গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা :-Sohani_Simu
পর্ব:১৩
বিকেলে ঘুম ভাঙলো।চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে দেখি উমান জানালার ধারে বাবার ইজি চেয়ারে বসে মিনির নামতা শিক্ষার বই পড়ছেন।আমি বিছানাতে বসেই ভ্রু কুচকে উনাকে বললাম,
‘আপনি এসব ছোটদের বই পড়েন কেন?’
উমান বই বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
‘এমনি ভাল লাগে।শোন?’
আমি হাই তুলে বললাম,
‘বলুন শুনতে পাচ্ছি।’
উনি কিঞ্চত রেগে বললেন,
‘এখানে আয়।’
আমি আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,
‘এখান থেকেই শুনতে পাচ্ছি,বলুন।’
উনার কোনো আওয়াজ না পেয়ে ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছেন।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে কয়েকসেকেন্ড উনার দিকে তাকিয়ে থেকে ধুড়মুড় করে বিছানা থেকে নেমে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।এতে উনার রাগীভাবটা গায়েব হয়ে গেল।মুচকি হেসে আমার ডান হাত টেনে আমাকে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন।অস্বস্তিতে আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো।উনি আমার চুল থেকে রাবার ব্যান্ড খুলে নিলেন।দুই হাতে আমার চুল গুছিয়ে নিয়ে পেছনে উচু করে ঝুটি বেঁধে দিয়ে দুই হাতে আমাকে জরিয়ে ধরলেন।কাঁধে নাক ঘষে বললেন,
‘লাভ ইউ।’
আমি কাঁপা গলায় বললাম,
‘আআমার রুমে যযাব।’
উমান পেছন থেকে আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে চেয়ারে হেলান দিলেন।আমি উনার বুকের সাথে লেগে আধশোয়া হয়ে গেলাম।শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘ছেড়ে দিন।’
উনি মৃদু হেসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন,
‘কেন?’
কানে শুরশুরি লাগায় কাঁধ কানে স্পর্শ করার চেষ্টা করতেই উনি আমার কোমরে সুরসুরি দিলেন।কোমর বাঁকা করে হাসি চাপতেই উনি ননস্টপ কাতুকুতু দেওয়া শুরু করলেন।এবার আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারলাম না।হা হা করে হাসছি আর উনার থেকে থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে বলছি,
‘আর নয়,হয়েছে থামুন।হয়েছে হয়েছে।’
উনি থামছেন না হাসছেন আর বললেন,
‘বাহ তোর হাসিটাতো খুব কিউট।তাহলে হাসিসনা কেন হুম?এখন থেকে সবসময় হাসবি।’
আমি উনার হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করে হাসতে হাসতে বললাম,
‘ঠিক আছে ঠিক আছে,হাসছি থামুন আগে।’
উনি কাতুকুতু দেওয়া থামিয়ে দিলেন।আবার আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে চেয়ার দুলিয়ে বললেন,
‘ভালো লাগে আমাকে?’
আমি উনার কথা ঠিক করে বুঝতে পারিনি তাই ভ্রু কুচকে বললাম,
‘মানে?’
উনি পেছন থেকে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,
‘মানে আমাকে তোর ভাল লাগে?’
আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
‘একটুও না।’
উনি ফিসফিসিয়ে বললেন,
‘কেন?কেন ভাল লাগেনা?হোয়াটস্ দ্যা রিজন?’
ক্লাসে স্যার প্রশ্ন ধরলে উত্তর স্পষ্ট মনে না থাকলে যেমন থেতিয়ে থেতিয়ে উত্তর দিই এখনও সেরকম ভাবে সামনের জানালার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘আপনি খুব রাগী আর আপনাকে উইয়ার্ড লাগে তাই ভাল লাগেনা।’
উনি বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললেন,
‘আমি আর রেগে যাব না তাহলে ভাল লাগবে?’
আমি মাথা নাড়লাম আর মুখেও বললাম,
‘না।’
উনি আমার গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তোর বাবাও তো রাগী তাহলে তোর বাবাকে কেন ভাল লাগে?’
আমি মুচকি হেসে বললাম,
‘বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে আর কতকি এনে দেয়,এবার ঈদে মিউজিয়ামে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিল।প্রতিবারই যায়।’
উনি মুচকি হেসে বললেন,
‘আমিও তোকে ভালোবাসি আর সেদিন শপিংয়ে ড্রেস কিনেদিলাম আরও কত কি কিনে দিব।পুরো পৃথিবী ঘুরে দেখাবো।তাহলে বল আমাকে ভাল লাগেনা কেন?’
আমি রাগী কন্ঠে বললাম,
‘আপনি খারাপ তাই আপনাকে আমার ভাল লাগেনা।বাবা ভাল তাই বাবাকে ভাল লাগে।’
উনি ভ্রু কুচকে কিছু একটা ভাবলেন তারপর মলিন কন্ঠে বললেন,
‘আমি মরে গেলে তুই আবার বিয়ে করবি?’
আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।এসব কথা কেন বলছেন উনি!আমি চিন্তিত হয়ে বললাম,
‘এসব কেন বলছেন,ভয় লাগছে আমার।’
উমান আমার নাক টেনে বললেন,
‘কেন ভয় লাগছে?আমি মরলে তোর কি?আমাকে তো একটুও ভাল লাগেনা।’
আমি নাক থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,
‘ভাল লাগে একটু একটু,বেশি নয়।’
উনি আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন,
‘পুরোটায় ভাল লাগে আই নো।’
আমি চেঁচিয়ে বললাম,
‘এ্যা না অল্প একটু।’
উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
‘পুরোটা বল নাহলে ওই ছেলের মতো মাইর দিব আর রাতে তোকে বাসায় একা রেখে চলে যাব,বল পুরোটা ভাল লাগে।’
উনার ব্ল্যাকমেল করার ধরন দেখে আমি অবাক।উনি হয়তো মাইর দিবেননা কিন্তু বাসায় একা রেখে চলে যেতে পারেন।আমি তো দিনের বেলায়ও বাসায় একা থাকতে পারবোনা এমনই সাহস আমার।তাই উনার কথা মত চলায় ভাল হবে।আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
‘পুরোটা ভাল লাগে।’
উনি ঠোঁট টিপে হাসলেন।আদুরে গলায় বললেন,
‘এবার আই লাভ ইউ বল।’
আমি বিস্ফোরিত চোখে উনার দিকে তাকালাম।পেটের উপর রাখা উনার হাত সরানোর চেষ্টা করতেই উনি ধমক দিয়ে বললেন,
‘কি হল বল?’
আমি তুতলিয়ে বললাম,
‘বববলছি,ববলছি।’
উনি রাগী কন্ঠে বললেন,
‘হুম বল।’
আমি মুখ কাঁচুমাচু করে হাত কচলিয়ে মিনমিন করে বললাম,
‘আই লাভ ইউ।’
‘আই লাভ ইউ টু।’
রাত দশটা বাজে।ডিনার শেষ করে রুমে এসে একটু পড়তে বসেছি।উমান বলেছেন এখন থেকে নিয়মিত পড়াশুনা করতে নাহলে মাথায় তুলে আছাড় দিবেন।আমি প্রায় দু সপ্তাহ ধরে বই হাতে নিইনি তাই পড়তে ইচ্ছে করছেনা।আমি এবার ক্লাস টেনে কয়েকমাস পর বোর্ড পরীক্ষা।পড়াশুনার বিশাল ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।টেবিলে বসে বই এর পাতা উল্টাচ্ছিলাম উমান রুমে ঢুকলেন।আমি ঘুরে বসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘এখানেই থাকুন আর রাতেও এখানেই ঘুমাবেন ঠিক আছে?’
উনার হাতে সেই সিলভার কালার ল্যাপটপ।উনি বিছানায় বসে ভ্রুকুচকে ল্যাপটপে টাইপ করতে করতে বললেন,
‘ভীতুর ডিম একটা!’
উনার কথা শেষ হতে না হতেই জানালাতে কেউ ইটের টুকরো ছুড়ে মারলো।জানালা খোলায় ছিল কিন্তু টুকরোটা গ্রীলে লেগে বাইরের দিকেই পরেছে।আমি হকচকিয়ে চেয়ার ছেড়ে বিছানায় গিয়ে উমানের পাশে বসে উনার হাত জরিয়ে ধরলাম।উমান কাজে ব্যস্ত।এতকিছুর পরও উনার কোন হেল দোল নেই।আমি জানালার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বললাম,
‘ককে ওখানে?ওওই লোকটা আবার এসেছে?দেখুন না।’
উমান ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই ভ্রু কুচকে বললেন,
‘ওয়েট ওয়েট দেখছি ওয়েট দু মিনিট।’
আমি উনার হাত ঝাকিয়ে বললাম,
‘এখনই দেখুন।’
উমান আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘আরেকটা ঢিল ছুড়ুক তারপর দেখবো।আবার ঢিল ছুড়বে,এখন ওখানে গেলে মাথায় ঢিল ছুড়বে।’
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘কে ঢিল ছুড়ছে?’
বলতে বলতে আরেকটা ঢিল জানালার গ্রীল পেরিয়ে মেঝেতে এসে পরলো।সাদা কাগজে মোড়ানো ঢিল।উমান আমার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মেঝে থেকে ঢিলটা তুলে নিয়ে এসে আবার বিছানায় বসলেন।কাগজ নিয়ে ঢিলটা ফেলে দিয়ে কাগজ মেলে ধরলেন।সাদা কাগজে নীল কালি দিয়ে গুটি গুটি করে লিখা আছে,
‘পাপনকে ছেড়ে দে তাহলে সাদকে ছেড়ে দিব নাহলে কিন্তু আজ রাতের মধ্যে তোর বউকে মেরে দিব।’
উমান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে ফোন করে শান্ত কন্ঠে বললেন,
‘সাদকে ছেড়ে দিয়ে পাপনকে নিয়ে যা।’
ওপাশ থেকে কি বলল শুনতে পেলাম না।উমান হাসতে হাসতে বললেন,
‘অহ রিয়ালি?আমার ওই বেইমান সাদকেই দরকার।ওকে ছেড়ে দে আই প্রমিস সবাইকে ছেড়ে দিব।’
ওপাশের কথা শুনে উমান কল কেঁটে দিলেন।জানালা বন্ধ করে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
‘কেমন দিলাম?’
ভয়ে আমি বিছানায় জড়সড় হয়ে বসে আছি।উমানের কথা শুনে ভীত কন্ঠে বললাম,
‘কি কেমন দিলেন?’
উমান আমার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
‘ডেভিলটার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছি।ছেলে-মেয়ে,বউ সব কটাকে কিডন্যাপ করেছি এখন মৃত সাদকে জীবত করে নিয়ে আসুক আমার সামনে।আমিও দেখি কত বড় সায়েন্টিস্ট ও।’
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
‘কি বলছেন?সাদ ভাইয়া সত্যি মরে গেছে?সেদিন তাহলে কে এসেছিল?কাকে কিডন্যাপ করেছেন আপনি?কি হচ্ছে এসব?আমার বাবা কোথায়?’
উমান বিছানায় এসে আমার পাশে বসে ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে বললেন,
‘তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা যা পড়তে বস।খালি ফাঁকিবাজি!’
আর পড়া।এখন আর কোন পড়ায় মাথায় ঢুকবেনা।বাবা যে খুব বড় বিপদে আছে বুঝতেই পারছি কিন্তু সাদ ভাইয়ার ব্যাপারটা একদমই বুঝতে পারছিনা।উনি কি মারা গিয়েছেন?ইমরুল আঙ্কেল কোথায়?কিসের জন্য ইমরুল আঙ্কেল ইউএস যাচ্ছিল? উফ আর কিছু ভাবতে পারছিনা।এভাবে আর কতদিন চলবে!
চলবে………