#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-০৯
নিতু ঢাকায় ফিরে আসে।নিতুর এবার সফলতায় ভার্সিটির সবাই থমকে যায়।সবথেকে বেশি থমকায় ওসব মেয়েরা,যারা নিতুকে নিয়ে ট্রল করেছিলো।নিতু আজকে ক্লাসটা তাড়াতাড়িই শেষ করেই বাইরে বেরিয়ে আসে।ক্যাফেটেরিয়ার সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে ক্যাফেটেরিয়া থেকে প্রিয়া ডেকে উঠে।নিতু সেদিকে তাকায়।দেখে প্রিয়া ওর বান্ধবীদের সাথে বসে বসে কিছু খাচ্ছে।নিতু প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।প্রিয়াও।তারপর প্রিয়া বলে,
“দাঁড়া।আমিও আজ তাড়াতাড়ি চলে যাবো।”
সচরাচর প্রিয়া আগে হলে একটু দেরী করেই যেত।ক্লাস শেষ হলে বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে হ্যাং-আউট করে,ঘুরেফিরে তারপর হলে যেত।কিন্তু এখন আর তা করে না।প্রয়োজন না পড়লে বাইরে বেশিক্ষণ থাকে ই না।রেগুলার পড়াশুনা করে রুমে
আর প্রিয়ায় এসব পরিবর্তন নিতুকে দেখে দেখে।
প্রিয়া এরইমাঝে নিতুর কাছে চলে আসে।নিতু সামনের দিকে ফেলতে ফেলতে বলে,
“চলো…!”
পরদিন ভার্সিটিতে আসতেই শুনে চতুর্থ বর্ষের স্টুডেন্টরা বিদেয় নিয়ে চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে।তাদের সেমিস্টার ফাইনালের আর মাত্র একমাস হাতে বাকি।তারপর ভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট।ব্যাচটা রিহান ভাইয়াদের অবশ্যি!রিহান ভাই এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে নিতুর ভেতরটা কেনজানি হঠাৎ করে হুহু করে উঠলো।আর কখনো দেখা হবে না তার। এখনো তাকে ভালোবাসে কিনা তা জানে না নিতু।তারপরও রিহানের চলে যাওয়াটা নিতুর কেনজানি খারাপ লেগেছে ভীষণ!নিতু দৃঢ় গতিতে পা ফেলে নিজের ক্লাসে চলে আসে।ক্লাসে বসার সাত মিনিট বাদেই দেখে রিহান ভাইয়ারা ওদের ক্লাসের দিকে আসছে।সিনিয়রদের দেখে সব জুনিয়র দাঁড়িয়ে যায়।সিনিয়র একজন হেসে বলে উঠে,
“আরে দাড়াতে হবে না।বসো তোমরা।কিছু কথা বলেই চলে যাবো।”
তারপর রিহান এগিয়ে আসে।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“হায় জুনিয়রস,কি অবস্থা তোমাদের?”
নিতুর ক্লাসের সবাই একযোগে বলে উঠে,
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।আপনাদের কি অবস্থা,ভাইয়া-আপুরা?”
রিহান সামান্য জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আছি,আল্লাহ যেরকম রাখছেন।”
বলে কিঞ্চি থামে রিহান।তারপর আবার বলে,
“তা যেটা বলতে এসেছি..!তোমরা ইতোমধ্যে জেনেছো আমরা কয়েকদিনের ভেতর এই ভার্সিটি ছেড়ে চলে যাবো।এটা আমাদের জন্যে খুবই বেদনাদায়ক।তা আমাদের ব্যাচের সবাই মিলে সেই উপলক্ষে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমরা আগামী সতেরো তারিখে একটা পিকনিকের এরেন্জ করতে চলেছি।আর পিকনিকটা আমাদের ভার্সিটির প্রাঙ্গণেই হবে।আমরা সব জুনিয়রদের পিকনিকে ইনভাইট করেছি।তোমরাও আমাদের পিকনিকে বিশেষভাবে ইনভাইটেড।জয়েন হবা অবশ্যই পিকনিকে সবাই।সবাইকে বিশেষভাবে আবারোও ইনভাইট করছি।”
মেয়েগুলো বলে উঠে,
“ভাইয়া, অবশ্যই যাবো আমরা!”
সতেরো তারিখ রিহানদের ব্যাচ বড়সড় একটা পিকনিকের আয়োজন করে কার্জন হলের সামনে!ক্যাম্পাসের সব ছাত্র-ছাত্রী তাতে জয়েন করে।কিন্তু নিতু জয়েন করে নি।সে তার রুমেই ছিলো সারাদিন।রুমে বসে গল্পের বই পড়েছিলো।খেতে কিছু হালকা বানিয়েছিলো।বাড়িতে কথা বলে সময় কাটিয়েছিলো।আবার ভার্সিটির পড়ায়ও মুখ গুঁজেছিলো।এভাবেই সারাদিন পার হয়েছে নিতুর।প্রিয়া রুমে নেই।সেও পিকনিকে জয়েন করেছে।তবে,যাওয়ার আগে নিতুকে অনেক আকুতি মিনতি করেছে।নিতু যায় নি।
২৫.
সন্ধে প্রায় নেমে আসতেই প্রিয়া রুমে ঢুকে।হাতে থাকা ব্যাগটা ধড়াম করে বিছানার উপর এক সপােট ফেলে রুদ্ধশ্বাস গলায় বলে,
“জানিস নিতু আজ কি হয়েছে?”
নিতু তখন বিছানার চাদর ঠিক করতেছিলো।কাজে মগ্নতা থেকেই উত্তর করলো,
“হু..?”
“লামিয়া আপু আছে না?লামিয়া আপু আজকে সবার সামনে রিহান ভাইয়াকে প্রপোজ করেছিলো!”
“লামিয়া আপু” এই দুইটা শব্দ নিতুর কান বরাবর ঢুকামাত্রই হাতের গতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে এলো।পেছনে তাকালো।বললো,
“তৃতীয় বর্ষে পড়েন যেই লামিয়া আপু?”
“হ্যাঁ!তবে জানিস কি?রিহান ভাইয়া মনে হয় লামিয়া আপুর প্রপোজাল একসেপ্ট করবে!”
“তুই কীভাবে বুঝলি?”
“লামিয়া আপু যেই সুন্দরী,স্টাইলিশ,পয়সাওয়ালার মেয়ে একসেপ্ট না করারও কারণ দেখছি না।রিহান ভাইয়াকে প্রপোজ করা মাত্রই রিহান ভাইয়া হেসে উঠলো। তারপর লামিয়া আপুকে বললো,আমি উত্তরটা পরে জানাই?আপাতত আমাদের পিকনিকের কাজটা শেষ হোক!লামিয়া আপুও হাসি মুখে মেনে নেয় রিহান ভাইয়ার কথা।তাদের দুজনের ভাবভঙ্গিতে তখন মনে হলো তাদের ভেতর কিছু একটা আছে।বিশ্বাস কর আমরা সবাই তখন পুরাই হতবাক! ”
লামিয়াকে নিতু চেনে।ভার্সিরিতে যেমন রিহান ভাইয়া যেমন হাজারো মেয়ের ক্রাশ,তেমনি মেয়েদের মধ্যে লামিয়া আপুও ছেলেদের ক্রাশ!লামিয়া আপু রূপে-গুণে,বাবার অগাধ টাকাপয়সা।ঢাকায় তিন-চার জায়গায় লামিয়া আপুর নামে ফ্ল্যাট কেনা আছে।ভার্সিটিতে আসে দামী গাড়ি চড়ে।আর সেই তিনি রিহান ভাইয়াকে প্রপোজাল দিলো!সত্যিই নিতু রিহান ভাইয়ার কোনো দিক দিয়েি যোগ্য না।কোনোদিক দিয়েই না।খামোখা চাঁদ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে নিজেকে কষ্ট দিলো!স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করতে চেয়েছিলো!আহত নিতু নিজেকে আবারো সামলায়!প্রিয়া এসে নিতুর কাঁধে আলতো হাত রাখে।কোমল গলায় বলে,
“যেটা তোর।সেটা তোরই হবে।সেটা পেতে নিজেকে কষ্ট দিতে হবে না।”
প্রিয়ায় কথায় নিতু এবার জোরপূর্বক হেসে উঠে।বলে,
“আরেহ কি যা তা বলছিস।কিসের কষ্ট!আমি রিহান নামের লোকটিকে কোন কালেই ভুলে গেছি…!”
বলে নিতু জোরে একটা শ্বাস ত্যাগ করে প্রিয়াকে পাশ কেঁটে আবার নিজ কাজে মন দেয়।
২৬.
ক্লাস শেষ করে নিতু ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেইট বরাবর আসতে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠে “আপু” বলে।নিতু থেমে যায়।থামতেই পেছন থেকে সে সামনে এসে দাঁড়ায়।হেসে দিয়ে বলে,
“কাল থেকেই তোমার খোঁজ করতেছি।কিন্তু তোমাকে পাচ্ছি না!এখন চলার পথে দেখা হয়ে গেলো যাক ভালোই হলো।”
নিতু ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকলো।কারসাথে যেনো একে একবার দেখেছিলো সে!নিতুর ভাবনা মাঝে,
“আমাকে চিনতে পারছো না তাই তো?আমি হলাম রিহানের ফ্রেন্ড রাহুল!”
নিতুর এতক্ষণে খেয়াল হলো।হ্যাঁ,সে সেদিন রিহানকে প্রপোজ করেছিলো আর একে রিহানের সাথে দেখেছিলো!নিতু এবার জোরপূর্বক হাসলো।সালাম করলো।তারপর বললো,
“কিছু বলবেন,ভাইয়া?”
রাহুল হাসিমুখে বললো,
“বলতেই তো তোমাকে দাঁড় করিয়েছি।”
“জ্বী,বলুন?কি বলবেন।”
রাহুল এবার কিছুটা আড়ষ্টতা হয়ে গেলো।সে কিছু একটা বলতে চায়।কিন্তু অপ্রস্তুকর লাগছে বলতে।নিতু বুঝে যায় রাহুলের অবস্থা!
“ভাইয়া,বলুন?সমস্যা নেই।আমি আপনার ছোট্ট বোনের মতন।”
“গোমত্রী কি তোমার ডিপার্টমেন্টে পড়ে?”
“গোমত্রী পালের কথা বলছেন?ওই চিকনা লম্বা করে…? ”
“হ্যাঁ।”
“জ্বী, সে আমাদের সাথে পড়ে।”
“ভাইয়া,তোমাকে একটা কথা বলি।কাউকে বলবে না। ”
“কি কথা?”
“আগে বলো প্রমিজ?”
“আহা বলুন।সমস্যা নেই।”
“আমার গোমত্রীকে খুব পছন্দ হয়েছে।সেদিন পিকনিকে মেয়েটির উপর ক্রাশ খেয়েছি।খবর নিয়ে জানলাম সে পরিসংখ্যান ডিপার্টমেন্টে পড়ে।আর একই ডিপার্টমেন্টে তুমিও!”
“আচ্ছা! ”
“তো আমিতো এই ভার্সিটি থেকে আর মাত্র কয়দিন পর চলে যাবো।সময়ও কম।চাচ্ছি ওকে সরাসরি প্রপোজ করে দেব।তবে,ভাবতেছি সরাসরি প্রপোজ করলে একসেপ্ট যদি আবার না করে..!আসলে মেয়ে মানুষ বুঝো ই ত..!”
নিতু এবার সাবলীল ভঙ্গিমায় হাসলো।বললো,
“আপনি টেনশন করবেন না ভাইয়া।আমি দেখতেছি কি করা যায়।”
রাহুলের চোখমুখ ওমনি চকচক করে উঠলো।সে এতক্ষণে যেনো নিতুর থেকে এরকম কিছুই চেয়েছিলো।উচ্ছ্বাসিত গলায় বলে উঠলো,
“তুমি খুবই ভালো।তোমার উপর আমার বিশ্বাস ছিলো খুব।আমি জানতাম তুমি পারবে আমাকে হেল্প করতে।আর তোমার ব্রাইট রেজাল্টের জন্যেও কংগ্রেটস!এভাবেই ভালো করে স্টাডি করে এগিয়ে যাও সামনে।সবাইকে দেখিয়ে দাও নিজের যোগ্যতা!”
“আপনি তো দেখি সবই জানেন আমার বিষয়ে!”
“জুনিয়র বোন আমার তোমরা।তোমাদের খবর আমরা না রাখলে কে রাখবে বলো?”
“আচ্ছা।আর আপনি টেনশন করবেন না।আমি দেখি কি করা যায়।”
“আচ্ছা। আর শুনো?”
“জ্বী..?”
“কেউ যাতে এসব না জানে।বিষয়টা তোমার এবং আমার মাঝে।জানোই ত আমার ফ্রেন্ডগুলা এক একটা হারামী।একবার শুনলেই মানসম্মান খাবে আমার!”
“আচ্ছা,সমস্যা নেই ভাইয়া।কেউ জানবে না।”
“জ্বী, আমি আসি এখন।”
বলে নিতু চলে গেলো। রাহুল নিরব হাসলো।আর মনে মনে বললো,”মেয়েটা সত্যিই খুব সরল এবং ভালো।”
চলবে….