#মন_নিয়ে_খেলা(৮)
*********************

ক্লাস ফাঁকি দেওয়াটা অরণীর কাছে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। স্কুল-কলেজে থাকতে সে কোনোদিনও ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। সবসময় অখিল তাদের দুই বোনকে পৌঁছে দিত, আবার নিয়ে আসত। কালেভদ্রে পূনম স্কুলে মেয়েদের আনতে যেতেন। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর তার ওপর থেকে নিয়মকানুনের বোঝা কিছুটা হালকা হয়েছে। এখন ড্রাইভার তাকে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। কখনও বা অপেক্ষা করে। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পরই অরণী, জীবনের অচেনা এক দিকের সন্ধান পেয়েছে। পুরো স্কুল জীবনে ওর দুইজন বন্ধু ছিল, নোভা আর অদিতি। নোভা চলে গেছে ইউ এস আর অদিতি ময়মনসিংহ মেডিক্যালে পড়ছে। তবে বুয়েটে ভর্তির পর অরণীর অনেক বন্ধু হয়েছে। দশ-বারোজনের একটা দল আছে ওদের। এই দলের মধ্যে থেকেও নিয়ন, সাদমান, লুবনা আর সে আলাদাভাবে ঘনিষ্ঠ। তাদের একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ আছে। এখন অবশ্য কোনও গ্রুপেই আগের মতো সময় দেওয়া হয় না। এখন সারাদিন সাদমানের সঙ্গে কথোপকথন চলতে থাকে।

অরণী, বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও যাওয়ার জন্য আগে দু-একবার ক্লাস ফাঁকি দিয়েছিল; কিন্তু আজকের ক্লাস ফাঁকিটা একদম অন্যরকম। আজ প্রথম সে আর সাদমান মিলে ক্লাস ফাঁকি দিল। গতকাল সাদমান যখন বলল, তারা আজ ক্লাস করবে না, অরণী সাথে সাথে রাজি হয়ে গিয়েছিল। দু’জন মিলে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে এসেছে। এখানে অরণী বন্ধুদের সঙ্গে আগে একবার এসেছিল। তবে আজকের অনুভূতি একদম আলাদা। সিঁড়ির ধাপে বসে আছে ওরা দু’জন। সিঁড়িতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরও কিছু যুগল বসে গল্প করছে। কেউ, কেউ একাও বসে আছে। সাদমান বলল, আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারি না, তুমি আমার সঙ্গে আছ!

মানে কী? আমি তো তোমার সঙ্গেই আছি। এই যে তোমার হাত ছুঁয়ে দিলাম। কথাটা বলে, অরণী, সাদমানের হাতটা ছুঁয়ে দিল।

সাদমান, অরণীর হাতটা ধরে বলল, তুমি আমাকে এত দীর্ঘ প্রতীক্ষা করিয়েছ, যে আমার এখনও মনে হয়, আমি একটা ‘হ্যাঁ’ শোনার জন্য অধীর হয়ে আছি আর তুমি প্রতিবার আমাকে অবহেলায় পাশ কাটিয়ে গেছ।

আমি কোনোদিনও তোমাকে অবহেলা করিনি। এই দোষ তুমি আমাকে দিতে পারবে না।

তোমার প্রতীক্ষায় থাকতে, থাকতে জীবন থেকে তিনটা বছর চলে গেল। এই সময়টা আর ফিরে আসবে না। সবার মাঝে থেকেও, আমি যে কতটা একা ছিলাম, তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না।

অরণী চুপচাপ সরোবরের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদমানের কথার উত্তর দিচ্ছে না।

অরণী, তুমি কেন এতটা সময় নিলে বলো তো? কেন আমাকে এতটা অপেক্ষায় রাখলে? আমি যে কষ্টে ক্রমাগত নীল হয়ে যাচ্ছিলাম, এটা দেখতে তোমার খুব ভালো লাগছিল?

কক্ষণো না।

তাহলে? আমি তো বুঝতে পারতাম, তুমিও ভালোবাসো, কী ভালোবাসতে না?

অরণী এবারও কথার উত্তর না দিয়ে, স্মিত হাসল।

এখানে আসায়, তুমি কী বিরক্ত হয়েছ?

না তো।

তাহলে আমার কথার উত্তর দিচ্ছ না কেন? এত চুপ হয়ে গেলে কেন?

আমি এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছি। আমি বুঝতে পারছি না, আমার সঙ্গে কী ঘটছে?

কী ঘটছে, মানে কী?

আামাদের রিলেশনটা শেষ পর্যন্ত হয়েই গেল, আমি এখনও বিশ্বাসই করতে পারছি না। আমি কীভাবে এতটা সাহসী হতে পারলাম, ভেবে নিজেই অবাক হচ্ছি।

তা অবশ্য ঠিক। তুমি খুব ভীতু একটা মেয়ে। সেই শুরু থেকেই আমি বিষয়টা লক্ষ্য করেছি। আমাদের যে কোনও প্রোগ্রামে তুমি সবসময় ভয়ে, ভয়ে অংশ নিয়েছে। কোনও, কোনোটায় তো যেতেও পারনি। এটা কেন করতে?

আম্মুর পারমিশন ছাড়া আমরা একটা কাজও করতে পারি না। নিজে থেকে সাহস করে যে কোনও কাজ করে ফেলব, এটা আমার দ্বারা সম্ভবই না। নীলোর্মি মাঝে মধ্যে তাও কিছুটা সাহস দেখায়। নিজের মতো ডিসিশন নিয়ে নেয়; কিন্তু আমি একদমই পারি না।

আন্টিকে তোমরা এত ভয় পাও!

হুম। আম্মুকে ভীষণ ভয় পাই।

আংকেলকেও?

না। বাবাকে ভয় পাই না। বাবা আমাদের কখনও বকা দেন না। বকা দেওয়ার সময় কোথায়? আমরা বাবাকে খুব অল্প সময়ই পাই। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা-নয়টা পর্যন্ত বাবা বাইরে থাকেন। বাড়িতে ফিরেও, নিজের মতো টিভি দেখেন, বই পড়েন। বাবার প্রচুর পড়ার নেশা। বাবার পড়ার জন্য আলাদা একটা রিডিং রুম আছে, জানো। কাজেই, বাবাকে সেভাবে আর পাই না আমরা। ছুটির দিনে যদি জরুরি কোনও মিটিং না থাকে, তখনই কেবল বাবা বাসায় থাকেন। তখন আমাদের আড্ডা হয়, বাবার সঙ্গে লং ড্রাইভে যাওয়া হয়।

বাহ, ভালো তো। আংকেলের তো তাহলে তোমাদের সঙ্গে যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি সম্পর্ক।

হুম।

তাহলে আন্টিকে এত ভয় পাও কেন? আন্টি কী অনেক বকাঝকা করেন?

ঠিক বকাঝকাও না। আম্মুর শাসন অন্যরকম। আম্মুর কথা হচ্ছে, তিনি একবার যেটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন, তারপর আর কোনও কথা বলা যাবে না। জানো, আম্মু মাঝে মধ্যে অসম্ভব জেদি আচরণ করেন। তখন যদি আমরা ভুল করে কোনও কথা বলে ফেলি, তখন…. বাক্যটা শেষ করল না অরণী। কথা পালটে বলল, ঐ মেয়েটার হাতে এগুলো কী? শাপলা ফুল?

হুম।

ও শাপলা কোথায় পেল!

আশপাশে কোথাও থেকে হয়ত পেয়েছে। নেবে?

না। ফুল দূর থেকে দেখতেই ভালো লাগে। আমাদের ছাদে, অনেক রকম ফুলের গাছ আছে। গাছগুলোয় ঘুরেফিরে সারাবছর ফুল ফোটে। কী যে ভালো লাগে দেখতে! কিন্তু আমার কখনও ফুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে না।

আমার তো খুব ইচ্ছা করে, তুমি একদিন শাড়ি পরে আসবে আর আমি তোমার জন্য বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসব। বেলি ফুলের মালা তোমার চুলে জড়িয়ে দেবো। আর বকুলের মালাও আনব। ওটা তোমার হাতে চুড়ির মতো করে পরিয়ে দেবো। এটা আমার অনেক দিনের শখ। তুমি কবে শাড়ি পরে আসবে, অরণী?

অরণীর শাড়ি পরতে খুব ইচ্ছা করে; কিন্তু শাড়ি সামলানোটা তার কাছে বিশাল ঝক্কির ব্যাপার মনে হয়। তাই সে একদমই শাড়ি পরে না। সাদমান এত আগ্রহ নিয়ে বলায়, ওর এখন একটু একটু ইচ্ছা হচ্ছে শাড়ি পরার। অরণী বলল, আচ্ছা শাড়ি পরব একদিন।

কবে?

বললাম তো একদিন পরব।

ওহ শোনো, আমি কিন্তু মা’র কাছে তোমার কথা বলেছি।

অরণী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, আমার কী কথা!

কী কথা আবার! আমাদের কথা। তোমাকে যে শেষ পর্যন্ত পেয়েছি, সেই কথা।

যাহ, মিথ্যা বলছ কেন?

মিথ্যা বলব কেন! মা শুরু থেকেই তোমার কথা জানেন। মানে, আমরা যে ভালো ফ্রেন্ড, এটা মা আগে থেকেই জানেন।

তুমি সত্যি আন্টিকে বলেছ? কী করে বলতে পারলে? তোমার ভয় লাগেনি?

ভয় পাব কেন? মা হচ্ছে আমাদের দুই ভাইবোনের বন্ধু। আমাদের সব কথা, আমরা মা’র সঙ্গে শেয়ার করি। বাবার সঙ্গে অবশ্য ততটা ফ্রি না। বাবা একটু চুপচাপ স্বভাবের। আমাদের ভালোবাসেন, আমাদের ভালো-মন্দ নিয়ে সবসময় চিন্তা করেন; কিন্তু নিজের ভালোবাসাটা বোঝাতে পারেন না। বাবা বোঝাতে না পারলেও, আমরা ঠিকই ওনার ভালোবাসার গভীরতাটুকু অনুভব করতে পারি। এই দেখো, আসল কথাটা বলতেই ভুলে যাচ্ছি। মা তোমাকে বাসায় যেতে বলেছেন।

তোমাদের বাসায়! কেন?

তোমার পরীক্ষা নেবেন। ছেলের বউ হিসেবে তুমি কতটা যোগ্য, সেই পরীক্ষা।

ইশ, তুমি বানিয়ে, বানিয়ে বলছ।

বিশ্বাস হচ্ছে না? মা’কে ফোন করব?

করো।

সাদমান তার মা’র মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে, মোবাইলটা অরণীর চোখের সামনে ধরল। অরণী তাড়াতাড়ি লাইনটা কেটে দিয়ে বলল, তুমি কী পাগল নাকি!

আমি কী করলাম? তুমিই তো বললে ফোন করতে।

আমার এখনও বুক ধুকপুক করছে।

আমি সত্যি বলছি। মঙ্গলবার রাতে, আমাদের বাসায় তোমার আসতেই হবে।

রাতে একা কোথাও যাওয়ার পারমিশন নেই।

পারমিশন নিতে হবে, অরণী। এখন তো আমরা বড়ো হয়ে গেছি। এখনও এত ভয় পেলে চলবে? শোনো মঙ্গলবার আমার বার্থডে উপলক্ষে, মা আমাদের বন্ধুদের পুরো গ্রুপকেই বাসায় যেতে বলেছে আর তোমার কথা বারবার করে বলেছে। তোমাকে আসতেই হবে। আমি এতকিছু জানি না। তুমি যেভাবে পার, বাসা থেকে পারমিশন নাও।

আচ্ছা দেখি।

দেখাদেখির কিছু নেই। আমি আন্টিকে ফোন করব?

অরণী আঁতকে উঠল, না, না। কী বলো তুমি!

তুমি আসবে তো?

দেখি।

আবার ঐ কথা?

আচ্ছা আসব।

**************

পূনম তাঁর বড়ো বোন সিনথীর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। অরণী রুমে ঢুকে পূনমের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে। দুই মিনিট পর ফোন রেখে পূনম জিজ্ঞেস করলেন, ক্লাসে গিয়েছিলে?

প্রশ্ন শুনে, ভয়ে অরণীর আত্মা কেঁপে উঠল। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন! পূনম তো এভাবে কখনও ক্লাসে গিয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করেন না? তাহলে কী কেউ তাকে আর সাদমানকে দেখে ফেলেছে? দেখে, ফোন করে তাঁর আম্মুকে জানিয়ে দিয়েছে? উহ, টেনশনে অরণীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে। সে কী উত্তর দেবে, বুঝতে পারছে না। পূনম আবারও জিজ্ঞেস করলেন, ক্লাসে যাওনি?

ক্লাসে তো সবসময়ই যাই, আম্মু।

নীলোর্মি তো বেশিদিন তোমাকে পাবে না, তাই না? দুইজন একসঙ্গে যাওয়া-আসা করতে পারলে, খুব ভালো হত।

জি, আম্মু।

ও মনে হয় আমার ওপর এখনও রেগে আছে। তুমি ওকে বোঝাবে। বোকা মেয়ে নিজের ভালোটাও বোঝে না। আমার দুই মেয়ে বুয়েটে পড়ে, এটা অন্যদের কাছে বলতেও তো আনন্দ হয়।

জি, আম্মু। আম্মু একটা কথা বলব।

বলো।

মঙ্গলবার রাতে আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডের অনুষ্ঠান আছে। ওর বাসায় আমাকে ইনভাইট করেছে।

তোমার কোন ফ্রেন্ড?

ওর নাম সাদমান।

আমি দেখেছি?

না। তুমি শুধু লুবনা আর নিয়নকে দেখেছ।

তোমার ফ্রেন্ডের বাসা কোথায়?

সেগুনবাগিচায়।

বাসা চেনো? গিয়েছ কখনও?

না। তোমাকে না জানিয়ে, আমরা কখনও কারো বাসায় গিয়েছি নাকি?

কবে অনুষ্ঠান?

মঙ্গলবার রাতে।

ঠিক আছে। আমি অখিলকে বলে দেবো। ও যাবে তোমার সাথে।

আম্মু, অখিল কাকুর কষ্ট করে যাওয়ার দরকার নেই। উনি শুধু, শুধু তিন-চার ঘন্টা কেন বসে থাকবেন? লুবনা থাকবে আমার সঙ্গে। আমি যাওয়ার সময় লুবনাকে নিয়ে যাব। আবার আসার সময় ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসব।

আচ্ছা ঠিক আছে। আমি কালকে গিফট আনিয়ে দেবো।

আম্মু, তোমার গিফট কিনতে হবে না।

তুমি কিনেছ?

জি।

কি কিনেছ?

বই কিনেছি।

বই মানে?

গল্পের বই।

গল্পের বই একটা গিফট হল! তোমাদের এইসব চিপ মেন্টালিটি কোত্থেকে আসে, বলো তো? গল্পের বই তুমি তোমার বন্ধুকে এমনিতেই গিফট করতে পার। সেটার জন্য কোনও অনুষ্ঠান লাগবে কেন? আমি কালকে ঘড়ি আনিয়ে দেবো। আজকে টাইটানের কিছু কালেকশন দেখলাম। অনেক সুন্দর ঘড়িগুলো।

ঠিক আছে, আম্মু।

পূনমকে আর কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, অরণী রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিজের রুমে এসে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পূনম যে এত সহজে তাকে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দেবেন, এটা অরণী চিন্তাই করেনি।

*************

সাদমান বারবার করে অরণীকে একটু আগে চলে আসতে বলেছিল। পূনম বাসায় না থাকায়, অরণীরও বাসা থেকে বের হতে সমস্যা হয়নি। লুবনাকে নিয়ে আসার কথা থাকলেও, সে একাই চলে এসেছে। অন্য বন্ধুরা আসার বেশ আগেই, সে সাদমানের বাসায় চলে এসেছে। বাসায় ঢোকার পর থেকে তার বেশ অস্বস্তি লাগছে। সাথে একটু ভয়ও করছে। সাদমানের মা তাকে কী জিজ্ঞেস করতে পারে, এই ভেবেই সে ব্যাকুল হয়ে উঠছে বারবার। অরণী ড্রইংরুমে একা বসে আছে। সাদমান ওকে বসিয়ে রেখে কিছুক্ষণ আগে ভেতরে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর একজন মহিলা এসে রুমে ঢুকলেন। অরণী ওনাকে ঢুকতে দেখে, উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল। সাদমানের ওপর ওর এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। এভাবে ওকে একা বসিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেল। আবার এখন মা’কে পাঠিয়ে দিয়েছে, অথচ তার দেখা নেই! তাকে এভাবে বিপদে ফেলার মানে কী?

ফাহমিদা কাছে এসে অরণীর হাত ধরে বললেন, বসো। তুমি ভালো আছ?

জি আন্টি। আপনি ভালো আছেন?

ভালো আছি। বাসা চিনতে সমস্যা হয়নি তো?

না, আন্টি।

সাদমান তো সবসময় তোমার কথা বলে।

অরণী কী উত্তর দেবে, বুঝতে না পেরে, চুপ করে থাকল। ফাহমিদা বললেন, তোমাদের বাসা কোথায়?

বারিধারায়।

তোমার বাবা কী করেন?

বাবা ব্যবসা করেন।

আচ্ছা। তোমরা কয় ভাইবোন?

আমরা দুই বোন।

তোমার মা’কে সাথে নিয়ে আসতে আমাদের বাসায়। পরিচিত হতাম আপার সঙ্গে।

আম্মু বাসায় ছিলেন না। আম্মুরও নিজের ব্যবসা আছে। বাসায় ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।

তোমার বাবা-মা দুইজনই ব্যবসায়ী? আমাদের ফ্যামিলিতে সব হচ্ছে চাকুরিজীবী। একদিন তোমার আম্মুকে এখানে নিয়ে এসো।

জি, আন্টি নিয়ে আসব। আন্টি আপনি আমাদের বাসায় আসবেন।

যাব। তোমাদের পরীক্ষা শেষ হোক। তারপর একদিন গিয়ে তোমার বাসায় সবার সঙ্গে দেখা করে আসব।

জি আন্টি আসবেন।

ফাহমিদা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় সাদমান রুমে ঢুকল আর কলিংবেলের ঘন্টাও বেজে উঠল। সাদমান দরজা খুললে, নিয়ন, লাবনী, সারা আর ইহান ড্রইংরুমে ঢুকল। সবাই ফাহমিদাকে সালাম দিল। লুবনা, অরণীকে বসে থাকতে দেখে বলল, কী রে, তুই দেখি সবার আগে চলে এসেছিস! তুই কী ক্লাস শেষে বাসায় গিয়েছিলি, নাকি সরাসরি এখানে এসেছিস?

অরণী লজ্জা পেয়ে বলল, বাসা থেকেই এসেছি। যদি বাসা খুঁজে পেতে দেরি হয়, তাই একটু আগেই বেরিয়েছিলাম।

ইহান হেসে বলল, খুবই দুর্বল যুক্তি, অরণী। আমরা তো তোমাকে কিছু বলিই নাই। তুমি এমন ভীতু চেহারা করে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

ফাহমিদা বাচ্চাদের বসতে বলে ভেতরে চলে গেলেন। অরণী, ইহানকে বলল, তুমি আন্টির সামনে এই কথা বললে কেন?

বলেছি, তো কী হয়েছে? আন্টি জানে, তুমি যে কয়দিন পর এই বাসায় থাকতে চলে আসবা। এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে?………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here