#মন_তোমাকে_ছুঁয়ে_দিলাম – পর্ব ২
লেখনীতে – আভা ইসলাম রাত্রি
________________________________
–’ আপনারা সবাই দারুন মজার মানুষ তো! ‘
বাঁধন মাথা চুলকে লজ্জা পাওয়ার ভান করল। কামরুল অবশ্য মুখ ভেংচি দিল। বলল,
–’ আমাদের বন্ধুদলের সবাই মজা করতে পছন্দ করি। শুধু আহনাফ ছাড়া। আহনাফের মজা করা পছন্দ না। আমরা যত মজাদার জোকস্ বলি না কেন। আহনাফের রিয়েকশন শূন্যই আসবে। ব্যাটা সারাজীবন নিরামিষ থেকে গেল। আমিষ আর হলো না। ‘
কামরুলের কথা বলার ভঙ্গিতে আভা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। আভা খুব উপভোগ করছে তাদের সকলের কথা। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে বলল,
–’ তোদের ফালতু জোকসে কে হাসে? ‘
– ‘ সবাই হাসে। শুধু তুই ছাড়া। ‘
আহনাফ কপালে ভাঁজ নিয়ে কামরুলের দিকে তাকাল। পরক্ষণে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বই পড়ায় মন দিল। আভা আড়চোখে বেশ খুঁটিয়ে দেখতে লাগল আহনাফ নামক এই গুরুগম্ভীর অ্যাটিটিউডের রাজাকে। সুদর্শন বটে তবে একটু নিরামিষ। মজা বুঝে না, হাসে না, কথা বলে না। একটু কেমন যেন! আভা বলল,
–’ আপনি হাসেন না কেন? হাসতে পয়সা লাগে না। আর আমাদের সবার উচিৎ হাসা প্র্যাকটিস করা। এতে মন শরীর সবকিছু ভালো থাকে। ‘
আভার বিজ্ঞদের মত কথা বলা দেখে আহনাফ বেজায় অবাক হল। আভার দিকে চেয়ে বলল,
– ‘ আমি অকারনে হাসতে পছন্দ করি না। ‘
–’ কারণেও ত হাসছেন না। ‘
আহনাফ উত্তর দিল না। চুপ করে বইয়ে মন দিল। দিহান মাঝখানে ফোরন কাটল। বলল,
– ‘ আরে ,ওর কথা বাদ দাও। ওর আচরনে সমস্যা আছে। ‘
আভা তবুও চোরের মত আহনাফকে দেখতে লাগল। আভার আহনাফকে খুব পছন্দ হয়েছে। ছেলেটা কথা কম বলে, আভা বেশি কথা বলে। দুজন ব্যতিক্রম ধর্মী। তবুও আভার ভালো লেগেছে আহনাফকে। একজন ইন্টারেস্টিং চরিত্র কি না। তাই!
সম্পূর্ন রাস্তা আভা আহনাফের বন্ধুদের সাথে কথা বলল, হাসল, দু একবার গান গাইল, খাবার ভাগাভাগি করল। আভা খুব সহজেই মিশে গেল তাদের সাথে। বাসের লম্বা সফর আভার বোধ হল মিনিটেই ফুরিয়ে গেল। তবে আহনাফের সকল বন্ধুরা আভার সাথে কথা বলেছে ঠিকই। তবে চিত্রা নামক মেয়েটা আভার সাথে একটুও কোধা বলেনি। কেমন যেন মুখ গোমড়া করে বসে ছিল। আভা দু একবার চিত্রার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কাজে দেয়নি। মেয়েটা স্পষ্ট আভাকে এড়িয়ে গেছে। তবে আভা তা নিয়ে ভাবে নি। মেয়েটা হয়তো অসুস্থ বোধ করছে। তাই কথা বলতে চাইছে না। আভা তাই আহনাফের অন্য বন্ধুদের সাথে কথা বলল। আসর বেশ জমে উঠল তাদের।
________________________________
বাস সাজেক পৌঁছে গেছে। বাসের সবাই নেমে দাড়িয়েছে। আহনাফ বন্ধু বান্ধবের সাথে একপাশে দাড়িয়ে গল্প করছে। আভা একা একা একটা বেঞ্চে বসে মোবাইলে কি যেন দেখছে। হঠাৎ ট্রাভেল এজেন্সির ম্যানেজার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–’ সবাই এদিকে আসুন! ‘
সবাই ম্যানেজারের কথামত তার পাশে এসে দাঁড়াল। ম্যানেজার বললো,
–’ ‘ আমরা সবাই মেঘের রাজ্য সাজেক পৌঁছে গেছি। এখন আপনারা কি করে এই জায়গা অনুভব করবেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার। আপনারা চাইলে হোটেলে থাকতে পারেন। আমরা হোটেল বুক করেছি। আর যারা হোটেলে থাকতে চান না, তারা সাজেকের একপাশে তাবু খাঁটিয়ে থাকতে পারেন। সর্বোপরি এই ভীষন সুন্দর জায়গা আপনারা নিজ নিজ মতন উপভোগ করুন। ধন্যবাদ! ‘
আহনাফরা সিদ্ধান্ত নিল তারা তাবু খাটিয়ে থাকবে। কিছুটা কষ্ট হবে! তবে সাজেকের জায়গাটা পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে তাবু ইজ দ্য বেস্ট অপশন।
কিন্তু আভা হোটেলে থাকবে। সাজেক একা এসেছে সে। তাবু খাটিয়ে থাকা তার দ্বারা অসম্ভব। অতঃপর সবাই যার যার লাগেজ নিয়ে হোটেলে চলে গেল।
হোটেলে পৌঁছে একটা লম্বা ঘুম দিল আভা। সেই ভাতঘুমে একটা দারুন স্বপ্ন দেখলো সে। কাকে? আহনাফ নামক সেই ভয়ংকর সুদর্শন তথা গুরুগম্ভীর ছেলেকে। আভার এলোমেলো খোঁপায় সুন্দর একটা বেলি ফুলের গাজরা গুঁজে দিয়েছে। ইশ, কি মনোরম সেই দৃশ্য! আভার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল আল্যার্মের টিংটিং শব্দে। আভা বিরক্ত হলো। কিন্তু পরক্ষণেই স্বপ্নের কথা ভেবে সে ভীষন রকম অবাক হলো। একদিনের পরিচয়ে ছেলেটাকে নিয়ে এমন অদ্ভুত স্বপ্ন কেন দেখলো সে? কি জানে ছেলেটা সম্পর্কে? খারাপ ছেলেও হতে পারে। অথচ ছেলেটাকে নিয়ে আকাশ কুসুম ভেবে বসে আছে। ছিঃ, লজ্জা লাগছে! এত বিশ্রী স্বপ্ন দেখে আভার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। আভা মনেমনে নিজেকে কতক গালি দিয়ে বাথরুমে চলে গেল। একটা হট শাওয়ার নেওয়া দরকার! ভীষন ঠান্ডা সাজেকে!
দুপুরে খাবার খাওয়া সময় হয়েছে। আভা শাওয়ার নিয়ে নিচে নেমে এসেছে। ট্রাভেল এজেন্সির সবাই খেতে বসেছে। শুধু আহনাফরা আসেনি। ওরা বোধহয় তাবুতে নিজেদের খাবার তৈরি করেছে। আভার ভীষন মন খারাপ হল। সে চুপচাপ খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেল হোটেলের ডাইনিং সেক্টর থেকে।
______________________________
অতঃপর সবাই বের হলো সাজেক ঘুরতে। আভার খুব ঠাণ্ডা লাগছে। ভুল করে শাল আনা হয়নি। যার দরুন ঠান্ডায় আভার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। দাতে দাত লেগে অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। বাঁধন দূর থেকে সেটা লক্ষ্য করলো। সে নিজের গায়ের জ্যাকেট খুলে আভার দিকে এগিয়ে এল।
–’নাও, এটা গায়ে দাও। ঠাণ্ডা কম লাগবে। ”
আভার ভীষন ঠান্ডা লাগছে। তবুও ভদ্রতা স্বরূপ সে চোখ বললো,
–’নো, থ্যাংকস! ”
বাঁধন ভ্রু কুঁচকে বললো,
–’ তুমি সিওর? আমরা আরো অনেক দূর যাবো। যেতে যেতে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে যাবে। সাজেকে কিন্তু অত্যন্ত বৈরী আবহাওয়া। ‘
আভা কিছুক্ষণ ভাবল। তারপর হাত বাড়িয়ে বলল,
-‘ দাও। ‘
বাঁধন জ্যাকেট দিল আভাকে। আভা জ্যাকেট গায়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তোমার ঠান্ডা লাগবে না? ”
বাঁধন মুচকি হেসে বলল,
-” ডোন্ট ওয়ারী। আমরা ত প্রায় সাজেক আসি। এসব প্রায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি। ”
বাঁধনের জ্যাকেটটা আভার গায়ে কাকতাড়ুয়ার মত লাগছে। জ্যাকেটের হাতা আভার হাতে ঝুলে আছে। জ্যাকেটটা আভার হাঁটু অব্দি আসে। আভা ঠোঁট উল্টে বাঁধনের দিকে তাকালো। বলল,
-” এটা অনেক লম্বা। কি করব? ”
আভার এমন অবস্থা দেখে বাঁধন শব্দ করে হেসে ফেলল। আভা বোকার মত চেয়ে থাকল বাঁধনের দিকে। বাঁধন হাসি থামিয়ে বললো,
-” সরি, সরি। দাড়াও, আমি ঠিক করে দিচ্ছি। ”
বাঁধন আভার জ্যাকেটের হাতা ফোল্ড করে দিল। জ্যাকেটের নিচে অংশ কোমড় অব্দি ফোল্ড করে দিল। আভা এবার যেন রেহাই পেল। আভা কৃতজ্ঞতার সহকারে বলল,
–’ তুমি খুব ভালো বন্ধু, বাঁধন। ‘
বাঁধন মুচকি হেসে আবারও নিজের বন্ধুদের কাছে চলে গেল। দূর থেকে আহনাফ এসব তীক্ষ্ম চোখে লক্ষ্য করছিল। আভা নামক মেয়েটার প্রতি বাঁধনের এরূপ তোয়াক্কা আহনাফকে খুব একটা খুশি করল না। বরং অখুশিই করল। আহনাফ বাঁধনের কাধে হাত রাখল। বাঁধনের ঠোঁটে হাসি। আহনাফ বলল,
–’ কি রে! মেয়েটাকে লাইন মারছিস? ‘
বাঁধন বলল,
–’ তেমন কিছু না। মেয়েটা বেশ উচ্ছল। ভালো লেগেছে। ‘
– ‘ শুধু ভালো লেগেছে? ‘
–’ আব….জানিনা। এত কথা বলিস কেন? সবাই চলে যাচ্ছে। দ্রুত পা চালা। ‘
দেখা গেল, বাঁধন আহনাফকে ছেড়েই এগিয়ে গেল সামনে। আহনাফ পেছনে থেকে গেল। আড়চোখে আভাকে লক্ষ্য করে রাগে ফুসতে লাগল।
#চলবে