#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১০

২৭.
নিতু হলে ফেরার পর প্রিয়াকে নিতু রাহুলের বিষয়টা জানায়।প্রিয়া কথাগুলো শোনামাত্র
প্রথম দফায় কিছুটা চমকে যাওয়ার মতন হয়ে যায়।পরক্ষণে চটচটে গলায় বলে উঠে,

“এইজন্যেই ভেবেছি রাহুল ভাইয়া গোমতী নামের ওই মেয়েটির দিকে বারবার কেনো এতবার তাকায়!তাহলে আসল কেইস এখানে?হিহি হিহিহি…!”

নিতু বলে,
“হাসিস পরে।এখন ওই গোমতী মেয়েটিকে আমি রাহুল ভাইয়ার ব্যাপারটা কীভাবে জানাবো?ওই মেয়েটির সাথে আমিতো কখনো কথাই বলি নি!”
“এখন বলে নিস।তাকে কেউ পছন্দ করে শুনলে খুব খুশি হবে!”
“খুশি হবে?”
“হু?মেয়েদের প্রতি যদি কোনো ছেলে দুর্বল হয়। আর মেয়েটি যদি তা জানতে পারে তাহলে সে মনে মনে খুব খুশি হয়।এবং নিজেকে তখন আসমানের পরী ভাবে!”

নিতু চুপ করে থাকে!প্রিয়া বলে,
“তোর যদি বলতে সমস্যা হয়।তাহলে তোর হয়ে আমি বলে দেব,ওকে?”
“এই না?রাহুল ভাইয়ার বারণ আছে।উনি বলেছেন যাতে কাউকে এই ব্যাপারটা না জানাই!ব্যাপারটা আমার এবং উনার মাঝেই থাকতে।”
“আচ্ছা, সমস্যা নেই।তাহলে তুই নিজেই বলিস!”

২৮.
পরদিন নিতু গোমত্রীকে ক্যাফেটেরিয়ায় ডেকে নিয়ে নিরালা কথাগুলো বলে।গোমত্রী কথাগুলো শুনার পর তারমাঝে তেমন কোনো রিয়াকশন দেখা গেলো না।সে আগের মতনই স্থির চিত্তে বসে রইলো!নিতু এবার বললো,
“কী ব্যাপার?তুমি যে কিছু বলছো না?”

গোমত্রী এবার মৃদু হাসলো।তারপর বললো,
“আসলে…কী বলবো!কিছুই বুঝতেছি না!”
“কি বলবে কিছুই বুঝতেছি না মানে?”
“না মানে হলো উনি আমাকে ভালোভাবে জানেন নি।দেখেন নি।বুঝেনও নি।তারপরও এভাবে কেউ কাউকে পছন্দ করে ফেলে!রিডিকিউলাস না ব্যাপারটা?”

হাসি থামিয়ে বলে,
“কাউকে ভালোবাসতে তাকে বেশিদিন পর্যবেক্ষণ করা লাগে না!যাইহোক,আমাকে উনি জানালেন বিষয়টা।তাই তোমাকে বললাম।”

গোমত্রী চুপ করে থাকে।নিতু এবার ব্যস্ত ভঙ্গিমায়,
“যাইহোক,এবার ডিসিশন তোমার!তোমার ভালো লাগলে একসেপ্ট করবা।না লাগলে ইগনোর করবা।উঠি তাহলে আমি।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে আবার!”

গোমত্রী তাও কিছু বললো না।ঠায় নিশ্চুপ ভঙ্গিতে বসে থাকলো!পরপর দুইদিন কেঁটে গেলো।রাহুল নিতুকে বেহুশ করে তুলতেছে।ক্যাম্পাসে নিতু ঢুকলেই রাহুল নিতুর পেছনে লাগে।কিন্তু নিতুর থেকে কোনো উত্তর নেই।কারণ, গোমত্রী তারপর নিতুকে আর কিছুই জানায় নি!নিতু এবার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার মতন বলে উঠে রাহুলকে,
“ভাইয়া?আপনি অন্যকাউকে দিয়ে চেষ্টা করুন,প্লিজ!”

“তুমিই পারলে না।আর অন্য কে পারবে!”
“আমার রুমমেট প্রিয়া আছে।ওকে বলে দেখি!”
“থাক দরকার নেই।আসি আমি।”

বলে মুখটা কেমন নিরস করে রাহুল ঘুরে বিপরীত দিকে চলে গেলো!নিতু বুঝলো রাহুল ভাই আসলেই গোমত্রী নামের ওই মেয়েটিকে ভালোবাসে।খুব করে ভালোবাসে! ভালোবাসা কি আসলেই এমনই?যা কোনো দ্বিমত মানতে চায়না!নিরবে নিতু একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজের ডিপার্টমেন্টে ফিরে এলো!ফিরে আসতেই কয়েকটা মেয়ে নিতুকে এবার ঘিরে ধরলো!তারা নিতুর ক্লাসমেটই!একজন বলে উঠলো,

“নিতু?সিনিয়রদের যে আগামী দুই তারিখে “বিদায় অনুষ্ঠান” আয়োজন করা হবে,সেই উপলক্ষে আমাদের ব্যাচ থেকে তাসফিয়া ম্যাম তোমাকে তাদের বিদায় অভ্যর্থনা পাঠ করার দায়িত্ব দিয়েছে!”

ক্লাসমেটদের কথা শুনে নিতু চমকে উঠলো না।কিন্তু বিষয়টা চমকানোর মতন।এতশত মেয়ে রেখে তাকে কেনো ম্যাম সিলেক্ট করবে তাও এত বড় আয়োজনে “বিদায় আভ্যর্থনা ” পাঠ করতে।নিশ্চয়ই এরা নাটক শুরু করেছে।তামাসা ভরা নাটক।নিতু বললো,

“মিথ্যে বলে কাউকে বিভ্রান্ত করার মানে হয়না!”

বলে নিতু পাশ কেঁটে এলো!কিন্তু পায়ের গতি বেশিদূর ঠেকলো না নিতুর।পেছন থেকে তাসফিয়া ম্যাম ডেকে উঠলো নিতুকে,
“নিতু?মিথ্যে নেয়, সত্যি।” বিদায় আভ্যর্থনা”তোমাকেই পাঠ করতে হবে।তোমার গলার স্বর সুন্দর!তুমি পারবে!”

নিতু অবাক চোখে পেছনে তাকালো।ম্যাম এবং ক্লাসমেটদের মুখে চাপা হাসি!

২৯.
হলে আসার পর নিতু চুপচাপ!প্রিয়া নিতুকে খেয়াল করে।নিতু কোনো কথা বলছে না।কিছু যেনো ভাবছে।প্রিয়া হাতের তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে নিতুর পাশে এসে বসে।বলে,

“কি হয়েছে নিতু?মন খারাপ?”
“এবারের ” বিদায় অভ্যর্থনা”নাকি আমাকেই পাঠ করতে হবে!”
“হোয়াট?হোয়াট আ সারপ্রাইজ,নিতু!”
“কিন্তু এত ভালো ভালো স্টুডেন্টস রেখে আমাকেই কেনো এরকম একটা কাজ দিলো ম্যাম!মানে বুঝতেছিস?তারউপর এটা আবার রিহান ভাইয়া দের ব্যাচ!আর উনাদের ব্যাচকে নিয়ে আমি ” বিদায় অভ্যর্থনা” দেব?এটা কেমন দেখায় না ?”
“সো হোয়াট?উনাদের বিদায় দেখে বলে তুই অভ্যর্থনা দিবি না এটা কেমন কথা রে ভাই!পার্সোনাল লাইফের সাথে ফর্মাল কিছু টানিস কেনো?লাইফ ইজ লাইফ!তাছাড়া,এটা তোর ট্যালেন্টও!তুই সেদিন সবাইকে তোর ট্যালেন্ট দেখানোরও একটা সুযোগ পেয়ে যাবি!”
“মাথা খারাপ?কাউকে আমার ট্যালেন্ট দেখানোর ওরকম আগ্রহও নেই।তাছাড়া, আমি ওত ট্যালেন্টেড পার্সোনও না!”

প্রিয়া হাসলো মৃদু শব্দ করে।তারপর বলে,
“তাসফিয়া ম্যাম যেহেতু বলছেন তাহলে আমার দৃষ্টিতে এরকম অফার রিজেক্ট করা ঠিক হবে না!ম্যামের কাছে হয়তো তোকেই বেস্ট মনে হয়েছে তাই দিয়েছেন আই থিংক!তাছাড়া,তুই তো জাস্ট তোর ফর্মালিটিজ টুকু পালন করবি।মোরওভার নাথিং!”

৩০.
নিতু এখন তাসফিয়া ম্যামের সাথেই একটু বেশি সময় কাঁটায়।এই যেমন ক্লাস শেষ হলে ম্যাম ওকে নিয়ে লাইব্রেরীতে চলে যায়।সেখানে নিয়ে! বিদায়ী অভ্যর্থনা”প্রতি বারবার প্রাকটিস করায়!নিতুও আগ্রহ নিয়ে করে।ম্যামের আগ্রহ তাকে নিয়ে।তাই সে অনাগ্রহ দেখাবে কেনো?ম্যামের এটা কি ভালোবাসায় না?আজকের প্রাকটিস নিতুর তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে যায়।তাসফিয়া কিছুক্ষণ আগে উঠে চলে গেছেন উনার ডিপার্টমেন্ট অফিসে।নিতু ওর ব্যাগপ্যাগ গুছিয়ে যাত্রা করবে ওমনি গোমত্রী এসে সামনে দাঁড়ায়।আড়ষ্টতা ভঙ্গিতে বলে,

“নিতু?তোমার সাথে আমার কথা আছে!”

নিতু থমকে দাঁড়িয়ে যায়!বলে,
“বলো?”
“একটু ওদিকে আসো।এখানে অনেকে আছে কথা বললে শুনতে পাবে।আসলে পার্সোনাল মিট তো!”
“নো প্রবলেম,চলো!”

নিতু এবং গোমত্রী লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে দুজনে কিছুটা নিরালা জায়গায় এসে দাঁড়ায়।নিতু বলে,
“বলো এবার?কী বলবে?”

গোমত্রী বলে,
“আসলে ওই ব্যাপারটা নিয়ে এই কয়টা দিন অনেক ভেবেছি!উনার ফেসবুক,ইন্সট্রাগ্রাম,টুইটার সবকিছু ভালো মতন ঘেঁটেছি!সবকিছুতে মনে হলো উনি আসলে খুব ভালো! আমি এতটাদিন মোরাল কাউকে চেয়েছি আমার লাইফে।আসলে আমি এখনো সিঙ্গেল….!”

গোমত্রীর কথা শুনে নিতুর মনে মনে খুব হাসি এলো।সাথে আনন্দের ঝলকানি।সেনিতু আর বাকিটা গোমত্রীকে বলতে দিলো না।ফোঁড়ন টেনে বলে উঠলো,
“কংগ্রেটস,গোমত্রী!রাহুল ভাইয়ার জন্যে অনেক বড় গুড নিউজ…!”

৩১.
নিতু হলে ফিরেই রাহুল ভাইয়াকে টেক্সট করে দিলো একটা-“ভাইয়া,আপনার গোমত্রীকে পেয়ে গেলেন!ট্রিট চাই এবার!”

রাহুলের কোনো রিপ্লাই এলো না।এলো না বলতে সেই রাতে আর রিপ্লাই আসে নি।এসেছে সকালে!রাহুল লিখলো,
“থ্যাংকউউ,ছোট্টবোন!আজকে বিকেলে দেখা হচ্ছে তাহলে।ক্লাস শেষ করে গোমত্রীকে নিয়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্টের সামনে এসো দাড়িও।আমি ৩ টার ভেতর সেখানে আসছি।”

নিতু ভার্সিটিতে এসে দেখে গৌমত্রী আজ নতুনভাবে সেজেছে।গাঁয়ে লং স্কার্ট,জিন্স,পায়ে হিল কেটস,আর চুলগুলো কার্লি করা!দেখতে জাস্ট ওসাম!নিতুকে দেখে গৌমত্রী জড়িয়ে ধরলো।তারপর দুজনে একসাথে ক্লাস শেষ করলো। ক্লাস শেষ করে দুইজনে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিক্সা খুঁজতে থাকলো।দুই তিনবার চোখ ঘুরতেই একটা রিক্সা সামনে পেয়ে গেলো।দুইজনে রিক্সায় চড়ে গেলো!তারপর রিক্সা থেকে নামতেই দেখে রাহুল এসে হাজির।সে রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।গাঁয়ে ব্লু কালার টি- শার্ট,পড়নে জিন্স,ব্লাক-হোয়াইট জিন্স!গৌমত্রীকে রাহুলকে দেখে একদফা মনে মনে ক্রাশ খেলো!তারপর রাহুলেরও গৌমত্রীর দিকে নজর পড়তে লজ্জায় গৌমত্রী মাথা খানিকটা নত করে আনলো।নিতু রাহুলের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে,

“চলে এসেছি আমরা।”

তারপর তারা তিনজনে রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢোকে।ডাইনিং এ বসে।রাহুল বলে,

“এবার বলো কী খাবে!”

নিতু হা হয়ে যায় মুহূর্তে!তারমানে কালরাতে মেসেজ করে যে বললো ট্রিট দিতে।এখন সেই ট্রিট দিতে চাচ্ছে রাহুল ভাইয়া!নিতু অসংযত হয়ে যায়।বলে উঠে,
“ভাইয়া, আমি মজা করেছিলাম কালরাত!সিরিয়াসলি?”
“নো,নো এতকথা শুনতে চাচ্ছি না।ওয়েটার?ওয়েটার?”

ঠিক সেই সময়…!
” আমাদের রেখে একা একা খাবি?ট্রিটে ভাগ আমরাও তো পাই!কিরে ভাই,ঠিক বলছি না?”

রাহুল ওমনি সামন তাকায়। তাকিয়ে দেখে ওর সবগুলা হারমাী বন্ধু ডাইনিং তরতর করে হাজির এখানে!!আর কথাগুলো রিহান বলছে!

চলবে…
(ইশ্ কি একটা সিচুয়েশন নিতুর!ভাবা যায়!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here