#মন_নিয়ে_খেলা(২)
**********************
বসুন্ধরার ডি ব্লকের নয় নাম্বার রোডে, ছয় তলা সাদা বাড়িটার সামনে এসে, ওয়াইন কালারের প্রিমিও গাড়িটা থামল। এই বাড়িটা পূনমের ছোটো বোন, লাবনীর। গাড়ি থেকে নেমে দুই বোন লিফটের সামনে এসে দাঁড়াল। এই বাড়ির পাঁচ তলায় লাবনী, পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। অন্যান্য তলার অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভাড়া দেওয়া আছে
। বোনের মেয়েদের দেখে, লাবনী খুব খুশি হলেন। নীলোর্মিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুমি বুয়েটে চান্স পেয়েছ শুনে খুব ভালো লাগল। কংগ্রাচুলেশন, আম্মু।
অরণী বলল, খালামনি, নীলোর্মি তো বুয়েটে ভর্তি হতে চাচ্ছে না।
লাবনী বললেন, ওমা, কেন!
নীলোর্মি বলল, খালামনি, আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে চাচ্ছি।
এই বোকা মেয়ে, বুয়েটে কী সবাই চান্স পায়? দেশের সেরা ছাত্ররাই তো ওখানে পড়ার সুযোগ পায়।
তা পায়; কিন্তু আমার ওখানে পড়ার একদম ইচ্ছা নেই। আমি ইকনোমিকসে পড়তে চাই।
লাবনী জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের আম্মুকে বলেছ কথাটা?
নীলোর্মি বলল, আম্মু কথাটা শুনে একদম নাকচ করে দিয়েছেন।
তাহলে তো হয়েই গেল। তোমার আম্মুর বলার পর, আর তো কোনও কথাই থাকল না।
নীলোর্মি, লাবনীর হাত ধরে বলল, খালামনি তুমি কী একবার আম্মুকে বলবে, আম্মু যেন আমাকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পারমিশন দেন। এই জন্যেই আজকে তোমার কাছে এসেছি।
লাবনী আঁতকে উঠে বললেন, তোমার আম্মুকে আমি বলব! না রে মা। ঐ কাজ আমার দ্বারা হবে না।
প্লিজ, খালামনি।
লাবনী, নীলোর্মির কাঁধে হাত রেখে বললেন, আম্মু শোনো, তোমাকে একটা কথা বলি। তোমরা এখন বড়ো হয়েছ। বিষয়টা তোমরা বুঝবে। কারণ তোমরা নিজেরাও তো এই বিষয়টা নিয়ে ভীষণ সাফার করছ।
কী কথা, খালামনি?
বলছি। তোমরা আবার ভেবো না, আমি তোমাদের আম্মুর বিরুদ্ধে তোমাদের কাছে কমপ্লেইন করছি। ছোটো আপু সারাজীবনে, কখনোই কারও কথা শোনেনি। কোনোদিনও না। ও যেমন এখন তোমাদের শাসন করে, ঠিক এমনি করে ছোটোবেলায় আমাকেও শাসন করার চেষ্টা করত। আব্বা-আম্মাও কোনোদিন আমাকে এতটা শাসন করেননি৷ আপু এখনও যখন আমার সাথে এভাবে কথা বলে, তখন আমার ভীষণ খারাপ লাগে। আমি তো এখন আর ছোটো নেই, তাই না? কয়দিন পর আমার আন্দালিব ভার্সিটিতে যাবে। এই বয়সে, এসব আর ভালো লাগে না।
অরণী আর নীলোর্মি চুপচাপ বসে লাবনীর কথা শুনছে। এই কথার উত্তরে, তাদের তো আসলে কিছুই বলার নেই।
ওর সাথে আমার সখ্যতাটা কোনোদিন তৈরিই হল না। এখনও আপু সুযোগ পেলেই, আমাকে ছোটো দেখানোর চেষ্টা করে। এসব এখন আর ভালো লাগে না।
খালামনি, তুমি কী এই কারণেই আমাদের বাসায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছ?
লাবনী, অরণীর কথার উত্তর না দিয়ে শুধু হাসলেন। অরণী বলল, আম্মুর হয়ে আমি তোমাকে সরি বলছি, খালামনি।
তুমি কেন সরি বলবে? আমি কারও উপর রাগ করিনি। আপন ভাইবোনের সাথে রাগ করা যায়, বলো? আমি শুধু নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। শোনো নীলোর্মি, তুমি এক কাজ করো, তুমি বড়ো আপুর সাথে কথা বলো। বড়ো আপু বললে, ছোটো আপু হয়ত তাঁর রিকোয়েস্ট রাখতেও পারে।
নীলোর্মি খুব ভালো করে জানে, বড়ো খালামনির কোনও কথা তার আম্মু শুনবে না। আর বড়ো খালামনি, ছোটো খালামনির মতো এত গুছিয়ে সব কথা বলতেও পারবে না। শেষে আরও ভেজাল লেগে যাবে। নীলোর্মির মনটা খারাপ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তাকে বুয়েটেই ভর্তি হতে হবে। যেটা সে মন থেকে একদমই চায় না। তাদের আম্মু এমন কেন? কেন তিনি কখনোই তাদের দুই বোনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার মূল্য দেন না? কেন তাঁর কথাই ঐ বাড়ির শেষ কথা হবে? এত প্রাচুর্যের মধ্যে বাস করে বন্দী জীবন কাটানোর চেয়ে, সে যদি তার বন্ধু রূপশ্রীর মতো সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিত, সেটাই ঢের ভালো হত।
লাবনী তাদেরকে এতটুকুও মিথ্যা বলেনি অথবা বাড়িয়েও বলেনি। তারা দুই বোন ছোটোবেলা থেকেই তাদের আম্মুকে এমনই দেখে আসছে। একরোখা আর অসম্ভব জেদি। একবার যেটা বলেছেন, তো বলেছেনই। সেটার কোনও নড়চড় হবে না। নীলোর্মির তো মাঝে মধ্যে তার আব্বুর জন্য ভীষণ মায়া হয়। তার ভালো মানুষ আব্বুকেও, আম্মু সুযোগ পেলেই কষ্ট দেন। নীলোর্মির মাঝে মধ্যে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হয়। আম্মুর মুখের ওপর কঠিন কিছু কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্য মনটা আকুলিবিকুলি করতে থাকে; কিন্তু ঐ ভাবনা পর্যন্তই সার। এরচেয়ে বেশিদূর সে এগোতে পারে না। তার আপু তো আম্মুকে আরও বেশি ভয় পায়। আজ পর্যন্ত নীলোর্মি, অরণীকে কখনোই দেখেনি পূনমের সাথে কোনও বিষয় নিয়ে তর্ক করতে। তর্ক করা তো সুদূরের ব্যাপার, নিজের কোনও ইচ্ছা বা চাওয়ার কথাই সে আজ অবধি পূনমের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে পারেনি। তাদের জীবনটা এই পর্যন্ত এমনভাবেই চালিত হয়েছে। পূনম যা বলবেন, সেখানেই ফুলস্টপ পড়ে যাবে। সেখানে আর কারও বলার মতো কোনও অপশন থাকবে না। এমনকি তাদের আব্বুরও না।
পড়ালেখার বিষয়ে আর কোনও কথা হল না। খালা আর খালাতো ভাইবোনের সাথে আড্ডা দিয়ে, সন্ধ্যা নামলে তারা, তাদের অদৃশ্য শেকলবন্দী জীবনে ফিরে এল।
*************
ফাহাদ কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছেন। তিনি অসম্ভব ঠান্ডা মাথার মানুষ। তবে আজ তাঁর মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে। মাসের শুরুতে গাজীপুরে শ্রমিকের আন্দোলনের কারণে টানা সাতদিন ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখতে হয়েছিল। ঠিক ঐ সময়ই জারা আর ক্যালভিন ক্লেইন এর দুটো শিপমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। পঁচানব্বই ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পরও, আন্দোলনের কারণে শিপমেন্টটা সময়মতো দিতে পারেননি।
আর দুইদিনের কাজ হলেই, অর্ডারটা রেডি হয়ে যেত। তিনি বায়ারের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। শিপমেন্ট হয়ে যাওয়ার পর, আজকে ঐ পক্ষ থেকে মেইল করে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রোডাক্ট রিসিভ করবেন না। দশ হাজার পিস স্যুট ফেরত আসবে দেখে তাঁর বিরক্ত লাগছে না। ঐটুকু লোকসান, তাঁর ব্যবসায় কোনও প্রভাব ফেলবে না; কিন্তু আজ প্রথম তাঁর কোম্পানির শিপমেন্ট বাতিল হল। কোয়ালিটি এবং সময়ানুবর্তিতার দিক দিয়ে তাঁর চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের সর্বত্র সুনাম রয়েছে। এটা তাঁর জন্য সম্মানহানির মতো একটা ব্যাপার। এত বছরের দাগহীন কেরিয়ারে, ছোটো হলেও একটা আঁচড় পড়ে গেল।
ফাহাদ নীচতলার লিভিং রুমে বসে, প্রয়োজনীয় কয়েকটা ফোন কল করে কথা শেষ করলেন। এরপর ওপর তলায়, নিজের বেডরুমে এসে ল্যাপটপ খুলে বসলেন। চায়না থেকে একটা টিম এসেছে। ওদের সঙ্গে আগামীকাল দুপুরে মিটিং আছে। একটা মেইল করতে হবে। তাঁর পিএস মেইলটা রেডি করে দিয়েছে। তিনি মেইলটা চেক করে, তারপর পাঠাবেন।
ফাহাদ মেইলটা পড়ছেন, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল। দরজা খুলে, নীলোর্মি উঁকি দিল, বাবা আসব?
এসো। ফাহাদ ল্যাপটপটা দূরে সরিয়ে রাখলেন।
নীলোর্মি এসে ফাহাদের গা ঘেঁষে দাঁড়াল। ফাহাদ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, কী গো আম্মু, মন খারাপ নাকি?
না, বাবা।
কী করছিলে?
তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
আমার জন্য! কী চাই, বলো তো আম্মু?
কিছু চাই না।
তোমার ভর্তি কবে যেন?
রবিবারে।
এক্সাইটেড?
বাবা, একটা কথা বলব।
বলো।
আমি বুয়েটে পড়তে চাই না।
কেন!
আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ব, বাবা। আমার ইকনোমিকসে পড়ার ইচ্ছা।
তুমি কী জানো, তুমি কত চমৎকার একটা সাবজেক্টে চান্স পেয়েছ?
কিন্তু বাবা….
এটা তো ভালো একটা সাবজেক্ট। শোনো, এই সাবজেক্টে তোমার সৃষ্টিশীলতা দেখানোর অনেক সুযোগ আছে। আমার মনে হয়, তুমি এই সাবজেক্টটা খুব আনন্দ নিয়ে পড়তে পারবে। তুমি এখানে চান্স পাওয়ায়, আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমি তো মনে মনে ভেবে রেখেছি, আমার মেয়ে আর্কিটেক্ট হাওয়ার পর, আমিও প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টের মতো একটা কিছু বানাব। যেটার ডিজাইন আমার মেয়ে করবে। কী বলো, আম্মু? নাকি তুমি ইকনোমিকসেই পড়তে চাও?
আমি আম্মুকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কথা বলেছিলাম।
তোমার আম্মু কী বললেন?
আমি মানা করে দিয়েছেন।
ফাহাদ হেসে বললেন, আম্মু তোমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন, সেটাই বলেছেন। আমার কাছেও এটাই ভালো মনে হচ্ছে।
বাবা, তুমি একবার আম্মুর সাথে কথা বলবে?
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, ফাহাদের খুব মায়া হল। আহা, বেচারার বোধহয় আর্কিটেকচারে পড়ার একদম ইচ্ছা নেই। তিনি বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তোমার আম্মুকে বলে দিচ্ছি।
থ্যাংকস, বাবা।
আম্মু, আমার একটা মেইল করতে হবে। সেটা শেষ করে তোমার সাথে কথা বলছি।
বাবা, তুমি কাজ করো। আমি যাই।
নীলোর্মি, ফাহাদের রুম থেকে বেরিয়ে এসে, পূনমের বেডরুমের দিকে তাকাল। তার একবার ইচ্ছা করল, খালামনির কথাগুলো তার মা’কে বলে আসতে; কিন্তু সাহস করে উঠতে পারল না দেখে, সে নিজের বেডরুমের দিকে চলে গেল।
ফাহাদ মেইল পাঠানো এবং আরও দু’একটা দরকারি ফোন কল শেষ করে, ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘড়ির দিকে তাকালেন। রাত পৌনে দশটা বাজে। রাত দশটার পর তিনি কোনও ফোন রিসিভ করেন না। অতি প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার একটা মোবাইলে সেভ করা আছে। সেটা ছাড়া বাকি দুইটা মোবাইল, তিনি প্রতিদিন রাত দশটায় সুইচড অফ করে দেন। সারাদিন এত মানসিক চাপে থাকতে হয়, যে বাড়ি ফেরার পর এইসব ব্যবসায়িক কথাবার্তা বা অন্য কোনও ঝামেলা, কোনোটাই তিনি পোহাতে চান না। মোবাইলগুলো টেবিলে রেখে, ফাহাদ রুম থেকে বের হয়ে এলেন। নীলোর্মির ভর্তির বিষয়টা পূনমকে বলে রাখা দরকার। কাজের চাপে পরে আবার তিনি বিষয়টা ভুলে যাবেন।
ফাহাদ রুমে ঢুকে দেখলেন, পূনম ভিডিয়ো কলে কথা বলছেন। ফাহাদকে ইশারায় পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে, পূনম মিটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। ফাহাদ বিছানায় বসে, টাইম ম্যাগাজিনের পাতা উলটাতে লাগলেন।
পূনমের ইচ্ছাতেই তাঁদের দুইজনের আলাদা বেডরুম রাখা হয়েছে। তাঁরা দুইজনই এত বেশি ব্যস্ত থাকেন, সেটা চিন্তা করেই পূনম বলেছিলেন, তাঁদের দুইজনের জন্য আলাদা স্পেস দরকার। অবশ্য ছুটির দিনসহ সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তাঁরা রাতের ঘুমটা এক বিছানাতেই ঘুমান।
পূনম কাজ শেষ করে, বিছানায় বসে বললেন, গুলশান দুইয়ের আউটলেটটা বড়ো করছি। ওটা নিয়েই কথা হচ্ছিল এতক্ষণ। তুমি কখন ফিরলে?
সাড়ে আটটায় এসেছি।
কিছু খেয়েছ?
সন্ধ্যায় সোনারগাঁওয়ে মিটিং ছিল। ওখানে খেয়েছি। আচ্ছা শোনো, নীলোর্মি বলছিল, ওর নাকি বুয়েটে পড়তে ইচ্ছা করছে না।
ওহ হো, তোমাকে তো বলা হয়নি, আমি তেইশ তারিখ বিকেলে মালদ্বীপ যাচ্ছি। দশদিনের ট্যুর আছে।
মালদ্বীপে হঠাৎ, তাও আবার দশদিনের জন্য?
শুধু মালদ্বীপ না। শ্রীলংকা আর ভুটানেও যাব। আঞ্জুমান আপা খুব ইনসিস্ট করছেন।
যাও, ঘুরে আসো। তোমার তো আরেকবার বিদেশ ভ্রমণের সময় হয়েই এসেছে। ফাহাদ কথাটা বলে হেসে ফেললেন।
ফাহাদকে হাসতে দেখে পূনম হঠাৎ রেগে গেলেন। বললেন, তুমি হাসলে কেন?
এমনিই হাসলাম।
না, এমনি হাসোনি। আমার ঘন ঘন বাইরে যাওয়াটাকে তুমি কটাক্ষ করে হেসেছ।
তুমি ভুল বুঝছ পূনম। তোমার বাইরে যাওয়া নিয়ে আমি কটাক্ষ করব কেন? তোমাকে তো প্রয়োজনেই যেতে হয়।
তোমার বোন সেদিন ফোন করেছিল। সেও আমাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলল।
কে, ফ্লোরা?
হুম। আমাকে বলে, আমি নাকি বারিধারায় নাস্তা করলে, ইস্তাম্বুলে গিয়ে ডিনার করি। কত বড়ো সাহস!
সরি, ডিয়ার। বোনের কথার দায়দায়িত্ব আমি নিতে পারছি না। তবে আমি তোমার বিদেশ যাওয়া নিয়ে হাসিনি। যেটা বলছিলাম, সেটাই বলা হল না। নীলোর্মি…
শোনো, দস্তগীর ভাই ফোন দিয়েছিলেন। নতুন ক্রুজ শিপ এনেছেন। এই শুক্রবার সিলেক্টেড গেস্টদের নিয়ে লাঞ্চ করবেন।
তুমি যাও। শুক্রবার আমি ফ্রি নেই।
যাবে না তাহলে?
তুমি যাও। আমি দস্তগীরের সঙ্গে কথা বলে নেব।
ওকে।
আমি তোমার সঙ্গে একটা বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলাম; কিন্তু তুমি বারবার প্রসঙ্গ পালটে দিচ্ছ। কারণটা জানতে পারি?
কারণ ঐ বিষয়ে কথা বলার মতো কিছু নেই।
ফাহাদ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তাহলে তো হয়েই গেল। ঠিক আছে, তুমি রেস্ট নাও।
স্বামীকে মন খারাপ করে চলে যেতে দেখে, পূনম উঠে এসে ফাহাদের হাত ধরে বললেন, বাচ্চারা যা বলবে, তাই শুনতে হবে নাকি? বাচ্চারা তো ভালো-মন্দ বোঝে না। তাই বলে, তুমিও কী বুঝতে পারছ না?
বাচ্চারা বড়ো হচ্ছে। এখন ওদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ওদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ওদের ভালোলাগার বিষয়গুলো যদি আমরা না বুঝি, তাহলে কে বুঝবে, বলো? এই যে এত পরিশ্রম করছি, এত টাকাপয়সা আসছে, এগুলো তো সব অরণী আর নীলোর্মির জন্যই, তাই না?
আমি এই বিষয়ে আর কোনও আলোচনা করতে চাচ্ছি না। নীলোর্মি বুয়েটে পড়বে, এটাই শেষ কথা।
ফাহাদ কিছুক্ষণ স্থির চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন। এই মানুষটাকে আজ অবধি তিনি ঠিকঠাক চিনতে পারলেন না। এই মনে হয়, এরচেয়ে ভালো মানুষ আর একজনও নেই। আবার পূনম যখন কোনও বিষয়ে জেদ ধরে বসে থাকেন, সেই মুহূর্তটাকে ফাহাদ ভীষণ ভয় পান। জেদি পূনমকে, তাঁর জেদ থেকে একচুলও নাড়ানো যায় না। পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবনে তিনি এমনটাই দেখে আসছেন। মানুষ তো সময়ের সাথে সাথে পালটায়। রাগ, ক্ষোভ, জেদ কমিয়ে আনে; কিন্তু পূনম নিজেকে এক জায়গায় ধরে রেখেছেন। শরীরের বয়সও যেমন বাড়তে দেননি, তেমনি তাঁর মনের ম্যাচুরিটিও আসেনি।…………………….