#ভালোবাসি_প্রিয়
(রিপোস্ট)
#পর্ব_৩
©জারিন তামান্না
‘হ্যাঁ রে,সাজি…কেমন দেখলি ছেলেটাকে? আমার তো খুব পছন্দ হয়েছে। কি সুন্দর ব্যবহার! মুখখানা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনটাও খুব ভালো মনে হয়। তুই তো কথাও বললি,কেমন লাগলো তোর?’ বিছানায় বসে পলকের মাথায় তেল ঘঁষে দিতে দিতে কথাগুলো বলছিলেন তার মা মিসেস শাহনাজ বানু।অন্য সবাই তাকে পলক নামে ডাকলেও তিনি সাজি নামেই ডাকেন।
মেয়ের কোন সায় শব্দ না পেয়ে এবার কিছুটা বিচলিত হয়ে তেল দেওয়া থামিয়ে দিলেন। সামনে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলেন তাকে।মেয়েকে অন্যমনস্ক দেখে কাঁধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে ডাকলেন।
_এইই সাজি…কি রে! কি ভাবছিস এভাবে? ছেলেকে তোর পছন্দ হয়নি?
মায়ের কথায় ধ্যান ভাংলো পলকের। একটা বিদ্রুপের হাসি হেসে বললো, হাহ্….আমার আবার পছন্দ অপছন্দ! তুলেই তো দিচ্ছিলে এইট পাশ ছেলের হাতে। কপালে ছিলনা বিধায়.. তাই তখন যখন পছন্দ অপছন্দের কথা জিজ্ঞেস করোনি, ভাবোনি তো এখন আর এসব জেনে কি করবে!
মেয়ের কথা শুনে মূহুর্তেই মুখটা কালো হয়ে গেল শাহনাজ বানুর।খারাপ লাগলেও এই সত্যি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার জো নেই তার। কিন্তু তিনিই বা কি করতেন স্বামীর মুখের উপর কথা বলার সাহস তার নেই। তাই তো মেয়েটার প্রতি অন্যায় জেনেও ওমন একটা ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন। মেয়েটা হাতে পায়ে অবদি ধরেছিল তার। খুব কেঁদেছিল।কিন্তু তিনি কিছুই করতে পারেননি মেয়েটার জন্য শুধু নিরবে চোখের জল ফেলা ছাড়া। একটা নিদারুণ অপরাধবোধে ভরপুর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার ভেতর থেকে। নিজেকে সামলে কিছুটা অপরাধী সুরেই বললে,আমার তো তখন কিছুই করার ছিল না রে..জানিস তো তুই সব। তোর বাবা..
_হ্যাঁ,তার কথাই তো সব তোমার কাছে। সেটা তো আমরা চার ভাই বোন খুব ভালো করেই জানি।
_কিন্তু এবারের ছেলেটা কিন্তু সত্যিই ভালো রে সাজি। আর সে নিজে থেকেই তোকে বিয়ে করতে চেয়েছে। পরিবারের সবাইও বেশ ভালো মনে হলো।বোন দুটোরও তো বিয়ে হয়ে গেছে। ননদ ননাসের ঝামেলাও নেই কোন। তাছাড়া তাদের তোকে পছন্দ হয়েছে বলেই তো বলেছে। আজ তো বলেও গেলো ছেলের সাথে কথা বলে বিয়ের ডেট ফাইনাল করে জানাবে। পাইলট ছেলে,দেখতেও মাশাল্লাহ। এমন ছেলে তোর ভাগ্যে ছিল বলেই সেদিন বিয়েটা হতে গিয়েও হলো না।এই জন্যই বলে, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। শুকরিয়া কর তাঁর।
পলকের মুখে কোন কথা নেই। চুপচাপ বসে আছে সে।কি-ই বা বলবে সে। সত্যিই কি এটাই তার ভ্যগ্য? এই মানুষটার জন্যই কি তার জন্ম?
এসব ভাবনার ফাঁকে হঠাৎই আরেকটা বিষয় উঁকি দিল তার মাথায়। মনে পড়ে গেল বিকেলের কথা।লোকটা যে বললো,তার (পলকের) কোন অতীত নেই বলেই সে জানে। তবে কি সে সত্যিই কিছুই জানে না? কিছু জানে না বলেই কি বিয়ে করতে রাজি হয়েছে?!
চটকরে ঘাঁড় ঘুরিয়ে সে তার মাকে প্রশ্ন করলো,,’আচ্ছা মা,উনারা কি আমার অতীত সম্পর্কে জানে?বলেছো তাদের সব?!’
পলকের চোখে প্রশ্ন আর উৎকণ্ঠা। কিন্তু শাহনাজ বানু নিশ্চুপ। মেয়ের প্রশ্নের সত্যি উত্তর দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। আবার মেয়েটাকে মিথ্যা বলতেও তার বিবেকে বাঁধছে। তাই কিছু না বলে চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করলেন তিনি।
মায়ের এমন লুকাতে চাওয়া দৃষ্টি আর নিরবতা বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দিল পলককে তার প্রশ্নের উত্তরটা। একটা ক্লান্তির শ্বাস ফেলে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো মায়ের থেকে।
বসা থেকে উঠে যেতে যেতে বললো,,তবে এবারের বিয়ের আশাটাও ছেড়ে দাও তোমরা। সত্যি জানার পরে এই ছেলেও বিয়ে করবে না তোমার সস্তা মত মেয়েটাকে।
তোর কি এবারেও সর্বনাশটা না করলেই নয়? আমরা তো আর কোন মিথ্যা বলিনি তাদের। (শাহনাজ)
মিথ্যা বলনি কিন্তু সত্যিটা লুকিয়েছ। আর সত্যি লুকানো মিথ্যার থেকেও ভয়ংকর।তাছাড়া নিজের স্বার্থে অন্যকারো সাথে প্রতারণা করা, তার জীবন খারাপ করার মত এতটাও স্বার্থপর তোমাদের মেয়েটা হতে পারেনি এখনো। কথাগুলো বলেই গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে।
আর তেল চিটচিটে হাতে বিছানাতেই বসে রইলেন শাহনাজ বানু। মুখে অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তার ছাপ।
_________________________________
ঘরে এসে চুল আঁচড়ে বেণী করে নিল পলক। নিজেকে একনজর দেখলো আয়নায়।চোখগুলো কেমন লালচে লাগছে। যেন মরিচছোঁয়া লেগেছে তাতে। কিন্তু সে তো জানে এটা তার ভেতরকার গোমট ভাবটার বাহ্যিক রূপ। কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে তার। কান্না করতে পারলে ভালো হতো। নিজের এহেন ভাবনায় বেশ অবাক হলো সে নিজেই। কাঁদবে?কিন্তু কেন? এটা তো নতুন কিছু নয় তার কাছে। এর আগেও তো কয়েকদফায় এমন ঘটনার সম্মুখিন হয়েছে সে। এখন তো বেশ শক্তপোক্ত মন হয়ে গেছে তার। তাহলে এবারেও একই ঘটনা ঘটবে জেনেও কেন এমন হচ্ছে তার! খারাপ লাগছে কি? কিন্তু কেন? তবে কি তার নিজের অজান্তেই মন কোন ভালো কিছুর আশা করেছিল?!এতবড় স্পর্ধা মনের!তার অজান্তেই সে এতকিছু ভেবে নিয়েছে! নাহ..এমন কিছুই না। নিজের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ আছে তার। মনের আশকারায় ভেসে যাওয়ার মেয়ে এখন আর সে নেই।
নিজেকে নিজেই প্রবোধ দিল সে। অতঃপর এতসব ভাবনার জাল থেকে বেরিয়ে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো । চোখ জ্বালা করছে ভীষণ। চোখ মুখে পানি দেওয়া দরকার।
_________________________________
বিছানা পরিপাটি করে শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল পলক। বেড সাইডের টেবিলের উপর ফোনটা নজরে পড়লো তার। মিসডকল নোটিফিকেশনের গ্রীন লাইট জ্বলছে। ফোনটা হাতে নিয়ে অন করতেই চোখ তার চড়াক গাছ। মোট ১১ টা মিসডকল। তার মধ্যে ১০ টা কলই এসেছে একটা আননোন নাম্বার থেকে। আর বাকি একটা তার ফ্রেন্ড রুবির। কললিস্ট চেক করে দেখলো আননোন নাম্বারটা থেকে বিকালে একবার কল এসেছিল। এরপরের গুলো সব রাতে।এবার পলকের মাথার পোকা নড়লো।এবং সেটা বেশ জোরে সোড়েই নড়লো। ফট করেই মনে পড়ে গেল সিফাতের কথা। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলেছিল তার ফোন থেকে মিসডকল গেছে।নাম্বার সেভ করতে বলেছিল। রাতে কল দেবে এও বলেছিল। কিন্তু পলক..সে তো সেই যে দুপুরে রুবির সাথে কথা বলে ফোনটা সাইলেন্ট করে টেবিলের উপর রেখে গেছিল আর ধরেইনি সেটা। নাম্বারটাও সেভ করা হয়নি। আর এতক্ষণ মায়ের ঘরে ছিল বলে সিফাত এতবার কল করেও পায়নি তাকে। সিফাতের কথা মনে হতেই মৃদু শিহরণ বয়ে গেলে পলকের শরীর জুড়ে। সে নিজেও বেশ অবাক হলো এতে। মৃদু বেগে হার্টবিট বেড়ে গেল।কেমন যেন একটা অনুভূতি।অনেকটা হৃদপিন্ড ধরে অনবরত খাঁমচে দেওয়ার মত। ঠিক যেমন সেই সময়গুলোতে হতো যখন…।
নাহ! আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো সে। এই অতীতকে সে নিজের মাঝেই দাফন করে নিয়েছে বহু আগেই। মাঝে বেশ ক’টা বছরও পেরিয়ে গেছে। নতুন করে সেসব মনে করার কোন মানে নেই। সে নিজেও মুভ অন করে নিয়েছে। অযথা এসব ভাববে না আর।একদমই ভাববে না। নিজেই নিজেকে বোঝালো সে। কিন্তু সিফাতের বেলায় কেন এমন হচ্ছে…মাত্র একবেলার পরিচয় তার মানুষটার সাথে..সেটাও খুব বিশেষ কিছু নয়। আবার একেবারে সাধারণও নয়। মাঝ বরাবর কিছু একটা। তবে এটাকে পাত্তা না দিয়ে এবার ফোনের স্ক্রীনে সময় দেখে নিলো। ১১:৪৯ বাজে। এত রাতে কলব্যাক করবে কি করবে না এই নিয়ে বেশ দোটানায় পড়লো সে। ভাবলো মানুষটা এতবার করে কল দিলো, জরুরি কিছু বলার ছিল কি? একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করবো? এতরাতে কলব্যাক করবো,যদি ঘুমিয়ে যায় তো? নাহ,লাস্ট মিডসকল দেখাচ্ছে ১১:২৭ মিনিটে। খুব বেশি সময় তো হয়নি। একবার ফোন দিয়েই দেখি। রিসিভ করলে তো করলোই নইলে নাই।
এইসব ভাবতে ভাবতেই ডায়াল করলো সিফাতের নাম্বারে। রিং হচ্ছে…কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না।তবে কি ঘুমিয়ে গেল মানুষটা?!
________________________________
রিং হয়ে কেটে যাবে ঠিক সেই মূহুর্তে কলটা রিসিভ হলো। ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে অন্ধকার আকাশ আর নিকোটিনের ধোঁয়ায় বুদ হয়ে ছিল সিফাত। হঠাৎই কানে এলো ফোনের রিংটোনটা। কিন্তু সে নড়লো না সেখান থেকে। এক অবাধ্য অভিমান আটকে দিল তাকে। কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো। এদিকে ফোন বেজে চলেছে।স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সে। তারপর যেন কি ভেবে পা বাড়ালো রুমে। বিছানার এককোণে নিরিহভাবে পড়ে থাকা মোবাইলটার আলো জ্বলছে।কোনরকম তাড়াহুড়ো ছাড়াই সিফাত হাতে নিল ফোনটাকে। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে…Mrinmoyi calling. পলকের নামটা সে মৃন্ময়ী দিয়েই সেভ করেছে। তার মৃণ্ময়ী! আর ফটোতে আজকে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় একটা ছবি। মাথায় গাঢ় সবুজ রঙের ওড়না দেওয়া। মাঝবরাবর করা লম্বা সিঁথির থেকে সামনের কিছু চুল বেরিয়ে আছে। বোচা নাকে ছোট্ট একটা সোনার নাকফুল।মুখে হালকা রোদ পড়ায় চিকচিক করছিল।যেন ভিজে মাটিতে একফালি সোনা রোদ্দুর।সামনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। দৃষ্টি অনির্দিষ্ট কোথাও। ঠিক তখনই বা’পাশ থেকে থেকে টুক করে একটা ছবি তুলে নিয়েছিল সিফাত। পলক টেরও পায়নি এসবের কিছুই। যদিও এটা একপ্রকার অন্যায় কিন্তু সে যেন এই মূহুর্তটুকুর, সেই অদূরের দৃষ্টি ফেলা অন্যমনস্ক চাহনীর মানবীটিকে স্মৃতিপটে বন্দী করার লোভটুকু সামলে নিতে পারেনি। কিসের যেন একটা অদৃশ্য অধিকারবোধও জেগে উঠেছিল তার। যেন অধিকারটুকু তার পিঠ চাপড়ে বলছে,,আরেএএ ব্যাটা..এতো তোরই। একটা ছবিতে কিছু হবে না। তুলে নে। মন মস্তিষ্কের সাপোর্ট পেয়ে এই অন্যায়টুকু করতেও আর বাঁধলো না তার।
ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে আছে সিফাত। রিং বেজেই চলেছে। কলটা দেখে সে খুশি হলো কিনা বোঝা গেল না।ভাব সাব নির্জীব। শেষমেষ কল রিসিভ করে ফোনটা কানে ঠেকিয়ে চুপ করে রইলো।
____________________________________________
আর এদিকে বেশ কিছু সময় পরেও ফোনের ওপার থেকে কোন সাড়া পাওয়া না যাওয়ায় পলক ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে স্ক্রীনে চেক করলো। কল রিসিভ হয়েছে ৩৩ সেকেন্ড রানিং। কিন্তু কেউ কিছু বলছে না অপর পাশ থেকে। এবার সে নিজে থেকেই সালাম দিল।
_আসসালামু আলাইকুম।
——
_হ্যালো?
——
নাহ এবার সত্যিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে। কল রিসিভ করে চুপ করে থাকার মানে কি? আচ্ছা,কলটা কি উনি না করে অন্য কেউ রিসিভ করেছে…তাই জন্য কথা বলছে না!
ধুর.. ভাল্লাগে না। কি একটা ফাইজলামি। না বলুক কথা। আমিও আর কিছু বলবো না। এই বলেই কলটা কেটে দিল সে।
আর ওদিকে কলটা কেটে যাওয়ার পরেও ফোনটা কানে কাছেই ধরে রইলো সিফাত। কি যেন এক অবাধ্য অভিমান ভর করেছে আজ তাকে। এ অভিমান তার মৃন্ময়ীর প্রতি নাকি নিজের অনিয়ন্ত্রিত আবেগের জানে না সে। জানার ইচ্ছেটাও হচ্ছে না তার।
খানিকবাদে ফোনটা নামিয়ে এনে তাকিয়ে রইলো স্ক্রীনে ভেসে ওটা নামটা আর ছবির দিকে। চকিতেই সে ডায়াল করলো সেই নাম্বারে।পলক ফোনটা হাতে নিয়েই বসে ছিল। তাই একবার রিং হতেই রিসিভ করলো কলটা। কিন্তু এবার সেও চুপ করে রইলো। তবে ওপাশ থেকে সিফাত বিলম্ব না করেই ‘হ্যালো’ বললো।
সিফাতের কন্ঠ শুনে একরকম ঝটকা খেলো পলক। কি ভরাট অথচ শান্ত সে কণ্ঠস্বর! সিফাত আবারো বললো,
_হ্যালো,মৃন্ময়ী?
এবার পলকের হুঁশ হলো। তড়িঘড়ি করে সালাম জানালো।
_আসসালামু আলাইকুম, পলক বলছিলাম।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।হ্যাঁ, জানি আমি। বলুন।
এবার দুপাশেই খানিক নিরবতা। পলক ঠিক কি বলবে ভেবে না পেয়ে প্রশ্ন করলো।
_এতবার কল করেছিলেন…কোন দরকার ছিল কি?
সিফাতের আবারও মেজাজ খিঁচে গেল পলকের কথা শুনে। কিছুটা গমগমে স্বরেই বললো,
_দরকার ছিল না কিছু।কিন্তু আপনি বোধয় খুব ব্যস্ত মানুষ। তাই এতবার করে কল করেও পাওয়া যায় না আপনাকে।
সিফাতের এমন ধাঁচের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল পলক। এই লোকটা তাকে খোঁচা মেরে কথা বলছে!
মূহুর্তেই আবার তার রাগ হলো। কেন মানুষটা তাকে খোঁচা মেরে কথা বলবে? সে তো আর ইচ্ছে করে কল রিসিভ না করে বসে ছিল না। ফোনটা কাছে ছিল না। সাইলেন্ট থাকায় শুনতে পায়নি সে। এখন এটা কি তার অপরাধ হয়ে গেল??
পলকে চুপ থাকতে দেখে সিফাতও এবার বেশ রাগ হলো। মনে মনে বললো, ‘এই মেয়েটা এমন কেন! একে তো তখন এত করে কল করার পরেও রিসিভ করলো না আর এখন রিসিভ করেও চুপ করে আছে।
_প্রতিশোধ নিচ্ছেন?’ সিফাতের এমন কথায় হকচকিয়ে গেল পলক। নিজেকে সামলে সেও পাল্টা প্রশ্ন করলো,
_এটা আবার কেমন কথা! আমি কিসের প্রতিশোধ নিব?আপনার সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা ভাই,শুনি?
পলকের মুখে ভাই শব্দটা শুনেই সিফাত চেঁচিয়ে উঠলো।
_এইইই….ভাই কাকে বলতেছো? আমি তোমার কোন জন্মের কোন ক্যাটাগরির ভাই হই, হ্যাঁ??খবরদার আর কখনো ভাই বলবা না আমাকে। আমি বাদে তামাম দুনিয়ার যত ছেলে আছে তাদের ভাই বলো। যত খুশি ভাই বানাও।সারা দুনিয়ার ছেলেরা আমার শালা হলেও সমস্যা নাই।কিন্তু আমাকে ওটার আউট অফ লিস্ট রাখবা। আমি তোমার অন্য লিস্টের বিশেষ ক্যাটাগরির অনলি ওয়ান পার্সোন। ওখানে আর কারো জায়গা হবে না।আমিই ফার্স্ট আমিই লাস্ট। পুরো লিস্টটাই হবে কেবল আমার নামে। গট ইট?!
এবারে পলক পুরোদমে হতভম্ব, বিস্মিত!সামান্য ভাই বলাতে সিফাতের এমন কড়া ডোজের লেকচার তার কপালে ছিল ভাবতেই মাথা চক্কর দেয় দেয় অবস্থা। কানে ফোনটা ধরেই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো সে সামনের দিকে।
পলকের কোন সাড়া না পেয়ে সিফাত আরও চড়া গলায় বললো,,’কি হলো বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?
এবার সামান্য কেঁপে উঠলো পলক।বোকার মত তাড়াতাড়ি করে জোরে জোরে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বোঝালো। আরেকটু হলেই মাথা খুলে আসার উপক্রম হয়ে যাবে এমন।কিন্তু অডিও কলে ফোনের ওপারে সেটা সিফাত দেখলো না। তাই, আবার চেঁচালো।
_এই মেয়ে কি হলো….ভোকাল কর্ডে কি জ্যাম লাগছে তোমার? নাকি বোবা হয়ে গেছে একেবারে?
এবারের ঝাঁড়িতে পুরোপুরি হুঁশে ফিরলো পলক। কিছুটা তোলানো স্বরে বললো,
_ হ্যাঁ..? হ্যাঁ..বুঝেছি।
ফোনের ওপাশে মুচকি হাসলো সিফাত। মুখে বললো,’গুড।’
চলবে…