#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – ৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
______________________________
সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কংলাক পাহাড়ের বুকে ঢলে পড়ছে রক্তিম সূর্য। কাছে থেকে মনে হচ্ছে যেন পাহাড়টি সূর্যকে গিলে নিচ্ছে। আপন করছে সূর্যের তেজকে। আভার মুখ হা। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে লুকায়িত সৌর্ন্দয্য দেখে সবাই অভিভূত। আভা উত্তেজনায় পাশে থাকা আহনাফের হাত চেপে ধরে। আহনাফের ধ্যান ভাঙে। সে চোখ সরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকায়। আভার হাত আহনাফের কব্জি চেপে আছে। আহনাফ মৃদু হাসে। ঘাড় কাত করে আভার দিকে চায়। হাসে। বাচ্চা মেয়ে!
–’ আমাদের এখন নেমে যেতে হবে। ‘
বাঁধনের কথা শুনে সবার স্বাভাবিক হয়। আভা চোখ পিটপিট করে। সম্বিত ফিরে পেলে নিজের অবস্থান লক্ষ্য করে। আহনাফের হাত চেপে ধরা লক্ষ্য করলে চট করে হাত ছেড়ে দেয় আভা। লজ্জা, অস্বস্তিতে কানের পেছনে চুল গুঁজে মিনমিন সুরে বলে, ‘ সরি। ‘
আহনাফ গলা কেশে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। তারপর দুটো লাঠি হাতে নিয়ে একটা আভার হতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
–’ ইটস ওকে। আমি কিছু মনে করিনি। লাঠি ধরো। আমাদের যেতে হবে। ‘
আভা এখনো লজ্জায় নীল। কি করে ফেলেছে ও? আহনাফের হাত ধরেছে? ইশ। আভা এখন মুখ দেখাবে কিভাবে? কি করে ফেললো ও? ছিঃ, ছিঃ!
আভা লাঠি হাতে নেয়। হাত কাপছে আভার। কম্পিত হাত থেকে লাঠি পড়ে যায়। আভা বোকার মত লাঠির দিকে চায়। আহনাফ মৃদু মৃদু হাসছে। মূলত আভাকে অপ্রস্তুত দেখতে আহনাফের ভালোই লাগছে। আভা ঝুঁকে লাঠি হাতে নেয়। হাতের কাপুনি থামছে না। লাঠি হাত থেকে আবার পড়ে যেতে নিলে আহনাফ ধরে ফেলে। আভা কানের পেছনে চুল গুঁজে ইতি ওতি চায়। আহনাফ আভার হাতে লাঠি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
–’ অনুভূতির ক্ষেত্রে বড্ড নাজুক তুমি। শুধু কথাটাই ভালো বলতে পারো। ‘
আভা লাঠি হাতে নেয়। অতঃপর আহনাফকে পেছনে ফেলে হনহনিয়ে পাহাড় বেয়ে নামতে থাকে। পেছনে আহনাফ থুতনি চুলকে মৃদু হেসে এগিয়ে আসে।

পাহাড় বেয়ে নামছে সবাই। রাত সাতটা বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। আর মাত্র দু মিনিটের পথ হাঁটলেই পাহাড়ের রাস্তা শেষ হবে। তবে বিপত্তি ঘটল হঠাৎ। আভার পা মচকে গেছে। যার দরুন একবিন্দু হাঁটতে পারছে না সে। এখন জিরিয়ে নেবার সময় নেই। ইতিমধ্যে বেশ রাত হয়ে গেছে। পাহাড়ের সড়ক রাতের বেলা খুব একটা ভালো না। চুরি ডাকাতি হর-হামেশাই হয়। তাই আভা চোখ খিচে কোনরকম বাকিটা পথ পেরুল। নিচে নামতে সবাই গাড়িতে উঠছে। আভা পারছে না। পায়ের ব্যথায় রীতিমত চোখে জল এসে গেছে। বাঁধন আভাকে আস্তে হাঁটতে দেখে বলল,
–’ কোনো সমস্যা আভা? ‘
আভা ঠোঁট চেপে চোখ বুজে বলল,
–’ পা ব্যাথা করছে। বোধহয় মচকে গেছে। ‘
বাঁধন বলল,
–’ কই? দেখি। ‘
আভা পা এগিয়ে দিল। বাঁধন পা নেড়েচেড়ে দেখল। পা ফুলে গেছে। এতসময় মচকে যাওয়া পা নিয়ে পাহাড় চড়েছে। ব্যথা পেয়েছে ভীষন। কিন্তু অদ্ভুদ মেয়ে মুখ ফুটে অব্দি বলে নি। বাঁধন না জিজ্ঞেস করলে হয়তো হোটেল অব্দি এভাবেই যেত। বাঁধন বলল,
–’ পা একটা মোচড় দিলে ঠিক হয়ে যাবে। দিব? ‘
–’ না, না। ‘
আভা পা বটে নিল। আহনাফ দেখে দেখে সবাইকে গাড়িতে তুলছে। আভা ও বাঁধনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সে এগিয়ে এল।
–’ কি হয়েছে? ‘
বাঁধন উঠে দাড়াল। বলল,
–’ আভার পা মচকে গেছে। হাঁটতে পারছে না বেচারি। ‘
আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আভার দিকে চাইল। মেয়েটা ব্যথায় কাতর। আহনাফ নির্লিপ্ত ভাবে বলল,
–’ পা মোচড় দে। ঠিক হয়ে যাবে। ‘
–’ বলেছিলাম। দিচ্ছে না। ভয় পাচ্ছে। ‘

আহনাফ আর দেরি করল না। চুপ করে আভার পায়ের কাছে বসে বলল,
–’ পা দাও। ‘
আভা আরো জোরালো ভাবে পা বটে নিল। দ্রুত বলল,
–’ না, না। লাগবে না। ব্যথা পাব। ‘
আহনাফ অবশ্য শুনল না। আভার পা জোরপূর্বক নিজের হাতে তুলে নিল। তারপর জোরে এক মোচড় দিল। আভা আহনাফের ঘাড় শক্ত করে খামচে ধরে চেচিয়ে উঠল। ব্যথায় চোখে পানি গড়িয়ে পড়ল। আহনাফ পা কিছুক্ষণ নেড়ে চেড়ে বলল,
–’ এবার ঠিক আছে? ‘
আভা চোখের জল হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে বলল,
–’ আপনি খুব খারাপ লোক। ব্যথা দিয়েছেন আমায়। ‘
–’ তার মানে পা ঠিক হয়ে গেছে। ‘
আহনাফ উঠে দাঁড়াল। আভা মুখ ফুলে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে। আহনাফ গায়ের টিশার্ট টেনেটুনে ঠিক করে আভার দিকে চেয়ে বলল,
–’ গাড়িতে উঠো। ‘
আভা মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–’ হাঁটতে পারছি না আমি। ‘
–’ হাঁটার ট্রাই করো। এখন আর ব্যথা করবে না। ‘
আভা ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে আহনাফকে কতগুলো গালি দিল। অতঃপর চোখ খিচে হাঁটার চেষ্টা করল। ও মা! আভা তো হাঁটতে পারছে। আভা হেসে উঠল। বলল,
–’ ব্যথা নেই তো। ‘
আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছাড়ল। বলল,
–’ যাও। এবার গাড়িতে উঠো। ‘
আভা সুন্দর করে হেঁটে গাড়িতে উঠে পড়ল।
গাড়ি চলছে। দিহান বলল,
–’ আভা, তোমার নাকি পা মচকে গেছে? ‘
আভা চোখ বড়বড় করে আহনাফের দিকে চাইল। অথচ আহনাফ নির্লিপ্ত। মোবাইল চালাচ্ছে। আভা বলল,
–’ এখন ঠিক আছে। ‘
বাঁধন বলল,
–’ ঠিক হবেই ত। আহনাফের এক মোচড়ে আভা পারফেক্ট।’
আভা লজ্জা পেল। আড়চোখে আহনাফের দিকে চেয়ে বাঁধনকে প্রশ্ন করল,
–’ তিনি কি ডাক্তার? ‘
কামরুল হেসে ফেলল। কৌতুক করে বলল,
–’ হ্যাঁ। তোমার তিনিসহ আমরা সবাই মেডিকেল স্টুডেন্ট। সামনের বছর আল্লাহ কৃপা করলে ডাক্তার-ফাক্তার কিছু একটা হয়ে যাব। ‘
ইশ। ‘ তোমার তিনি ‘
কেমন যেন লাগল আভার। গা শিরশির করে উঠল। কান গরম হল। ইশ, তার বন্ধুরা কি অসভ্য।

হোটেলে পৌঁছে গেল সবাই। আভা হোটেলে পৌঁছে আভা একটা কাপ চায়ের অর্ডার দিল। চা আসতে দেরি হবে। তাই জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। গা ঘেমেছে ভীষন। গোসল করতে হবে।

আহনাফরাও গোসল করবে। সবাই জামা কাপড় বের করছে। আহনাফ গায়ের টিশার্ট খুলে হাতে নিল। বাঁধন লাগেজ থেকে কাপড় বের করছে। কামরুল টাওয়াল খুঁজছে। আহনাফ হাতে টাওয়াল ঝুলিয়ে বলল,
–’ আমি আগে যাচ্ছি। তারপর একে একে সবাই ঢুকে পড়িস। ‘
সবাই নিরবে সায় দিল। আহনাফ এগিয়ে গেল সামনে।

–’ আহনাফ, তোর ঘাড়ে কি হয়েছে? ‘
আহনাফ ঘাড় উচুঁ করে ঘাড়ের দিকে তাকাল। ঘাড়ের এক অংশ নখের আঁচড়। ফর্সা বাহুতে নখের লাল লাল আঁচড় বেশ চোখে লাগছে। বাঁধন কামরুলের কথায় তাকাল আহনাফের দিকে। কামরুল বলল,
–’ মনে হচ্ছে কোনো জংলী বিড়াল খামচে দিয়েছে। ‘
আহনাফ বুঝতে পারছে না, এই নখের আঁচড় কোথা হতে এল। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর মনে পড়ল। এটা তো আভার নখের আঁচড়। পা মোচড় দেওয়ার সময় আভা ব্যথায় খামচে দিয়েছিল। পরক্ষণেই আহনাফের বিরক্তি কেটে গেল। ভ্রুযুগল সোজা হল। মৃদু হেসে বলল,
–’ জংলী বিড়ালই হবে হয়তো। ‘
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে তাকাল। বলল,
–’ সত্যি বিড়াল তো, আহনাফ? ‘
আহনাফ মুচকি হাসল। বাঁধনের মাথায় চাটা দিয়ে বলল,
–’ যাচ্ছি। ‘
আহনাফ চলে গেল। কেন যেন বাঁধনের মন খারাপ হল। আহনাফের ঘাড়ে আভার নখের আঁচড়। বাঁধন জানে সেটা। আভার কথা মনে পড়ে আহনাফের ওই মুচকি মুচকি হাসি! কি বুঝাচ্ছে? আহনাফ কি আভার প্রতি দুর্বল?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here