#ভালোবাসার_রোজ[পর্ব-০৩]
#আফরোজা_আনজুম
সকাল থেকে অস্থির হয়ে আছি। গত দুই-তিনদিন ধরে না কিছুতে মন বসাতে পারছি, না কিছু খেতে পারছি। বারবার দোয়া-দরুদ পড়ছি। মেয়ের রেজাল্ট শোনার জন্য আব্বু কোথাও যায় নি। কিছুক্ষণ পর পর এসে আমাকে শান্তনা দিচ্ছেন যাতে টেনশন না করি। এদিকে আব্বু নিজেও টেনশনে আছেন। বেলা বারোটার দিকে ফুফাতো বোন পিউ ফোন করে উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে জানালো রেজাল্ট পেয়েছে সে। এ গ্রেড এসেছে তার। আমার আরো ভয় লাগছে। গলা শুকিয়ে আসছে। ফোনটা হাতে নিয়েও নিঠুল ভাইকে কল দিলাম না। কারণ সে বলেছে রেজাল্ট পেলেই জানাবে। নিঠুল ভাইকে না দিয়ে রেবা আন্টিকে ফোন দিলাম। তিনি জানালেন নিঠুল ভাই বাসায় নেই। তিনিও নাকি কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছেন আমার রেজাল্ট পেয়েছে নাকি। দুপুর একটার পরে নিঠুল ভাইয়ের কল আসে। কাঁপা কাঁপা হাতে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিঠুল ভাই ছোট কণ্ঠে ডাকে,” রোজ!”
তার এমন কণ্ঠে ভয় পেয়ে গেলেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করলাম,” রেজাল্ট কী এসেছে আমার?”
” এটা কী করলি তুই? তোর আব্বু শুনলে তো অজ্ঞান হয়ে যাবে। ”
নিঠুল ভাইয়ের ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে আমার হাত পা কাঁপছে এবার। মনে হচ্ছে এক্ষুনি জ্ঞান হারাবো।হলোও তাই। জ্ঞান ফিরে দেখতে পেলাম আব্বু এগিয়ে আসছেন। রুমে অন্যরাও আছে। আব্বু আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললেন, ” পাগলী মেয়ে আমার।
খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যেতে হয় নাকি!”
অন্যরাও হাসছে। কিছুই বুঝলাম না আমি। নাহিদ মিষ্টির কার্টন নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে বললো, ” আপু, এতো ভালো রেজাল্ট করেছো তুমি।মিষ্টি খাও,মিষ্টি খাও। ”
একলাফে উঠে বসলাম আমি। তখনো কিছু বুঝতে পারলাম না। পরে জানলাম এ প্লাস এসেছে আমার।আম্মুও খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। আমিও খুশিতে শব্দ করে কেঁদে দিলাম। নিঠুল ভাইকে দেখলাম সোফায় বসে মিষ্টি খাচ্ছে আর ফোনে কী যেন দেখছে। তার উপর আমার কী পরিমাণ রাগ তা যদি প্রকাশ করতে পারতাম! মনে মনে হাজারটা গালি দিলাম। এমন কেন সে?এটা নিয়েও মজা করতে হলো তার! তার সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলে চোখ ফিরিয়ে রুমে চলে আসি। ঘরে মিষ্টির দোকান বসেছে যেন। আব্বু ফোন করে করে হাসিমুখে আত্নীয় স্বজনকে জানাচ্ছে মেয়ের রেজাল্ট। রুমে এসে ফোন নিয়েছি বান্ধবীর খবর জানবো বলে। দরজায় আওয়াজ হলে দেখি নিঠুল ভাই এসেছে। আমি ঠিক হয়ে বসলাম।
নিঠুল ভাই বিছানায় বসে বললো, ” তুই নাকি খুশিতে অজ্ঞান হয়ে গেছিস? এ প্লাস পেয়ে অজ্ঞান হয়েছিস;গোল্ডেন পেলে মনে হয় খুশিতে মরে যেতিস। ”
আমি উঠে রেগে আঙুল তুলে বললাম, ” তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো কেন? আমার ইমোশন নিয়ে মজা করো তুমি খালি। ”
বলতে বলতে কেঁদে দিয়েছি আমি। নিঠুল ভাই আমার হাতের আঙুলটা টেনে ধরে বললো,” মিথ্যে বললাম কখন? তোকে তো রেজাল্টও বলি নি। তার আগেই চিৎপটাং। ”
” তুমি এমনভাবে বলেছো যেন আমি ফেইল করেছি। আমাকে ভয় দেখিয়েছো।”
” তোর নিজের উপর কনফিডেন্স জিরো লেভেলের তা আমি জানবো কী করে?” তার মুখে চাপা দুষ্টুমির হাসি। আমি রাগলেই, কাঁদলেই সে শান্তি পায় যেন।
আমি চলে আসতে চাইলে সে আমার হাত টেনে ধরে টেবিলের উপরে রাখা প্লেট থেকে মিষ্টি নিয়ে আমার মুখে পুরে দেয়। হতভম্ব হয়ে তাকায় আমি। সেও নিজের মুখে একটা পুরে নেয়।এবং বলে,” তোর কন্জুস বাপ তো খুশিতে পুরো মিষ্টির দোকান কিনে এনেছে। এতো আশ্চর্য আমি এত বছরের জীবনেও হই নি। ভেবেছিলাম মাত্র এক প্যাকেট মিষ্টি কিনে পুরো এলাকা, আত্নীয় স্বজনকে বিলি করবে। আমি ভাগে পাই কি না পাই তাই আগেভাগে চলে এসেছি। ”
আমি রাগী চোখে তাকালে সে আমার কাছে আসে।আমি ঘাবড়ে যায়। সে আমার চোখে চোখ রেখে নিচু স্বরে বলে, ” এভাবে তাকাবি না একদম। এমনিতেই হাঁসের আন্ডার মতো চোখ। এভাবে তাকালে যেকোনো সময় আমার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তখন তোর কন্জুস বাপের কাছ থেকেই টাকা যাবে।”
জানি সে আমার চোখ নিয়ে ব্যঙ্গ করছে। তাও নিচু স্বরের কথাটা কেন যেন মোহনীয় লাগলো। তার চোখে ডুবে আছি বেহায়ার মতো। তার চোখে কী আমার জন্য ভালোবাসা আছে! সে তো আমাকে বুঝেই না। রুমের বাইরে আম্মুর কণ্ঠ শুনতে পেলাম। তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি। শুনলাম আম্মু ফোনে বড় আপুকে বলছে, ” আরিফ ফোন করে বলে এ প্লাস এসেছে। আমি তো মনে করেছি ও ফেইল করেছে। ওর কথাও বিশ্বাস হয় নি। পরে তোর আব্বু এসে বলে নিঠুও নাকি ফোন করে বলেছে।”
এতো বড় অপমান! আম্মু ধরে নিয়েছে আমি ফেইল! আম্মুর বিশ্বাস করতে কষ্ট হচহচ্ছে! নিঠুল ভাই হাসছে। আব্বুর কণ্ঠও শুনতে পেলাম।আব্বু আপুকে বলছে ভাইয়াকে যেন বলে ল্যাপটপ কিনতে আমার জন্য। আব্বু টাকা পরে দিয়ে দিবে।
” তোর আব্বু এমন করছে যেন এ প্লাস নয়; তুই বোর্ডে ফার্স্ট হয়েছিস। এতো খুশি হওয়ার কী আছে এতে? ”
” যদি বোর্ডেও ফার্স্ট হতাম তাহলে বলতে, এমন করছে যেন পুরো বিশ্বে ফার্স্ট হয়েছে। তোমাকে চেনা আছে আমার।”
” তো বলবো না! এখনো আসল যুদ্ধটাই তো রয়ে গেছে ‘ভার্সিটি ভর্তিযুদ্ধ’। ঐটাতে চান্স পাওয়াটাই আসল। তোর মতো এমন হাজার হাজার স্টুডেন্ট আছে যারা বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করলেও ভার্সিটিতে লিস্টেও থাকে না। এখন এটার জন্য খুশিতে আত্মহারা না হয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মনযোগী হো। এটাতে গোল্ডেন প্লাস পাওয়াও খুব সহজ।”
হুহ্! আগে বলতো এইচএসসি পরীক্ষাতে পাস করা টাফ্। তোর মতো গাধী উচ্চ মাধ্যমিক পার করতে পারবি বলে মনে হয় না। আর যখন এ প্লাস আসলো তখন বলছে গোল্ডেন পাওয়াও সহজ। দুমুখো কোথাকার!
#চলবে…