#ভালোবাসার_রোজ[শেষ পর্ব]
#আফরোজা_আনজুম

সকালে ছোট চাচীর সাথে ছাদে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম একটা সাদা গাড়ি ঢুকছে বাড়ির দিকে। আব্বুর কোনো এক বন্ধু আসার কথা আজ। চাচী নেমে গেল জলদি। গাড়ি থেকে আব্বুর বয়সী এক ভদ্রলোক বেরিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে ভেতরের কাউকে কিছু বলছে। আব্বু যেতেই গাড়ি থেকে এক সুদর্শন ছেলে বেরিয়ে এলো। একটু আড়ষ্ট মনে হলো তাকে। ছেলেটা নিশ্চয়ই ঐ ভদ্রলোকের ছেলে। সে কেন এলো? আর এত মিষ্টির প্যাকেটই বা কেন! আকাশ পাতাল ভাবতে থাকলাম। আরো কিছুক্ষণ ছাদে কাটিয়ে নিচে নামলাম। আম্মুর রুম থেকে শব্দ আসছে। আম্মু রেগে আছে বুঝা যাচ্ছে। আম্মুকে বলতে শুনলাম, ” ছেলে এসেছে কেন এভাবে কথাবার্তা ছাড়া? শুধু বাবা আসবে বলেছো। তাহলে? ”

” আরে আমি জানতাম নাকি ছেলে আসবে? রোকন তো বলেছে শুধু সে আসবে। ছেলে আসবে জানলে তোমাদের জানাতাম না!”

বড় চাচার কণ্ঠও শুনতে পেলাম। চাচা বললো, ” এসে গেছে যখন থাক না! তুমি আর কথা বাড়িয়ো না। তাদের কানে যাবে কথাগুলো।”

বড় চাচার কথার উপরে আম্মু আর কিছু বললে না। রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে দেখে হাত টেনে আমার রুমে নিয়ে গেল। বললো, ” রুম থেকে বের হবি না তুই। এখানে বসে থাক।”

কিছুই বুঝলাম না আমি। তবে যে রেগে আছে তা বুঝলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ” কেন? রুমে বসে থাকবো কেন?”

” বসে থাকতে বলেছি বসে থাকবি।” রাগী গলায় কথাটা বলে দরজা টেনে দিয়ে চলে গেল। আসল ঘটনা বুঝতে পারলাম বিকেলে। আম্মুর রুমে থাকতে বললেও কিছুক্ষণ পর পর বাইরে থেকে ঘুরে এসেছি। বিকেলে রুবা এসে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো, ” তোমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে আপু। তোমাকে দেখতে এসেছে। ”

তার কথা শুনে হতবুদ্ধি হয়ে রইলাম। এমন কিছু আমার মাথাতেই আসে নি। কিন্তু আব্বু আম্মু হঠাৎ এমন কেন করবে! রুবার কথাই সত্যি হয়তো। কারো কাছ থেকে না শুনলে সে কোত্থেকে বলে এমন কথা! তবে আম্মু রাজি নয় ভেবে স্বস্তি পেলাম। একটু পর ছোট চাচী আসলে কিছু বলবো তার আগেই চাচী বললো, ” ভালো থেকে একটা কাপড় পর তো! একটু সাজগোজ কর। ”

” মানে কী ছোট আম্মু? সাজগোজ কেন করবো?”

” তোকে দেখতে এসেছে তাই। ছেলেসহ আসবে সেটা কেউ জানতো না। তাই তোকেও জানানো হয় নি।”

আম্মু এসেও একই কথা বললো। কান্না পেলো আমার। সবাই জোরাজোরি করে তৈরি করে নিয়ে যায় তাদের সামনে। যতক্ষণ সেখানে ছিলাম যেন দমবন্ধ হয়ে আসছে আমার। আব্বু নিঠুল ভাইকে ফোন করে আসতে বললো শুধু। পরিবারের সবারই পছন্দ হয়েছে পাত্র। বড় আব্বু আলাদা কথা বলার জন্য ছাদে যেতে বললো। আরিফ ভাইয়ার সাথে গটগট করে হেঁটে ছাদে উঠে গেল ছেলেটা। আমি তাদের পিছু গেলাম। ছাদে গেলে আরিফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসলো।

” আমিও থাকবো তোদের সাথে? আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তোরা কথা বল মন খুলে। দিহান ভাই, আপনারা কথা বলেন।” বলে চলে গেল আরিফ ভাইয়া।

এইমাত্র জানলাম দিহান নামটা। দিহান নামক ছেলেটার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালাম। অস্বস্তি হচ্ছে একটু না ভীষণ। রিলেশনের কথা বললে ছেলেটা যদি জানিয়ে দেয়! আবার ভাবলাম দিলে দিক। না বললে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে। তাকেও নার্ভাস মনে হলো! অনেকক্ষণ পর মুখ খুললো,

” আসলে…

তাকে কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে আমি চটপট বলে ফেললাম, ” আমার রিলেশন আছে অন্য একজনের সাথে। আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না। ”

” উফ গড! বাঁচালেন।” ছেলেটা দুহাত উপরে তুলে হাসিমুখে বললো কথাটা। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আমি। আমার মুখভঙ্গি দেখে সে বললো, ” আসলে আমিও রাজি নয়। আমিও রিলেশনশিপে আছি।”

” তাহলে আসলেন কেন?”

” জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে আমাকে। আম্মু না থাকায় আব্বুকে কষ্ট দিতে পারি না। রিলেশনের কথা জানাবো জানাবো করে আর হয়ে উঠে নি। আর আব্বুও আপনার আব্বুকে নাকি কথা দিয়ে ফেলেছে। যাক এবার বলতে পারবো।”

” বলতে পারবেন মানে? আমি যেটা বলেছি সেটা বলে দিবেন? আমার রিলেশনের কথাও কেউ জানে না তাই আপনাকে জানালাম। এখন আমার কথাটা বলে দিয়ে বিপদে ফেলবেন না প্লিজ। ”

” আচ্ছা দেখি অন্য কিছু করা যায় কিনা। আচ্ছা আপনার সাথে একটা ছবি তুলতে পারি!”

তার আবদার শুনে অবাক হলাম আমি। এই বললো রিলেশনশিপে আছে আবার ছবি তুলতে চায়ছে আমার সাথে। ব্যাটা তো সুবিধার না।
” আমার সাথে ছবি তুলবেন কেন?আপনার অন্য কোনো মতলব নেই তো!”

” এই না, ন। আসলে আমার গার্লফ্রেন্ড আমার ফোন তুলছে না। রেগে আছে। আমি যদি আপনার সাথে ছবি তুলে দেই তাহলে সে রিয়েক্ট করবে। ফোন করলে বুঝিয়ে বলার সুযোগ পাবো।”

” বাহ্! আপনার তো দারুণ বুদ্ধি। ”
আমার পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি নিল একটা। ঐ সময় ছাদ থেকে উঠোনে চোখ গেল। নিঠুল ভাই এসেছে। শিট! এটাই চোখে পড়তে হলো তার! আজ তো আমার রক্ষা নেই। বিকেলে তারা চলে গেল। নিঠুল ভাইকে আব্বু ছেলে, ছেলের গুষ্টি সম্পর্কে জানাচ্ছে সব। আমি অস্থির হয়ে আছি কখন নিঠুল ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। ঐদিকে আব্বু ছাড়ছেই না তাকে। মাগরিবের আজান দিলে আব্বু নামাযে যায়। নিঠুল ভাই এসে আমাকে ব্যঙ্গ করে বলে, ” সবকিছু তো ঠিকঠাক। কথা বলা, সেলফি তুলাও হয়ে গেছে।”

” আব্বু কী বলেছে তোমাকে? ”

সে তেড়ে এসে আমার গাল চেপে ধরে বলে, ” কেন? তোর জানা নেই কী বলেছে? নিজেও তো বড়লোকের সুন্দর ছেলে দেখে পাগল হয়ে গেছিস, ছবিও তুলছিস আবার। আমার সাথে এতদিন এসব করেছিস কেন তাহলে? এখনই বলে দিবো আমি সবাইকে।”

ভয় পেয়ে গেলাম তার কথায়। প্রচণ্ড রেগে আছে সে। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে শান্ত করলাম। এখন আমাদের কথা জানলে আব্বু আম্মু কষ্ট পাবে ভীষণ। রাতে শুনলাম আম্মু রাজি না। ছেলের মা জীবিত নেই। এমন ঘরে মেয়ে দিতে নারাজ আম্মু। চাচীরাও একই কথা বললো। তবে আব্বু সন্তুষ্ট নয় তাদের কথায়। খুব পছন্দের পাত্র কিনা! এদিকে আম্মুও নারাজ একেবারে। খুশি হয়ে নিঠুল ভাইকে সেটা জানালাম। সে বললো সে-ই নাকি যাওয়ার আগে এই কথাটা বলে আম্মুকে একটুখানি উস্কে দিয়েছে। তিনদিন পর হঠাৎ রেবা আন্টি আব্বুকে প্রস্তাব দিল আমাকে নিতে চায় নিঠুল ভাইয়ের জন্য। শুনে খুশিতে আত্মহারা হলাম আমি। নিঠুল ভাই জানায় নি পর্যন্ত এই সুখবরটা। কিন্তু আমার খুশিতে পানি ঢেলে দিল। আব্বু সরাসরি না বললেও বড় আব্বুর মাধ্যমে না করে দিয়েছে। নিঠুল ভাই আব্বুর এতো পছন্দের হওয়া সত্বেও না করে দিয়েছে। তারও কারণ আছে।

আব্বুর কথা, ” নিঠুকে আমার মেয়ের জামাই হিসেবে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু আমি কখনো ভাবি নি এমন৷ পাঁচবছর আগে রেহেনা(ফুফু) আমার মেয়ে আর নিঠুলকে নিয়ে খারাপ কথা বলেছে। নিঠুলকে আপন ভাবি বলে, ভরসা করি বলেই আমার মেয়েদের দায়িত্ব তাকে দিয়েছিলাম, সবকিছুতে সে এগিয়ে এসেছে। এটা নিয়ে রেহেনা আমার মেয়ের সাথে নিঠুকে জড়িয়ে কম কথা বলে নি। এখন যদি আমি আপার প্রস্তাব মেনে নেই তাহলে তো ওর কথাই ঠিক ছিল বলবে সে। এটা আমি চাই না। ”

সত্যিই তো! ফুফু এমন কথা বলেছিল। এ নিয়ে ফুফুর সাথে আব্বু আম্মুর মনোমালিন্যও হয়েছে অনেক। নিঠুল ভাই ফোন করে রেগে গেল। বললো, ” তোর আব্বুর মন তো ঐ টাকাওয়ালার দিকে। আমাকে দিতে রাজি হবে কেন! আমি তো এখনো টাকা ইনকাম করি না। ঐদিকে ঐ শালা টাকার পাহাড় করেছে। ঐখানেই কর বিয়ে যা। ”
“আমার আব্বুকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বলবে না। টাকার পাহাড় চাই আমার আব্বু! কেন রাজি হয় নি তা তোমার জানা নেই? সবকিছু জেনেও উলটো বলছো কেন? হ্যা আমি ঐ টাকাওয়ালাকেই বিয়ে করবো। তুমি থাকো।” রেগে কথাগুলো বলে কল কেটে দিলাম। রাগে গা জ্বলছে আমার। সব জেনেও এমন অমূলক কথা বলে কীভাবে! সেদিনের পর তার সাথে আর কথা হয় নি। সে খবর নেয় নি আমি কেন নিবো! ভীষণ অভিমান হলো আমার। ষোলো দিনের দিন চমক পেলাম আমি। নিঠুল ভাই সহ রেবা আন্টিরা সকলে আসলো আংটি পরাতে। আংটি পরানোর সময় আন্টি বললো আগেরটা খুলে ফেলতে। আমি নিঠুল ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকালাম। সেও তাকালো আমার দিকে।

“ওটা খুলবো না। পাশেরটাতে পরাও।” মাথা নিচু করে বললাম আমি।

পাশ থেকে আপু বললো, ” পঞ্চাশ টাকায় কেনা আংটিটা খুলতে পারছিস না? সেদিন খুলে বেসিনে রেখে এসে এমন খুঁজাখুঁজি করছিস যেন দামী অনেক। খুল ওটা। এখন থেকে আন্টি যেটা দিচ্ছে সেটা রাখবি।”

না খোলার জন্য বুড়ো আঙুল দিয়ে চেপে ধরলাম আমি। কিছুতেই খুলতে পারবো না। এখন এটা একটু খুললে মনে হয় কী যেন নেই। অন্যরা বিরক্ত হলেও আন্টি পাশের আঙুলে পরিয়ে দেয়। সবকিছু হঠাৎ হওয়ায় আম্মু ভেবেছে আমার মত নেই এসবে। রুমে নিয়ে অনেক কিছু বুঝালো আম্মু। সবাই পরিচিত মানুষ হলেও আমাদের দুজনের আলাদা কথা বলার সুযোগ হলো না। হঠাৎ পাশে বসে সে হাত চেপে ধরে সবার অলক্ষ্যে। আমি সরিয়ে নিতে চাইলে সে চাপা গলায় বলে, ” খুব তো উড়েছিস! এবার দেখি কীভাবে টাকাওয়ালাকে বিয়ে করিস।”

ঠোঁট টিপে হাসলাম আমি। এখনো রেগে আছে সে। সারাটাদিন এতো ভালো কাটলো যা বলার বাইরে। কেউ বুঝতেই পারলো না যে আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল, আছে। পিউও দোটানায় আছে। বারবার জানতে চাইছে। মজা পেলাম তার কাণ্ডে। পরিবারের সবার মতে সম্পর্কটা যে এতো সহজভাবে এই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে তাতে সত্যিই ভীষণ খুশি আমি।
.
.
.

আড়াই বছর পর,
রাত প্রায় এগারোটার দিকে রিনি আপু আমাকে দোতলার একটা রুমে নিয়ে এলো। পুরনো দোতলা বাড়িটা তাদের গ্রামের। পরিচিত হলেও অন্যান্য আত্নীয় স্বজন থাকায় নতুন বউয়ের মতো বসে থাকতে হয়েছে এতক্ষণ। রুমে ঢুকে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। খেয়াল করলাম রুমটা শুধু কয়েকটা বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে। এতো সিম্পলভাবে সাজানো বাসর ঘর! বিছানায় বসতেই ফোনে কল এলো আননোর নাম্বার থেকে। তার আগে চোখ পড়লো ভার্চুয়ালে নিঠুলের দেওয়া ‘গট ম্যারিড’ স্ট্যাটাসে। হাসিমুখে কল রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে উঠলো, ” বিয়েটা তাহলে হয়েই গেছে। সম্পর্ক পরিপূর্ণ হলেই কী সুখী হওয়া যায়! তুমি কোনোদিন সুখী হতে পারবে না দেখো। আমি যতটা কষ্ট পেয়েছে, পাচ্ছি, যতো রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছি তার দশগুণ তুমি কষ্ট পাবে।”

” আপনি তো তিনবছর ধরে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছেন। কম তো চেষ্টা করেন নি আমাদের আলাদা করতে! কই পারলেন! এইতো কিছুদিন আগেও বললেন বিয়ে পর্যন্ত এগুতে পারবো না। এরপর পর বিয়েটা হয়ে গেল। আপনি বরং আমার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কিছু বলুন প্লিজ! তাহলে তাড়াতাড়ি আপনি আন্টি হতে পারবেন আমার মনে হয়।”

” ফালতু, নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার! তোমার ভালো হবে না কোনোদিন। ” দাঁত বের কথাগুলো বলে কল কেটে দিল সে।

যাহ্ বাবা নিজের উপাধি গুলো আমাকে দিয়ে দিল! এই মিষ্টি নামের তেতো মেয়েটা পিছু ছাড়ছে না। দরজার সামনে কাজিনদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রুমে প্রবেশ করলো নিঠুল ভাই। অফ হোয়াইট কালারের শেরোয়ানিতে মারাত্নক লাগছে তাকে। স্বাস্থ্যটা সেই আগের মতোই আছে। কিচ্ছু পালটায় নি।তার চোখে চোখ পড়তেই লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম।

” এমন ভূত সেজে বসে আছিস কেন? চেহারার মানচিত্রটাই পালটে ফেলেছে। আয়নায় দেখ তোকে চেনা যায় কিনা! মুখ ধুয়ে আয়।”

তার এমন কথায় হতাশ হলাম আমি। এতো টাকার সাজ আর সে বলছে ভূত! লাল টুকটুকে বউ সাজে একটু কাছ থেকে ভালো করে তাকালো না পর্যন্ত। কিছু না বলে একটা শাড়ি নিয়ে গটগট করে হেঁটে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে অন্ধকার রুম দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম। লাইট অন করেই চমকে উঠলাম। পুরো রুম লাল গোলাপে সজ্জিত। ফ্লোরে দৃষ্টি স্থির হলো আমার। গোলাপের লাভ শেইপের মাঝে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লেখা ‘ ভালোবাসা রোজ’। পুরো রুমের মোহনীয় পরিবেশ দেখে আমার চোখ টলমল হলো সুখের কান্নায়। সবকিছুর মাঝে কাঙ্ক্ষিত মানুষটি অনুপস্থিত। চারপাশে চোখ বুলাতেই নজর গেল বেলকনিতে। আংশিক ছায়া দেখা যাচ্ছে তার। চট করে আমার মনে পড়লো তার ইচ্ছের কথাটা। রিনি আপুকে সাথে নিয়ে রঙ চা বানিয়ে আনলাম। আপু নানা কথা বলে লজ্জা দিচ্ছে। বেলকনিতে তার সামনাসামনি দাঁড়ালাম। রেলিঙে হেলান দিয়ে এক পা পেছনে ঠেকিয়ে অপেক্ষা করছে সে। হঠাৎ বেলকনিটা রঙিন আলোয় আলোকিত হলো। সেই আলোতে নজর পড়লো দোলনায়। সেটাও ফুল দিয়ে সাজানো। এমন সারপ্রাইজ দেখে আমি ভাষাহীন হয়ে গেলাম। সে হাত থেকে কাপটা নিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমায়। উন্মুক্ত ঘাড়ে মুখ গুজলো। এক অন্যরকম অনুভূতিতে জর্জরিত হলাম আমি। দুজনেই এক কাপে চুমুক দিয়ে চা পান করলাম। তারপর সে হঠাৎ আমাকে কোলে তুলে নিয়ে দোলনার কাছের যায়। বসতেই আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,

“পড়ে যাবো তো। দুজন একসাথে কীভাবে বসবো? নামাও আমাকে।”

সে বসে পড়লো। বললো, ” পড়ে গেলেই ভালো। রাতটা আরও স্মরণীয় হবে। একটু স্পেশাল ফিল করাই!”

ফেলে দেওয়ার মতো ভঙ্গিমা করে বললো সে। তার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, ” ফেলে দিয়ে স্পেশাল ফিল করাবে আমাকে? তাও বাসর রাতে! তোমার কাছ থেকে এটাই আশা করা যায়।”

সে হেসে আমার কপালে চুমু দিলো। ফিসফিস কণ্ঠে বলে, ” আচ্ছা অন্যভাবে স্পেশাল ফিল করাবো। আজ সারারাত গল্প বলবো তোকে। আমার রোজকে ভালোবাসার গল্প। কেন, কখন, কীভাবে তার প্রেমে পড়েছি, তাকে ভালোবেসেছি সব বলবো। বলেছিলাম না অনেক কথা আমি আজকের রাতটার জন্য জমিয়ে রেখেছি! সেসব বলবো তোকে। তার আগে তুই তো বল!”

” কী বলবো?”

সে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আমি লাজুক মুখে তার দিকে তাকিয়ে হেসে তাকে জড়িয়ে ধরি। তার বুকে মাথা রেখে বলি, ” ভালোবাসি তোমাকে। আমার প্রথম আবেগ, প্রথম ভালোবাসা তুমি। আজকের মতো খুশি আমি এর আগে কখনো হই নি। আমার আর কিচ্ছু চাই না। তোমাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি এটা আমার বিরাট পাওনা।”

খেয়াল করলাম কথাগুলো বলতে বলতে আমার কান্না চলে এসেছে। সেও বোধহয় বুঝেছে তা। সে আমাকে আরও জড়িয়ে নেয় তার সাথে। চুলে মুখ গুজে মোহনীয় কণ্ঠে বলে, “আমার ভালোবাসার রোজ।”
____________________
সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here