গল্প:-মনের মহারাণী
লেখিকা:-Sohani_Simu
পর্ব:-০৩
‘কুচি কুচি পেয়ারা
পাকা পাকা নারিকেল
তোর মতো ছেলেরা
আমার পায়ের স্যান্ডেল।
শান্ত ভাইয়া আশা করি আপনি আমার উত্তর পেয়ে গিয়েছেন।আবার যদি আমাকে লাভ লেটার দিয়েছেন তো বাবাকে বলে আপনার লেটার লিখার হাত আমি কেঁটে নিব।’
উমান ভাইয়া জোরে জোরে লেটারটা পরে আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলেন।আমি মুখ কাঁচুমাচু করে আমার পারসোনাল ডায়েরীটা হাতে নিয়ে নিজের পেছনে লুকিয়ে রেখেছি,উমান ভাইয়াকে দেখাবো না বলে।
আজ ঢাকায় আমাদের বাসায় এসেই উমান ভাইয়া সবার আগে আমার রুমে ঢুকলেন।পুরো রুম ঘুরে দেখে পড়ার টেবিলে বসতেই টেবিলের উপর ভাজ করে রাখা কাগজটা দেখতে পেলেন উনি।এটা একটা লেটার।আমাদের পাশের বাসায় একটা ভাইয়া আছেন।উনার নাম শান্ত। উনি আমাকে ভালোবাসেন।চারদিন আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্যলাকনিতে যেতেই একটা কাগজ বলের মতো মুড়িয়ে কেউ উপরে ফেলে দিল।আমি নিচে উঁকি দিয়ে দেখি শান্ত ভাইয়া উপরে তাকিয়ে আছেন।আমি তাকাতেই উনি ইশারায় কাগজটা আমাকে দেখতে বললেন।আমি কাগজ খুলে দেখি তাতে লিখা আছে,
‘আই লাভ ইউ মিতি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।আজ সাতদিন ধরে তোমার সাথে কথা নেই,বাইরেও আসছোনা,তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম তুমি ঘর থেকে বের হলা না।কি হয়েছে তোমার?তোমার মিষ্টি মুখটা না দেখতে পেয়ে যে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।তোমার ফোন নাম্বারটা দাও প্লিজ।’
আমি গোলগোল চোখে একবার কাগজটা দেখছিলাম তো একবার শান্ত ভাইয়াকে।তারপর থেকে মোট দশটা লেটার শান্ত ভাইয়া আমাকে দিয়েছেন।কোনো একটা কারনে বাবা আমাকে বাইরে বের হতে দিচ্ছিল না তাই পাড়ার অনেক ছেলেই বাসার সামনে ঘুরঘুর করতো।আম্মু সেসব বুঝতে পেরে আমাকে ব্যালকনিতেও আসতে দিত না।দুদিন আগে বাবা আর আম্মু আমাকে আর মিনিকে বাসায় রেখে শপিং করতে গিয়েছিল সেই সুযোগে আমি এই লেটারটা লিখেছিলাম।ভাজ করে টেবিলের উপর রাখতেই আমার ফোন বেজে উঠে।কল রিসিভ করতেই বাবা-মার এক্সিডেন্টের খবর পেয়ে এই লেটারটার কথা আর মাথাতেই ছিল না।আজ উমান ভাইয়া সেটা দেখে পড়লেন।
উমান ভাইয়া লেটারটা তিনবার পড়লেন।আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেনও তারপর চেয়ার থেকে উঠে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে চোখমুখ শক্ত করে বললেন,
‘তুই কি কাউকে ভালোবাসিস মিতি?’
আমি ডায়েরীটা নিজের পেছনে শক্ত করে ধরে ডানে বামে মাথা নাড়ালাম।উমান ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন,
‘সত্যি তো?’
আমি এবার মাথা উপর নিচ নাড়ালাম।উমান ভাইয়া ভ্রু কুচকে পেছন থেকে আমার হাত টেনে ডায়েরীটা নিয়ে বললেন,
‘এটা কি?কি লুকোচ্ছিস?’
আমি খপ করে উনার হাত থেকে ডায়েরীটা নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘আআআমার ডায়েরী।’
উনি আবার ডায়েরীটা আমার থেকে কেড়ে নিলেন।একহাতে ডায়েরী ধরে আছেন আর অন্য একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আমার দিকে ঝুকে বললেন,
‘আর কি কি নিতে চাস সেগুলো লাগেজে নিয়ে বাইরে আয়,আ’ম ওয়েটিং।’
উনি উল্টোদিক ঘুরতেই আমি বললাম,
‘বাবা-আম্মু কোথায় উম ভাইয়া?’
উনি সাৎ করে পেছন দিকে ঘুরে আমার চোখে চোখ রেখে রেগে বললেন,
‘উফ্ মিতি!কতবার নিষেধ করব তোকে?কেন বুঝিস না?সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।চাচ্চুর কথা আর বলবি না।’
আমি মাথা নিচু করে ফোঁপাতে লাগলাম।উমান ভাইয়া আমার এক হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বিরবির করে বললেন,
‘সবসময় এভাবে কান্না করলে কিভাবে কি করব বলতো?তুই একদমই কিছু বুঝিস না।জ্ঞানীদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট হয়, তুই মোটেও জ্ঞানী নয়।তুই একটা মাথামোটা,ডাফারদের কুইন।’
লিভিং রুমে এসে উমান ভাইয়া উনার ব্যাগে আমার ডায়েরী তুলে নিলেন।আমি হেচকি তুলতে তুলতে বললাম,
‘বাবার কাছে যাব।’
উমান ভাইয়া এবার চরম রেগে গেলেন।সেন্টার টেবিল থেকে ফুলদানীটা তুলে নিয়ে দেয়ালে ছুড়ে আমার দিকে তেড়ে আসলেন।আমি কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে ওয়াল শোকেজ এর সাথে লেগে দাঁড়ালাম।উমান ভাইয়া আমার দুইবাহু চেপে ধরে চোখ মুখ শক্ত করে আস্তে আস্তে বললেন,
‘প্লট বুঝিস?চাচ্চুকে নিয়ে প্লট করা হয়েছে।ধরা পড়লেই একশো কোটি টাকা লস।তোর কাছে কত আছে?মাত্র এক কোটি তো?আমার কাছে কত আছে জানিস?নিরানব্বই কোটি টাকা।সব টাকা নিয়ে নিবে।গরিব হয়ে যাব একদম।’
আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে আমার গালে হাত দিয়ে জোরে জোরে বললেন,
‘তুই একদম পুতুলের মতো সুন্দরি হয়েছিস।ঠু মাচ কিউট!’
কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গিয়েছেন উনি!আমি উনার কথা কিছুই বুঝতে পারছিনা।গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে দিলাম।কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
‘কে পুতুল?’
উনি মুচকি হেসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আসলেন।আমি শুকনো ঢোক গিলে নড়েচড়ে উঠতেই উনি আমার দুইহাত উনার একহাত দিয়ে পেছনে মুড়িয়ে ধরলেন।আমার ডান কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে নরম কন্ঠে বললেন,
‘পুতুল আমার গার্লফ্রেন্ড।একদম তোর মতোই চোখ,তোর মতোই গাল,তোর মতোই ঠোঁট।প্লিজ চুপ থাক,বলেছি তো চাচ্চু আছে তাও এত বাবা বাবা করছিস কেন?আর কত সহজ করে বলবো?আমি কঠিন মানুষ সহজ ভাষা বুঝিনা আর তোর মতো ডাফারদের ভাষা কিছুই বুঝিনা।’
উনার কথা শুনে আমার সবকিছু এলোমেলো লাগছে।উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে কয়েকসেকেন্ড আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।আমি ভীত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
‘কি হচ্ছে এসব?আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।’
উমান ভাইয়া বিরক্ত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি হকচকিয়ে উঠে উনাকে ছাড়তে বলছি কিন্তু উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরে ফিসফিস করে বললেন,
‘কিছু বুঝতে হবেনা তোকে।আগে যেমন খেয়েছিস আর ঘুমিয়েছিস এখনও সেরকম কর তাহলেই হবে।’
এই ছেলে দেখছি বড্ড গায়ে পরা।একটু কিছু হলেই গায়ের মধ্যে আসছেন।অসহ্য!! উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলেন।উনার ফর্সা মুখ কেমন লাল হয়ে আছে।আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাচ্ছেন।আমি উনাকে ভয় পাচ্ছি।উনি আমার সাথে খারাপ কিছু করবেন নাতো!এত বড় বাসায় আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই।বাবা কাউকে বিশ্বাস করতো না তাই কোনো কাজের লোকও ছিলনা আমাদের বাসায়।সব কাজ আম্মু একা হাতে করত।শুধু গেইটে দুটো গার্ড থাকতো।বাবা নেই তাই গার্ডরা কোথায় গিয়েছে কে জানে!ফাকা বাসা পেয়ে উমান ভাইয়া আমাকে মেরে ফেলবেনা তো?বাবা বলেছিল উমান ভাইয়াদের বাসায় সবাই অনেক লোভী।বাবার সম্পত্তির জন্য ওরা আমাদের দুই বোনকে মেরে দিতেই পারে।আমি কিছু বলব তার আগেই উমান ভাইয়া বললেন,
‘কিছু নিতে চাইলে নিয়ে নে।কিছুক্ষণ পরই এখান থেকে চলে যাব।’
আমি উমান ভাইয়ার আচরণ কিছু বুঝতে পারছিনা।কাল রাতে বললেন বাবা-মা বেঁচে আছে আর আজ কথা ঘুরাচ্ছেন আবার কি সব বলছেন।সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।উমান ভাইয়া সোফা থেকে উঠে নিজের ব্যাগ থেকে ক্যামেরা নিয়ে আমাদের বাসার দেয়ালের ছবি তুলতে লাগলেন। কালার পেন্সিল দিয়ে মিনি দেয়ালে কি না কি লিখে রেখেছে সেগুলোর ছবিও তুলে নিচ্ছেন।সবকিছু কেমন রহস্যময় লাগছে।আমি গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
একটা লাগেজ নিয়ে নিজের দরকারি জিনিসগুলো গুছিয়ে তুলছিলাম তখনই উমান ভাইয়া আমার রুমে এসে বললেন,
‘মিতি?ডিসিশন চেন্জ।আমরা এখন থেকে এখানেই থাকবো।চল বিয়ে করে আসি।’
উনার কথা শোনা মাত্রই আমার হাত থেকে জামা-কাপড় পরে গেল।বিয়ে!কি বললেন উনি!!কাকে বিয়ে করবেন উনি!
চলবে………