#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৭

নিতুর কিছুটা হলেও পরিবর্তন এসেছে। আগের সেই নিরবতা,নিশ্চুপতা কেঁটেছে।রিহানের সাথে কথা বলার যেই জড়তা টা ছিল এখন তা নেই বললেই চলে।রিহান কোনো রকমের রসিকতার কথা টানলেই “হো হো হো” করে হাসে,যা দেখতে রিহানের খুব ভাল্লাগে।মনে মনে খুব স্বস্তি পায় রিহান।কারণ সে এরকমটাই চেয়েছিল।মোটামুটি সুন্দর ভাবেই সংসারটা এগুচ্ছে তাদের।এতকিছুর মাঝে রিহানের আর একটা ইচ্ছে তা হলো “সে বাবা হবে”। কিন্তু এই কথাটা নিতুকে বলতে পারছে না।বলতে গেলে নিতু লজ্জায় কুঁকড়ে যাবে।ক’দিন ধরে তার সাথে না জানি কথা না বলে কে জানে।এমনিতে মেয়েটির অনেক লজ্জা বেশি।সে’বার প্রথম তারসাথে নিতুর শারিরীক সম্পর্ক হওয়ার পর সে ত কথাই বলতে চায়নি রিহানের সাথে।রিহানের চোখের সামনে পড়লেই লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিত,বা নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করতো।এরকম চারদিন ধরে করেছে।তবে সেটা রিহান আবার নানান কৌতুক, হাসিরসাত্রক ভরা কথা টেনে জড়তা কাঁটিয়ে দিয়েছে।এখন এটার সময় কতদিন মুখ ঘুরিয়ে নেয় কে জানে!রিহানের ভীষণ হাসি চলে আসে।ভাইয়াকে নিজমনে হাসিটতে তা দূর থেকে স্নেহা পর্যবেক্ষণ করে।ভ্রু’যুগল কুঁচকে কৌতুক কন্ঠে জোরে বলে উঠে ,

” আহা একটু হাসো না!ভাবীর কি মন পেয়েছো নাকি?”

রিহান হঠাৎ বোনের এহেন কথা শোনে থতমত খেয়ে যায়!চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ধমকের স্বরে বলে,
“এখানে কি তোর?যা কলেজে যা!কলেজে যাওয়ার সময় আসে গোয়েন্দাগিরী করতে!”

বলেই রিহান বোনের সামনে থেকে কেঁটে পড়ে।তা দেখে স্নেহা মুখ চেপে হাসে।রিহান রুমে আসে।এসে দেখে নিতুকে খুব উদ্বিগ্নতা লাগছে!কোনো কিছু নিয়ে যেনো খুব চিন্তিত!রিহান কাছে গেলো নিতুর।শান্ত স্বরে বললো,

“কি হয়েছে নিতু?”

নিতু খানিকক্ষণ চুপ থেকে জবাব দিলো,
“প্রিয়া কল করেছে।আগামী মাসের ৫ তারিখে নাকি আমাদের সপ্তম সেমিস্টার এক্সাম!আমিতো কিছুই পারি না।বইও নাই।বই সব কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে?হলে নাকি বাসায় বুঝতেছি না।”

রিহান শুধায়।বলে,
“আরেহ চিন্তা নেই বোকা মেয়ে!আমি আছি না?আমি সব জোগাড় করে দিব।এখন তুমি শুধুা আমাকে লিস্ট দাও কোন কোন বইগুলো তোমার লাগবে।”

নিতু আমোদিত কন্ঠে বলে উঠে,
“আচ্ছা আমি প্রিয়ার থেকে নিয়ে দিচ্ছি।এক মিনিট।”

বলেই প্রিয়াকে আবার কল মারে।প্রিয়া সব লিস্ট মেসেন্জারে পাঠিয়ে দেয়।নিতু রিহানের মেসেন্জারে।রিহান লিস্টগুলো পেয়ে,

“তাহলে নিয়ে আসতেছি।”

বলেই রিহান রুম থেকে বেরিয়ে যায়।নিতুর তা দেখে ভীষণ ভালো লাগে।রিহানযে তাকে এতটা কেয়ার,তার উপর তার পড়াশুনার প্রতি অনুরাগী। সত্যিই খুব ভালো লাগার মতন।তবে নিতুর একটাই ইচ্ছে এখন,পড়াশুনাটা শেষ হলে ভালো একটা চাকরির জুটিয়ে বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।বাবার খুবই স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে।মেয়েটা একদিন অনেক বড় হবে।গ্রাম-গঞ্জে মেয়েটার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে।অমুকের মেয়ে তমুক হইছে,তমুকের মেয়ে অমুক হইছে।এমন একটা প্রশংসার গর্ববোধ ছিল বাবার মনে। বাবা হয়তো ভেবেছে বিয়েটা হওয়াতে সব শেষ!কিন্তু না বাবার নিতুকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন তা নিতু পূরণ করবেই।বিয়ের ঝামেলা তাকে তার স্বপ্ন থেকে সরাতে পারবে না।নিতু আশাবাদী ভীষণ।কেননা,রিহানও তাকে সাপোর্ট করছে আজকে যতটা বুঝলো।

—————————————–
একমাস গড়াতেই নিতু বুঝতে পারে নিতু প্রেগন্যান্ট!ডাক্তারের থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসার পর বাসায় এসে নিতু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়।মনটা কেমন বিক্ষিপ্ত, আর চুপচাপ।নিতুর এহেন কান্ডে রিহান বুঝে উঠতে পারলো না!মেয়েটার মাঝে এরকম ভাবভঙ্গি কেন?এমন একটা খুশির সংবাদে তার যতটা না খুশি থাকার কথা,সে ত ততটাই দুঃখে।রিহান নিজেকে যথাআজ্ঞা সামলিয়ে নিতুর কাছে গিয়ে বসে।মুখের উপর উপচে পড়া এলোমেলো চুলগুলো কানের দু’পাশে গুঁজে দিয়ে বলে,

“নিতু?কি হয়েছে?মন খারাপ তোমার?”

নিতু চুপ করে আছে!রিহান দুয়েক সেকেন্ডস চুপ থেকে আবার বলে,
“আমি কি ভুল কিছু করে ফেলেছি নিতু?বলো আমাকে? ”

নিতুর এতক্ষণে জমিয়ে রাখা রাগ,অভিমান,কষ্ট এবার ধক করে জ্বলে উঠে।তেঁজি কন্ঠে বলে উঠে খুব,
“মা এত তাড়াতাড়ি মা হতে চাই নি!কেনো আমাকে বাধ্য করালেন এত তাড়াতাড়ি মা হতে!?”
“তুমি কি তাতে খুশি নও নিতু?”

নিতু কাঁদে।তিরতির করো চোখের পানি পড়ছে।রিহান বুঝতে পারছে না নিতু এখম মা হওয়াতে কেনো খুশি নয়!অথচ সে ত মনে মনে কতই না ভেবে রাখলো এই সংবাদটা তার এবং নিতুর জন্যে পৃথিবীর সবথেকে খুশির সংবাদ।রিহান মনে মনে নিজেকে আবার ধাতস্থতা করে।গালে হাত রেখে আবার শুধায়,

“নিতু?”

নিতু ঝট করে রিহানের হাত সরিয়ে দেয়।বলে,
“ধরবেন না আমাকে!আপনার জন্যে সব হলো!”
“আমি বুঝতেছি না নিতু আমি কি করে ফেলেছি।দয়া করে যদি বলতে…!”

নিতু এবার রিহানের দিকে তাকায়।ছেলেটার চোখমুখে কোমলতা,নিষ্পাপত্ব, মলীনতার ছাপ দেখে নিতুর তেজি ভাব দমে যায়।মিনিট দুয়েকের মতন চুপ থাকে।রিহানও নিতুর নিরবতার অপেক্ষা কাটিয়ে কথা শুনতে চুপচাপ চেয়ে থাকে।নিতু ছোট্ট করে হাঁক ছেড়ে বলে,

“আমার ইচ্ছে ছিল অনার্সটা শেষ করে,বা চাকরিটা পেয়ে ওই ডিসিশন নিতে।কিন্তু চাকরি তো দূরে থাক,পড়াশুনা শেষ না হওয়ার আগেই আমাার সব শেষ হয়ে গেল!পড়াশুনা তো আর হবে না!আবার স্বপ্ন পূরণের তাগিদটা কল্পনাার স্বপ্নেই চাপা পড়লো!সংসারটা ধরিয়ে দিয়ে আপনি আমার পরিবার থেকে আমাকে আরো বরদাস্ত করলেন!কেন এরকম হলো?আমি কি আর কখনোই পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবো না!?বাবাকে গিয়ে বলতে পারবো না বাবা আমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি!”

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে ওড়ে নিতু।রিহান এতক্ষণে বুঝতে পারলো নিতুকে।প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ওর পড়াশুনাটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে।তারউপর ছয়মাস পর ওর ফাইনাল।সে’সময় ডেলিভারি সময় প্রায়।পড়াশুনা এবং বাচ্চা ডেলিভারি সময়টা একসাথে কীভাবে নেবে মেয়েটা?উফফ!বিষয়গুলো তখন কেন ভাবে নি রিহান!বাবা হওয়ার ঝোঁকটা মাথায় এতই চেপেছিল!রাগ উঠতেছে এখন তার নিজের উপর নিজেরই।নিতুকে কোনোমতে বুঝিয়ে উঠে পড়ে নিজের রিডিং রুমে চলে আসে রিহান।রুমময় পায়চারি করতে থাকে কি থেকে কি করা যায়।কিছুক্ষণ এভাবে পায়চারির পর একটা চেয়ার টেনে টেবিলের সামনে গিয়ে ধপাস করে বসে।পাশে প্যাড এবং একটা কলম ছিল।তা হাতে তুলে নেয়।নিতুর পরিক্ষার ডেট এবং কনসিভ হওয়ার ডেট হিসবে করতে লেগে যায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here