#মনোপ্যাথি
#অন্তিম_পর্ব
#অরিত্রিকা_আহানা

ক্লান্ত হয়ে যখন বাসায় ঢুকলাম।ইনায়াজ ভাই তখন ফোনে কথা বলছিলেন।উনি যে বাসায় এসেছেন আমি তা জানতাম না!
আমার পরনে সাদা সুতির শাড়ি!গায়ে সাদা শাল জড়ানো।রাস্তায় রাস্তায় ঘুরার ফলে আমার স্বাস্থ্য বেশ ভেঙ্গে গেছে।এখন তো কেউ যত্ন করার মতও নেই।ইনায়াজ ভাই বজ্রপাতে চমকে যাওয়ার মত শক্ত হয়ে আমার দিকে তাকালেন।ধাক্কা সামলাতে পাশে চেয়ারের হাতল চেপে ধরলেন।

আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।ধীরপায়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম।ইনায়াজ ভাই ধপ করে সোফায় বসে পড়েছেন।তার অসহায় মুখ আমারও সহ্য হলো না।কিন্তু কিছু করার নেই।আমি আর আগের তনু নই!সেদিন নাফিসের সাথে সাথে তনুও মরে গেছে।এই তনু আগের মত চুপিচুপি ইনায়াজ ভাইয়ের কথা ভেবে হাসে না,কারো কথা শুনে মন খারাপ করে না,খাওয়া নিজে ঝামেলা করে না।এই তনু মরার মত বেঁচে আছে।

একটুপর বুঝতে পারলাম ইনায়াজ ভাই কেন এসেছেন?.ভাইয়ার আকদ!

প্রবল ধাক্কা খেলাম!কেউ আমাকে কিচ্ছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না?এত অবহেলা সহ্য করতে পারছি না। আমার পেটে এই ছোট্ট প্রাণটা না থাকলে আরো আগে সুইসাইড করতাম আমি।কিন্তু নিজেকে সামলেও নিলাম।এখন আর এসব নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না।তবুও বেহায়া তনুর বেহায়া অশ্রু বাধা মানলো না।অনবরত ঝরলো!

আকদের দিন সেন্টার থেকে ফিরে রাত্রে সবাই মিটিংয়ে বসলোভাইয়ার অনুষ্ঠানে আমাকে নেওয়া হয় নি।এদিকে আমাকে একা বাসায় রেখে ইমু কিছুতেই যেতে রাজী হলো না।বাবা অবশ্য বাসায় ছিলেন।
আজকে আবার সেই আগের মত মিটিং বসেছে।বাবা সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসেছেন।আমি পানি খেতে এসে আড়াল থেকে দেখলাম ভেতরে সবাই বসে নাশতা করছে,অথচ আমাকে একটাবার কেউ ডাকলো না।প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে ঘনঘন খেতে মন চায়!কিন্তু..থাক!!
কোনায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ চোখের পানি ছেড়ে দিলাম।কুকুর বিড়ালের সাথেও বোধহয় এমন আচরণ কেউ করে না।আমি তো একটা মানুষ!

হঠাৎ ইনায়াজ ভাই উঠে এসে আমার হাত চেপে ধরলেন।আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে সবার মাঝখানে নিয়ে দাঁড় করালেন।তারপর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,”আংকেল আপনার অনুমতি থাকলে আমি আজই তনুকে বিয়ে করতে চাই।”

ইনায়াজ ভাইয়ার কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো।
আচমকা এমন প্রস্তাব শুনে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।আমি শুধু শুন্য দৃষ্টিতে ইনায়াজ ভাইয়ের দিকে চেয়ে রইলাম।কি হচ্ছে আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না!
উনি চোখেমুখে সেই দৃঢ়তা নিয়ে বাবাকে বললেন, “আপনি চাইলে আমি যে কোন শর্তে রাজী আছি।আমার শুধু তনুকে চাই।”
বাবা উনার কথা শুনে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।নিজের মেয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত সুখের কথা ভেবে ছোটবাচ্চাদের মত ইনায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ডুঁকরে কেঁদে উঠলেন।শেষে অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে বললেন,”আমার কোন আপত্তি নেই বাবা!তুমি আমার মেয়েটাকে বাঁচাও!”

কিন্তু আমি বাধা দিলাম।দৃঢ় গলায় বললাম “আমার আপত্তি আছে।আমি এই বিয়েতে কিছুতেই রাজি না।”
ইনায়াজ ভাই আমার কথা না শোনার ভান করে বাবাকে বললো,” আপনি কাজি ডেকে বিয়ের ব্যবস্থা করুন,আমি আজই ওকে বিয়ে করবো।”
আমি আবারও চোখমুখ শক্ত করে বললাম, “আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না।”

আমি আর দাঁড়ালাম না সোজা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম।মাথাটা ঘুরছে,সাথে একটা অসহ্য যন্ত্রনাও হচ্ছে।ইনায়াজ ভাই অনবরত দরজা ধাক্কাচ্ছে।বারবার অনুরোধ করছে উনার কথা শোনার জন্য।কিন্তু আমি দরজা খুললাম না।কারো দয়া আমার চাই না।আমার মত একটা মেয়েকে উনি হঠাৎ কেন বিয়ে করতে চাইবেন?আমাকে দয়া করছে উনি!নিজেকে বড্ড ছোট মনে হচ্ছে।এতগুলো দিন যাকে মন প্রান দিয়ে চেয়েছি সে আজ আমার এমন পরিস্থিতিতে আমাকে দয়া করতে চাইছে।এতদিনও উনি বুঝতে পারলো না আমার ভালোবাসায় কখনোই দয়ার কোন স্থান নেই।
যে গেছে সে আর কখনো ফিরে আসবে না।সে আমাকে তার ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে চেয়েছিলো।কিন্তু আমার দোষে আমি তাকে হারিয়েছি।আমি কারো দয়া পাবারও যোগ্য নই।
ইনায়াজ ভাই বারবার অনুনয় করছে দরজাটা খুলে দেওয়ার জন্য।আমি ঠোঁট কামড়ে কান্না চেপে উনাকে বললাম, “আপনি চলে যান ইনায়াজ ভাই।প্লিজ আপনি চলে যান।”
উনি দৃঢ় গলায় বললেন,”তুমি দরজা না খুললে আমি এখান থেকে এক পাও নড়বো না।”

আমি হতাশ হয়ে দরজা খুলে দিলাম।চোখের পানি কিছুতেই আটকে রাখতে পারছি না।ইনায়াজ ভাইয়া ভেতর এসে দাঁড়ালেন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “কেন এসেছেন ইনায়াজ ভাই?”
ইনায়াজ ভাইয়া আমার কথা শুনে নরম গলায় বললেন, “আমারই তো আসার কথা ছিলো।”

আমি শুন্য দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, “বিশ্বাস করো তনু আমি নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছি না।আমি তোমাকে এত ভালোবেসেছিলাম বলেই বোধহয় নাফিসের….আমার ভালোবাসার কি সত্যিই এত জোর?
আমি উনার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললাম, “ইনায়াজ ভাই!”
উনি আবারও অপরাধির মত করে বললো, “হ্যাঁ তনু।আমি তোমাকে ভালোবাসি।কখনো বলা হয় নি।তুমি আমার চোখের দিকে তাকাতে পারো না লজ্জায় তাই আমি কখনো তোমার চোখে চোখ রাখি নি, কেন জানো?কারন আমি চেয়েছিলাম তুমি যেন নিঃসংকোচে আমাকে তোমার হরিনীর মত চোখদুটো দিয়ে আমাকে ভালোবেসে যেতে পারো!তুমি জানো কতবার তোমার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে শুধু তোমাকেই দেখেছি!মনে মনে কত সহস্রবার আউড়েছি, “আমি তোমাকে ভালোবাসি তনু!” কিন্তু বলা হয়ে ওঠে নি,সেটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল।লুকিয়ে লুকিয়ে ভালোবাসা উপভোগ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু হস্পিটালে যেদিন তোমার মুখ থেকে শুনলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো বিশ্বাস করো আমার সমস্ত পৃথিবী আলোকিত হয়ে গেছিলো। আমি সেদিনই আংকেলের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তখন জানতে পারি আংকেল ওদেরকে কথা দিয়ে ফেলেছে।যেই মানুষটা আমাকে নিজের ছেলের মত বিশ্বাস করে তার মুখটা আমি কি করে ছোট হতে দিতাম বলো?তাই তোমার বিয়ের খবর শুনেই মিথ্যে কাজের অজুহাত দেখাতে শুরু করলাম।কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার দোষেই তোমাকে এতটা সাজা ভোগ করতে হয়েছে।কেন আংকেল কে সেদিন আমার ভালোবাসার কথা বললাম না তাহলে হয়তো এমন কিছুই ঘটতো না।বিশ্বাস করো, তোমাকে হারানোর যন্ত্রনা আমাকে ঠিকমত ঘুমাতে দেয় নি,খেতে দেয় নি।আমি কাজে মন বসাতে পারতাম না।মনে হচ্ছিলো মৃত্যুও বুঝি এর চাইতে ভালো।তোমাকে দেখার জন্য ছটফট করতাম তবুও নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।আমি চেয়েছি তুমি সুখি হও।আমাকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করো।তাই নিজেকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি পারি নি।যতবারই তোমাকে দূরে সরাতে চেয়েছি তুমি এমনভাবে আমার মনের মধ্যে জেঁকে বসেছিলে যে আমি মনে প্রানে তোমাকেই চাইতে শুরু করলাম।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে কাঁদছি।ইমু এসে ভেতরে ঢুকল।রাগী গলায় বললো ইনায়াজ ভাই তোমাকে পুরো সত্যি বলে নি আপু।
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি ইমু কি বলতে চাইছে?
ইমু বলল,” নাফিস ভাই কিন্তু পুরোটাই জানতো।তুমি ইনায়াজ ভাইকে ভালোবাসো একথা যেমন জানতো ইনায়াজ ভাইও যে তোমাকে ভালোবাসে সেটাও জানতো,কিন্তু উনি বলেন নি। সেদিন হস্পিটাল থেকে ইনায়াজ ভাই শুধু আংকেলের কাছে নয়,নাফিস ভাইয়ের কাছেও গিয়েছিলো।তোমার সাথে যখন নাফিস ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছিলো তখন ইনায়াজ ভাইয়ের মাথায় ছোট্ট একটা টিওমার ধরা পড়ে।ইনায়াজ ভাই ভয়ে তোমাকে জানাতে পারে নি।কিন্তু নাফিস ভাইকে অনুরোধ করেছিলো উনি যাতে বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়।অন্তত ইনায়াজ ভাইয়ের অপারেশন পর্যন্ত ওয়েট করে!কিন্তু উনি কি করলেন? ইচ্ছে করে বিয়েটা এগিয়ে দিলেন।কিন্তু তাতে লাভ হলো কি?তোমার মন ঠিকই ইনায়াজ ভাইয়ের কাছে পড়ে ছিলো।নাফিস ভাই ইনায়াজ ভাইকে ডেকে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলো।এবং তোমার আর নাফিস ভাইয়ের সম্পর্কের জটিলতা গুলো খুলে বলল। তুমি যাতে নাফিস ভাইকে নিয়ে সুখি হতে পারো সেই জন্য সেদিন পার্টিতে ইনায়াজ ভাই আমাকে মিথ্যে বলতে বাধ্য করেছিলো।সেদিন ইনায়াজ ভাইয়ের সাথে যাকে দেখেছিলে সে ভাইয়ার হবু বউ।মানে আমাদের উডবি ভাবী।আর ওদের ক্লাসমেট!

ইনায়াজ ভাইয়ের ব্রেনে টিউমারের কথা শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো।আমি আবারো পাগলের মত কান্না শুরু করে দিলাম।ইনায়াজ ভাই প্রথমে অপরাধির মত চুপ করে থাকলেও আমার কান্না দেখে মিটমিট করে হাসছিলেন।

ইমু হেসে বলল,”কেঁদো না আপু।তুমি জানো আপু শুধুমাত্র তোমাকে ফিরে পাবে বলে ইনায়াজ ভাই এতদিন পর বিদেশ গিয়ে অপারেশন করিয়ে এসেছে?অথচ তোমার বিয়ের পর থেকে এতগুলো দিন এইরোগ বয়ে বেড়াচ্ছিলো।সবাইকে মিথ্যে বলেছিলো,আমরা সবাই জানতাম উনি ট্রেনিংএ ছিলেন।ভয়ের কিছু নেই অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।”

অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে শুনে আমার কান্না বেগ কমলো।সেই সাথে এতদিনের অপরাধবোধ!নাফিস এমন কিছু করবে সত্যি ভাবতেই পারি নি।

ইমু বলল,”তুমি কোন অন্যায় করো নি আপু।নাফিস ভাই তার কৃতকর্মের সাজা পেয়েছেন।নাফিসের ভাইয়ের চিঠিতে উনি উনার অপরাধ স্বীকার করে গেছেন।নাফিস ভাইয়ের বোন সম্পত্তির লোভে বাচ্চাটাকে নাফিস ভাইয়ের না বলে প্রমাণ করতে চেয়েছিলো।উনার মা প্রথমে সব জানতেনা।নাফিস ভাইয়ের পুরো ডাইরী আর চিঠি পড়ে সব বুঝতে পেরেছে।ভদ্রমহিলা নিজের মেয়ের কৃতকর্মের জন্য বাবার কাছে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন।আমি ভাবছি বাবা আর ভাইয়াকে বলে উনার বোনের নামে মানহানির মামলা করবো।নাফিস ভাই তোমাকে ভালোবাসতো ঠিকই কিন্তু উনি স্বার্থপরের মত আচরণ করেছে।যাই হোক মৃত মানুষের দোষগুণ মনে রাখতে নেই।সেই জন্যই ইনায়াজ ভাই উনার কথা তোমাকে কিছু বলে নি।আমার মনে হয়েছে তোমার জানা দরকার তাই আমি তোমাকে কথাগুলো বলে দিয়েছি।আমি শুধু এইটুকু বুঝি ভালোবাসতে হলে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে হবে।”

ইমু বেরিয়ে গেলে ইনায়াজ ভাই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।তারপর আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন।
-“আমি স্বপ্নেও ভাবি নাফিস মারা যাওয়ার পর তোমার সাথে এমন কিছু হবে।ভেবেছিলাম সবাই তোমাকে আগলে রাখবে।তাই নিশ্চিন্ত মনে অপারেশন করাতে গেছিলাম।কিন্তু এসে এমন কিছু দেখবো সত্যিই ভাবি নি।
-“আমি নিজেই তো ভাবি নি সবাই আমাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দেবে আপনি কি করে ভাববেন?”

ইচ্ছে করছিলো এইমুহূর্তে ইনায়াজ ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদি।কিন্তু নিজেকে আবারও সংযত করে ফেললাম।আমি ইনায়াজ ভাইয়ের কাছে ডাকে সাড়া দিলে আমার চরিত্রের কালিমা যে ইনায়াজ ভাইয়ের গায়েও পড়বে!আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না।
আমার অনাগত সন্তানের কথা মনে পড়লো।হতে পারে নাফিস অন্যায় করেছে!কিন্তু এ তো আমার গর্ভের সন্তান।আমি তো এখন মা!

ইনায়াজ ভাইকে ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোন উপায় খুঁজে পেলাম না,কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়লাম।ইনায়াজ ভাই আমাকে তুলে দাঁড় করাতে চাইলেন।আমি ইনায়াজ ভাইয়ের পা জড়িয়ে ধরে বললাম, “সব শেষ হয়ে গেছে ইনায়াজ ভাই,সব শেষ হয়ে গেছে!আপনি প্লিজ চলে যান।”

আমি উনার পা চেপে ধরতেই উনি ছিঁটকে দূরে সরে গিয়ে বললেন, “কিন্তু আমার যে তোমাকেই চাই!একবার হারিয়েছি এবার হারালে মরে যাবো।”
আমি আবারও কান্না ভেজা গলায় বললাম, “পাগলামি করবেন না ইনায়াজ ভাই!তনু আপনার পাশে বড্ড বেমানান!”

ইনায়াজ ভাই জোর করে আমাকে টেনে দাড়ঁ করালেন।আমি উনার পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে চাইলাম।উনি আটকে দিয়ে আমার ডান হাতের ওপর উনার ডান হাত রেখে আমার হাতটা পেটে নিয়ে গেলেন।দ্বিধা সংকোচ হীন ভাবে বললেন,”যে তোমার অংশ সে আমারও অংশ! এত অপমান অবহেলা সহ্য করার পরেও আমার তনু যাকে যাকে আগলে রেখেছে,তিলতিল করে বড় করছে তাকে আমি দূরে ঠেলে দেই কি করে?”

তারপর আমার আমার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আমার চোখে চোখ রেখে বললেন, “আমি তোমাকে চাই তনু!আমার সমস্তটা দিয়ে চাই।আমার মতন করে ভালোবাসতে চাই,যেখানে থাকবে না কোন সংশয়,কোনকিছু হারানোর ভয়।”

সৃষ্টিকর্তা আমার সব কেড়ে নিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তিনি নিষ্ঠুর নন।হারানো সব আবার ফিরিয়ে দিলেন।

আমার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি করে হাসলেন ইনায়াজ ভাই।উনার সেই দৃষ্টি আমি উপেক্ষা করতে পারলাম না।তাকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে দেন নি।আমি নাক টেনে টেনে কাঁদছি।আগের মত সেই অনুভূতি হচ্ছে,মাথা ঝিমঝিম করছে,উনার উপস্থিতি নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।লজ্জায় মুখ তুলতে পারছি না।ইনায়াজ ভাই দুষ্টু হাসি দিলেন।তারপর সযত্নে চোখের আমার পানি মুছে দিয়ে আমার হাতটা ধরলেন,বেশ শক্ত করে ধরলেন,আবেগ জড়িত মধুর গলায় বললেন, “তুমি জানো তনু? তোমাকে যখন দেখি,তারচেয়েও বেশি দেখি যখন দেখি না।”
উনার দৃষ্টি ছলছল।এই প্রথম তাকে কাঁদতে দেখছি।আমার মনে হলো সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নয় ইনায়াজ ভাইয়ের কাছেই প্রথম শুনছি!এই অল্পকিছু শব্দমালায় তার সমস্ত হৃদয়ের আবেগ যেন উপচে পড়েছে!অবশেষে তার মনোপ্যাথি আমি বুঝতে পারলাম।এতদিনে জানতে পারলাম সে আমাকে ভালোবাসে!!আমি শুধু বললাম, “ঠকেছেন আপনি ইনায়াজ ভাই!”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here