#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব-১৪
পরদিন নিতু নিজে ফোন আনতে গেলো না।প্রিয়া যেয়ে ফোন এনেছিলো।প্রিয়া নিতুর থেকে ফোন নিয়ে সামনে হাঁটা ধরলো।ক্লাস শেষ হয়েছে নিতুর কিছুক্ষণআগে।এখন টিউশন করাতে যাবে সে।প্রিয়ার শেষ হয়নি এখনো।ওর সিডিউলে দুপুরে আরে একটা ক্লাস আছে।প্রিয়া ওর ক্লাসের পথের দিকে পা বাড়ায়। হঠাৎ চলা পথে নিতুর পা থেমে যায়।প্রিয়াকে পেছন থেকে ডেকে দ্রুতপায়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে যায়।গিয়ে বলে,
” আচ্ছা প্রিয়া?রিহান ভাই আমার কথা কিছু বললো?”
প্রিয়ার কেমন বিরক্তি চলে এলো।বললো,
” ভার্সিটিতে টপ স্টুডেন্ট ছিল বলে কি ভাব টাই না দেখালো!এখনতো ম্যাজিট্রেট হয়ে ভাবটা আরো সপ্তকাশ ছুঁইবে তাই না?বাদ দে উনার কথা!ঠিক আছে?”
নিতু অবুঝ বালিকাদের মুখশ্রীর মতন দু’পাশে মাথা নাড়ালো।তারপর আবার প্রিয়ার থেকে মুখ ফিরে এলো।গোল চক্কর থেকে বেরিয়ে ছাত্রীর বাসায় চললো।ছাত্রী নিতুকে দরজা খুলে দিলো।সুমাহকে(ছাত্রী) পড়ানো শেষ হলে আবার আরেকটা ছাত্রী আসে নিলি!ওকে পড়াতে গেলো।আপনারা বোধহয় আরেকটা বিষয়ও জানেননা। নিতু অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ থাকাকালীন থেকে টিউশন করানো শুরু করেছে।চোখের সামনেই তো দেখছে বাবা কত কষ্ট করছে।চাইলেও কি সে পারে না দুই-একটা টিউশন করিয়ে বাসা থেকে টাকা আমাটা বন্ধ করতে?হ্যাঁ,তা ই করেছে নিতু।এখন বাসা থেকে একটা কড়িও নেয় না।সে এখানেই প্রতিমাসে টিউশন করিয়ে ৭ হাজার টাকা ইনকাম করে।তার থেকে অনেকগুলো টাকা আবার বাচেও।সেগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় নিতু।নিলিকে আজ তাড়াতাড়ি পড়িয়ে চলে যাবে ভেবেছিলো।কিন্তু নিলির মা এসে হঠাৎ নিতুকে বলে,
“নিতু মা?আজ যেও না।আজ একটু থেকে যাও।আমাদের বাসায় ছোট্টখাটো আজ একটা আয়োজন করা হয়েছে ফুহাদের আকিকা উপলক্ষ ।সন্ধের পর খাওয়াদাওয়া শুরু হবে!ফুহাদের ফুপী,আন্টি,মামিরা এখনো আসে নি।তুমি থেকো যাও আজ।সন্ধের পর যদি দেরী হয়ে যায় তাহলে আমি নিজে যেয়ে তোমাকে দিয়ে আসবো।তারপরও তুমি আজ থাকো,মা!”
এই একজন ছাত্রীর মাকে নিতুর একটু বেশি ভালো লাগে।খুবই মায়ের মতন মমতা করে।নিলিকে আজ ৭ মাস পড়াচ্ছে।এতটুকু অব্জার্ভেশন ইনার থেকে পায়নি।খুবই ভালো ইনি।আর ফুহাদ হলো নিলির আপন ছোট্ট ভাই।বয়স ৪ বছর।নিতু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে উনাকে উত্তর করলো,
“আসলে মা…!”
বলতে পারলো না।উনি বলে উঠলেন,
“আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না।তুমি যদি আজ আমার কথা না রাখো,আমি সত্যিই রাগ করবো।এমনিতেও অন্যান্য দিনে তোমাকে কতবার বলেছি একটু খাওয়াদাওয়া করতে আমাদের সাথে কখনো আবদার রাখো নি।আজ না রাখলেও মানবো না!”
নিতু এবার হেসে দিলো।তারপর বললো,
“আচ্ছা,আন্টি থাকবো। সমস্যা নাই ”
নিলিদের বাসা থেকে বেরুতে নিতুর ৭ টা বেঁজে যায়।আসার সময় নিলির মা নিতুকে এগিয়ে দিতে আসে।কিন্তু নিতু বাঁধ সাধে।বলে,
“প্রিয়া নাকি নিউমার্কেটে এসেছে এখন।ওর সাথে চলে যেতে পারবো,আন্টি।”
বলে কেঁটে পড়লো।আসলে সে চাইলো না বয়সী কাউকে সমস্যায় ফেলতে!তাই প্রিয়ার কথা বলে বাহানা দিয়েছে।নিতু পথে নেমে চারপাশ তাকালো ।রাতের শহরটা সত্যিই খুব দারুণ। নিয়ন বাতির আলোতে মানুষ টপটপ করে হেঁটে যাচ্ছে।সবার মুখশ্রীতে একধরনের সজীবতা ভাব।এই আঁধার শহরে হাঁটতে পেরে তারা বোধহয় খুব খুশি।নিতুর অবাধ্য মনেও সেই ইচ্ছেটা উঁকি দিলো। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আজ একটু ঘুরবে তাও একা একা।এমনিতেই মনটা কেনজানি খুব একটা ভালো নেই।তাছাড়া রাতও তেমন হয়নি।সবে সাতটা!নিতু রাস্তার গলি ধরে হাঁটা ধরলো।নীলক্ষেত পার হয়ে নিউমার্কেটের কাছাকাছি চলে এলো।নিউমার্কেট যেহেতু এসেছে কিছু কেনা যায় কিনা?ভাইয়ার ফুটফুটে মেয়েটার জন্যে কিছু কেনা যায়।সে এমনিতে ভাইঝি দামী তেমন কিছু দিতে পারে নি।আজ ব্যাগে ২ হাজারের মতন আছে তা দিয়ে ভালো কিছু কেনা যাবে।নিতু পুরো নিউমার্কেট ঘুরে ভাইঝির জন্যে একটা গোল জামা টকিনলো,আর একজোড়া স্যু।নিতু সেগুলো নিয়ে যখন নিউমার্কেট থেকে বেরুলো দেখলো বাইরে মানুষদের চলাচল কমে গেছে!নিতুর ভেতরটা ধক করে উঠলো।শপিং ব্যাগটা বমাহাতে নিয়ে তরতর করে পার্সোনাল ব্যাগটা খুলে ফোন বের করলো!সময় দশটা!প্রিয়াও অনেকবার কল করেছে এরমাঝে।ফোন সাইলেন্টে থাকার কারণে শুনতে পায়নি কিছু!নিতুর ভেতরটা কাঁপতে শুরু করে দিলো!হলে তো কর্তৃপক্ষ এতরাতে ঢুকতে দেবে না। তছাড়া,গেইট তো বন্ধই করে দিয়েছে আরো আগে!কি করা যায় এখন!প্রিয়াকে কল করে দেখা যাক!প্রিয়াকে কল করলো।প্রিয়া সাথে সাথল কল রিসিভ করলো।
“কোথায় তুই নিতু?”
নিতুর গলার স্বর যেনো ভেঙ্গে গেলো।মোটামুটি কিছুটা জোরে শব্দ করে বলে উঠলো,
“আমি ভাইঝির জন্যে নিউমার্কেট থেকে কিছু কিনেছিলাম।কিন্তু কেনার সময় টা যে দীর্ঘ হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি।এখন আমাকে বাঁচা!আমি হলে ঢুকবো কি করে?”
বলতে বলতে নিতুর গলা প্রায় ভেঙ্গে এলো!প্রিয়া আশ্বস্ত করলো । বললো,
“টেনশন নিস না।আমি দারোয়ানের সাথে কথা বলে দেখি।তুই রওনা করে দে!সাবধানে আয়!রিক্সা নিয়ে চলে আয়!”
নিতু ফোন রাখতে হঠাৎ পাশে দুইটা চিকনামতন ছেলে নজরে এলো।ওরা বারবার নিতুর দিকে তাকাচ্ছে।নিতুর মনে ভয়টা আরো ঝেঁকে বসলো।সে নিচে নেমে এলো তরহর।আর রিক্সার সন্ধানে চারপাে তাকাতে থাকলো। কিন্তু চোখে কোনো রিক্সা পড়লো না!নিতুর ভেতর আরো অস্থির এবং ভয় বেড়ে গেলো।ভাবতে থাকলো, আরো দেরী যদি হয়ে যায় তখনতো রিক্সা না শুধু,আর একটা মানুষকে দেখতে পাওয়া যাবে না!রিক্সার আশা করে লাভ নেই।নিতু হাঁটা ধরলো।সামনে যতই এগুচ্ছে দেখছে মানুষের শূন্যতা ততই বাড়ছে!নিতু “আল্লাহ আল্লাহ” বলতে থাকলো মুখে।অনেকটা দূর হেঁটে আসতে হঠাৎ প্রিয়ার কল বেঁজে উঠলো।নিতু বললো,
“দারোয়ান কি বললো?”
প্রিয়ার ভাঙ্গা গলা,
“নিতু?রাত দশটার পর কাউকে এলাউ না।কর্তৃপক্ষের আদেশ সে অমান্য করতে পারবে না।আমার মাথায় আসতেছে না কি করবি এখন?এতরাতে?ওহ আল্লাহ কেন মার্কেট করতে গেলি!কেনো!আমার মাথা শূন্য হয়ে গেছে!কেনো গেলি?”
মনের অজান্তে নিতুর দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি বেয়ে পড়লো।প্রিয়া বললো,
“শোন?টেনশন করিস না।আমি দেখি কি করা যায়!টেনশন নিস না।একদম টেনশন নিস না!”
নিতুর মন মানলো না!চোখের পানি অনবরত ফেলতেই থাকলো।ঠিক সেসময় কারো গাড়ির হর্ণ বাজলো।নিতু তাকালো না সেদিকে।সেই হর্ণ বাজা গাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে তার শব্দও কানে এলো।
“এতরাতে তুমি এখানে!”
নিতু ঝাপসা চোখে ফের সামনে ফিরলো!স্পষ্ট দেখলো না মুখটা!তবে কন্ঠটা পরিচত লাগলো খুব।সেই পরিচিত কন্ঠের মুখটা আবার বললো,
“কি হলো কিছু বলছো না যে?”
নিতু চোখের পানি মুছলো!সেই মুখটার দিকে তাকালো।রিহান দাঁড়িয়ে আছে!নিতু অবাক হলো না।কেঁপেও উঠলো না।বা কোনোরকম ভঙ্গিমাও করলো না!আগের মতনই নির্জীব।রিহান নিতুর কোনো উত্তর না পেয়ে তার বোন স্নেহাকে কল করলো।হয়তো,সে প্রিয়ার থেকে ব্যাপারটা জেনে আবার ভাইকে জানাবে নিতু এখানে একা কেনো!তাই করলো স্নেহা।দুই মিনিটের ভেতর ভাইকে জানালো সব!আবার প্রিয়াও স্নেহার থেকে রিহানের নাম্বার নিয়ে রিহানকে কল করলো।করে আকুতি মিনতি ওর,
“ভাইয়া?মেয়েটা ওর বেখেয়ালিপনার জন্যে আজ এই পরিস্থিততে পড়েছে!প্লিজ ভাইয়া ওকে সেইভ করুন।প্লিজ!”
প্রিয়ার বলার মাঝেই রিহান কল কেঁটে দিলো!তারপর ফোনটা পকেটে ভরে নিতুর দিকে এবার তাকালো।বললো,
“গাড়িতে উঠো!”
নিতু এবারো কিছু বললো না।রিহান আবার বললো,
“গাড়িতে উঠো!”
নিতু এবার খিঁচে উত্তর করে উঠলো,
” আমি কোথাও যাবো না…!চলে যান আপনি!”
রিহান নিতুর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো!নিতুর কেনজানি বিরক্ত লাগছে এখন!একে মন চায় চোখের সামনে থেকে এক ধপাসে সরিয়ে দিতে!আজাইরা পাবলিক সব!এমন সময় একটা উদ্ভট ঘটনা ঘটে গেলো।নিতুর ভাবনার মাঝেই নিতুর নিজেকে ওজনশূন্যতা মনে হলো।সে বিষয়টা প্রথমে বুঝে উঠতে পারে নি।আর যেই চোখ সোঁজা করে সামনে তাকালো।দেখলো রিহান ওকে কোলে তুলে গাড়ির সিটে বসিয়েও দিয়েছে এরমাঝে।আশপাশে তেমন মানুষও ছিলো না।নাহলে তারাও বিষয়টি দেখতো।নিতুর কেনজানি চোখমুখ খিঁচে এলো!লজ্জায় ভস্ম হয়ে যাচ্ছে! কি হয়ে গেলো এটা!কি হলো!রিহান পাশের সিটে এসে বসেছে। সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে,
“এরপর এরকম আর কখনোও করবে না!মনে থাকে যেনো!”
চলবে….