গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani_Simu
পর্ব:-২৮
শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে বসলাম।মিনি বিছানায় খেলছে।উর্মি আপু ব্যালকনিতে হাজব্যান্ডের সাথে ফোনে কথা বলছে আর প্রীতি আপু সোফায় বসে হাতের নখে সাদা নেইল পলিশ লাগাচ্ছে।প্রীতি আপুকে দেখলেই আমার রাগ হচ্ছে।আয়নার মধ্যে কটমট চোখে প্রীতি আপুকে দেখছি আর ভেজা চুল ড্রাই করছি।এমন সময় একটা কাজের মেয়ে রুমের দরজায় এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘আফা দাদিজান তোমারে নিচে যাইতে কইল।মাওলানা সাব আইছে।’
উর্মি আপু রুমে ঢুকে ভ্রু কুচকে বলল,
‘মাওলানা আঙ্কেল কেন এসেছে বকুল?’
‘মুই কিছু জানিনা।’
বলেই বকুল চলে গেল।উর্মি আপু আমার দিকে আসতে আসতে বলল,
‘মিতি,এই ড্রেস চেন্জ করে নে আর মাথায় ওড়নাও দিয়ে নে।মাওলানা আঙ্কেল এসব পছন্দ করে না।’
আমি সাদা টিশার্ট আর নীল কালার জিন্সের র্যাম্পার পরেছি।উর্মি আপুর কথা শুনে লাগেজ থেকে নীল কালার স্কার্ট বের করে র্যাম্পারের উপরই পরে নিলাম। তাড়াতাড়ি চিড়ুনি দিয়ে চুল আচড়িয়ে মাথার বাম পাশে দুটো ক্লিপ আটকিয়ে চুলগুলো খোলায় রাখলাম।উর্মি আপু আমার মাথায় আপুর একটা লাল ওড়না পরিয়ে দিয়ে প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘প্রীতি ওকে একটু নিচে নিয়ে যা।আমি বিকেলের আগে নিচে যেতে চাইছিনা।’
প্রীতি আপু জিন্স আর ফতুয়া পরে ছিল।নিচে যেতে হবে দেখে জিন্সের উপর আমার একটা গোলাপি স্কার্ট পরে মাথায় সাদা ওড়না জড়িয়ে আমাকে নিয়ে নিচে আসলো।ড্রইংরুমে দাদি,বড়াম্মু,আম্মু,ফুপ্পি আর মাওলানা আঙ্কেল বসে কথা বলছেন।আমি আর প্রীতি আপু মাওলানা আঙ্কেলকে সালাম করে আম্মুর পাশে গিয়ে বসলাম।দাদি আমাকে নিজের কাছে ডাকলেন।আম্মু আমাকে দাদির কাছে যেতে বললে আমি ঠোঁট উল্টে দাদির পাশে গিয়ে বসলাম।দাদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে মাওলানা আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘বাবা আশরাফুল এটা বুলবুলের মেয়ে।’
মাওলানা আঙ্কেল আমার পাশের সিঙ্গেল সোফায় বসে আছেন।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘কেমন আছো মা?’
আমি কিছু বলার আগেই দাদি বললেন,
‘ভাল নেই বাবা।তুমি আগে সব শোন তারপর এর একটা ব্যবস্থা কর।’
মাওলানা আঙ্কেল মনোযোগী হয়ে বললেন,
‘জ্বী আম্মা বলুন আমি শুনছি।’
দাদি বললেন,
‘তুমি হয়তো জানো বুলবুলের বিয়ে নিয়ে সংসারে অনেক অশান্তি হয়েছিল।আমরা মেনে নিতে না পেরে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলাম।বুলবুলও রাগ করে অনেকদিন কোন যোগাযোগ রাখেনি।এই মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর এসেছিল একদিন।আমি আর বুলবুলের বাবা সেদিন পুকুর পাড়ে বসেছিলাম।ছয়মাসের ফুটফুটে বাচ্চাটাকে আমার কোলে দিয়ে বলেছিল ‘মা সব ভুলে যাওনা এবার অনেক তো হল,তোমাদের ছেড়ে থাকতে ভাল লাগেনা’।আমি বদরাগী মানুষ ফেলেদিয়েছিলাম বাচ্চাটাকে পুকুরে।দূর ছাই করে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলাম পানিতে ঢুবে মরতে।আমি ছেলে হারিয়ে যেমন পুড়ে মরছি ওদের মেয়েও যেন আগুনে পুড়ে মরে।’
কথা গুলো শুনতে শুনতে আমার চোখ ভিজে উঠলো।দাদি এত নিষ্ঠুর কথা কিভাবে বলেছিল!দাদিও কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেননা।চোখ থেকে চশমা খুলে দাদি আবার বলতে লাগলেন,
‘ষোল বছর বুলবুল আমাকে আর মুখ দেখায়নি বাবা।এতদিন পর নাতনি এসেছে।সব সময় চোখে চোখে রাখার পরও কিভাবে যেন পানিতে পরে মরেই গিয়েছিল।উমানটা যেন আল্লাহ্র ফেরেশতা হয়ে বাঁচিয়ে দিল।সেদিন আমি যা বলেছিলাম তা ভেতরের কষ্ট থেকে বলেছিলাম।রাগ কমার পর থেকে আমি অনুতপ্ত হয়েছি।বার বার আল্লাহর কাছে দুইহাত তুলে বলেছি ওদের যেন কোন ক্ষতি না হয়,সবাই ভাল থাকুক কিন্তু কালকের ঘটনার পর খুব ভয় হচ্ছে বাবা।সেই কথাগুলো থেকে বাঁচার উপায় কি বাবা?তুমি দরুদ পড়ে ওকে একটু দোয়া করে দাও। ‘
মাওলানা আঙ্কেল একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে বললেন,
‘আমি অবশ্যই দোয়া করব।তার আগে বলি আপনি একটু শক্ত হোন।বেশি বেশি দোয়া,ইস্তেগফার,দান খয়রাত করুন।আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য রোযা রাখুন,নামাজে বসে মোনাজাতে দুইহাত তুলে কান্নাকাটি করুন।আল্লাহ যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন।এভাবে ভেঙ্গে পরবেননা।এই বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আমার মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে কুরআন শরীফ খতম দিয়ে দোয়া করব।ইনশাল্লাহ কোন সমস্যা হবেনা।আপনার ভেতরে কি ছিল,কোন পরিস্থিতিতে কি বলেছেন আল্লাহ সবটায় জানেন।তার উপর বিশ্বাস রাখুন।’
আরও কিছু কথা শেষে দাদি আমাকে উপরে পাঠিয়ে দিলেন।প্রীতি আপুও আমার সাথে আসলো।আমরা উপর থেকে নিচে উঁকি দিয়ে দেখি মাওলানা আঙ্কেলকে দুপুরের খাবার খাওয়ানোর জন্য ডাইনিং এর দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।প্রীতি আপু মাথা থেকে ওড়না আর স্কার্ট খুলে কাঁধে ঝুলিয়ে বলল,
‘তুই থাক আমি উমান ভাইয়াকে বলে আসি।’
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
‘না তুমি যাবেনা।আমি যাব আর আমিই বলব।’
আমাদের পাশ দিয়েই বকুল যাচ্ছিল।বকুলকে দেখে প্রীতি আপু স্কার্ট আর ওড়না দিয়ে বলল,
‘এগুলো উর্মি আপুর রুমে নিয়ে যাও।’
আমিও নিজের স্কার্ট আর ওড়না খুলে বকুলকে দিলাম।কারন স্কার্ট আর ওড়না পরে আমাকে প্রীতি আপুর মতো এ্যাট্রাকটিভ দেখাচ্ছিল না।এখন ঠিক লাগছে।প্রীতি আপু যেতে যেতে বলল,
‘আচ্ছা তুইও চল,আমি কি তোকে যেতে বারণ করেছি নাকি?’
আমি কিঞ্চিত রাগ নিয়ে প্রীতি আপুর পেছন পেছন উমানের রুমে এসে দেখি উমান আর সাদ ভাইয়া গল্প করছেন।শিপন ভাইয়া সম্ভবত ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছেন।উমান বিছানায় হেলান দিয়ে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছেন আর সাদ ভাইয়া বিছানার নিচে পা ঝুলিয়ে শুয়ে আছেন।প্রীতি আপু রুমে ঢুকেই ন্যাকা ন্যাকা করে বলল,
‘উমান ভাইয়া জানো আমি না আজকে সব শুনলাম।’
আমি প্যান্টের পকেটে দুইহাত ঢুকিয়ে ভ্রু কুচকে উমানের দিকে তাকিয়ে আছি।আমি আসলে দেখতে চাই উমান কার দিকে আগে তাকান,আমার দিকে নাকি প্রীতি আপুর দিকে।উমান আমাদের কারো দিকে না তাকিয়েই বললেন,
‘কি শুনলি?’
প্রীতি আপু উমানের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘নানি কেন মিতিকে অভিশাপ দিয়েছিল আর কি অভিশাপ দিয়েছিল সেসব।মাওলানা আঙ্কেল এসে অনেক কিছু বললেন।’
সাদ ভাইয়া শোয়া থেকে উঠে বসে বললেন,
‘তো?তোর এখানে কি?যা ভাগ।বাট মিতি তুই থাক,তোর সাথে গল্প করব।উমের নাকি অনেক কাজ তাই পাত্তায় দিচ্ছেনা আমাকে।’
সাদ ভাইয়ার কথা শুনে উমান ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন।প্রীতি আপু ভ্রু কুচকে বলল,
‘আমি চলে যাব কেন?মিতি থাকলে আমিও থাকব।’
উমানের দিকে তাকিয়েই মিষ্টি একটা হাসি দিলাম।তারপর প্রীতি আপু যেন না থাকে তাই বললাম,
‘আচ্ছা আমি থাকবোন,আম্মুর কাছে যাব তুমিও চলো।’
বলেই উল্টো দিকে ঘুরতেই উমান বললেন,
‘ওই গাধী দাঁড়া,দাঁড়া বলছি।’
পেছন ফিরে উনার দিকে তাকালাম।প্রীতি আপু এর মধ্যে বিছানায় বসে পরেছে।উমান ল্যাপটপের স্যাটার নামিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললেন,
‘সাদ তোরা কথা বল,আমার মিতির সাথে দরকার আছে।ওর স্কুলে…..’
উমান আর কিছু বলার আগেই সাদ ভাইয়া বললেন,
‘হুম হুম যা,এত এক্সকিউজ দিতে হবেনা।’
প্রীতি আপু ভ্রু কুচকে বলল,
‘এক্সকিউজ!!’
সাদ ভাইয়া মুচকি হেসে প্রীতি আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘দেখি তোর ফোনটা দে তো।তোর কোন একটা বান্ধবী আছে না? কি যেন নাম?হোয়াটএভার,বিয়ে করব।মেয়ে দেখা।’
প্রীতি আপু খুশি হয়ে বলল,
‘সত্যি তুমি দিশাকে বিয়ে করবা?দাঁড়াও এখনই ওকে ফোন করে বলছি।’
ওদের কথা আর কিছু শোনা হল না কারন উমান আমার র্যাম্পারের বেল্ট ধরে আমাকে টানতে টানতে পাশের একটা রুমে নিয়ে এসেছেন।এই রুমে কেউ থাকেনা।পুরাতন জিনিসে ঠাসা।অনেকদিন পরিষ্কার করা হয়নি তাই সবকিছুতে ধুলোবালি জমে আছে।উমান ল্যাপটপটা একটা টেবিলের উপর রেখে রুমের দরজা লক করে দিলেন।একপায়ে ভর দিয়ে বুকে হাত গুজে দরজায় হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘ওই এটা কি পরেছিস?’
আমি রুম দেখছিলাম।উমানের কথা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘দেখতেই তো পাচ্ছেন।’
উনি কয়েকসেকেন্ডের জন্য নাক কুচকে বললেন,
‘কাছে আয়।’
দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে জানালার দিকে হাঁটা দিয়ে বললাম,
‘যাব না।’
উমান পেছন থেকে আমার চুল টেনে ধরে বললেন,
‘দেখি কি পরেছিস, এটা কি তোর ড্রেস নাকি মিনির?ছোটরা পরে এসব।’
উনার দিকে ঘুরে তেঁতে উঠে বললাম,
‘আমার এটা।এতবড় প্যান্ট মিনির হবে?বাবা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়ে এগুলো আমার জন্য ডিরেক্ট চট্টগ্রাম গার্মেন্টস থেকে নিয়ে এসেছে।বাসায় অনেক গুলো আছে।’
উনি আমার মুখে আঙুল দিয়ে আমাকে থামিয়ে দিলেন।দুইহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,
‘হয়েছে বক বক কম কর।আর রুমে গিয়ে এটা চেন্জ করে নিবি।আমি তোকে বড় করতে চাইছি আর তুই দিন দিন ছোট হওয়ার চেষ্টা করছিস।এরকম বাচ্চা হয়ে ঘুরে বেড়ালে এখন কেউ বিয়ে দিবে?চাচ্চু তো বলবে না বাবা আমার মেয়ে এখনও র্যাম্পার পরে ঘুরে বেড়ায় আমি এখন আমার বাচ্চা মেয়েটাকে বিয়ে দিব না।’
জানালার ধারে এসে উনি আমাকে মেঝেতে নামিয়ে দিলেন।জানালার কাচ খুলে দিয়ে আমাকে বাইরে তাকাতে বললেন।দুইহাত পকেটে গুজে বাইরে তাকালাম।এখানে আরেকটা পুকুর।পুকুরে গোলাপি রঙের শাপলা ফুল ফুটে আছে।উমানকে বললাম,
‘আমি ওগুলো নিব,এনে দিন।’
উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘তোরই তো সব।বাট পকেটে কি রেখেছিস?দেখি।’
উনি পেছন থেকেই আমার দুই হাত টেনে বের করে উনার দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে দিলেন।পকেটের ভেতর উনার হাতের স্পর্শ পেয়ে শরীর শিউরে উঠলো।উনি নিচু হয়ে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললেন,
‘ভালোবাসিস আমাকে?’
পকেট থেকে টেনে উনার হাত বের করে বললাম,
‘না।’
উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘কেন না?’
বলেই উনি আমাকে পাগলের মতো কিস করতে শুরু করলেন।আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না।উনি যে ল্যাপটপটা এনেছেন আমার স্কুলের কি যেন দরকারের জন্য সেটাও তো আর উনার খেয়াল নেই।নাকি সত্যি সেটা এক্সকিউজ?
চলবে……..
সাইলেন্টরা সাড়া দিন।প্রতিদিন দিতে হবে না,শুধু আজকে।জানতে ইচ্ছে করছে গল্পে সাইলেন্ট রিডার্স কয়জন।
আজকের পর্ব কি ছোট হল?এর চেয়ে বড় মনে হয় আর দিতে পারবনা,সময় নেই।গল্প বাজে হচ্ছে মনে হলে একদিন বা দুইদিন পর পর দিব।দুয়েকদিন পর পর দিলে ভেবে চিন্তে ভাল কিছু লিখা যাবে।কিছু বলুন এব্যাপারে।