#ভেজাগোলাপ❤️
#লেখিকা-মালিহা খান❤️
#পর্ব-৩
রোদ্রির মুখে “বাগদত্তা” শব্দটি শুনে কিছুসময়ের জন্য নির্বাক হয়ে গেলো নীরাদ।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে একটা ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলল,
-ওহ,কংগ্রেচুলেশন।বিয়ে কবে আপনাদের?
নীরাদের প্রশ্ন শুনে রোদ্রিকে আরো কাছে টেনে নিল ফারহান।রোদ্রির অসস্তিবোধটা খুবই সুক্ষভাবে পর্যবেক্ষন করলো নীরাদ।মেয়েটা কেমন যেন উশখুশ করছে।কিন্তু কেন?
-সেটা হতে এখনও দেরি নীরাদ সাহেব।তার অনার্স শেষ হওয়ার আগে সে কিছুতেই বিয়ে করবেনা।
উওরে মৃদু হাসলো নীরাদ।বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।সিটে হেলান দিয়ে চোখবুজে রইল।মাথায় শুধু রোদ্রির বলা “আমার বাগদত্তা”কথাটাই ঘুরছে”।”উনি অন্যকারো”ব্যাপারটা ভাবতেই মনটা বিষিয়ে উঠছে।
ফারহানের প্রতি রোদ্রির আচরণও তাকে ভাবিয়ে তুলছে।মেয়েটার কি বিয়েতে মত নেই?নাকি শুধু সে সামনে ছিলো বলেই লজ্জা পাচ্ছিল।
ঘরে এসে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বিছানায় গা এলিয়ে দিল রোদ্রি।বালিশে মুখ গুঁজে কিছুক্ষন পড়ে রইল।লোকটার সামনে কি একটা লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পরেছিল কিছুক্ষন আগে।ফারহান কিভাবে ধরে ছিল তাকে,উনার সামনে কিছু বলতেও পারছিলো না।
________________
দরজা ঠেলে মায়ের রুমে ঢুকল নীরাদ।
মনিরা আহমেদ তখন একমনে তসবি গুনছিল।দরজা খোলার শব্দ শুনে মুখ তুলে তাকাল সে।নীরাদ কে দেখে খুশি হলেও পরক্ষনেই মুখে চিন্তার চাপ ফুটে উঠল তার।ছেলেকে কেমন যেন বিষন্ন দেখাচ্ছে।চোখগুলো লাল হয়ে আছে।চুল উষকোখুশকো।
-আসবো মা?
ছেলের ডাকে ধ্যান ভাঙল তার।
-আয় বাবা।
ধীরপায়ে মায়ের পাশে যেয়ে বসলো নীরাদ।মনিরা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
-কি হয়েছে বাবা?তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
নীরাদ কিছু বললোনা।মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।মনিরা বেগমের কপালের চিন্তার ভাঁজটা আরো একটু কুঁচকে এলো।তার ছেলের যে মন খারাপ এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারলো।আদুরে গলায় বললেন,
-কি হয়েছে বাবা? বল আমাকে।শরীর খারাপ?
-উহু।আমি ঠিক আছি মা।
কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলল,
-আচ্ছা মা,তুমিতো বাবাকে এখনো ভালোবাসো তাইনা?
ছেলের মুখে হঠাৎ এই প্রশ্ন শুনে যারপরনাই অবাক হলেন মনিরা।
ছেলের সাথে সে অনেকটাই সহজ।নীরাদের যখন দশ বছর বয়স তখনই ওর বাবা মারা যায়।স্বাভাবিক মৃত্যুই হয় ওর বাবার।এরপর আজ ১৯ বছর হতে চলল ছেলেকে একাই মানুষ করেছেন তিনি।বাসার লোকেরা অবশ্য বলেছিলো বিয়ে করতে কিন্ত প্রথমত ছেলের কথা ভেবে এবং দিতীয়ত তিনি নিজের স্বামীর জায়গা কাউকে দিতো পারবেন না এইজন্য বিয়ে করেননি মনিরা আহমেদ।স্বামীকে প্রচন্ড ভালোবাসেন উনি।হয়তো আজ মানুষটা নেই তবে ভালোবাসাটা এতটুকুও কমেনি।
স্বামীর কথা মনে পড়াতে চোখদুটোও ভিজে এল তার।একহাতে পানি মুছে সিক্ত গলায় বললেন।
-তোর বাবা মানুষটাই এমন উনাকে ভালো না বেসে থাকা যায় নারে।বড্ড ভালো ছিলেন উনি।আল্লাহর অনেক প্রিয় নয়তো কি আর আল্লাহ এত তাড়াতাড়িই নিয়ে যান?
-কিন্তু বাবা তো নেই।
ছেলের কথায় মৃদু হাসলেন উনি।
-তো কি হয়েছে!উনি নেই বলে কি আমি ভালোবাসতে পারবোনা?শোন বাবা,ভালবাসাটা একান্তই নিজস্ব অনুভূতি।কাউকে ভালবাসলে যে সেটা প্রকাশ করতেই হবে বা সবাইকে দেখাতে হবে যে আমি তাকে ভালবাসি এমনটা নয়।মুখে না বলেও ভালবাসা যায়।কাজকর্মেও ভালবাসা প্রকাশ করা যায়।ভালবাসাটাতো আর চাপিয়ে দেয়া যায় না।জোর করে আদায়ও করা যায় না।এটা আদায় করার মতো বস্তু না।তুই কাউকে ভালবাসলে বাসবি,সে বাসুক আর নাই বাসুক।…..এখন বলতো এসব কথা কেন বলছিস?
মায়ের কথা এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো নীরাদ।বিষন্নে ভরা চেহারাটায় হাল্কা হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।মায়ের কথাগুলো যেন বড্ড প্রয়োজন ছিল এইসময়।
-না এমনেই।আচ্ছা তুমি থাকো।আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।তারপর একসাথে খেয়ে নিবো।
-আচ্ছা যা।
ছেলের এড়িয়ে যাওয়াটা বুঝতে পারলেন উনি।তাই আর বেশি কিছু বললেন না।তবে নীরাদ কথাবার্তায় ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছেন উনি।এইজন্যই ওই কথাগুলো বললেন।তিনি চাননা তার ছেলে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিক।
_____________
বিকালে হাঁটতে বেরিয়েছে মনিরা বেগম।বাড়ির পাশের একটা পার্কেই ঘুরে ঘুরে দেখছেন উনি।রোজ না হলেও প্রায়ই বিকালে হাঁটেন উনি।বাড়ির পাশেই এমন একটা পার্ক থাকায় বেশি দুরে যাননা।এখানেই ঘোরাফিরা করেন।এই দিকটায় গাছপালা বেশি তাই মানুষ নেই তেমন।
হঠাৎই হাঁটুতে প্রচন্ড টান অনুভব করলেন উনি।একহাতে হাঁটু চেপে উবু হয়ে গেলেন।চোখমুখ ব্যাথায় কুচকে এলো তার।ঘাসের উপরই বসে পরবেন তার আগেই পাশ থেকে কেউ এসে ধরল উনাকে।
অস্থির কন্ঠে বলল,
-কি হয়েছে আন্টি?আমাকে ধরুন নয়তো পরে যাবেন।
পাশে থাকা মেয়েটার হাতটা শক্ত করে ধরলেন মনিরা।মেয়েটা তাকে ধরে ধরে পাশের একটা বেন্চে বসাল।
-আপনার কি হাঁটুতে ব্যাথা হচ্ছে আন্টি ?
-হ্যাঁ রে মা।এতদিন ছিলোনা।আজকে হঠাৎই কেন হলো বুঝতে পারছিনা।
-আপনি কার সাথে এসেছেন?আমি তাকে ডেকে নিয়ে আসি।
-আমি একাই এসেছি মা।পাশেই আমার বাসা।
-ওহ।তাহলে আপনার ব্যাথা একটু কমলে বাসায় দিয়ে আসি।
মেয়েটার ব্যবহারের রীতিমত মুগ্ধ মনিরা।চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখলো বেশ মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।
-নাম কি মা তোমার?
-জি,আমার নাম রোদ্রি।ইমিলা জাহান রোদ্রি।
-বাহ্।বেশ মিষ্টি নাম।নামের সাথে তুমি নিজেও বেশ মিষ্টি।
জবাবে মৃদু হাসলো রোদ্রি।মহিলাটার “মিষ্টি মেয়ে”কথাটা শুনে নীরাদের প্রথম দিন বলা”আপনি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে” কথাটা মনে পড়ে গেল রোদ্রির।
মনিরা বেগমকে বাসায় নিয়ে এসেছে রৌদ্রি।গাড়িতে উঠতে কষ্ট হবে বলে হাত ধরে ধরেই নিয়ে এসেছে উনার বাসায়।আসার পথে সারাক্ষনই উনি এটা ওটা জিজ্ঞেস করেছে।অনেক মিশুক।
মহিলা বেশ বিওবান।
বাড়িঘর দেখলেই বোঝা যায়।
বাসায় বেল বাজাতেই একজন বয়সক মহিলা দরজা খুলে দিল। কাজের লোক হবে হয়তো।মনিরাকে সোফায় বসিয়ে দিল রোদ্রি।
-আন্টি,আমি তাহলে আসি।
-সেকি মা, কিছু খেয়ে যাও।আমার জন্য কতটা কষ্ট হলো তোমার।
-না না কষ্ট কেন হবে?আজকে আর কিছু খাবনা।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে।বাসায় ফিরতে হবে।আল্লাহ হাফেজ।
-আচ্ছা সাবধানে যেও।আল্লাহ হাফেজ।
বাসায় এসে ঢুকতেই সোফায় বসা মানুষটাকে দেখে বেশ ভালোই অবাক হয়ে গেল রোদ্রি..
চলবে?