#মনোপ্যাথি
#পর্ব:৬
#অরিত্রিকা_আহানা।
মুক্তা আপুর কাছ থেকে যখন শুনলাম উনার ঘরটা গতকাল নাফিস ভাই,উনার বর,উনার দেবর সহ ইমতিয়াজ ভাইয়ার আরো কয়েকজন বন্ধুদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে,তখন আমার মাথায় বাজ পড়লো।
নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হলো।মুক্তা আপুকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিৎ ছিলো।
কিন্তু নাফিস ভাইয়ের তখনকার বিহেভিয়ারে কথা মনে পড়তে ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
এভাবে কেউ একটা মেয়ের সাথে বিহেভ করে??
কাউকে বাইরে থেকে দেখলে আসলে বোঝা যায় না তার ভেতরটা কতটা জঘন্য!
নাফিস ভাই আমাকে একটা জঘন্যভাবে অপমান করবে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।উনার ব্যাবহারের কথা মনে পড়লেই অপমানে মরে যেতে ইচ্ছে করে!কিভাবে পারলো উনি??আমি তাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না!!
হ্যাঁ আমি কাউকে জানাই নি ঠিকই কিন্তু তারমানে এই নয় যে আমি উনাকে মাফ করে দিয়েছি।আমি শুধু চাই নি আপুর বিয়েতে কোনরকম ঝামেলা হোক।তাছাড়া ইমতিয়াজ ভাইয়ার বন্ধু উনি।ব্যাপারটা জানাজানি হলে একটা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে তাই।তা না হলে তাকে আমি..?? তবে শুধু একজন জানতে পেরে গেছে।তিনি হলেন মুক্তা আপু।
আমার জ্ঞান ফিরার পর আমি নিজেকে মুক্তা আপুর রুমে আবিষ্কার করলাম।আমার পাশে নাফিস ভাই বসে ছিলেন।উদ্ভ্রান্ত চেহারা নিয়ে।চেহারা অনুশোচনায় ভরপুর।আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন,”এখন কেমন আছো?”
আমি জবাব দিলাম না।
তিনি নরম গলায় বললেন,”রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।তোমার তখন ওভাবে বলা ঠিক হয় নি।”
রাগে আমার সমস্ত শরীর কিড়মিড় করে উঠলো।কতবড় অভদ্র ইতর হলে এভাবে কথা বলতে পারে?..আমার দোষ? আমি কি জানতাম মুক্তা তার রুমটা উনাদের ছেড়ে দিয়েছে?রাগের মাথায় নাহয় একটা থাপ্পড় দিয়েছি,তাও জীবনে এই প্রথম কারো সাথে এমন খারাপ ব্যবহার করেছি।তাই বলে এভাবে আমাকে..? দুঃখে কষ্টে,আমার চোখে পানি চলে এলো।
আমি কিচ্ছু বললাম না।মুখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি আমার দিকে একপলক তাকালেন।আমার চোখেমুখে ঘৃনা।কিছু বললেন না।চুপচাপ বসে রইলেন।তখনই মুক্তা আপু হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢূকলেন।আমার মাথার কাছে এসে বসলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”কি করেছে ও তোকে?”
আমি কষ্ট চেপে রাখতে পারলাম না।চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠলাম।মুক্তা আপু আমার ঘাড়ের কাছে কামড়ের দাগটা দেখে আঁতকে উঠলেন।উনার বুঝতে বাকি রইলো না কি ঘটেছে! নাফিস ভাইয়ের গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিলেন।নাফিস ভাই মাথা নিচু করে বসে রইলো।
রাগিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন মুক্তা আপু,
-“এভাবে জানোয়ারের মত কেউ কামড়ায়?..এই তুই কি রাক্ষস নাকি?..আমার দিকে তাকা?..তাকা বলছি।কেন করেছিস এমন?”
নাফিস ভাই মুখ তুললেন।উনার চোখের পানি টলমল করছে।
মুক্তা আপু বললেন,”ওর বাপ ভাই শুনলে কি হবে বুঝতে পারছিস?..ওরা তোকে আস্ত রাখবে?..ইমতিয়াজের কাছে মুখ দেখাতে পারবি?”
নাফিস ভাই তখনও নিশ্চুপ।আমি মুক্তা আপুকে বললাম আমাকে আপুর রুমে নিয়ে যেতে।আপু আসছি বলে বেরিয়ে গেলেন।আমি উনাকে নিষেধ করে দিয়ে বললাম,”আপনি প্লিজ কাউকে কিচ্ছু বলবেন না।আমি চাইনা আপুর আনন্দের মুহূর্তটা আমার জন্য নষ্ট হোক।”
মুক্তা আপু বেরিয়ে গেলেন।তবে মনে হচ্ছে উনি আপাতত কাউকে কিচ্ছু বলবেন না।
আপুরা সম্ভবত নিচে এখনো সবার সাথে গল্প করছে।তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম আমার ঘাড়ে ব্যথাটা আর নেই।আশ্চর্য হলাম।একটু আগে ব্যথার কারনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।ঠিক তখনই নাফিস ভাই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন।একঝটকায় আমাকে কোলে তুলে নিলেন।ইচ্ছা থাকলেও বাধা দেওয়ার শক্তি তখন ছিলো না।তারপর আর মনে নেই!!সেই ব্যথা হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলো কি করে?
নাফিস ভাই আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললেন,”ব্যথানাশক স্প্রে করে দিয়েছি।”
আমি এবারও জবাব দিলাম না।মুক্তা আপু বরফ নিয়ে এসেছে।নাফিস ভাই ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলেন যাওয়ার সময় শুধু বললেন,” মাইগ্রেনের ব্যথা উঠলে আমার হুঁশ থাকে না।অসহ্য লাগে সবকিছু!..এনিওয়ে সরি ফর এভ্রিথিং!”
কথাটা বলার সময় নাফিস ভাইয়ের গলা ধরে আসছিলো।আমি মুক্তা আপু দুজনেই খেয়াল করলাম।
নাফিস ভাই বেরিয়ে গেলে মুক্তা আপু আমার ঘাড়ে বরফ লাগিয়ে দিলেন।
আমি বললাম,”ব্যথা করে গেছে আপু।বরফ লাগবে না। ”
-“ব্যথা নেই জানি।নাফিস বলার পর আমিই তো ব্যথানাশক দিয়ে গেলাম।কিন্তু ফুলে আছে যে।”
-“আস্তে আস্তে কমে যাবে।তবে ব্যথা তো বড় কথা নয় আপু অপমানটাই আসল।”
মুক্তা গভীরভাবে আমার মুখের দিকে তাকালেন।বললেন,”কি হয়েছে আমাকে খুলে বলতো?..নাফিস তো এমন করার ছেলে না? আমি তো ওকে চিনতেই পারছি না।এমন জঘন্য কাজ ও করলো কি করে?”
-“উনি আপনাকে বলে নি?”
-“না।তোকে রুমে নিয়ে ঢোকার সময়ই আমি দেখে বুঝে গেছি যে কিছু একটা হয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম বারবার কিন্তু কিচ্ছু বললো না।থম মেরে বসে রইলো।”
আমি আপুকে পুরো কাহিনী খুলে বললাম।বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছি।
মুক্তা আপু কিছু বললেন না।চুপ করে রইলেন।
আমি আহত স্বরে বললাম,”আমি রাগের মাথায় উনাকে থাপ্পড় দিয়ে ফেলেছি আপু।আমি নিজেও বুঝতে পারি নি এমনটা হবে।বিশ্বাস করুন আমি কারো সাথে কোনদিন এত খারাপ ব্যবহার করি নি,গায়ে হাত তোলা তো অনেক বড় ব্যপার।কিন্তু তখন নিজেকে সামলাতে পারি নি।আমি নিজেও ভীষণ ভাবে অনুতপ্ত আপু।নাফিস ভাই আমার বয়সে বড় উনার গায়ে হাত তোলা আমার একদমই উচিৎ হয় নি!
-“একটা কথা বলি তনু?”
আমি মাথানাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালাম।মুক্তা আপু বললেন,”তুই নাফিসের সাথে যেমন বিহেভ করেছিস তুই কি আসলে তেমন?..না!তুই মোটেও তেমন না।হঠাৎ করে এমন করে ফেলেছিস!!কিংবা রাগের মাথায় যেমনই হোক।আসল কথা হচ্ছে তুই এমন না।আমরা সবাই জানি।”
আমি আপুর কথার মানে বুঝতে পারলাম না।মুক্তা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,”নাফিসের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ব্যপার।তুই ওকে যেমন ভাবছিস ও আসলে তেমন না।পুরোপুরি আলাদা।আমি কি করে বুঝতে পেরেছি জানিস? কারণ ওকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে চিনি।কোন মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করার মত ছেলে ও না।আসলে এমন অনেক সময় হয় যেটা আমরা নিজেরাও কল্পনা করতে পারি না এমন কিছু হয়ে যাবে।কিন্তু হয়ে যায়।যাই হোক!ভুল তোদের দুজনেরই ছিলো।আমি জানি তুই নাফিসকে অনেক খারাপ ভাবছিস,ভাবারই কথা তবে ও কিন্তু খারাপ মানুষ না।প্রথমে আমার অনেক রাগ হয়েছিলো,এখনও হচ্ছে!সামনে থাকলে আরো কয়েকটা দিতাম গালে।তবে হ্যাঁ!আমি কিন্তু একটাও মিথ্যে কথা বলি নি।”
মুক্তা আপুর কথাগুলোয় যুক্তি ছিলো কিন্তু তবুও সেদিনের পর থেকে আমি নাফিস ভাইকে
পুরোপুরি ইগ্নোর করা শুরু করে দিলাম।পুরোপুরি মানে পুরোপুরি।
যদিও তার সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক সেই পর্যায়ে নয় তবুও তাকে দেখলে অপমানের কথা মনে পড়ে যেত।
কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে একেবারে নিষ্ঠার সাথে ইগ্নোর করলাম।সেদিন রাতের বেলা খেতে বসে নাফিস ভাই খাবারে পানি ঢেলে উঠে গেলেন।সবাই বসে আড্ডা দেওয়ার সময় আমি গিয়ে বসতেই উনি উঠে গেলেন।আমি পাত্তা দিলাম না।তারপর আর উনার সাথে আমার দেখা হয় নি।
আপু,ইমতিয়াজ ভাই দুজনে নিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম আমরা।আগের দিন আসার কথা থাকলেও মুক্তা আপু আর ইমতিয়াজ ভাইয়ার মা আসতে দিলেন মা। ইনায়াজ ভাই খাওয়াদাওয়ার পরই গতকালই চিটাগাং চলে গেছেন।
দেখতে দেখতে আপুর বিয়ের ছয়দিন হয়ে গেলো।মেহমানরা সবাই চলে গিয়েছে।ভাইয়াও চলে গিয়েছে।ভাইয়া আগেই বলেছিলো মাত্র চারদিনের ছুটি নিয়ে এসেছিলো ওরা।বাসায় শুধু আমি,ইমু আর বাবা,মা আর রুনু মানে আমাদের কাজের মেয়ে।বাবারও অফিস খোলা হয়ে গিয়েছে।ইমু কালকে চলে যাবে বলছে।সামনে ওর টার্ম ফাইনাল আছে।
আমি আমার ঘরে চুপচাপ বসে আছি।আপু চলে যাওয়াতে বাড়িটা বেশ ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।রুনু এসে আমার ঘরে চা দিয়ে গেলো।আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম ইমু কি করছে।
রুনু বললো,”ছোটমামা কম্পুটারে কি জানি করে!” আমি ধমক দিয়ে বললাম,”তোকে কতবার বলেছি কম্পুটার বলবি না?ওটা কম্পিউটার!মনে থাকবে?”
রুনু আমার কথা শুনে শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো।আমি জানি সে আবার একই ভুল করবে। ও বেরিয়ে গেলে আমি চা শেষ করে ইমুর সাথে গল্প করার জন্য ওর ঘরের দিকে গেলাম।ইমু পড়ার টেবিলের চেয়ারের ওপর পা তুলে বসে ল্যাপটপে আপুর বিয়ের ছবি দেখছে।
আমাকে দেখে হাসিমুখে বললো,”আপু?এসো ভেতরে এসো।” আমি ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর বসলাম।
ইমু একটা একটা করে আমাকে ছবিগুলো দেখাচ্ছে।ইনায়াজ ভাইয়ের অনেক গুলো ছবি আছে।নাফিস ভাইয়েরও আছে। ইমুকে বললাম,”তুই যাওয়ার আগে আপুর বিয়ের ছবিগুলো আমাকে দিয়ে যাস।”
ইমু বললো,”এখানে তো বাইরের অনেকের ছবি আছে আমি সেগুলো আলাদা করে তারপর তোমাকে দেবো, ঠিক আছে?”
আমি কিছু বললাম না।কিন্তু মনে মনে ভয় হচ্ছে ও যদি আমাকে ইনায়াজ ভাইয়ের ছবিগুলো না দেয়?” মনটা ভার হয়ে গেলো।কিন্তু ইমুকে বুঝতে দিলাম না।হঠাৎ ইমু চেঁচিয়ে বললো,”আপু দেখো,তোমার ছবিটা ভীষণ সুন্দর হয়েছে।একদম বউ বউ লাগছে তোমাকে। ”
ইমুর কথা শুনে আমি ছবির দিকে তাকালাম। ছবিটা দেখেই আমার চোখ আটকে গেলো।হলুদের দিন তোলা ছবি।ছবিটাতে আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছি।যতদূর মনে পড়ে তাতে মনে হয় নাচ শেষ করে স্টেজ থেকে নামার পর ছবিটা তোলা হয়েছে।আসলেই অনেক ভালো হয়েছে ছবিটা।সমস্যা শুধু একটা যে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে আমার পেটের একাংশ দেখা যাচ্ছে।আমি ভালো করে পিনআপ করেই পড়েছিলাম।নাচতে গিয়ে বোধহয় খুলে গেছে।
কিন্তু আমার মাথায় আসছে না ছবিটা তুললো কে?
যেই ফটোগ্রাফারকে নিয়ে আসা হয়েছে উনি তুলেছে?আমি দ্বিধা সংকোচ রেখে শেষমেশ ইমুকে বললাম,”ছবিগুলো আসলেই অনেক ভালো হয়েছে।কে তুলেছে?” আমার কথা শুনে ইমু বেশ উচ্ছ্বাসিত গলায় বললো,”এগুলো ইনায়াজ ভাই তুলেছে।উনি ছবি তুলবে আর ভালো হবে না সেটা তো অসম্ভব ব্যাপার তাই না।”
ওর কথা শুনে আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।অজানা উত্তেজনায় বুকের ভেতরটায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।কেন এই উত্তেজনা কাজ করছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না।কিন্তু আবার ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিতেই তাকাতেই আমার মুখটা কালো হয়ে গেলো।তিথীর একটা সলো পিক।তারপর দেখলাম,তিশা,রুহি সবারই মোটামুটি সলো পিক তোলা হয়েছে।এমনকি ছেলেদেরও।সবগুলো ছবিই বেশ ভালো হয়েছে।
কিন্তু কেন জানিনা মনটা খারাপ হয়ে গেলো।একটু আগের উত্তেজনা নিমিষেই কষ্টে রূপান্তরিত হলো। তারমানে উনি সবারই আলাদা ছবি তুলেছেন? আমার প্রতি উনার কোন ফিলিংসই নেই সেটা আমি জানি, কোনদিনই ছিলো বলেও আমার মনে হয় না।তবুও একটু আগে ছবিটা দেখে যেই ক্ষীণ আশা জন্মেছিল একনিমিষেই সব উধাও হয়ে গেলো।
হঠাৎ করেই যেন নিজেকে বড় ছোট মনে হচ্ছে।একটা প্রশ্নই বারবার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।আমি কিসের জোরে উনাকে পাওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছি?
উনার যেই পরিমান যোগ্যতা তাতে উনি চাইলেই যে কোন মেয়েকে উনার জীবনসঙ্গী করতে পারেন।সেখানে আমি নিতান্তই তুচ্ছ,আহামরি সুন্দরী নই,তারওপর আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারও মোটামুটি টাইপ।পশগার্ল টাইপও নই,তবে?”
উনাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার সাজে না!!কিন্তু মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারলাম না।ইমু একের পর এক ছবি দেখাচ্ছে আমার সেদিকে খেয়াল নেই।আমার মনে যেই ঝড় উঠেছে সেই ঝড় আমার দেহ,মন সমস্ত সত্তাকে একেবারে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিচ্ছে।
আমি ওর ঘর থেকে উঠে চলে এলাম।
পরদিন ইমু যাওয়ার আগে বললো,”সরি আপু,আসলে ছবিগুলো সিলেক্ট করার কথা মনেই ছিলো না।তুমি দেখে বাড়তি ছবিগুলো বাদ দিয়ে দিও।”
কেন জানিনা সেদিন ইমু যাওয়ার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন কাঁদলাম।ইমু হয়ত ভাবছে আপু নেই একলা বাসায় থাকবো তাই কষ্ট হচ্ছে।ও যতক্ষণ না আমার কান্না থামছিলো আমার কাছেই বসে ছিলো আর বারবার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো।ইচ্ছেমত কাঁদলাম সেদিন।এই কান্নাটা আমার ভীষন জরুরি ছিলো।
এরপর দেখতে দেখতে ছয়মাস কেটে গেলো।ঘর প্রায় বলতে গেলেই ফাঁকা।রুনুকেও ওর বাবা এসে নিয়ে গেছে।ফাইনাল পরীক্ষা শেষে বিসিএস ও দিলাম।এবার বেশ জোর দিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি।পরীক্ষাও ভালোই হয়েছে।তবে রেজাল্ট এখনো বেরোয় নি।বাসায় বসে অবসর সময় কাটে।প্রায় প্রতিদিনই ইনায়াজ ভাইয়ের ছবিগুলো একবার করে দেখি।উনার হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখলেই মনটা ভরে যায়।মাঝে মাঝে উনার ছবির দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগে।মনে হয় যেন উনি আমার দিকে চেয়ে আছে।
এর মাঝখানে হঠাৎ একদিন আপু ইমতিয়াজ ভাইয়াকে নিয়ে বাসায় হাজির হলো।আমাকে দেখেই আপু শাসন করে বললো,”কি রে খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম করছিস নাকি?এত রোগা হয়ে গেছিস কেন?”
মা অনেক কষ্টে আপুকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে পরীক্ষা চাপে আমার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেছে,অন্য কিছু না।
আপু শান্ত হলে আমি ওকে আড়ালে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,”কোন খবর না দিয়ে হুট করে এলে যে?কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?”
আপু মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,”কোন সমস্যা নেই তবে তোর জন্য একটা সুখবর আছে।এখন না পরে বলবো।”
রাতে বাবা ফিরলে আপু ইমতিয়াজ ভাইয়া,মা সবাই কি যেন আলাপ করছে আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো।আমি বুঝতে পারলাম না ওরা কি নিয়ে আলোচনা করছে,আমাকে দেখেই বা চুপ হয়ে গেলো কেন?
যাইহোক ব্যাপারটা নিয়ে আর বেশি মাথা ঘামালাম না।পরেরদিন দুপুরবেলা দেখলাম ইনায়াজ ভাই,ইমু ওরাও বাসায় এলো।আমি বুঝতে পারছি না এসব কি হচ্ছে? আপুকে জিজ্ঞেস করলে বলে আস্তে আস্তে সব জানতে পারবি।
সন্ধ্যের দিকে জানতে পারলাম আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে।কথাটা শুনেই মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!! এতকিছুও হয়ে গেলো অথচ আপু একবারও আমাকে জানালো না?
সেইজন্যেই বাবা ইমতিয়াজ ভাইয়া আপু,ইনায়াজ ভাই,ইমু সবাইকে খবর দিয়ে এনেছে।
ইমতিয়াজ ভাইয়া যখন উনার ফ্যামিলি নিয়ে আপুকে দেখতে এসেছিলো তখনও বাবা সবাইকে খবর দিয়েছিলো। বাবা সবসময়ই যেকোন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবাইকে খবর দেন,ইনায়াজ ভাইকেও।উনাকে বাবা ভাইয়ার মতই ভরসা করেন।ভাইয়ার ট্রেনিং থাকার কারনে ও আসতে পারে নি।বাবাকে দেখলাম ইনায়াজ ভাই আর ইমুকে ডেকে গভীরভাবে আলোচনা করছে।ইমতিয়াজ ভাইয়াও সাথে আছে।
সন্ধ্যের দিকে আপু আমাকে সাজাচ্ছে।আমি ড্রেসিংটেবিলের আয়নার ভেতর দিয়ে তাকিয়ে আপুকে করলাম, “পাত্র কে আপু?” আপু আমার কথার জবাবে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,”তুই চিনবি!”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে এবার সরাসরি আপুর দিকে তাকালাম।আপু মিটমিট করে হেসে বললো,”নাফিস।ইমতিয়াজ এর বন্ধু।বিয়েতেই তোকে দেখে ওর পছন্দ হয়েছে।মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।”
আপুর কথা শুনে আমি রিতিমত বেশ বড়সড় একটা শক খেলাম।ঘটনাটা এতদূর গড়াবে আমি ভাবতেই পারি নি।বিয়ের পর এতগুলো দিন গেলো অথচ উনার কথা একবারও মাথায় আসে নি।আমার চেহারায় কালো মেঘ জমতে শুরু করলো।মুখ থমথমে।আপু জিজ্ঞেস করলো,”কি হয়েছে?” আমি জবাব দিলাম না।