#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_২৩

সামিয়ার এখনও বিশ্বাস হয়না তার আদরের বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে।নিজের চোখে দেখতে না পেলে এটা আসলে সব মায়েরই হুট করে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।তার ও হয়েছে তাই।
সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেননি।লিখি কেমন মেয়ে,জানা হলোনা।তার বাবা-মাকে দেখা হলোনা,বংশ দেখা হলোনা।একটা সময়ে নাবিলের বাবাকে কি জবাব দেবেন।তিনি জানলে কি তুলকালাম ঘটাবেন এসব ভেবে তার আর ঘুম হলোনা।
নাহিদ দুবার ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসেছে।তার ও ঘুম নেই।
মা যা করে ভালোর জন্য করে এটা সে সবসময় দেরিতে বোঝে।
পেট ব্যাথার অসহ্য যন্ত্রনা তাকে ঘুমাতে দিলোনা।
মায়ের কোলে ঢুকে চোখ বন্ধ করে শেষ রাতে এসে সে ঘুমোলো।
——
ভোরের আলো জানালার কাঁচ ছুঁতেই মিসেস সামিয়া উঠে গেলেন।এমনিতে জেগেই ছিলেন।বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসবেন এখন,মনটাকে তাজা করতে হবে।
নাহিদের মাথা কোল থেকে সরিয়ে বালিশে রেখে তিনি বিছানা ছাড়লেন।জুতা পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখলেন মনি খোঁপা করতে করতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।
‘বিয়ে হবার পর যেদিন থেকে সে আমাদের বাড়ির বউ,সেদিন থেকে আমাকে বড্ড শ্রদ্ধা করে।নাবিলকে তো সবার আগে ও কোলে নিয়েছিল।মেয়েটা অনেক সহজসরল। আমি বেড়াতে আসবো শুনলেই ব্যস্ত হয়ে যায়।মা থাকতে যেমন আদর -যত্ন করত এখন আরও বেশি করে।ভাই বলে দিতে হয়না।সে নিজ থেকে সব করে।মাঝে মাঝে ওর এই আনুগত্য ভীষণভাবে মন কাড়ে আমার’

মুখে হাসি ফুটিয়ে সামিয়া দরজা খুলে বাগানে পা রাখলো।মনে হলো বাগানে কেউ বোধহয় আছে।ঢেঁড়স গাছ বাতাসে যেভাবে নড়ে তার চেয়ে দ্রুত নড়ছে।যেন ওখানে কেউ আছে।
কৌতুহল নিয়ে তিনি ওদিকটায় গেলেন।গিয়ে দেখলেন তার পুত্রবধূ, টসটস করে কচি ঢেঁড়স ছিঁড়ছে গাছ থেকে আর মুখে পুরে গাপুসগুপুস করে খেয়ে যাচ্ছে।আশ্চর্য হয়ে তিনি কিছু মূহুর্ত ওমনি দাঁড়িয়ে থাকলেন।লিখি খাওয়া শেষে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতেই নাবিলের মাকে দেখে রোবটের মতন সোজা হয়ে গেলো।আমতা আমতা শুরু হয়ে গেছে তার।

‘খালি পেটে কিসব ছাইপাঁশ খাচ্ছিলে?’

‘কচি ঢেঁড়স অনেক মজা খেতে।আপনি খাবেন?’

‘আমি সকালে মধু মিশিয়ে লেবুর শরবত খাই।বানাতে পারো?’

‘আমি যখন আপনার মতন গুলুগুলু ছিলাম তখন টানা চল্লিশ দিন সকালবেলা খালিপেটে লেবুর শরবত মধু মিশিয়ে খেয়েছি।এখন আবার বডি ফিট তো সকালে কাঁচা সবজি’

লিখির কথা বলার স্টাইল সামিয়ার কাছে দারুণ লাগে।কিন্তু প্রকাশ করেননা।
ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তাই চলে গেলেন সামনের রাস্তাটার দিকে।কিছুসময় হাঁটবেন ঐ পথে।লিখি পেছন পেছন আর গেলোনা।
এই ভদ্রমহিলার দুটো ছেলেকে একটু জ্বালিয়ে আসতে হবে।ভোর বেলা হলো জ্বালানোর মোক্ষম সময়।
——
নাবিল বালিশের তলায় মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
লিখি এক মগ পানি নিয়ে ওর মাথার কাছে আসলো ঢালবে বলে কিন্তু এমন অবস্থা দেখে কোথায় পানি ঢালবে তাই ভাবতে হচ্ছে।
পরে মগে হাত ভরে বললো,’এই ছেলে!!’

নাবিলের কোনো সাড়া নেই।লিখি বালিশটা টান দিয়ে সরিয়ে পানির ছিঁটা দিয়ে বললো,’এই ছেলে!!’

নাবিল বিরক্ত হয়ে মাথা তুললো এবার।লিখি দাঁত কেলিয়ে বললো,’আপনার আম্মুর লেবুর শরবতে কয় পিস লেবুর রস দিতে হয় জানেন?’

‘২’

‘আর মধু?’

‘১’

‘পানি?ও সরি।পানি তো এক গ্লাস।আচ্ছা থ্যাংকু’

লিখি মিটমিট করে হেসে পালানো ধরতেই নাবিল হাত ধরে বললো,’আমাকে জ্বালিয়ে কি লাভ হলো?’

‘পৈশাচিক আনন্দ। ‘

নাবিল ভাল ছেলের মতন উঠে বসলো।এরপর লিখির অন্য হাত থেকে পানির মগটা ছোঁ মেরে নিয়ে সব পানি ছুঁড়ে মা*রলো ওর গায়ে তারপর বললো,’হিসাব বরাবর ‘

লিখি ভিজে বেড়ালের মতন তাকিয়ে আছে নাবিলের দিকে।হুট করে নাবিল উঠে বসে এমন করবে সে কল্পনাও করেনি।
নাবিল আবার শুয়েও পড়েছে।
লিখি আরও কয় মিনিট রোবটের মতন থেকে এক চিৎকার দিয়ে বললো,’আমি এখন কি পরবো!এমন করলেন কেন!!’

‘মামির থেকে ধার নিয়ে পরো।আমাকে হুদাই ডিস্টার্ব করার পরিণতি এমনটাই হবে’

লিখি ভেজা শরীর নিয়ে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়ালো।মামি ওর এমন হাল দেখে বললেন,’এমন হাল হলো কেমন করে?সকাল সকাল কার সাথে লাগতে গেছো?’

‘তোমাদের বংশের সব চাইতে ঘাড়ত্যাড়াটার সাথে’

‘এখন কি হবে!!কি পরবে? ‘

‘আমি যাই বাসা থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে আসি’

চাবি নিয়ে বাসা থেকে অন্য একটা টপস পরে লিখি বের হয়ে এসেছে দশ মিনিটের মধ্যেই।কিন্তু নাবিলকে এই সকাল সকাল না ভেজালে তার শান্তি আর হবেনা।

তাই এক মগ পানি নিয়ে আবারও ওর কাছে যাচ্ছিল ভেজাতে তখনই সামনে এসে পড়লেন মিসেস সামিয়া।
ওর হাতের মগের দিকে চেয়ে বললেন,’পানি নিয়ে কি করবে?’

‘ওনাকে খেতে দিব।’

‘খেতে দিবে নাকি মুখে মারবে?মনি বলছিল নাবিল নাকি তোমার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে?’

‘আরে না আমি কি ওনার মতন করতে পারি??’

নাবিল ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বেরিয়েছিল ওয়াশরুম থেকে।লিখির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে একটু এগিয়ে এসে বললো,’মা ও মিথ্যে বলছে,এই মগ পানি এনেছে আমাকে ভেজাতে’

লিখি দাঁত কেলিয়ে পানির মগটা নাবিলের হাতে দিয়ে বললো,’আপনি না বললেন গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ খাবেন?তাই তো আনলাম’

সামিয়া আর কিছু বললেননা।নাবিল মাকে আরও নালিশ করতে চাইলো কিন্তু লিখির চোখ বড় করা দেখে আর কিছু বলেনি।

‘একদম পানি নাক দিয়ে ঢুকিয়ে দিব।আপনার সাহস তো কম না’

‘তোমার সাহস ও বলিহারি! এত সকাল সকাল আমায় পানির ছিঁটা কেন দিলে?কাঁচা ঘুম না ভাঙ্গালে এত কিছু হতোনা’

—-
‘নাহিদ? ওঠো,যাও তোমার ভাইয়ার কাছে।’

নাহিদ চোখ ডলতে ডলতে বললো,’কেন আম্মু?’

‘তোমার ভাইয়া ভাবীর সাথে ঝগড়া করছে।ঝগড়া থামিয়ে আসো যাও’

‘ভাবী?কিসের ভাবী?ভাবী মানে কি আম্মু?’

‘ভাইয়ের বউকে ভাবী বলে’

‘নাবিল ভাইয়ার বউ কে?’

‘লিখি’

‘ঐ দুষ্টু আপুটা?’

‘হ্যাঁ,যাও’

কথাটা শুনে নাহিদ হনহনিয়ে চললো নাবিল ভাইয়ার কাছে।মা কি বললেন সব মাথার উপর দিয়ে গেছে।
তাও যাচ্ছে ঝগড়া থামাতে।ঝগড়া থামাতে তার ভীষণ ভাল লাগে।

ওখানে গিয়ে রুমে ঢুকে দেখলো লিখি আর নাবিল বালিশ পেটাপেটি করছে, ওকে দেখে বালিশ পেছনে লুকিয়ে ফেললো দুজনে।

নাহিদ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’ভাবী!!’

ওর ছোট গলায় ভাবী ডাকটা এত কিউট শোনা গেলো যে লিখি আর ওর গাল না টিপে থাকতে পারেনি।ছুটে এসে ওর গাল দুটো টপে দিলো।নাহিদ গেলো আরও রেগে।
গাল ফুলিয়ে বললো,’তোমরা ঝগড়া কেন করতেছো?’

তখনই নাবিল লিখির মাথায় বালিশ মে*রে নাহিদের কাছে এসে বললো,’কই না তো!!কে বললো তোকে?চল মর্নিং ওয়াকে যাই’

লিখি বালিশের বাড়ি খেয়ে মাথা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।নাবিল কিছু বলার বা করার সুযোগই দিলোনা,
সামিয়া রুমের সামনে দিয়ে গেছে বলে পাল্টা বালিশ দিয়ে মা*রতে পারেনি সে।
‘নাবিলকে ওর বয়স জিজ্ঞেস করতে হবে আজ।কেমন সেম এজের মতন ব্যবহার করছে,আমি একটা দিলে সে আরও দুইটা দেয়।
যেন পিঠাপিঠি সম্পর্ক।স্বামী হবে বয়সে বড়, ভদ্র,মা*র দিলে মা*র খাবে।জ্বালালে জ্বালানো সহ্য করবে।সে কেন ইটের বাড়ি খেয়ে পাটকেল মা*রতে আসবে??কেন!! কেন!! কেন!!এটা কি বিয়ে করলাম!কি জোরে বালিশ দিয়ে মা*রলো।আহহহ ব্যাথা করে মাথায়।
তার উপর কেমন স্বাদের শাশুড়ি আমার!!ছোটটাকে পাঠিয়েছে বড় টাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে।’

নাবিল নাহিদকে নিয়ে তাদের বাসা দেখাতে গেছে।সঙ্গে গেছে মা ও।
এদিকে নাবিলের জন্য মামি নুডুলস বানিয়েছে রেখেছিলেন।লিখি সেটাতে গরম মসলা গুড়া পাঁচ চামচ দিয়ে এসেছে।
নাবিলের থেকে প্রতিশোধ তুলতে হবে।যে জোরে বালিশ দিয়ে মা*রলো, ঐ স্পীডে পানি খাবে নুডুলস এক চামচ মুখে দেওয়ার পর পরই।এমন কাশি উঠবে যে লিখিকে বালিশ দিয়ে মা*রার শখ আহ্লাদ সব মিটে যাবে’
——
৯টার দিকে নাবিলেরা সবাই এসেছে।নাস্তা করতে বসার পর নাবিল খেয়াল করলো আজ লিখি বড়ই আদর দেখায়,কেমন যেন অতিরিক্ত।
যার সাথে মা*রামা*রির সম্পর্ক সে যদি মিষ্টি কথা বলে তখন মনে সংশয় সৃষ্টি হয়।
নাবিলের ও তেমনটা ফিল হচ্ছিল কিন্তু বুঝতেছিলোনা লিখি এমন দরদ কেন দেখায়।
সন্দেহ দূর করার জন্য লিখির দেওয়া নুডুলসের বাটিটা ঘুরিয়ে নাবিল জানতে চাইলো নুডুলস কে বানিয়েছে।
মামি বললেন তিনি বানিয়েছেন।
ব্যস তার আর কোনো সন্দেহ রইলোনা।প্রথম চামচে অনেকটা নুডুলস নিয়ে মুখে পুরে ফেলেছে।
চাবানো হওয়ার পর আর ২য় বার চাবানো গেলোনা,গিলা তো দূরের কথা।চোখ বড় করে সর্বপ্রথম লিখির দিকে তাকালো সে।লিখি তখন ফিসফিস করে বললো,’বালিশের মা*র গরম মসলা দিয়ে’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here