#মনোপ্যাথি
#পর্ব:২স
#অরিত্রিকা_আহানা
ভাইয়ার সাথে আরো কয়েকজন বন্ধু বান্ধব এসেছে।ওরা সবাই স্টেজের দিকে গেলো।ইনায়াজ ভাইকে কে দেখলাম ক্যামেরা নিয়ে আপুর ছবি তোলা শুরু করে দিয়েছে।আমি আর স্টেজের দিকে গেলাম না।
দূরে দাঁড়িয়ে উনার ছবি তোলা দেখছিলাম, হঠাৎ করে আমার মামাত বোন রুহি এসে বললো, “আপু তুমি এখানে কি করছো?এসো আমাদের সাথে ছবি তুলবে।তাসফি আপু তোমাকে ডাকছে।”
আমি ওকে বললাম, “তোরা ছবি তোল,আপু একটু পরেই আসছি।”
কিন্তু রুহি কিছুতেই শুনলো না।এই মেয়ে হয়েছে একেবারে একরোখা টাইপ।যা বলেছে সেটাই করতে হবে,তা না হলে চিৎকার চেঁচামেচি করে হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দেবে।ও আমার হাত ধরে স্টেজের দিকে টেনে নিয়ে গেলো।
আমাকে দেখেই আপু ধমক দিয়ে বললো, “এতক্ষণ লাগে রেডি হতে?সেই কখন থেকে তোর জন্য বসে আছি।”
ইনায়াজ ভাই ক্যামেরা হাতে নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি লজ্জায় উনার সামনে আর কিছু বলতে পারলাম না।আপু উনাকে ডাক দিয়ে বললো,”আমার আর তনুর সুন্দর দেখে কয়েকটা ছবি তুলে দাও তো ইনায়াজ ভাই।” আপুর কথা শুনে উনি এগিয়ে এলেন, ক্যামেরাতে ক্লিক করতেই আমি আপুকে বললাম, “তুমি তোলো,ইমতিয়াজ ভাইয়া তোমার সলো পিক পাঠাতে বলেছেন।”
আপু আমাকে ধমক দিয়ে বললো, “আমার সলো পিক অনেক তোলা হয়েছে,সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।তুই আয় বোস,আমার পাশে।”
ইনায়াজ ভাই একের পর ছবি তুলে যাচ্ছেন আমি লজ্জায় ক্যামেরার দিকে তাকাতে পারছি না।সবগুলো ছবিতে মাথা নিচু করে আছি।শেষে আপু বিরক্ত হয়ে বললো, “কনে তুই না আমি?তুই এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”
আপুর কথা শুনে ইনায়াজ ভাই বোধহয় একটু হাসলেন।আমি আর বসে থাকতে পারলাম আপুর হাজার বারণ সত্বেও স্টেজ থেকে নেমে চলে এলাম।
একটু পরই হলুদের প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেলো।একে একে সবাই হলুদ লাগাচ্ছে।আমি শুধু সবার অলক্ষে ইনায়াজ ভাইকে দেখছি।উনি একপাশের চেয়ারে বসে ফোনে কি যেন দেখছিলেন।
হঠাৎ রুহি সহ আমার আরো দুতিনটে কাজিন এসে উনার গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো।কিন্তু সর্বনাশ হলো ওরা হলুদ লাগাতে গিয়ে উনার পাঞ্জাবিতে হলুদ ফেলে দিয়েছে।উনার পাঞ্জাবিতে হলুদ লাগায় ওরা সবাই ভয়ে দূরে সরে গেলো।উনি প্রথমে ব্যাপারটা বুঝলেন না।শেষে রুহিকে ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকাতে দেখে চট করে রুহিকে কোলে তুলে নিয়ে নিলেন।
বললেন, “রুহি দেখছি বেশ দুষ্টু!আমার পাঞ্জাবিতে হলুদ মাখিয়ে দিলো।এবার কি শাস্তি দেওয়া যায় রুহিকে?”
রুহি সেই আগের মত চোখ বড়বড় উনার দিকে চেয়ে আছে।ওকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি হেসে ফেললেন।তারপর রুহির নাকটা একটু টিপে দিয়ে ওর গালে একটা চুমু দিলেন।রুহির ভয় কিছুটা কমেছে।উনি পকেট থেকে চকলেট বের করে সবার হাতে হাতে একটা একটা করে চকলেট ধরিয়ে দিলেন।চকলেট পেয়ে রুহি কোল থেকে নেমে এক দৌঁড় দিলো স্টেজের দিকে।ওর দেখাদেখি বাকিরাও একই কাজ করলো।
উনি পাশে থাকা টিস্যুবক্স নিয়ে পাঞ্জাবীর হলুদগুলো ঘষে তোলার চেষ্টা করছে।কালো পাঞ্জাবিতে দাগ বোঝা যাওয়ার কথা না।তবুও উনাকে দেখলাম বেশ ঘষাঘষি করছে।আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উনার কান্ড দেখছিলাম এমন সময় ইমু এসে আবার আমার হাত ধরে স্টেজের দিকে নিয়ে গেলো আপুকে হলুদ লাগানোর জন্য।আমাকে দেখে আপু বেশ বিরক্ত হয়ে বললো,”হলুদ লাগানো শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুই আমার পাশ থেকে উঠবি না।একটু পরপর কোথায় হারিয়ে যাস ?”
-“ছাদেই ছিলাম।এদিকে শোরগোল দেখে দূরে দাঁড়িয়েছিলাম।”
আমি বাধ্য মেয়ের মত আপুর পাশে বসে রইলাম।এরপর একএক করে ভাইয়া, ইমু,ওর বন্ধুরা সবাই আপুকে হলুদ লাগিয়ে দিলো,নাহিদ ভাইয়া(উনার কথা পরে বলছি) আপুকে হলুদ লাগানোর সময় উনার স্বরচিত কবিতার আবৃতি করলেন,
“হে,প্রিয়তমা অপরূপা,অনন্যা
পূর্ণিমারচাঁদ বুঝি ধরনীতে আসিয়াছে নামি?
ওহে প্রিয়া,
মোর সকলই যে তুমি করিয়া নিলে চুরি
আহা!কি রূপ!মরি,মরি!”
উনার কবিতা শুনেই সবাই হেসে ফেললো।
আপুকে লাগানোর সময় আমার গালেও একটু হলুদ লাগিয়ে দিলো।আমি উনার দিকে তাকিয়ে নাকমুখ কুঁচকে ফেললাম,তার ফলস্বরূপ উনি আমার নাকেও একটু হলুদ লাগিয়ে দিলেন।আমি সামনে থাকা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে তাড়াতাড়ি আমার গালে লাগানো হলুদ মুছে টিস্যুটা উনার দিকে ছুঁড়ে মারলাম।উনি টিস্যুটা ক্যাচ ধরে ঠিক আমার কপাল বরাবর সই করলেন।আমি আবার উনাকে সই করে মারলাম।ইনায়াজ ভাই যে এদিকে আসছিলো আমি সেটা খেয়াল করিনি।টিস্যুটা গিয়ে পড়লো উনার বুক বরাবর।উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমি লজ্জায় যেন দেখতেই পাই নি এমন ভান করে বসে রইলাম।
এরমধ্যেই ইমতিয়াজ ভাইয়ার ভিডিও কল আমাকে অস্বস্তি থেকে বাঁচিয়ে দিলো।ইনায়াজ ভাই আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন।আমি ফোনটা আপুকে ধরিয়ে দিলাম।আপু বেশিক্ষণ কথা বলল না।ইমতিয়াজ ভাইয়াকে ধমক দিয়ে ফোন রেখে দিলো।আমার ভালোই লাগছে ইমতিয়াজ ভাইয়া আর আপুর দুষ্টুমিষ্টি খুনসুটি দেখতে।আমি ফিসফিস করে আপুকে বললাম, “ইমতিয়াজ ভাইয়ার যা অবস্থা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে বিয়ের পর তোমাকে একদিনের জন্যেও কোথায় যেতে দিবে না।” আপু আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসলো।
সবার হলুদ লাগানো শেষ হতেই ইনায়াজ ভাই এলো আপুকে হলুদ লাগাতে।হলুদ লাগানোর সময় আড়চোখে কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়েছিলেন।আমার তখন লজ্জায় মরে যাই!মরে যাই অবস্থা।
হলুদপর্ব মোটামুটি শেষ।এবার নাচগানের পালা।শুরু হলো আসল হৈচৈ।সাউন্ড বক্সের বিকট আওয়াজে মনে হচ্ছে যেন পুরো বিল্ডিংটাই কাঁপছে।আমি ইমুকে ইশারা দিয়ে ভলিউমটা একটু কমিয়ে দিতে বললাম।ইমু ভলিউমটা একটু কমাতে নিলেই কাজিনরা সবাই বাধা দিলো।সবার এক কথা,বিয়ে বাড়িতে হৈচৈ না থাকলে মজা আছে নাকি?
প্রথমেই ছোটদের নাচগান। বেশি রাত হলে ওরা হয়ত ঘুমিয়ে পড়তে পারে তাই।রুহি আর (পিয়ু) ছোটমামার মেয়ে ওরা দুজন স্টেজে উঠতেই সবাই জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে দিলো।রুহি ইনায়াজ ভাইয়ার দিকে তাকাতেই উনি ওদের দিকে তাকিয়ে একটা ফ্লাইং কিস দিলেন।রুহির সাথে উনার অনেক আগে থেকেই বেশ ভাব।রুহি আমাদের বাসায় এলে প্রায়ই ভাইয়াকে দিয়ে উনাকে ফোন করে বাসায় আসতে বলেন।ব্যস্ততার কারনে উনি
সবসময় আসতে না পারলেও প্রায়ই আসতেন।
ওদের নাচ শেষ হতেই এবার আরো কয়েকটা পিচ্চিকে স্টেজে উঠানো হলো।ভালোই লাগছে ওদের নাচ দেখতে।
ছোটদের নাচ শেষ,এবার বড়দের পালা।ইমুর বন্ধুরা কয়েকজন উঠলো।ইমু স্টেজে উঠে ভাইয়া আর ইনায়াজ ভাই দুজনকে টেনে নিয়ে গেলো।নাহিদ ভাইয়া নিজে থেকেই স্টেজে উঠে গেলো। আমি বসে বসে ওদের কান্ড দেখছি।ওরা স্টেজে উঠে এলোপাথাড়ি লাফাচ্ছে।বাকিরা ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।অনেক্ষন পর শেষে ক্লান্ত হয়ে স্টেজ থেকে নামলো।
ওরা নামতেই অয়ন(বড়ফুপির ছেলে) সবাইকে বললো এবার, “তনু আপুর পালা।”
যদিও আমি নাচ তুলে রেখেছিলাম, ইনায়াজ ভাইয়ার সামনে নাচবো কি করে সেই লজ্জাতেই না করে দিলাম।কিন্তু ওরা ছাড়লো না।সবাই মিলে জোর করে আমাকে স্টেজে তুলে দিয়ে মিউজিক প্লে করে দিলো।
শেষমেশ বাধ্য হয়ে নাচ শুরু করলাম।ভয়ে আমার বুক কাপঁছে।নাচ ভুলে যাবো কি না সেই ভয়ে আছি।হঠাৎ দেখলাম ইনায়াজ ভাই ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদের অন্যপাশে সরে গেলো।
আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।নাচ শেষ হতেই ইমু আরেকটা গান প্লে করে দিলো।ওকে গতকাল বলে রেখেছিলাম আমি স্টেজে উঠলে এই গানগুলো প্লে করার জন্য।কিন্তু এখন যে ওকে বারণ করবো সেই সুযোগও নেই।একটুপর ইনায়াজ ভাই আবার এসে বসলেন।উনার হাতে ক্যামেরা।আমি মনে মনে দোয়া করছি কখন গান শেষ হবে আর কখন রেহাই পাবো এই যন্ত্রনা থেকে।নাচের সময় একবারও উনার দিকে তাকালাম না লজ্জায়।তবে না তাকালেও উনি যে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি,তাতে করে আরো বেশি লজ্জা লাগছে।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো,মানে গান শেষ হলো।সবাই হাততালি দিয়ে বলছে আরেকটু নাচার জন্য।কিন্তু আমি না করে দিলাম।এমনিতেই বেশ হাঁপিয়ে গেছি।
আমি স্টেজ থেকে নামতেই ইমু এসে আমার হাতে পানির বতল ধরিয়ে দিয়ে বললো, “সাথে সাথে খাবি না আপু।আগে একটু রেস্ট নিয়ে তারপর খাবি।”
ডাক্তার মানুষ!সবকিছুতে ডাক্তারি বিদ্যা না কপচালে এদের পেটের ভাত হজম হয় না।আচ্ছা ইনায়াজ কি এমন?? কি জানি?
যাইহোক,আমি ইমুর কথা মত চেয়ারে বসে শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিলাম।তারপর একটু রেস্ট নিয়ে ঢকঢক করে পুরো বোতল পানিই শেষ করে ফেললাম।ঘামে ভিজে এক অবস্থা হয়ে গেছে।মেকাপ উঠে গেছে কি না কে জানে?
আমি অবশ্য বেশি মেকাপ করি নি।তবুও যেগুলো দিয়েছি সেগুলোও বোধহয় উঠে গেছে।
আমার ফুপাতো বোন অনু আপু আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উনাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম আমার মেকাপ ঠিক আছে কি না।ব্যস্ততার কারণে উনি আমাকে ঠিকমত দেখলেনই না।শুধু বললেন,”ঘেমে তো একেবারে চুবচুবে হয়ে গেছি।তবে খারাপ লাগছে না।বউ বউ লাগছে!”
-“চুল ঠিক আছে?”
উনি ভেংচি কেটে বললেন,
-“পাখির বাসা একেবারে।”
আপুর কথা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।সাধ করে খোঁপা করেছি।নিশ্চই চুলগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে।
আমি চুপিচুপি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম।আমার রুমের ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে প্রথমে নিজেকে কতক্ষন দেখলাম।আসলেই চুলগুলো সব এলোমেলো হয়ে গেছে।আমি খোঁপাটা খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলাম। খুলতে বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে।বিশেষ করে ক্লিপ গুলো খুলতে খুলতেই অনেকটা সময় লেগে গেছে।খোঁপা খুলে উঁচু করে চুলগুলো জুঁটি বেধে নিলাম।তারপর পরনের শাড়িটা চেইঞ্জ করে আলমারি থেকে কাঁচা হলুদ রংয়ের একটা থ্রি পিস বের করে পরে নিলাম।
ছাদে আবার যাবো কি না ভাবছি।দরজার কাছে আসতেই ইনায়াজ ভাইকে দেখলাম টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ডাইনিং টেবিলের সামনে এলো।উনাকে দেখেই আমি সরে গেলাম।উনি আমাকে খেয়াল করেন নি।উনার পরনে নীল একটা গেঞ্জি আর ট্রাওজার,পায়ে স্যান্ডেল। চুলগুলো ভেজা নিশ্চই শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।
কিন্তু আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না উনি নিচে এলেন কখন? আর দরজা খোলার সময় আমিই বা টের পেলাম না কেন? তারপর মনে পড়লো তাড়াহুড়োতে দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছি।নিজের এমন বোকামিতে নিজেই কিছুটা বিরক্ত হলাম।পুরো বাসায় কেউ নেই,অথচ আমি দরজা খোলা রেখে ভেতরে ঢুকে পড়লাম!গাধা না হলে কেউ এমন কাজ করতে পারে না!
আমি উকিঁ মেরে দেখার চেষ্টা করলাম ইনায়াজ ভাই কি করছে?
উনি টেবিলের ওপর থাকা পানির জগ থেকে একগ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেলেন।পানি খাওয়ার সময় উনার এডাম’স এপল টা উঠানামা করছিলো সাথে আমার হৃদপিন্ডটাও!প্যালপিটিশন শুরু হয়ে গেলো!পেটের ভেতর কেমন জানি করছে!উনার এই এডামস এপলটা আমাকে নেশার মত টানে!মারাত্মক সুন্দর একটা জিনিস!
তারপর টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে বাসার স্যান্ডেল পায়ে দিয়েই বেরিয়ে গেলেন।উনি বেরিয়ে গেলে আমিও আবার ছাদের দিকে গেলাম।
সিঁড়ির কাছে আসতেই আমাকে আবার থেমে যেতে হলো।ইনায়াজ ভাই ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন।পায়ের আওয়াজ পেয়ে পেছনে ঘুরতেই আমাকে দেখতে পেলেন।
উনি হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।বোধহয় ভাবছনে আমি নিচে কখন গেলাম?
আমি অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম।না পারছি উঠতে না পারছি নেমে যেতে।ওড়নার কোনা চেপে ধরে আঙুলের সাথে মোচড়াচ্ছি।উনি বুঝতে পেরে দরজার পাশে থেকে সরে আমাকে ভেতরে ঢুকার জায়গা করে দিলেন।আমি উনার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটা একটা সিঁড়ি পার করছি আর আমার হৃদস্পন্দন একহাজার গিগাহার্জ করে বাড়ছে।ছাদ থেকে গানের বিকট আওয়াজ আসার পরেও আমার মনে হচ্ছিলো আমার হৃদস্পন্দন তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর আওয়াজ করছে।
অবশেষে বাংলাদেশ মায়ানমারের বর্ডার পার করলাম আমি!মানে সিঁড়িঘর পেরিয়ে আমি ছাদে প্রবেশ করেছি।উনিও আমার পেছন পেছন ঢুকলেন।
রাত প্রায় আড়াইটা বাজে।সবাই এখনো চিৎকার চেঁচামেচিতে ব্যস্ত। বাবা তাড়া দিলেন তাড়াতাড়ি প্রোগ্রাম শেষ করার জন্য।পরদিন বিয়ে আজকে আপুকে এতরাত পর্যন্ত জাগিয়ে রাখা ঠিক হবে না।তবুও প্রোগ্রাম শেষ করতে করতে প্রায় সাড়ে তিনটা বেজে গেলো।
সবার ঘুমানোর ব্যবস্থা প্রায় আগেই করা হয়ে ছিলো।কিন্তু সমস্যা হলো ইনায়াজ ভাইয়েরা ঘুমাবে কোথায়? যেহেতু উনারা পরে এসেছেন তাই উনাদের ঘুমানোর জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা করা হয় নি।উনি অবশ্য বারবার করে বাবাকে নিষেধ করছিলেন ব্যস্ত না হতে।বিয়েবাড়িতে রাত জেগে থাকা যায়।বাবা শুনলেন না। ইমুর ঘরে উনাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো।ভাইয়ার ঘরে মা আগেই চাচুদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।
মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো আপুর ঘরে।আপুকে মা মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন।কারন এখানকার চেঁচামেচিতে আপু কিছুতেই ঘুমাতে পারবে না।
ফ্রেশ হয়ে এসে আমি অনু আপুর পাশে শুয়ে পড়লাম। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি ইনায়াজ ভাই কি কালকেই চলে যাবে?নাকি আরো কিছুদিন থাকবে।ইমুর ঘর থেকে হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে।ওরা সবাই নিশ্চই হাসাহাসি করছে।আমি চুপিচুপি উঠে গিয়ে ইমুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম উনারা কি নিয়ে হাসাহাসি করছে?
ইনায়াজ ভাই খুব ঠান্ডা গলায় মেপে মেপে কথা বলেন।উনার কথা বলার ধরনটাও অনেক বেশ আকর্ষণীয়,উনি কথা বলার সময় মিটমিট করে হাসেন!
আমি বাইরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি না।কিন্তু উনি কিছু একটা বলার পরেই সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সেটা বুঝতে পারলাম।উনার গলা শুনেই আমার বুকটা দুরুদুরু করা শুরু করে দিলো।হার্টবিট বেড়ে গেলো।আমি দরজায় পাশে দাঁড়িয়ে আটকে রাখা নিশ্বাসটা ছেড়ে দিলাম।আর তখনই পৃথিবীর সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনাটা আমার সাথে ঘটলো।ইনায়াজ ভাই দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন!আমাকে দেখে হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন।আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না আমার কি করা উচিৎ!দশ সেকেন্ডের মত হ্যাং মেরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
-“কিছু বলবে তনু?”
আমি উনার কথার জবাব দিতে পারলাম না। একদৌঁড়ে আপুর রুমে চলে এলাম,লজ্জায় পুরো শরীর শিরশির করছে।কি করলাম আমি??
মুক্তিবেগ অর্জন করতে পারলে এই মুহূর্তে পৃথিবীর বাইরে চলে যেতাম!…কি লজ্জা!কি লজ্জা!