#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ২৪
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
_____________________________
তপ্ত দুপুরের ঝাঁজ তুঙ্গে। খাবারের পর্ব শেষ হয়েছে সবে। আহনাফ হাত মুখ ধুয়ে আভার শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুছল। বার-দুয়েক কব্জিতে পড়া ঘড়ির দিকে চাইল। সময় এখন তিনটা পঁয়ত্রিশ মিনিট। মায়ের ঔষুধ খাবার সময় হয়েছে। আহনাফ বাসায় না থাকলে, মাকে নিজের হাতে ঔষধ না খাওয়ালে আহনাফের মা বড্ড অনিয়ম করেন। আহনাফ ফোন বের করল। মায়ের নাম্বারে কল করে কানে ধরে রাখল ফোন। দুবার রিং বাজল। আহনাফের মা কল ধরলেন। আহনাফ সালাম করে জিজ্ঞেস করল,
‘ ভাত খেয়েছ, মা? ‘
‘ হ্যাঁ। ওই রেশমা এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে। ‘
‘ আর ঔষধ? ‘
‘ হ্যাঁ, খেয়েছি। ‘
‘ ইনসুলিন কত দিয়েছ? ‘
‘ ১৬। ঠিক করেছি না? ‘
‘ হ্যাঁ, ঠিক করেছ। শুনো, আমার আসতে দেরি হবে। একটু অন্য জায়গায় যাব। ‘
‘ তোর বাবার কাছে? ‘
আহনাফ আড়চোখে আভার দিকে চাইল। আভা আহনাফের কাধে মাথা রেখে চোখ দুখানা মেলে চেয়ে রয়েছে তার দিকে। আহনাফ মৃদু স্বরে বলল,
‘ হু। ‘
আহনাফের মা আর কথা বললেন না। চট করে ফোন কেটে দিলেন। আহনাফ মায়ের সাড়া শব্দ না পেয়ে ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন কানের থেকে নামিয়ে পকেটে পুড়ল। আভা আহনাফের হাত নিজের হাতে নিয়ে আঙ্গুল টেনে দিতে দিতে বলল,
‘ আপনার বাবা কোথায় থাকেন? ‘
আহনাফ উত্তর দিল না। বরং এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে খানিক বেহায়া হল। আভার কোমড় একহাতে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে বলল,
‘ একটু চরিত্রহীন হতে ইচ্ছে করছে! হই? ‘
আভা হকচকাল। আহনাফের বুকে হাত দিয়ে ঠেলে ধরে মিনমিন করে বলল, ‘ ইশ! লজ্জা লাগছে। ছাড়ুন। ‘
আহনাফ ছেড়ে দিল। আভার নাক টেনে বলল,
‘ এত লজ্জা কই রাখো? ছুঁলেই লজ্জাবতী গাছের ন্যায় লুটিয়ে পড়।’
আভা মৃদু হাসল। আহনাফ নির্নিমেষ চেয়ে রইল মেয়েটার হাসির পানে। আভা হাসলে তার চোখ ছোট হয়ে আসে। চোখের কোণে দু’ফোঁটা জল জমে যায়। হাসলে যেন মেয়েটার সমগ্র মুখ হেসে উঠে। চোখে চোখে হাসার রাজত্ব চলে। এই মেয়েটা এমন কেন? আহনাফ তার দিকে যতবার চায়, চোখ ফেরাতে পারে না। চোখে ছানি পড়ে যায়। তবুও মেয়েটাকে চোখ ভরে দেখার তৃষ্ণা মেটে না। এমন কেন হয়? ভালোবাসে বলেই তো! আহনাফ নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,
‘ শাড়িতে ভালো লাগছে। বিয়ের পর সবসময় শাড়ি পড়বে। ‘
আভা বিয়ের কথা শুনে বিমোহিত হয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে থাকল। অতঃপর বাচ্চাদের ন্যায় আবদার করে বসল,
‘ আচ্ছা, শাড়ি পড়ব। কিন্তু আমরা বিয়ে কখন করব? ‘
আহনাফ চোখ টিপে বলল,
‘ আমার কাছে আসার এত তাড়া? ‘
‘ তাড়া নয় ত কি? এই যে লুকিয়ে দেখা করি। মন ভরে না তো? আপনার ভরে? বিয়ের পর সারাজীবন আপনাকে আমার সামনে বসিয়ে রেখে চোখ জুড়িয়ে সারাক্ষণ চেয়ে থাকব। কিন্তু তার আগে তো বিয়ে করতে হবে। ‘
আহনাফ ক্ষুদ্র নিঃশ্বাস ছেড়ে বেঞ্চে হেলান দিল। আভার শাড়ির আঁচল আবারও আভার কোলে তুলে বলল,
‘ শাড়ির আঁচলই সামলাতে পারো না। আবার বিয়ে করবে? ‘
‘ ধুর। এটা বারবার কেন পড়ে যায়। ‘
আভা শাড়ীর আঁচল কোমরে গিঁট বেধে রেখে দিল। মুচকি হেসে বলল,
‘ এই যে সামলে নিলাম। আর পড়বে না। এবার বলুন, বিয়ে কবে করব? ‘
আহনাফ মৃদু হাসল। অতঃপর ভীষন থমথমে ভাবভঙ্গি নিয়ে আভার দিকে চাইল। বলল,
‘ দেখো আভা। তুমি মাত্র মেডিকেল ভর্তি হয়েছ। এখন তোমার সামনে সুবিশাল ক্যারিয়ারের ঝাঁপটা। এসব সামলে বিয়ে নামক দায়িত্ত্ব নিতে পারবে না তুমি। হাপিয়ে উঠবে। আমি চাই, তুমি তোমার সর্বোচ্চ দিয়ে পড়াশোনা করো। আমার চেয়েও ভালো ডাক্তার হও। আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না। পাঁচ বছর পর বিয়ে করব আমরা। হু? ‘
আভা ডান হাতের পাঁচ আঙুলের দিকে চোখ রেখে টেনে বলল,
‘ পাঁচ বছর? আমি অপেক্ষা করতে করতে বুড়ি হয়ে যাব। ‘
‘ আমিও বুড়ো হব। বুড়ো বুড়ি মিলে আমাদের বুড়োময় সংসার হবে। কি ক্ষতি তাতে? আমরা দুজন একসাথে আছি। তাতেই হবে। ‘
আভা কি বুঝতে পেরেছে? আহনাফ জানে না। আহনাফ চায়, আভা বুঝুক। বিয়ে নামক গুরুত্তপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বেলায় হাজারবার ভাবুক। বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়। আজ যাকে ভালো লাগছে, কাল থেকে অসহ্যও লাগতে পারে। মনের রহস্য বোঝা কার দায়? আহনাফ চায়, আভা বুঝে শুনে তারপর সিদ্ধান্ত নেক।
আভা মুচকি হেসে বলল,
‘ ঠিক আছে। কিন্তু পাঁচ বছরের পর আর এক সেকেন্ড অপেক্ষা করাবেন না। তাহলে কিন্তু আমি ভীষন রাগ করব। রাগে কথা বলা বন্ধ করে দেব। ‘
‘ যথা আজ্ঞা। চা খাবে? ‘
‘ হু, খাব। ‘
আহনাফ এক চা’ওয়ালা কিশোরকে ডেকে বলল দুকাপ চা দিতে। আভা এতক্ষণ একটা কিছু বলার জন্যে হাসফাঁস করছিল। কিন্তু বলবে বলবে করেও বলা হচ্ছে না। আহনাফ যদি বকা দিয়ে উঠে?
আভাকে উশখুশ করতে দেখে আহনাফ বলল,
‘ খারাপ লাগছে? কিছু বলবে? ‘
আভা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে মানা করল। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আভার দিকে চেয়ে পুনরায় কিশোর ছেলেটার দিকে মন দিল। কিশোর ছেলেটা দুকাপ চা আহনাফের হাতে দিয়ে বলল,
‘ দুই কাপ বিশ টাহা। ‘
আহনাফ পকেট থেকে একশ টাকার নোট বের করে ছেলেটার হাতে দিল। ছেলেটা টাকার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে আহনাফের দিকে চাইল। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার ন্যায় এক মিষ্টি হাসি দিয়ে ফ্লাস্ক নিয়ে চলে গেল সামনে। আভা চেয়ে দেখল সব। আহনাফের এই ছোটখাট বিষয়টা আভাকে বারবার বিমোহিত করে। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, শুনো পৃথিবী, এই অসাধারণ প্রেমিকটা শুধু আমার, শুধুই আমার। গর্ব হয় আভার। আহনাফ চায়ের কাপ একটাতে চুমুক দিল। ‘ ঠিক আছে ‘ বলে চুমুক দেওয়া চায়ের কাপ আভার দিকে এগিয়ে দিল। আভা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,
‘ কি দেখলেন চায়ে? ‘
‘ চিনি,লিকার ঠিক আছে কি না। ‘
আভা চা খেতে খেতে আড়চোখে আহনাফকে দেখতে লাগল। সরাসরি কখনোই আহনাফের দিকে চোখ রাখতে পারে না আভা। লজ্জায় গুটিয়ে যায়। আর আহনাফের দু একটা লাজহীন কথা যে আভাকে লজ্জায় কিভাবে যেন খু’ন করে দেয়। তার সবসময় আড়চোখে আহনাফকে দেখে আভা। দেখা গেল, কোনদিন আহনাফকে চোখ বাঁকা করে দেখতে গিয়ে আভা চোখ ত্যাড়া হয়ে গেল। তারপর আভা যা দেখবে সব দুটো দেখবে। আহনাফও কি দুটো দেখবে? ইশ, দুটি আহনাফ। ভাবতে কেমন যেন পেটে মোচড় দিচ্ছে। রোমাঞ্চকর লাগছে। ইচ্ছে করছে, এখনি ত্যাড়া চোখ হয়ে যেতে।
‘ কি ভাবছ? ‘
আহনাফের কথা শুনে আভার ধ্যান ভেঙে যায়। আভা হালকা করে কাশে। তারপর আহনাফের দিকে মায়াময় চোখ দুখানা রেখে মিষ্টি কেউ আবদার করে,
‘ আমার তো এখন ছুটি। মেডিকেল শুরু হতে আরো দুমাস। আমরা আরো একবার ট্যুরে গেলে কেমন হয়? এবার কিন্তু সিলেট যাব। ‘

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here