধার ধারিনা।

আসিফ শেষে একটা কথা বলেছিল। অনু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কখনও ভালোবাসনি। তুমি কি সত্যিই কখনও আমাকে ভালোবাসনি??? আমি শুধু হেসে উত্তর দিলাম তুমি যা মনে কর। অনেকেই ভাববে হয়ত আমি তালাক দিচ্ছিনা কেন?? একটুও আত্ম অহামিকা নেই আমার??? আসলে সবই আছে কিন্তু এত বছরের তিল তিলে গড়ে তুলা সংসার ছেড়ে চলে যাব কেন আমি??? আমার ছেলে মেয়েরা কেন এতিমের মত বড় হবে! এই সংসার আমার। আসিফকে আমি চাইনা তবে আমি নিজের অধিকার ছেড়ে দিবনা। আমি চলেগেলে ও দিব্যি অন্য মেয়েকে বিয়ে করে আনন্দে থাকবে আর ওই মেয়েও সাজানো সংসার পাবে। তা আমি কখনও হতে দিবনা।

বিকালে একজন স্বাস্থ্যবিদের সাথে দেখা করতে যাবো। বাসায় একজন কাজের খালা রেখেছি। আর দেশ থেকে আমার খালাত বোনকে এনেছি। বাচ্চাদের দেখে রাখার জন্য। আর একা একটা বাড়িতে খুব খারাপ লাগবে। এতদিন আসিফ ছিল মা ছিল এখনত তারা নেই তাই ওকে আনা। আমার পরিবারের কেউ জানেনা আসিফের ২য় বিয়ের কথাটা। আর জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনি। আমি চাইনা আমার জিনিস নিয়ে মানুষ সমালোচনা করুক। মা এই জিনিস টা নিতে পারবেনা এই বয়সে। আর যেই জিনিস আমিই ধারধারিনা সেটা অন্যকে কেন জানানো???

স্বাস্থ্যবিদের কথামত চলা শুরু করলাম। খাওয়া দাওয়া ঘুম আর ব্যায়ামের একটা তালিকা বানিয়ে দিয়েছে৷ ১০ কেজি কমাতে হবে ২ মাসে। নিজের জন্য কিছু কেনাকাটা করলাম। কিছু ভালো স্কিন কেয়ারের প্রডাকট কিনলাম। আজকে অনেকদিন পরে পার্লারে গেলাম চুলটা একটা কাট দিলাম ভালোই লাগছে। এর মাঝে শুনতে পেলাম আসিফ অফিসের কাজের জন্য ৩ মাসের জন্য হংকং যাচ্ছে তাই এসে বিয়ে করবে। টাকা নাকি আমার একাউন্টে সময়মত দিয়ে দিবে মাসে মাসে। এই খবর আসিফ আমার মোবাইলে ম্যাসেজ করে দিয়েছে। আমি শুধু হুম লিখেছি।

অন্য সময় আসিফ দেশের বাহিরে গেলে আমি ওর ব্যাগ প্যাক। অন্যান্য সব কাজ করে দিতাম আর যাওয়ার সময় ওকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে বসে থাকতাম।এইবার কেমন যেন কোন অনুভুতিই হল না। যাক ওকে নিয়ে আর ভাবতে চাইনা। ছেলে মেয়েদের নিয়ে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।

বিকেলে নিয়ম করে হাটতে যাই। আর সাথে ঘুমও হচ্ছে ভালো। তাই মুখে অনেকটা লাবন্য ফিরে আসছে। আসলে হেলদিভাবে চলাফেরা করলে সব ঠিক থাকে।
এখন সব কিছু নিয়ম মতাবেক করার চেষ্টা করছি। ছেলে মেয়েরা অনেক সময় বলে আম্মু তুমাকে সুন্দর লাগছে। আমি হাসি। মেয়েটা বড় পাজি হয়েছে শুধু বলে আম্মু তুমি অনেক সুন্দর। আমি তখন বলি তুমি আমার থেকেও সুন্দর।

এইভাবি কিভাবে কিভাবে ২ মাস চলে গেল বুঝতেই পারলাম না আগে থেকে অনেক শুকিয়েছি। স্কিনটা খুব ভালো হয়েছে এখন আলহামদুলিল্লাহ। কেমন যেন নিজেকে খুব ভালো লাগে। কিছু সুন্দর সুন্দর শাড়ি আর থ্রিপিস কিনেছি। ওইগুলো পড়ে মাঝে মাঝে বের হই।তখন পাশের বাসার আয়শা ভাবি একদিন জিজ্ঞেস করে।ভাবি কিভাবে এত্ত পরিবর্তন??? আপনাকে এখন চিনাই যায়না। এত্ত স্লিম আর এত্ত সুন্দর লাগছে!!! কি কি করলেন?? তখন আমি উত্তর দিলাম বেশি কিছুনা নিজেকে ভালোবাসতে শিখলাম এতটুকুই। নিজেকে ভালোবাসুন দেখবেন আপনিও সুন্দর আর সুখি হবেন।তখন ভাবি বলে কিযে বলেন ভাবি কিছুই বুঝলাম না। আমি বললাম হাহা না বুঝলে কি আর করার এই বলে চলে আসি।

মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের সাথে ছবি আমার ননদকে দিতাম। সে সব ছবি তার ভাই মানে আসিফকে পাঠাত। আমি চাইতাম আসিফ দেখুক আমি সুখে আছি তাই ইচ্ছা করেই দিতাম যেন আসিফের কাছে ছছবিগুলো যায়। ২.৫ মাসের মাথায় আসিফ একদিন ম্যাসেজ দিল
কেমন আছো অনু?????……….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here