গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani_Simu
পর্ব:২২

কাকের খা খা ডাক শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।হাত-পা টান টান করে চোখ মেলে তাকালাম।বামপাশের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি একটু দূরে রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের উপরে দুটো কাক খা খা করছে।আকাশ মেঘলা,গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।কাক দুটো বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে।আমারও ইচ্ছে করছে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে দুহাত বাইরে মেলে ধরতে।যেই ভাবা সেই কাজ।গা থেকে চাদর সরিয়ে থাপ থুপ করে পা ফেলে জানালার ধারে এসে দাঁড়ালাম।দুইহাত বৃষ্টিতে মেলে ধরে আকাশের দিকে তাকালাম।হঠাৎই মনে হল আমি তো বিকেলে ঘুমিয়েছিলাম এখনও সন্ধ্যা হয়নি!!কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে সকাল।হাত গুটিয়ে পেছনে ঘুরতেই উমানের সাথে ধাক্কা খেলাম।উনি আমাকে দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।মাথা নিচু করে আমার ঘাড়ে গলায় নাক ঘষে বললেন,

‘অনেকগুলো গুড নিউস আছে।’

কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘কিসের গুড নিউস?’

উনি আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,

‘রাজশাহী যাব।’

তারপর হাত আলগা করে আমার দিকে তাকালেন।উনার কপালে ছোট একটা ব্যান্ডেজ লাগানো।বিচলিত হয়ে ওখানে হাত দেওয়ার চেষ্টা করে বললাম,

‘কি হয়েছে এখানে?’

উনি আমার হাত ধরে কপালে ঠোঁট চেপে বললেন,

‘কিছুনা,চল ফ্রেশ হয়ে নে তাড়াতাড়ি।’

উমান তাড়া দেওয়ায় দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম।উনি রুমে নেই।তাড়াহুড়ো করে বাইরে এসে দেখি উমান আর সাদ ভাইয়া ডাইনিংয়ে বসে হাসাহাসি করছেন।আমাকে দেখেই খেতে ডাকলেন।আমি গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে উনাদের বিপরীত দিকে বসলাম।উমান আমাকে উনার পাশে ডাকলেন কিন্তু গেলাম না কারন উনার কাছে বসলে খাইয়ে পেট ঢোল না করে ছাড়বেন না।সকালে আমার তেমন কিছু খেতে ইচ্ছে করে না।অথচ সকালেই সবচেয়ে বেশি খাওয়া উচিত।

আজকে সাদ ভাইয়া আর উমান মিলে খিচুড়ি রান্না করেছেন।বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে খুব ভাল লাগে।তাছাড়াও খিচুড়ি আমার খুব প্রিয় তাই খেতে লাগলাম।উমান খেতে খেতে সাদ ভাইয়াকে বললেন,

‘আমি তো বিয়ে করেই নিলাম তুইও করে নে।’

সাদ ভাইয়া প্লেটের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘শিপন আর প্রীতি আগে করুক,বাই দ্যা ওয়ে প্রীতি জানে তুই বিয়ে করেছিস?’

উমান একবার সাদ ভাইয়ার দিকে তাকালেন আবার আমার দিকে তাকালেন তারপর প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘না।শুধু শিপন,আম্মু আর আপু জানে।’

সাদ ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন,

‘কি যে হয়,দেখা যাক।’

উমান কিছু বললেন না।কিছুক্ষণ পর খাওয়া শেষ করে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে টাওয়ালে হাত মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘স্যাম আসছে।’

আমি ভ্রু কুচকে উমানের দিকে তাকালাম।ওই ইংরেজ মহিলা আমাদের বাসায় কেন আসবে!!!আবার চুমুটুমু খেলে ঝাটা পেটা করব একদম।সাদ ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘এখন আবার ও কেন আসবে?রাজশাহী যাব কখন তাহলে আমরা?

উমান মুচকি হেসে বললেন,

‘রাতে।’

আমি খাওয়া থামিয়ে উমানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনাদের বাসায় যাব আমরা?বাবা কোথায়?আমরা তো বাবাকে নিতে এসেছিলাম না এখানে?’

সাদ ভাইয়া খাওয়া শেষ করে চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন,

‘উম তোকে এসব বলে নিয়ে এসেছে?’

আমি ভ্রু কুচকে সাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘হ্যাঁ আসার আগে আরও অনেক কিছু বলেছিলেন।বাবার ইম্পরট্যান্ট ফাইল গুলো কোথায় থাকে সেগুলো দেখে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছিলেন।আরও কিসব বলেছিলেন আমার মনে নেই।’

উমান মুচকি হেসে ঢোলা টিশার্ট খুলতে খুলতে রুমের দিকে যেতে লাগলেন।সাদ ভাইয়া বেসিনে হাত ধুতে ধুতে উমানকে বললেন,

‘মামা বলেছিল মিতিকে রাজশাহীতে সেইফ জায়গায় রেখে আসতে আর তুই কি করেছিস?বিয়ে করে নিয়েছিস।তোর কপালে মাইর আছে।’

উমান পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে গেলেন।আমি সাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘সাদ ভাইয়া শুনুন আমি নোটবুকে কয়েকটা প্রশ্ন লিখে রেখেছি,আপনি ওগুলোর উত্তর বলবেন।’

সাদ ভাইয়া টাওয়ালে হাত মুছে বললেন,

‘ওকে পারলে বলব,ফিজিক্স রিলেটেড যত কোয়েশ্চেন আছে ধরতে পারিস।’

আমি কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়ে বললাম,

‘ওকে।’

সাদ ভাইয়া রুমে চলে গেলেন।আমি খাওয়া শেষ করে উঠে হাত ধুয়ে রুমে আসলাম।উমান ঢোলা সাদা টিশার্ট চেন্জ করে নীল টিশার্ট পড়েছেন।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কপালের ব্যান্ডেজ খুলছেন।আমি উনার পাশে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,

‘কাল আপনি আমাকে ওটা কি খাইয়েছিলেন?আর আপনার এখানে লাগলো কি করে?’

উমান আয়নার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে কপালের ব্যান্ডেজ খুলতে খুলতে বললেন,

‘তোকে ঘুমের মেডিসিন দিয়েছিলাম।আমরা একটু বাইরে গিয়েছিলাম।তুই ঘুমিয়েছিলি তাই ভয় পাসনি।আর এখানে ফাইট করার সময় কেঁটে গিয়েছে।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘কিসের ফাইট?’

উমান ব্যান্ডেজ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই কাঁধে হাত রেখে বললেন,

‘ফাইট ফর মাই ফার্স্ট লাভ।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘ফার্স্ট লাভ?’

উমান আমাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে বললেন,

‘ইয়াহ ফিজিক্স ইজ মাই ফার্স্ট লাভ এ্যান্ড ইউ আর দ্যা সেকেন্ড।শোন?এখানে আয়।’

আমি কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে উনার কাছে এগিয়ে গেলাম।উনি আমার দুইহাত টেনে উনার পাশে বসিয়ে দিলেন।একপাশ থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘তুই আমার দ্বিতীয় ভালোবাসা হলেও আমি তোকে ফিজিক্সের থেকে বেশি ভালোবাসি।এত এত বেশি ভালোবাসি যে তোর বোঝার ক্ষমতায় নেই।ফিজিক্স আমার পেশা তুই কিন্তু ওকে নিয়ে একটুও জেলাস ফিল করবিনা।ল্যাবে আমি মাত্র ছ’ঘন্টা কাজ করব আর সাত মাস তোর থেকে দূরে থাকবো।কানাডা যেতে হবে।তোর এক্সাম শেষ হলেই এসে তোকে নিয়ে যাব ওকে?’

আমি মুখ মলিন করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কি বলছেন?কেন যাবেন ওখানে?’

উনি আমার দুই গাল ধরে বললেন,

‘আমি আর সাদ তো ওখানেই থাকি।বিগ ব্যাং নিয়ে রিসার্চ করছিলাম।’

আমি গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে টেবিলের সামনে এসে বললাম,

‘দাঁড়ান এক এক করে বলুন,আমি সব প্রশ্ন লিখে রেখেছি।’

উনি মৃদু হেসে বললেন,

‘দেখেছি তোর সব প্রশ্ন।’

আমি নোটবুক নিয়ে বিছানায় উনার সামনে বসলাম।উনি পা ঝুলিয়ে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।আমি প্রশ্ন গুলো বের করে বললাম,

‘প্রথম প্রশ্ন:-কাল দুপুরে আপনারা আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলেন?আমি পুরো বাসা খুঁজেছি পাইনি,দরজার কাছেই বসেছিলাম তাহলে আপনাদের ঢুকতে দেখলাম না কেন?আপনারা কোনদিক দিয়ে ঢুকলেন?’

উমান মাথার নিচে দুইহাত রেখে বললেন,

‘আমরা বাসাতেই চাচ্চুর ল্যাবে ছিলাম।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘মিথ্যে কথা আমি ল্যাবে গিয়েছিলাম পাইনি আপনাদের।’

উমান মৃদু হেসে বললেন,

‘সিক্রেট ল্যাবে ছিলাম।’

আমি অবাক হয়ে বললাম,

‘সিক্রেট ল্যাব?’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইয়াহ,নেক্সট?’

আমি মনে মনে ভাবলাম সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে উমানের সাথে বাবার সিক্রেট ল্যাবে ঘুরতে যাব।কলম দিয়ে প্রথম প্রশ্ন কেঁটে পরের প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘বাবা আর আম্মু কোথায়?’

উনি উঠে বসে বললেন,

‘চাচ্চু এতদিন এখানেই একটা ভাড়া বাসায় ছিল কাল ইউকে গিয়েছে তিনদিন পর ইমরুল আঙ্কেলের সাথে ফিরবে আর মোহনা আন্টি রাজশাহীতে আমাদের বাসায় আছে, বলেছিতো আগে।’

যাক বাবার খোঁজ পেলাম।এখন শান্তি লাগছে।আমি খুশি হয়ে পরের প্রশ্ন করলাম,

‘বাবা এমন কোন কাজে জড়িয়ে পরেছিল যার জন্য নিজেকে মৃত ঘোষণা করতে হয়েছে?আমার বাবা তো ফিজিক্সের সায়েন্টিস্ট নয় তাহলে?’

উমান কোলের উপর বালিশ নিয়ে বললেন,

‘ইট’স আ লং স্টোরি,শর্টকাটে বলছি ওকে?’

‘না আপনি লম্বা করেই বলুন।’

উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে বললেন,

‘চুল টেনে দে তাহলে আমার।’

নোটবুক রেখে দুইহাতে উনার চুল টানতে লাগলাম।উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,

‘জুলিয়েট রোজ!পৃথিবীর সব থেকে দামী ফুল।সতেরো বছর আগে চাচ্চু কানাডা থেকে চারা নিয়ে এসেছিল।বাংলাদেশে হওয়া সম্ভব নয় কিন্তু জেনেটিক্সের পরিবর্তন ঘটিয়ে সম্ভব হয়েছে।লাল ফুল আরও লালটুকে হয়েছে।এমনিতেই দামি তারউপর আগের চেয়েও লাল হয়েছে।এর ফর্মুলা শুধু চাচ্চুই জানে।পনেরো বছর পর একবার ফুল হয়।চাচ্চুর একটা গাছে শুধু তিনটে ফুল পাওয়া গিয়েছে।একমাস আগে সেগুলো একশো কোটি টাকা দিয়ে সেল করেছি।কানাডায় সেল করার সময় আমার ল্যাবের সিনিয়র জেনে গিয়েছিলেন।লোভে পরে আমাকে আর সাদকে ট্রাপে ফেলেছিলেন ফর্মুলা নিতে।জব ছেড়ে চলে আসলাম।ওরা পিছু নিল।চাচ্চুর ফ্রেন্ড ইসহাক আঙ্কেল আর তার ছেলে পাপনও এ ব্যাপারে জেনে গিয়েছিল।ওরা ক্যানাডিয়ানদের সাথে হাত মিলিয়ে চাচ্চুকে মেরে সব ফর্মুলা নেওয়ার প্ল্যান করেছিল যাতে ওরা ছাড়া কেউ কোনদিন এমন ফুল উৎপাদন করতে না পারে।এইটুকু জায়গায় লুকোনোর জায়গা কোথায়?মাটির নিচে থাকলেও খুঁজে বের করবে।তাই প্ল্যান করে মেরে দিলাম চাচ্চুকে।পুরো বাংলাদেশ জানে চাচ্চু মৃত,ওরাও বিশ্বাস করেছে।তারপর ওরা চাচ্চুকে রেখে আমার পেছনে লেগেছিল কারন আমিই শুধু জানি এইব্যাপারে।

তুই যেদিন লাস্ট স্কুলে গিয়েছিলি পাপন সেদিন তোকে কিডন্যাপ করতে গিয়েছিল যাতে চাচ্চুকে দুর্বল করতে পারে কিন্তু সেদিন সাদ ঢাকায় এসেছিল তোদের রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।সাদ তোকে স্কুলে নিতে গিয়েছিল ওরা সাদকে দেখে ওর গাড়ির এক্সিডেন্ট করিয়ে দেয়।এক্সিডেন্টের পর সাদ দশদিন কোমায় ছিল।ওরা ভেবেছিল সাদ গাড়ির ভেতর মারা গিয়েছে তাই ওরা প্ল্যান করেছিল সাদকে আমাদের শত্রু বানাবে।আমরা যেন জানতে না পারি সাদ মারা গিয়েছে সেজন্য ওরা সাদের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।সাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে পাপন আমার কাছে ফোন করে বলে সাদ তাদের দলে।সেও ফর্মুলা নিতে চায়।ওরা আমাকে আর চাচ্চুকে মেরেই ফর্মুলা নিবে।অথচ ফর্মুলা সাদ জানেই।ইমরুল আঙ্কেল সাদকে চেন্নাই পাঠিয়ে দিয়েছিল।আর চাচ্চুর মিথ্যে এক্সিডেন্ট করিয়ে পেপার করা হয়েছিল।সাদ,চাচ্চু দুজনই মারা গেল তাই ওরা আমার পিছু নিল।এখন বুঝেছিস?’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘হুম কিন্তু সামান্য একটা ফুল নিয়ে এত কিছু?আপনি একবার গমের কথা বলেছিলেন না?’

‘হুম সবাই জানতো চাচ্চু গম নিয়ে রিসার্চ করছে তাই গম নিয়েই মিথ্যে গল্প সাজিয়ে সবাইকে বলেছিলাম।যাতে ফুলের ব্যাপার কেউ জানতে পারলেও কনফিউজড থাকে।তোকে কিছুই জানাতে চাইনি।সব সময় এসব থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি কিন্তু তোর কিউরিসিটির জন্য জানালাম।কখনও কাউকে বলবিনা এসব।’

‘আমাকে এসব আগের থেকে বললে কি হত?আপনি জানেন? বাবা আম্মুর মারা যাওয়ার দিনে কত কষ্ট হয়েছিল আমার?ওটিতে বাবার সাথে কথা বললাম তাও বাবা আমাকে একবারও বলল না এসব এক্টিং!

উমান উনার মাথা থেকে আমার হাত নিয়ে বললেন,

‘এসব জেনে গেলে এত কষ্ট পেতি না আর তোকে কষ্ট পেতে না দেখলে ওরা সন্দেহ করত তাই তোকে কিছু বলা হয়নি।আমি তোর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম তাই মুখ ফসকে চাচ্চুর বেঁচে থাকার কথা বলে দিয়েছিলাম।’

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘পাপন আর ক্যানাডিয়ানরা এখন কোথায়?’

উমান আমার হাত বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন,

‘পুলিশের গুলিতে এনকাউন্টার হয়েছে তিনজন ক্যানাডিয়ান আর পাপনের বাবা।পুলিশ জানতো ইসহাক আঙ্কেল দেশদ্রোহী।তোকে আর মিনিকে রাজশাহী পাঠিয়ে দিয়ে ফিজিক্সের একটা থিউরি নিতে ইমরুল আঙ্কেল ইউকে গিয়েছিল ওখান থেকে ফিরেই ওই থিউরি দিয়ে ইসহাক আঙ্কেলকে ফাসানো হল।কাল আমাদের উপর এ্যাটাক করানোর জন্য ওদের সামনে ধরা দিয়েছিলাম।নাসির ভাইয়ার পুরো ফোর্স ছিল আমাদের সাথে।ওরা চারজন আগে গুলি করেছিল তাই পুলিশও গুলি করে।আজকে পেপারে লিখেছে ওদের মৃত্যুর নিউজ।আর পাপন তোকে মেরেছিল জন্য ওকে আমি মেরে হাত-পা ভেঙ্গে হসপিটালে ভর্তি করে দিয়েছিলাম।সাদকে নিয়ে ওকে দেখতে গিয়েছিলাম ও সাদকে জীবিত দেখে হার্ট এ্যাটাক করে মারা গিয়েছে।আর কোন শত্রু বেঁচে নেই।আমরা এখন স্বাধীন।ওই ফুলের ব্যাপারে কাউকে কোনদিন কিছু বলবিনা।ওটার ব্যাপারে শুধু আমরা কয়েকজন জানি।আর কেউ জেনে গেলে আবার এরকম জীবন মরণ প্রবলেম হবে।তোকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে বলবি উমের অফিসে ফিজিক্সের থিউরি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল ওকে?আর তোর বাবা -মা যে বেঁচে আছে এটা এখানে কাউকে বলবিনা।তাহলে সবাই সন্দেহ করবে।কয়েকমাস পরে আমি সব ঠিক করে দিব।তুই শুধু মুখটা বন্ধ রাখবি।’

বলেই উনি আমার কোল থেকে মাথা তুলে উঠে বসলেন।আমার চোখে মুখে উপচে পরা কৌতূহল।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আমার এখনও অনেক প্রশ্ন আছে।বাবা আমাকে কখনও আপনাদের কথা বলেনি কেন?এমনকি ইমরুল আঙ্কেলের কথাও কিছু জানায়নি।সারাজীবন দেখে আসছি ইমরুল আঙ্কেল একা,কখনও বিয়ে করেনি।’

উমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

‘দাদু-দাদির জন্য।ওরা চাচ্চুকে তেজ্যপুত্র করেছে কারন চাচ্চু মোহনা আন্টিকে বিয়ে করেছে।মোহনা আন্টি আমাদের বাসার দাঁড়োয়ান রহমানের মেয়ে।দাদির প্রচুর অহংকার কিছুতেই মানতে পারেনি।চাচ্চুকে আর আন্টিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল।তুই হওয়ার পর চাচ্চু আরেকবার গিয়েছিল তোকে নিয়ে যাতে তোকে দেখে দাদু-দাদির রাগটা কমে কিন্তু কমেনি।দাদি পুকুর পাড়ে বসেছিল চাচ্চু তোকে দাদির কোলে দিতেই দাদি তোকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল আর অভিশাপ দিয়েছিল।চাচ্চু রাগ করে চলে এসেছিল
সেই রাগ থেকেই তোকে আর মিনিকে আমাদের ব্যাপারে কিছু জানায়নি।আমি আর সাদ অনেকবার এসে দেখে গিয়েছিলাম তোকে।কানাডা যাওয়ার পর আর দেখা হয়নি।ছয়বছর পর রাজশাহীতে তোকে দেখলাম।ইমরুল আঙ্ককেলের কথা তোদের জানানো হয়নি কারন চাচ্চু চায়না তোরা আমাদের ব্যাপারে জেনে যাস।এখন বিপদে পরে বাধ্য হয়ে জানিয়েছে।’

আমি মনে মনে ভাবলাম শয়তান বুড়িটা আমাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছিল?একবার যাই রাজশাহীতে তারপর বুড়িটাকে মজা বুঝাব।

উমান আমার দুইহাত ধরে বললেন,

‘দাদু মারা গিয়েছে আর যাওয়ার আগে আমাকে রিকুয়েস্ট করে বলে গিয়েছে আমি যেন চাচ্চুকে ফিরিয়ে নিয়ে যাই।সবরকম চেষ্টা করেছি নিয়ে যাওয়ার,দাদিও বলেছে কিন্তু পারিনি।তুই একবার বললেই চাচ্চু শুনবে,বলবি?’

আমি ঠোঁট উল্টে কয়েকসেকেন্ড উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।ভাবুক হয়ে বললাম,

‘আমার আম্মু দাঁড়োয়ানের মেয়ে?দাদু বাবা-আম্মুকে বের করে দিল আর ওই দাঁড়োয়ান রহমানকে রেখে দিল কেন?’

উমান মুচকি হেসে বললেন,

‘ওটা দাদু রাগ করে রহমানকে দাঁড়োয়ান করেই রেখেছে।রহমানও থেকেছে।’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করলেন কেন?’

উমান আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,

‘জোর না করলে তুই এমনি বিয়ে করতি আমাকে?’

গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘কখনও না।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘চাচ্চু তোকে রাজশাহীতে রেখে আসতে বলেছিল কিন্তু আমি তোকে জোর করে বিয়ে করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।’

আমি রাগী চোখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ইনোসেন্ট মুখ করে বললেন,

‘প্ল্যান করে রেখেছিলাম চাচ্চুর মেয়েকেই বিয়ে করব,প্ল্যানটাতো স্যাকসেসফুল করতে হবে নাকি?’

উমান কেমন যেন দুষ্টুমি করা শুরু করেছেন তাই বিছানা থেকে নেমে চলে আসছিলাম উনি আমার হাত ধরে টান দিলেন।উনার উপর এসে পরলাম।উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

‘ভালোবাসি তোকে।কবে থেকে জানিনা
যতবার দেখেছি আরও দেখতে ইচ্ছে করেছে,যতবার তোর গল্প শুনেছি আরও শুনতে ইচ্ছে করেছে আর সেদিন দেখে বিয়ে করতে ইচ্ছে করেছে।আচ্ছা তুই এভাবে লজ্জা পাচ্ছিস কেন?ভালোবাসিস আমাকে?’

লজ্জায় তাকাতে পারছিনা উনার দিকে। উনি আমাকে এমনভাবে ধরে রেখেছেন যেতেও পারছিনা।সাদ ভাইয়া দরজায় এসে ডাকতেই উমান আমাকে ছেড়ে দিলেন।বিছানা থেকে নেমে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।সাদ ভাইয়া রুমের ভেতরে এসে বললেন,

‘এই মিতি ব্যাগ প্যাক করে নে আমি প্লেনের টিকিট কেটে ফেলেছি।বিকেল তিনটায় ফ্লাইট।’

উমান ব্যস্ত হয়ে বললেন,

‘স্যাম আসবে তো বিকেলে।’

সাদ ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘আসলে তুই দেখা করিস,আমি আর মিতি চলে যাব।’

উমান ফোন হাতে নিয়ে বললেন,

‘ওকে তাহলে স্যামের সাথে মিটিং ক্যান্সেল।’

চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here