#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৭
৪৪.
পরদিন আবরাহাম এবং তার বাবা নিতুদের বাড়িতে পা রাখে।নিতু তখন ওর রুমের দক্ষিণের জানালার কোণে শক্ত দাঁড়িয়েছিল সবে।চোখ গেলো ওদের বাড়ির উঠোনের সরু রাস্তাটার দিকে।চোখে চশমা,গাঁয়ে সাদা রঙ্গের টি-শার্ট,শার্টের সাথে লাগোয়া নীল রঙ্গের টাই।সুঠাম দেহে আর্টসার্টভাবে লেগে আছে।গাঁয়ের রং ফর্সাতে বেশভূষায় বেমানান না।তারউপর গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।নিতু জানালা থেকে সরে দাঁড়ালো কিছুটা।চোখ বন্ধ করলো।বুকের ভেতর হৃৎস্পন্দন দ্রুত উঠানামা করছে।সাথে দুই চোখে পানি!কিছুক্ষণ এভাবে নোনা জল ফেলার পর দরজায় দুমদুম হতে শুরু কারলো।
“নিতু?সেজেছিস?তাড়াতাড়ি বাইরে আয়।”
নিতু মার কথার উত্তর করলো না।ওপাশ থেকে নিতুর মা আবারো,
“দেরী করিস না।ছেলের বাবার কোথায় নাকি যেতে হবে আবার।তোকে একনজর দেখেই চলে যাবে।”
নিতু এবার কথা তুললো,
“বলছি না পারবো না!কাল রাতেই তো বলে দিয়েছি।কি শুরু করেছো তোমরা?”
নিতুর মা কিছুটা যেনো থেমে গেলেন।হয়তো ভীতিতে আছেন।মেয়ের এধরনের কথাবার্তা ছেলেপক্ষরা যদি শুনে ফেলে! মানসম্মান থাকবে না!আর কোনো শব্দ পাওয়া গেলো না নিতুর মার।হয়তো চলে গেছেন।কিছুক্ষণ নিস্তব্ধতার পর আবার দরজায় কিল।এবার কন্ঠটা নিতুর বাবার,
“নিতু?মারে মা?বিয়ে করিস না যা।অন্তত এখনকার জন্যে বাবারা মানটা রাখ?উনারা আসছে,এখন এসে যদি তুই সামনে না যাস তাহলে..।বাবাকে একটু বুঝার চেষ্টা কর মা।”
নিতু বাবার কথায় এবার যেনো আরো কেঁদে উঠলো।বুক চেপে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।রাগ,অভিমান,কষ্ট নিয়ে আবার চোখের পানি মুছলো।সেঁজে নিলো পাঁচ মিনিটে!কি করবে এখন?আর কি আর করা!
৪৫.
ছেলেপক্ষরা দেখে যাওয়ার পর নিতুর ভাইয়ের ফোনে খালি কলের পর কল।আজিজ মাওলানা,মানে আবরাহামের বাবা লুৎফর রহমানকে অনেকবার উনার বাড়ির গৃহকর্মী আতিয়াকে দিয়ে খবর পাঠিয়েছেন যেতে।কিন্তু লুৎফর মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে আছে।নিতুর মা তো নিতুর উপর সেই রাগ।এবং নিতুর ভাই তো আরো।নিতুর ভাই সহ সবাই নিতুর পাশেই দাঁড়িয়ে।নিতুর ভাই বলে উঠেন,
“আসলে ও চাচ্ছে টা কি?ওকে জিজ্ঞেস করো ত মা?একটু ভালো করে জিজ্ঞেস করো।”
নিতু কাঁদে।মুখে ওড়না চেপে কাঁদে।লুৎফর রহমান বলেন,
“ও চাকরি করবে তারপর বিয়ে করতে চায়।ওর মনের কথা যতটা বুঝলাম। ”
নিতুর ভাই ওমনিই নিতুর বাবাকে ধমকে উঠে,
“কথা বলো না তুমি বাবা।তোমার মতের ঠিক নাই।আর তুমিই ওকে ঢাকায় পাঠিয়ে এতটা পা লম্বা করেছো।আগেই বলেছি গ্রামের মেয়ে গ্রামে পড়বে।আমাদের জেলায় ই তো কত বড় কলেজ ছিল।”
নিতুর মা বলেন,
“তোর বাবাকে কেনো বকছিস?মেয়ে ঢাকা ভার্সিটি পড়তেছে বিধায় তো উনারা আমাদের সাথে আত্মীয়তা করতে এসেছে।”
নিতুর ভাই চুপ হয়ে যান।নিতুর এবার সবার মাঝখান থেকে উঠে চলে আসে।নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে।আলনা থেকে সব জামাকাপড় নামিয়ে ট্রলিতে ঢুকায়।কালকেই ঢাকায় চলে যাবে।হাতে টিউশনি করানোর পাঁচহাজার টাকা আছে।এটা দিয়েই হয়ে যাবে।
ভোর সকালে সবাই যখন মরা ঘুমে,নিতু টিপটিপ পায়ে ট্রলি হাতে বেরিয়ে আসে বাসা থেকে।বাসাস্ট্যান্ডে এসে যাত্রা করে ঢাকার উদ্দেশ্যে।৬ ঘন্টার ভেতর চলে আসে সেই পুরনো শহরে।ভার্সিটি যেহেতু বন্ধ সবাই নিজ নিজ বাড়িতে,তাই হল বন্ধ।নিতু প্রিয়াদের বাসায় চলে আসে।প্রিয়াকে দেখামাত্রই মেয়েটা কেঁদে উঠে।প্রিয়া সান্ত্বনা দেয়।প্রিয়া নিতুর ব্যাপারে সবই জানে।গত রাতেই কথা বলেছে নিতু প্রিয়ার সাথে এই ব্যাপারে।প্রিয়ার মাও নিতুকে সান্ত্বনা দেয় সাথে।পরে নিতু নিজেকে শান্ত করে ফ্রেশ হয়ে প্রিয়ার রুমে আসে।তারপর এতক্ষণে বন্ধ রাখা ফোন এবার ওপেন করে।ওপেন করে দেখে মেসেজ আর মেসেজ।মেসেজগুলো তোহার।
প্রথম মেসেজটা পড় নিতু,
“পুরো গ্রাম তোকে নিয়ে বদনাম করতেছো নিতু!সবাই বলে তুই নাকি কোনো ছেলেকে নিয়ে ভেগেছিস।”
২য় মেসেজ,
“তোর বাবা আজ বার কয়েক বিষ খেতে গিয়েছে।তোর মা অনেকবার জ্ঞান হারিয়েছে।তোর ভাই নিজের গালে নিজে জুতা দিয়ে বারি মারছে।এসব দেখে গ্রামের মানুষ আরো তামাশা করা শুরু করেছে।ওই আবরাহামেরও বাবাও।নিতু আমি জানি তুই কোনো ছেলের সাথে যাস নি।প্লিজ ফিরে আয়।এসে সবার মুখ বন্ধ কর।আর তোর পরিবারকে বাঁচা।”
ফোন হাতে মেয়েটার চোখ থেকে টপটপ করে পানি বেয়ে পড়ছে।প্রিয়া দেখতেছে সব।নিতুর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে নিজে ফোনটা হাতে নিয়ে তোহার মেসেজগুলো দেখে।মেসেজগুলো দেখার পর ওরও মুখে হাত!
“নিতু!সাধারণ একটা বিষয় নিয়ে এসব কি?”
নিতু প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
রাতটা কেঁটে যায় কোনোভাবে।সকাল হলে নিতু ট্রলি হাতে নেয় সাথে।প্রিয়া কাঁদে হাত রেখে,
“চলে যাবি?”
কান্না মিশ্রিত হাসি মুখে এটে,
“উপায় নেই।”
মেইন রোডে এসে বাসের জন্যে দাঁড়াতেই একটা কার এসে নিতুর সামনে ব্রেক কষে।গ্লাস ভেদ করে ওপাশ থেকে,
“তুমি?এত সকালে কোথায় যাচ্ছো?”
অবচেতন নিতু রিহানের কথায় কোনো উত্তর করতে পারলো না।চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো।রিহান কেমনজানি হাসির মতন ভঙ্গিমা করলো। হাসি থামিয়ে এবার বলে,
“গাড়িতে উঠে বসো।গ্রামের বাড়িতে যাবে তাই না?”
নিতুর এখানে অবাক হওয়ার কথা ছিল-সে গ্রামের বাড়িতে যাবে ইনি জানেন কীভাবে?কিন্তু নিতুর মাঝে তেমন ভাবান্তর হলো না।রিহান এবারো হাসলো।তারপর নিজেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।এসে নিতুর হাতটা ধরলো।নিতু এবার পিলে চমকে উঠলো।হালকা চোখে রিহানের দিকে তাকালো।তারপর নিজের হাতের দিকে।রিহান নিতুকে ভাবাবেগ ইগনোর করো ওর হাত টেনে নিয়ে গাড়ির অপর সিটে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো।গাড়ি চলতে থাকলো উড়াধুরা।প্রায় ১ ঘন্টার মতন এভাবে চলন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে যায়।নিতু কুঁচকানো চোখে রিহানের দিকে তাকায়।চোখে তবে প্রশ্নের করার ভাবটা-গাড়ি থামালেন যে?
রিহান নিতুর ভাসা চোখের ভাষা বুঝলো।সাবলীলভাবে একটা প্রশ্ন করে বসলো রিহান,
“ভালোবাসো আমাকে,তাই না?”
চলবে…..
(এভাবে ছোট্ট ছোট্ট করে প্রতিদিন পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করবো।আপনাদের সমস্যা হবে?)