#ভাগ্যবতী
#লাবিবা_তানহা_এলিজা
#পর্ব_১০
১৪.
আগের রাতে ঘুম না হলেও আজ রাতে ভালো ঘুম হয়েছে পূরবীর। যদিও বারোটার দিকে বিছানায় গিয়েছে নূরার জন্য। রাতে ডিনার করে আরো কিছু সময় কাটিয়ে তারপর বাড়ি ফিরেছে। এজন্য ঘুমুতে ঘুমুতে দেড়ি হয়ে গেছে পূরবীর। মফস্বলে রাত বারোটা অর্থাৎ মধ্যরাত আর শহরে গড়িয়ে যাওয়া সন্ধ্যা। ঢাকা শহরে এগারটার পর মানুষের জীবন শুরু হয়। অনভ্যস্ত পূরবী তাই ছয়টার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। পূরবীর হাতে কফি মগ তুলে দেওয়া হয়। সাথে সাথেই পূরবী না করে দেয়। তার কি একটাই কাজ মি. ডক্টরের রুমে সকাল সকাল কফি সার্ভ করা? মমতার পা ধরে বলে, বড়মা আমাকে অন্য কোন কাজ দিন আমি ঠিক করবো। কিন্তু কফি দেওয়াটা খালা দিক। উনি আমাকে দেখলেই রেগে যায়। আমাকে সহ্য ই করতে পারে না। আমি কি করবো?
জমিলা তাড়াহুড়ো করে বলে, ” তোমায় কোথায় মেরেছে মা? কোথায় ব্যথা পেয়েছো? দেখি দেখি? ”
মমতাও বলে, ” দেখি কোথায় মেরেছে তোমাকে? কি করেছো তুমি আবার যে তোমাকে মারবে? ”
” মারবে কেনো? ”
” মারবে কেনো মানে? তুমি না বললে তোমাকে সহ্য করতে পারে না? ”
” এ্যা…উনি যাকে সহ্য না করতে পারেন তাকে ধরে মারেন!! ”
” ফুটবল ও খেলেন। ”
” এইটা আবার কেমন ছেলে ? ”
” এইটা আমার ছেলে । সাদ তোমাকে মারেনি তাইতো? তার মানে তুমাকে সাদের সহ্য হয়। এখন যাও কফি নিয়ে যাও। ”
” আমাকে অন্য কোন কাজ দিন। ”
” ওকে। সাদ যতক্ষন বাসায় থাকবে ততোক্ষন ওর যাবতীয় কাজ তুমি করবে।”
” নাআআআআআ। ”
” তাহলে কফি দিয়ে আসো। ”
” উনি খালি গায়ে থাকেন বড়মা। ” শেষমেষ কথাটা বলেই দেয় পূরবী। কিন্তু মমতার জবাবটা এমন আসে,
” ছেলে মানুষ খালি গায়ে থাকলেই কি আর থাকলেই কি? তাতে তোমার কেনো সমস্যা হবে? ” পূরবী আহত চোখে তাকিয়ে থাকে। উঠে মগটা নিয়ে সিড়ির দিকে চলে যায়। জমিলা বলে, ” বড় মেডাম মেয়েটা ভয় পায়। ছোট সাহেবের সামনে না গেলেই কি নয়? ”
” পূরবীকে সবার সাথে এডজাস্ট করে নিতে হবে। এতোদিন আমাকে একা একা বের হতে হয়েছে বাড়ি ফাকা জন্য। এবার থেকে তোমাকে সাথে নিয়ে বের হতে পারবো। পূরবী বাসায় থাকবে। সাদের জন্য কোন টেনশন ই থাকবে না আমার। তার খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে সবটাই দেখতে পারবে। এর জন্য পূরবীকে ফ্রি হতে হবে। সাদের সামনে না গেলে কিভাবে সম্ভব? ”
” কিন্তু.. ”
” জমিলা আমার বয়স তো কম হলো না। দু দুটো বড় বড় সন্তানের মা আমি। আমার মানুষ চিনতে ভুল হয়না। একদিন তুমিও পূরবীর মতোই বাইরের ছিলে। আজ তুমি আমার ভরসার। ”
জমিলা মাথা নাড়ায়। মুখের কোনে চিলতে হাসি। এই মানুষটার এই উদারতা আর মনোভাবের জন্যই মানুষ তাকে সম্মান বিলায়। এক উজ্জল নক্ষত্র স্বরুপ আলো বিলিয়ে চলছে। জমিলা যদি পারতো মাথায় করে রাখতো তাকে।
পূরবী দোয়া দরুদ পড়তে থাকে আজ যেনো সাদ কিছু না বলে আর পোশাক পড়ে থাকে। দরজা আজো খোলা।ভেতরে ঢুকেই দেখে কেউ নেই। টপাটপ মগটা রেখে যেই চলে আসতে যাবে সেই ডাক পড়ে,
” জমিলা কফি বেলকনি তে দিয়ে যাও। ”
পূরবী অবাক হয়ে যায়। ঘরে কেউ ঢুকলে উনি বুঝে ফেলেন?কি করে? সি সি ক্যামেরা লাগানো নাতো? উপরে নিচে খুঁজে কোন ক্যামেরাই পায়না। তবে নিজের ছায়া দেখতে পায়। ও এই ব্যপার! ! কিন্তু সে তো জমিলা নয়। ভয়ে ভয়ে বেলকনির দরজার দিকে যায়। দরজা ভেজানো দেখে ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। বেশ বড় সড় বেলকনি টা। সামনেই কয়েকটা প্লান্ট। বা দিকে তাকাতেই যেনো চোখ খুলে হাতে পড়ে যাবে। উদাম গায়ে একটা টাওজার পড়ে সাদ অনবরত পুশ আপ দিচ্ছে। সামনের চুলগুলো কপালের উপর পড়ে আছে। মাসল পেশি বার বার ফুলে ফুলে উঠছে। বিন্দু বিন্দু ঘামে সূর্যের হালকা আলোতে চিক চিক পুরো পিঠ। আল্প নাভরুজ!!! আল্প নাভরুজ ঠিক এইভাবে পুশ-আপ দেয়। তার পুরো বডি ঘামে চিক চিক করে। ভিডিও টা টেনে কতবার যে হা করে দেখেছে পূরবী সে নিজেই কাউন্ট করে উঠতে পারবে না। তাকে দেখে কতগুলো মেয়ে যখন দু হাত মুখে নিয়ে ওয়াও বলে একজন জ্ঞান হারিয়ে আল্পের হাতের উপর পড়ে যায় তখন সেই মেয়ের জায়গায় নিজেকে যে কতশত বার কল্পনা করেছে তার হিসাব নেই। সেই মেয়ের সাথে চুপি চুপি সুন্দরী প্রতিযোগিতায়ো নেমেছিলো । পূরবীই ফাস্ট হয়েছে। পূরবীর কাছে সেই মেয়ে যেনো কিছুই না। পূরবীর এখন সত্যি সত্যি জ্ঞান হারাতে ইচ্ছা করছে।
সাদ মুখ তুলে দেখে পূরবী তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। চোখের পলক পড়ছে না।লাফ দিয়ে উঠে পুরবীর সামনে এসে দাঁড়ায়। পূরবীর নড়চড় নেই। সে তো এখনো নাভরুজের কাছেই আছে। সাদ মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই ধ্যান কাটে।
” কি কি কি কি.আমি আমি কফি দিতে এসেছিলাম।”
” ওহ রিয়েলী? লুক। ঐ যে দেখছো বাড়িগুলো দেখো কতগুলি মেয়ে কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তুমিও ওদের মতোই তাই না? ”
পূরবী রেলিং ভেদ করে একটু দূরে বিল্ডিংগুলোতে চার পাঁচটা মেয়েকে দেখতে পায় মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পূরবী অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে বলে,
” হায় আল্লাহ এরা তো আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে। মি. ডাক্তার আপনার এতোগুলো গার্লফ্রেন্ড।”
” সেট আপ। ” ধমক খেয়ে মগটা পড়তে পড়তে পড়ে না তার আগেই সাদ ধরে নেয়।
” তোমার হাতের কিছু খাবো না আমি বলিনি তোমাকে? নিশ্চয় মুখ লাগিয়ে এনেছো। ”
” না। ”
” তোমাকে যেনো আর আমি আমার রুমে না দেখি। গেট লস্ট। ”
সাদ পুরো মগ সেননিটাইজ করে। পূরবী বেশ অপমান বোধ করে এমন ব্যবহারে। কষ্ট পেয়ে যেতে নিবে দরজায় সাদের সাথে ধাক্কা লা
লেগে যায়। তাড়াহুড়ো করে পিছিয়ে যায় পূরবী। সাদ এগিয়ে এসে বলে,
” দেখে শখ মেটেনি তাইনা? এখন গা ঘেঁষতেও চাইছো। ডেইলি বডি দেখার জন্যই তো আসো বজ্জাত মেয়ে। ”
পূরবী আর এক মূহুর্ত দাঁড়ায় না। দৌড়ে নিচে চলে আসে কাঁদতে কাঁদতে। বিছানায় বসে বেডশীট জড়ো করে কাঁদতে থাকে। মমতার সাথে অভিমান করে মনে মনে। আশ্রয় দিয়েছে খেতে দিচ্ছে তাই এরকম নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে ছেলেকে দিয়ে। মজা নিচ্ছে। মজার মানুষ তো আমি। সার্কাস। সত্যিই তো দেখে শখ মিটেনি। ওরকম হিরো আল্পের মতো কে হতে বলেছিলো শুনি? অভিশাপ দিলাম আপনাকে মি. ডাক্তার। অতি শীঘ্রই আপনি হিরো আল্প থেকে হিরো আলমে ট্রান্সফার হবেন। আমিন।
মান অভিমান অভিশাপের পালা শেষ হতেই মমতার ডাক পড়ে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নেয় পূরবী। ডাইনিং এ আসতেই দেখে সাদ এবং মমতা কি বিষয় নিয়ে যেনো কথা বলছে। পূরবী যেতেই পূরবীর দিকে তাকায়। পূরবী কাপা হাতে চেয়ার টেনে বসে। জমিলা পূরবীর প্লেটে ব্রেড দেয়। জমিলাকে ডাইনিং এ বসা দেখে মুহুর্তেই চোখ ছল ছল করে উঠে পূরবীর। মানুষ এতো ভালো কি করে হয়? কাজের লোক আর আশ্রিতাকে নিজেদের সাথে বসিয়ে খাচ্ছে। এদের মাঝে কি একটুও অহংকার নেই? এতো মায়া কেনো দিয়েছে আল্লাহ? ভাগ্যের জোরেই মনে হয় এদের দেখা পেয়েছে পূরবী। আড়ালে চোখ মুছে জেলি মাখানো ব্রেডে কামড় বসায় পূরবী। মমতা খেয়ে উঠে যায়। পূরবীকে বলে যায় খাওয়া শেষ করে তার রুমে যাবার জন্য। জমিলা প্লেট গুলো গুছিয়ে বেসিনে নিয়ে যায়।
” মার সাথে কথা হলো। মা তোমাকে নিয়ে অনেক পসেসিভ। তুমি তাহলে এখানেই থাকছো ?”
পূরবী সাদের প্রশ্নের জবাবে উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ঘাড় ঘুরিয়ে সাদের দিকে তাকায়। টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুই আঙুল কপালে রেখে এক দৃষ্টিতে পূরবীর দিকে তাকিয়ে আছে সাদ। পূরবী এমন ভাবে তাকানোতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। মাথার উড়নাটা পরে যেতে নিতেই ধরে ফেলে। দু বার ঢুক গিলে সাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে। সাদ কপাল থেকে হাত সরিয়ে মুচকি হাসে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ” আচ্ছা থাকো তাহলে। ” ঠোঁট বাকিয়ে একগাল হাসে। পূরবীও খুশি হয়ে যায়। তৃপ্তির হাসি হাসে। সাদ পূরবীর হাসিকে অবলোকন করে একটা ছোট বক্স হাতে সিড়ির দিকে যায়।
” মি. ডাক্তার ”
পেছন থেকে পূরবীর ডাকে ফিরে তাকায়। চোখ জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞাসা করে,
” কি? ”
” নূরা আপু বড্ড উল্টা পাল্টা কথা বলে। গতকাল আমাকে আপনার রুমে পার্মানেন্ট হবার অফার দিয়েছে। যাতে উনাকে বহিঃস্থ না হতে হয়। নূরা আপুর ইমোশন আর পছন্দের গুরুত্ব দিবেন। আর বলে দিবেন যেনো এসব কথা না বলে। ”
পূরবী কথা বুঝতে একটু সময় লাগে সাদের। হো হো করে হেসে উঠে সাদ। পূরবীও হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে পকেটে এক হাত গুজে দাঁড়ায় সাদ। পূরবীকে বলে,
” বজ্জাত মেয়ে কানে তুলো দিয়ে রাখবে এর পর থেকে। ”
” হসপিটাল থেকে আমার জন্য লড়ি ভর্তি করে পাঠিয়ে দিবেন। ”
” ওর মাথায় সব উল্টা পাল্টা চিন্তা ভাবনা। ”
” ওতোটাও না। ”
সাদ মাথা নাড়িয়ে প্রথম সিঁড়িতে পা রাখে। কি মনে করে আবার ঘুরে আসে। পূরবীর সামনে এসে বলে,
” হাত পাতো। ”
” কেনো? ”
” আমি বলেছি তাই। ”
পূরবী হাত পাতে। সাদ মুঠো করে বক্স থেকে কয়েকটা কাঠ বাদাম পূরবীর হাতে দেয়।
” কাঠ বাদাম. .?.”
” ডেইলি চার-পাঁচটা করে খাবে। হার্ট ভালো থাকবে। ”
পূরবীকে নিয়ে মমতা দুতলার সবথেকে কর্ণারের রুমটায় আসে। দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে যায়। মমতা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে। পিছু পিছু পূরবী ও আসে। রুমের ভেতরটা দেখে একটু অবাক ই হয় পূরবী। রুমটার পুরোটাই শুভ্র সাদা । দেয়ালের পেন্টিং থেকে শুরু করে ফ্লোর, পর্দা, ফার্ণিচার এমনকি বেডশিট কম্বল পর্যন্ত শুভ্র সাদা। পূরবী যেনো সাদা মেঘের ভেলায় ভাসছে। বুক ভরে নিশ্বাস নেয়। মমতা বিছানায় বসে এক ধ্যান এ কম্বলে পেঁচিয়ে একটুখানি মাথা বের করে রাখা রুকুর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করে বিভোরে ঘুমুচ্ছে সে। মুচকি হেসে পরম মমতার সাথে মাথায় হাত রাখে মমতা। মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রুকু একবার নড়ে উঠে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এতোক্ষনে কম্বল সরে গিয়ে পুরো মুখটা বেরিয়ে এসেছে তার। পূরবী গভীর চোখে দেখতে থাকে। ফর্সা ধবধবে গায়ের রং। হালকা লালচে চুল। কালো কুচকুচে চিকন ভ্রু যুগল। সরু নাকের উপর একটা লাল তিল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ভরাট ঠোঁট। লম্বাটে চোয়াল। খুব স্নিগ্ধ একটা চেহারা শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করে। ইনি কে? আগে তো দেখিনি? বড়মা বলেছিলো তার বড় মেয়ে সিডনি থাকে। তাহলে ইনি কে? পূরবীর মুখের প্রশ্নবোধক অবয়ব লক্ষ্য করে মৃদু হাসে মমতা। শিয়র থেকে সরে বসে বলে,
এইযে দেখছো কি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে.. ও হচ্ছে আমার ছোট ননদ রুকু। একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরী করছে তিনবছর থেকে। চারবছর আগে তার স্বামী বারি নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পরে আমরা জানতে পারি একটা কার এক্সিডেন্ট এ বারি মারা গিয়েছে। গন করবস্থানে তার কবরের উপর আরো চারটি কবর দেওয়া হয়েছে। সেই থেকে একটা ট্রমাতে চলে যায় রুকু। ওকে দেশে নিয়ে আসা হয় ট্রমার থেকে বের করতে। অনেকটা সুস্থও হয়। তারপর একটা কোম্পানিতে জয়েন করে আমাদের কথায়। তার লাইফ বলতে পুরোটাই সাদাকালো। অনেক সম্বন্ধ আসে কিন্তু সে নিজেকে বিধবা রুপেই দেখতে ভালোবাসে। বারিকে সে আজো ভুলে নি। তার সাদা কালো জীবনে আজো কেউ রং ছিটাতে পারেনি। তার একমাত্র সঙ্গী তার বই। নিজেকে একরোখা করে রেখেছে। তোমাকে রাখার অন্যতম কারন হচ্ছে রুকুকে একজন জীবন্ত সঙ্গী দেওয়া। ওকে মানুষের মাঝে ফিরিয়ে আনা। এর আগেও চেষ্টা করেছি। তবে কেউ দুই দিনের বেশী থাকে নি। ওরাতো চাকরি করতে এসেছিলো তুমি তো আর তা নয়। এখানেই থাকবে। মাঝে মাঝে রুকুকে সময় দিবে। ওকে হাসাবে। ওর সাথে গল্প করবে। ওকে সঙ্গ দিবে। একাকিত্ব ঘুচাবে। এই বয়সে একাকিত্ব ঘুচাতে পারে কোন এক মনপুরুষ। তা তো রুকু চায়না। তাই তোমাকে বলছি ওকে সঙ্গ দিতে। ”
” বাবু হয়নি? ”
” না বাবু হয়নি। ”
পূরবির খুব খারাপ লাগে। প্রত্যেকটা মানুষ একটা না একটা কষ্ট দিনের পর দিন বয়ে বেড়ায়। আচ্ছা যারা সুখী তারা কি কোন কষ্ট বইয়ে বেড়ায়নি কখনো? গোপনে গোপনে…
মমতা হালকা ভাবে কয়েকবার রুকুকে ডাকে। রুকু চোখ মেলে মমতাকে দেখে উঠে বসে।
ভাবী..
রাতে কখন ফিরেছো?
সময় দেখা হয়নি।
তোমার সাথে পরিচয় করাতে এলাম। ও পূরবী। এখন থেকে এবাড়িতেই থাকবে।
রুকু পূরবীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
কেমন আছো? পূরবীকে জিজ্ঞাসা করে।
আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
” ভালো। আমি শুনেছি তোমার কথা জমিলার থেকে । সেদিন বেলকনি থেকে দেখেছিও। বউ সেজে সাদের সাথে এসেছিলে। সুন্দর লাগছিলো দুজনকে। আমি ভেবেছিলাম অন্যকিছু। কিছু মনে করো না। ”
পূরবী লজ্জায় মাথা নিচু করে। সবাই এটাই ভেবেছিলো। এই ভাবনাটার জন্যই তো আজ এবাড়িতে সে। রুকু আবার বলে,
” যেসময় তুমি এবাড়িতে এসেছো তার একটু পরেই আমাকে অফিসের কাছে বাইরে যেতে হয়েছিলো। কাল রাতে ব্যাক করেছি তাই তোমাকে আর দেখা হয়ে উঠে নি। তোমারা বসো। ”
মমতা বলে, পূরবী এখন আমাকে গোছানোর কাজে হেল্প করবে। তুমি নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নাও।
চলবে,