মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১৪
তানিয়া রহমান
ভোর থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে, অক্টোবরের শেষে এসে শুরু হয়েছে নিম্নচাপ,ইরিন ব্যালকনিতে বসে কফি খাচ্ছে আর রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ পড়ছে, অসংখ্যবার এই বই পড়েও ইরিনের মনে হয় কোথায় যেন বাদ রয়ে গিয়েছে। ইরিনের ফোন দুবার ভাইব্রেট করে কেটে গেল, পড়াতে এতটাই মনোযোগ ছিল প্রথম দুবার খেয়াল করেনি, তৃতীয়বারের ফোন রিসিভ করলে মেহবুব বলল- আমার ডার্লিং কি করছে
– ব্যালকনিতে বসে বই পড়ছে,বৃষ্টি দেখছে আর ধোঁয়া উঠা কফি খাচ্ছে
– উফ!বড্ড রোমান্টিক টাইম পাস করছো বাট একটা কিছু মিসিং
– কি
– ফিল করছ না
– কাকে
– ঐ যে তোমার বন্ধুরা যাকে টাকলা বলে
ইরিন হেসে বলল – না–
– সত্যি?
-হুম
মেহবুব দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল – তবে আর কি করার, বাদ দাও, ডিনারে কি মেন্যু
– এখনো ভাবিনি
– ফ্রিজে বিফ কিংবা মাটন আছে
– আছে কিন্তু রান্না হবে না
– কেন
– সেদিন কত ছিল ব্লাড প্রেশার ভুলে গিয়েছেন?
– ওটাতো অন্য কারণ
– যে কারণেই হোক রান্না হবে না
– ওকে!চিকেন আছে
– হুম
– খিচুড়ি আর দেশী মুরগী ভুনা করতে বল আম্বিয়া খালাকে
– আর কিছু
– আরও কত কিছু খেতে মন চায় কিন্তু বৌতো এ্যাগ্রি করে না
– অসভ্য
– ভীষণ, দেখতে চাও
– অফিসে কাজ নাই নাকি
– আছেতো
– তাহলে সেটা করেন আমি রাখছি
কিচেনে এসে সব কৌট খুলে ইরিন দেখলো মুগ ডাল নেই, আম্বিয়াকে বলল- মুগ ডাল শেষ বলেননি কেন
– খালাম্মা! শুক্রবার আইলেই কইতাম
– টাকা দিচ্ছি মুগ ডাল নিয়ে আসুন আর ফ্রিজ থেকে মুরগী নামিয়ে ভিজিয়ে দিন রাতে খিচুড়ি আর দেশী মুরগী ভুনা হবে
আম্বিয়া বেরিয়ে যাবার দশ মিনিট পরই কলিং বেল বেজে উঠলো,ইরিন আম্বিয়া ভেবে দরজা খুলে দিল, মনিরকে দেখে আবার দরজা বন্ধ করতে গেলে মনির দু’হাতে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরে।
ইরিন বলল- মেহবুব বাসায় নেই
– আমি ওর কাছে আসিনি
ইরিনের হাত ধরে আবার বলল – তোমার সাথে কথা আছে ইরি
ইরিন হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল – বাসায় অপু আছে
– নেই, আমি জানি
-হাত ছাড়,আম্বিয়া খালা দেখবে
– সেও নেই
– নজরদারি করা হচ্ছে
– করতে বাধ্য হয়েছি,আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক কেন করেছো,অন্য নাম্বার থেকে ফোন করলেও কথা বল না এসবের মানে কি
– মানে বুঝো না আমি তোমাকে ঘেন্না করি
মনির ইরিনকে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে বলল- আর ভালবাস কাকে ঐ ছাগলটাকে
– বাজে কথা বলবে না
– কেন খুব লাগছে? আমারো লাগে, গলার এই দাগগুলো দেখলে আমার জ্বলে যায়, জাস্ট নিতে পারি না আমি
– তোমার নেয়া না নায়াতে কিচ্ছু এসে যায় না
– বেশতো,ডিভোর্স কবে করছো
– কখনোই করব না
– কেন? ও বুঝি আমার চেয়েও সুন্দর করে আদর করে
– ছিঃ,এত বিশ্রী কথা জান তুমি
– তুমি বিশ্রী কাজ করছো আর আমি বললেই দোষ
– তুমি বোধহয় ভুলে গেছ ও আমার হাসবেন্ড
ইরিনের মুখ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে মনির বলল- তাহলে আমি কি,উনত্রিশ বছর আমার সঙ্গে সংসার করেছো সেটা ভুলে যেও না
– ছাড়, আমার লাগছে
– লাগুক! তুমি যদি আমার না হও তবে কারো হতে দিব না, চিৎকার করে বলল -খুন করে ফেলবো আমি তোমার ঐ মেহবুবকে
কলিং বেল বেজে উঠলো
মনির ইরিনেকে ছেড়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো আর ইরিন নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে দরজা খুলে দিল।
চলবে
কপি করা যাবে না