মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৪
তানিয়া রহমান
বিয়ের দুদিন আগে ইরিন মেহবুবকে ফোন করে বলল – আপনার সঙ্গে ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল।
মেহবুব ঢোক গিলে নিল,না জানি কোন ফ্যাসাদে পরতে যাচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল – জ্বি বলুন
– আপনার বাসায় রুম কয়টা
– কেন বলুনতো
– আমাকে কেমন রুমে রাখবেন জানতে হবে না? নাকি আমার বাসায় শিফ্ট হবেন
– ছিঃছি তা কেন হব,আমার বাসায় চারটা রুম
– কোনটা কার জন্য
– একটা আমার আর ঋতুর,ঋতু হচ্ছে আমার ওয়াইফ, জানেন বোধহয় ও গতবছর এক্সপায়ার করেছে।
– হুম শুনেছি, তারপর
– একটা অপুর আর একটা স্টাডি রুম,আ–র গেস্ট রুম
– আপনি আমার আর আপনার জন্য গেস্ট রুমটা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবেন।অপুর মায়ের রুমে ভাগ বসাতে চাচ্ছি না
মেহবুব কেশে উঠলো। এক গ্লাস পানি খেয়ে ধাতস্ত হয়ে বলল- আপনি আমার বাসায় উঠবেন?
– তো কোথায় উঠবো?
– মনির যদি কিছু মনে করে
– আমার ভাইয়াতো আপনার হাতে আমাকে দিবে,তারপর আপনার যদি মনে হয় অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ালের মতো আমাকে বিনে ফেলবেন তাতেতো আমার কিছু বলার নেই
-আপনি এভাবে কেন বলছেন আমি আজই আপনার জন্য রুম রেডি করছি।
– শুনুন অলকানন্দা আমার খুব পছন্দের ফুল আপনি চাইলে ওটা দিয়েও সাজাতে পারেন।
মেহবুব এবার সত্যি ভাষা হারিয়ে ফেলল।কাশতে কাশতে তার হেঁচকি উঠে এল।
ইরিন বলল- যক্ষা টক্ষা হয়েছে নাকি এত কাশছেন কেন
মেহবুব কাশি থামিয়ে সিরিয়াস মুড নিয়ে বলল – আমি এখন ব্যাস্ত পরে কথা বলব
– আরও একটা কথা বলার ছিল
কন্ঠে কাঠিন্য এনে মেহবুব বলল- বলুন।
-আজ অপু দুটো শপিং ব্যাগ দিয়ে গিয়েছে, তারপর ফিসফিস করে বলল “নাইটি দুটো দারুণ ”
– আমি রাখছি
মেহবুবের কান দুটো লাল হয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। নিজেকে গালি দিতে দিতে বলল “কোন কুক্ষণে এমন বিচিত্র সাহায্যের হাত বারিয়ে ছিলাম আল্লাহ মালুম ”
মেহবুব ডিনার করতে এসে দেখে আম্বিয়া ডাল সব্জী আর দেশী মুরগীর ঝোল করেছে। হট পটের ঢাকনা খুলে দেখলো রুটি নেই, অপুকে বলল- আম্বিয়া খালা আজ রুটি করেনি
– না,ভাত খেয়ে নাও
মেহবুব প্লেটে ভাত নিতে নিতে বলল – গেস্ট রুম ক্লিন করে রেখ তোমার আন্টি ওখানে থাকবে
– হুম জানি,আন্টি বলেছে,থেমে আবার বলল অলকানন্দা অর্ডার করেছি কাল টাকা রেখে যেও।
মেহবুব অপুর দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে ভাত খাওয়ায় মনোযোগী হলো।তার মনে হচ্ছে দুটো পাখা থাকলে উড়ে যেত নয়তো মাটি ফুঁড়ে তার ভিতর ঢুকে পরতো।মেয়ে সাজাতে চাচ্ছে বাবার বাসর এ কথা শোনার আগে তার বধির হওয়া উচিৎ ছিল।
ইরিন মেহবুবের সেগুনবাগিচার ফ্ল্যাটে বউ হয়ে এল।অপু ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ছবি আপলোড করার পর সমস্ত রিলেটিভস্, বন্ধু বান্ধব কনগ্র্যাস জানাতে লাগলো। কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহী হয়ে ফোনও করে ফেলল।মেহবুবের নিজের চুল নিজে ছিঁড়তে মন চাইছে যদিও তার মাথায় চুল প্রায় শূন্যের কোঠায়। জাতীয় পর্যায় শেষ করে মেহবুব এখন আন্তর্জাতিক কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে।মেহবুবের বড় বোন থাকে মেলবোর্ন। এই মহিলা আবার ছিচকাদুঁনে টাইপ। আয়েশা বলল- তোরা বাপবেটি মিলে এত বড় একটা কান্ড করলি অথচ আমাকে জানালিও না
– আপা!ব্যাপারটা ওরকম না
– কি রকম? আমার একমাত্র ভাই বিয়ে করলো অথচ আমি জানি না
– এখনতো জানলে
– এটাকে জানা বলে? পাড়াপ্রতিবেশিদের মতো ফেসবুক থেকে জানলাম।
– কাদঁছো কেন
– কাদঁবো না! বিদেশে থাকি বলে তোরা আমাকে পর করে দিবি?
– আমার খুব টায়ার্ড লাগছে, রাখি
– তোরতো এখন টায়ার্ড লাগবেই, অপুকে দে
– উত্তরা থেকে বড় ফুফুআম্মা এসেছে অপু তার সাথে আছে
– ফুফুআম্মা জানতো?
– না জানতো না, ফেসবুকে দেখেছে
– এ্যাই বাবু শোন্ না তোর বউকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে
মেহবুব কাশতে শুরু করলো
– কাশছিস কেন
– বুঝতে পারছি না মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে
– আদা চা খা, আর শোন তোর দুলাভাইকে বলেছি এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে দেশে পাঠাতে
– দেশে এসে কি করবে
– কি করবো মানে? তুই আমাকে দেশেও আসতে দিবি না
মেহবুব বুঝতে পারলো বেফাঁস কথা বলে ফেলেছে।দ্রুত রাখি বলে ফোন রেখে দিল আয়েশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে।
মনে মনে মেহবুব বলল “ব্যাপারটা যত সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ নয়,এই যে ফুফুআম্মা এসেছে এখন ইচ্ছে না থাকলেও বাসর ঘড়ে যেতে হবে, তা না হলে ফুফুআম্মা ঘটাবে আরেক বিপত্তি। ”
মেহবুবের ফোন আবার ভাইব্রেট করে উঠলো। আর চোখে তাকিয়ে দেখলো মনিরের কল,দ্রুত রিসিভ করে বলল – শালা! তোর বউ তুই এসে নিয়ে যা,আমি এসব ঝামেলা আর নিতে পারছি না
– দোস্ত কি হয়েছে
– কি হয়েছে মানে? আমার চোদ্দগুষ্টির কাছে জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে
– স্যরি দোস্ত, আমি ভাবছিলাম তোর সাতকূলে কেউ নেই
– এরকম কেন মনে হলো,আমি কি বানের জলে ভেসে আসছি
– দোস্ত প্লিজ! কয়টা দিনই তো!
মেহবুব কথা না বাড়িয়ে কল কেটে দিল।লিভিং রুমে এসে দেখলো তার আরও কয়েকজন কাজিন চলে এসেছে, অপু আর আম্বিয়া ছোটাছুটি করে তাদের আপ্যায়ন করছে।
মেহবুবের খালাতো বোন সারা বলল- ভাইয়া ভাবীর পাশে এসে বোস কয়েকটি ছবি তুলি
মেহবুবের ইচ্ছে করছে সবকটাকে চরিয়ে বিদায় দিতে।
সারার কথা অগ্রাহ্য করে মেহবুব বলল- বড় ফুফুআম্মা কইরে
এলিজা বলল- ঋতু ভাবীর রুমে ঘুমোচ্ছে
– তোরা কি আজকে থাকবি
সবকটা কাজিন এক সঙ্গে বলল- এত রাতে কই যাব
মেহবুব ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত একটা বাজে।আর চোখে একবার ইরিনের দিকে তাকালো তারপর অপুর খোঁজে পা বাড়ালো।
অপু কিচেনে আম্বিয়াকে হেল্প করছে, বাবাকে দেখে বলল- কিছু বলবে
– এত রাতে কি করছো
– ফুপিরা বলল রাত জাগবে তাই কফি বানাচ্ছি
– অনেক রাত হয়েছে তোমার আন্টির ঘুমানোর আয়োজন কর।
চলবে
কপি করা যাবে না।