বাসন্তী
পর্ব-২৩
লিমু

—– “ভালোবাসায় আজ হারাবো,
—– ” ডুববো যে ভালোবাসায়।
—– ” ভালোবাসায় আমি মরবো,
—– ” বাঁচবো যে ভালোবাসায়।

—– “চুপি চুপি এলে যে তুমি,
—– ” করলে হরণ মন,
—– ” তাইতো এ প্রণয়ে উন্মাদ আমি
—– ” বুকের বা-পাশ করে উচাটন!

—– ” খুব গোপনে,খুব যতনে,
—– ” ছুঁড়লে প্রেমের তীর
—– “তুমি বিহনে,মন জমিনে,
—– ” পাইনা যে আবীঢ়।

—– ” মনটা আজ অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে আছে। অনেক দিন পর খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রণয়। প্রকৃতির ফুরফুরে বাতাসের সাথে, মনটাও ফুরফুরে লাগছে। প্রকৃতির সাথে মনের আসলেই অদ্ভুত যোগসাজশ আছে। অথবা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটা সুন্দর মন আবশ্যক।

—– ” আরো একটা বিশেষ কারণে মন এতো উৎফুল্ল,কারনটা হলো তার বাসন্তী।
প্রণয় নিজের সবটা দিয়ে ওকে আগলে রাখতে চাইছে। চাইছে ও প্রণয়ের ভালোবাসায় জড়িয়ে সব কষ্ট ভুলে যাক,ভালোবাসার ভুবনে নিজেকে উজাড় করে দিক। যেন আর কোন দুঃখ ওকে ছুঁতে না পারে। যেন বাকীটা জীবন শুধু প্রণয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হতে পারে। প্রণয়কে তার ভালোবাসায় সিক্ত করতে পারে। এরচেয়ে বেশি আর কি চাই ছোট্র জীবনে?

—–” ভালোবাসার পাখিরা যেন গুনগুন করে সুর তুলছে মনের গহীনে। বাতাস যেন কানে কানে ফিসফিসিয়ে ভালোবাসার কথাই বলছে।
বুকের ভেতর ভালোবাসার লাল নীল প্রজাপ্রতিরা ছুটোছুটি করছে। যেন তারা আজ বাঁধনহারা সুখে ভেসে বেড়াচ্ছে। সত্যিই কি ভালোবাসা এ বুকে ধরা দিবে প্রজাপ্রতি হয়ে,নাকি উড়াল দিবে?

প্রণয় তা জানেনা,সে জানতে চায়ও না। সে শুধু জানে, ভালোবাসলে ভালোবাসার ডোরে বেঁধে রাখতে জানতে হয় প্রিয়জনকে। নিজের ভালোবাসা দিয়ে যদি প্রিয়জনের মনের দুর্বলতাই না কাটানো যায়, তবে সেই ভালোবাসার জোর কোথায়!

প্রণয় এতোটুকু বুঝে গেছে পুষ্প ওর মায়াজালে বাঁধা পড়ে গেছে, কিন্তুু সেটা সে ওকে বুঝতে দিতে চায়ছেনা। নিজেকে শুধু আড়াল করতে চায়ছে,কিন্তুু প্রণয় যে সেটা কিছুতেই হতে দিবেনা। আটাশটা বসন্তে কেউ মনে রং মেখে দিতে পারে নি,কখনো ভালোবাসার প্রজাপ্রতিরা মনে গুনগুন করেনি,আসেনি কেউ মনের ঘরটা দখল করতে। তাই শূন্য হৃদয়ে যে ভালোবাসা তীল তীল করে গড়ে তুলেছে,সেই ভালোবাসা যে শুধু তার বাসন্তীর জন্য।
এই হৃদয়ের সবটা জুরে শুধুই যে আমার মায়াচন্ডী।

—–“হৃদগহীনে পুষছি তোমায়
—–“হৃদয়ের টানে,
—–“হৃদমাঝারে রাখবো তোমায়,
—–“অন্তর তা জানে।

—–“প্রথম প্রেমের প্রজাপ্রতি তুমি
—–“রং দিয়ে রাঙালে হৃদয়,
—–“সেই তোমাকে রাঙাতে রঙে
—–“হোক ভালোবাসার শুভ পরিণয়।

—–” আমার ভালোবাসার বাসন্তী,এটা জোরে বলে দু’হাত দুইদিকে প্রসারিত করলো প্রণয়। পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লেগে ওর আওয়াজ ফিরে ফিরে আসছে। সাজেক ভ্যালীতে আছে ওরা এইমুহুর্তে। ওরা চারজন। পুষ্প,কলি, প্রিয়ম আর প্রণয়। পুষ্পকে রাজি করানোটা প্রণয়ের জন্য এভারেস্ট জয় করার সমান ছিল। অবশ্য রাজি করিয়েছে কলি আর প্রিয়ম। দুজনই তো নাছোড়বান্দা, একবার যেটা বলবে সেটা করে ছাড়বে। পুষ্প একরকম না পেরে ওদের কথা মানতে বাধ্য হয়েছে। এরকম পাগলী বোন থাকলে রাজি না হয়ে উপায় আছে। আর তার সাথে প্রিয়ম তো আছেই। সে তো পুষ্পকে বন্ধুই বানিয়ে নিয়েছে এতোদিনে। হ্যা পুষ্প এখন অনেকটা স্বাভাবিক,তবে বাইরে বের হতে চায়না সহজে। তাই ট্যুর এর জন্য রাজি করানোটা যুদ্ধ জয় করার চেয়ে কোন অংশে কম ছিলনা। ঢাকা থেকে ওরা এসে পৌঁছেছে বিকাল বেলা। সবাই রেস্ট নিচ্ছে। প্রণয় একা একটু বাইরে এসে পাহাড়ের সাথে,মেঘের সাথে কথা বলছিলো। যেন ওরা প্রণয়ের সব দুঃখ বুঝতে পারবে।

—- “হ্যায় ফুলকলি,কি দেখো?

—-” প্রিয়মের মুখে ফুলকলি ডাকটা শুনে কলি একটুও পিছনে তাকালো না। কফির মগে চুমুক দিয়ে বারান্দা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো। দুইরুমের একটা কটেজ ভাড়া নিয়েছে ওরা। সেটার বারান্দায় এক কর্ণারে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছিল কলি। প্রিয়ম ওর একদম পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। তা দেখে কলি একটু সরে দাঁড়ালো।
এটা দেখে প্রিয়ম বললো,

আরে…আমার শরীরে কোন ছোঁয়াছে রোগ নেই যে এভাবে দূরে সরে দাঁড়াচ্ছো।

—- ” সো হোয়াট?”

—-” নাথিং এট অল। প্রিয়ম বুঝতে পারলো কলি এখন ঝগড়ার মুডে আছে, তাই ওর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি উঁকি দিল। কলির গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে মন চাইছে প্রিয়মের,কেন সেটা ও নিজেও জানেনা।
এই মেয়ের সাথে ঝগড়া করতেই মন চায় কেন জানি। কিছু মেয়েকে কাজলে মানায়,কিছু মেয়েকে টিপে,আর এই মেয়েকে মনে হয় ঝগড়াতেই মানায়। এটা ভেবে প্রিয়ম একটা দুষ্টুমি মার্কা হাসি দিল,যেটা ঠিকই কলির চোখ এড়ালো না।
কলি মনে মনে ভাবলো, সাদা গাঁধাটা এভাবে হাসছে কেন একা একা। মাথায় প্রবলেম আছে নাকি।

—-” আচ্ছা তোমার এইম ইন লাইফ কি?”

—-” প্রিয়মের হঠাৎ এমন প্রশ্নে কলি একটু অবাকই হলো। তাও স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিল ডাক্তার। এটা আমার ছোট থেকেই স্বপ্ন।

—-” প্রিয়ম মনে হয় কলির সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করার টপিক পেয়ে গেল।
তাই কলির কথার রেশ ধরেই বললো,”আচ্ছা তোমরা যারা সাইন্সে পড়ো তাদের সবার এইম ইন লাইফ সবসময় হয় ডাক্তার,নয়তো ইঞ্জিনিয়ার। সাইন্সে পড়েই তোমরা নিজেকে সেটা ভাবতে শুরু করো। আরে এতো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থাকলে বিডি কবেই ডেভেলপ কান্ট্রি হয়ে যেতো।
কথাগুলো শেষ করে প্রিয়ম স্বাভাবিকভাবেই কলির দিকে তাকাতে নিল। কিন্তুু একটু তাকাতেই মনে হলো কলির চোখমুখ দিয়ে রাগে আগুন বের হচ্ছে, পারলে এখনি প্রিয়মকে সে আগুনে ভস্ম করে দেয়। প্রিয়ম পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বললো,”আমি অবশ্য তোমাকে মিন করে বলিনি কথাগুলো। তুমিতো ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট,এতো ভালো রেজাল্ট করলে। তুমি চাইলে ডাক্তার হতেই পারো,দ্যাটস নরমাল।

—–” প্রিয়ম কথা বলা শেষ করতে পারলনা,তার আগেই মনে হলো ওর শরীরে বৃষ্টি পড়ছে। সাজেকে যখন তখন বৃষ্টি হয় এটা জানতো, তাই বলে ঘরের ভিতর বৃষ্টি আসবে কোথা থেকে। আর বৃষ্টির পানি মিষ্টি হলো কবে থেকে,প্রিয়ম ভেবে পেল না। ধীরে ধীরে চোখ খুলে বুঝতে পারলো বিষয়টা কি ঘটেছে। ফুলকলি অগ্নিকলি হয়ে কফিটা ওর নাকেমুখে ছুড়ে মেরেছে। তাই বৃষ্টি মিষ্টি লাগছিলো। প্রিয়ম নিজেকে ভালো করে দেখলো,ওর ব্র্যান্ড নিউ হোয়াইট টি-শার্ট টার চব্বিশটা বাজিয়ে দিয়েছে এই অগ্নিকলি। উফফ…এতোটা রিএক্ট করবে সেটা বুঝতে পারে নি। বিস্ময় কাটিয়ে প্রিয়ম যেই কিছু বলতে নিলো,তার আগেই কলি বলতে শুরু করলো,
সাইন্সের মর্ম আপনারা দোকানদাররা কি করে বুঝবেন? আমরা তো পড়াশুনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হই। আর আপনারা তো পড়াশুনা করেও সেই দোকানদারই হোন,যেটা মুর্খ মানুষও করতে পারে। আসছে আবার সাইন্স নিয়ে কথা বলতে।
সাইন্স হলো রাজা, বুঝছেন রাজা রাজা। আর আপনারা হলেন প্রজা।

—” তাই না। আমরা দোকানদার? তাহলে তোমরা সাইন্সের একেকটা মেন্টেল বুঝছো। তা না হলে এরকম কাজ কেউ করে, আমার সাদা টি-শার্ট টা নষ্ট করে দিলো। এ দাগ সহজে উঠবে এখন,সাইকো লাড়কি কোথাকার।

— ঐ একদম মুখ সামলে ওকে। না হলে আগে তো কফি গায়ে ফেলেছি,এখন কাপটা মাথায় ভাঙবো একেবারে।

এটা শুনে প্রিয়ম একটু ভড়কে গেল,মেয়ে বলে কি। মনে হচ্ছে বেশি পড়াশুনা করে মাথাটা গেছে পুরো। প্রিয়ম তোর ঝগড়ার শখ মিটে থাকলে ভাগ এখান থেকে,না হয় এখন মারামারি হবে মনে হচ্ছে। ভাগ প্রিয়ম ভাগ,কপালে থাকলে আরো ঝগড়া করতে পারবি। কিন্তুু যদি এখন মগ দিয়ে তোর কপালই ফাটিয়ে দেয়,তাহলে আর কপালে থাকবে কি!”

—- ” সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে এসেছে ধরায়। আজ বোধহয় পূর্ণিমা। চাঁদটা পুরো আকাশে তার জোৎস্না ছড়িয়ে দিয়েছে,এক অদ্ভুত মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করে এই জোৎস্না । জোৎস্না,শিশিরসিক্ত ঘাস আর সাথে প্রিয়জন থাকলে,আর কি চাই?
আকাশে একইসাথে তারার মেলা। আজকের আবহাওয়া,প্রকৃতি যেন যুগলদের জন্যই। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো প্রণয়ও পুষ্পর সাথে একচাদরে জড়িয়ে বসে দুজন জোৎস্না দেখতো,তারা গুনতো। কিন্তু আমরা চাইলেই যদি সব হয়ে যেত,তাহলে জীবনের প্রকৃত সুখ আমরা অনুধাবন করতে ব্যার্থ হতাম। এইযে এতো চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমরা এক হয়,এক থাকি,এজন্যই জীবন এতো সুন্দর মনে হয়। হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করে,প্রিয় মানুষটির হাতে হাত রেখে। খুব বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে পাশের মানুষটাকে,হারানোর ভয় থাকে তাই।
সত্যিকারের ভালোবাসায় যে জীবনের প্রকৃত সুখ অনুধাবন করতে শেখায়। জীবনকে রঙীন করে তোলে। খুব কম মানুষই যে সেই ভালোবাসার সন্ধান পায়। কেউ কেউ পেয়েও হারায়,অথবা কেউ পাওয়ার চেষ্টাই করেনা। জানতেই চাই না পাশের মানুষটার ব্যাপারে। এভাবেই কেটে যায় জীবন।

—–” রাতে সবাই গোল করে বসলো বাহিরে। পুষ্প এসেই ঘুম দিয়েছিলো,মাথা খুব ধরেছিল নাকি। অবেলায় ঘুমানোর কারনে ওর চোখমুখ ফুলে আছে। তবুও কেমন জানি অদ্ভুত ভালো লাগছে ওর এই ঘুমঘুম চেহারাটা। ঘুম থেকে জাগার পর একটা মেয়েকে একটু ভিন্নরকমই লাগে। পুষ্পর গায়ে শাল জড়ানো,কালো আর লালের কম্বিনেশনের। তবে কালো রংটাই বেশি অংশ জুরে। প্রণয় একপলকে পুষ্পকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। একটুও সাজ নেই মেয়েটার মুখে। একটু কাজলও পর্যন্ত নেই চোখে। তবুও যেন ওর এই সাধারণ চেহারাটাই প্রণয়ের কাছে অনন্যসাধারণ।

—-” আসলে আমরা সবাই হয়তো সাধারণ। কিন্তুু আমরা প্রত্যেকেই ভালোবাসার মানুষের চোখে,ভালোবাসার মানুষের কাছে বরাবরই অনন্যাসাধারণ। এটাই হয়তো ভালোবাসার শক্তি। যেটা শুধু দুজন দুজনকে গভীরভাবে ভালোবাসলে,উপলদ্ধি করতে পারে। ভালোবাসা শব্দটা হয়তো মাত্র চার অক্ষরের,মুখে বলতে খুব সহজ। কিন্তুু এর গভীরতা উপলদ্ধি করতে একজীবন কেটে যায়,তবুও এর গভীরতা পরিমাপ করা যায় না। কেননা যত বেশি ভালোবাসবে,ততই এর গভীরতা বাড়বে। ভালোবাসা, এ যে অসীম এক শব্দ। একেকজনের কাছে, ভালোবাসার সংজ্ঞা একেকরকম। কিন্তুু যাই হোক,দিনশেষে সেটা ভালোবাসাই। চার অক্ষরের এই ছোট্র শব্দটা ঘিরেই জীবন।

—–” কলির ডাকে প্রণয়ের হুঁশ ফিরলো। প্রিয়মের হাত থেকে গিটারটা কেড়ে নিয়ে প্রণয়ের হাতে দিল। প্রিয়ম যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল কলির হঠাৎ এমন কাজে। কিছু বলতে চাইছিলো,কিন্তুু বিকেলের কফির মগ মাথায় ভাঙার কথাটা মনে হতেই আর কোন কথা বললো না প্রিয়ম। এই মেয়েকে বিশ্বাস নেই,দেখা গেল সত্যি সত্যিই এই কাজ করে বসবে। সাইকো গার্ল,মনে মনে এটা বললো প্রিয়ম। আর মুখে এমন ভাব করলো যেন কোন ব্যাপারই না।
কলি প্রণয়কে গিটারটা দিতে দিতে বললো,যার তার হাতে সব জিনিস শোভা পায় না। প্রিয়ম খুব বুঝতে পারলো খোঁচাটা ওকেই দেওয়া হয়েছে,তবুও হজম করলো। নিজে নিজে বললো,বাচ্চা মেয়ের সাথে কথায় কথায় তর্কে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আর কলির দিকে তাকাতেই কলি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
প্রণয় ঠিকই ওদের কাজ কারবার সব খেয়াল করছিলো,দুইটাই পাগল। এটা বলে প্রণয় একগাল হাসলো। হঠাৎ পুষ্পর দিকে তাকাতেই দেখে পুষ্প তড়িঘড়ি করে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। তারমানে পুষ্প এতোক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল।
ইসস…বুঝতে পারলে প্রণয় পুষ্পর দিকে তাকাতো না এখন। এমনিই মেয়েটা যে লাজুক,সহজে তাকাতেই চায়না। আর এখন মনে হয় আরো অসস্থি বোধ করছে,যেটা ভেবে প্রণয়ের নিজেরি খারাপ লাগছে।
ভাইয়া এই দারুণ পরিবেশে একটা রোমান্টিক গান না হলে জমছে না।
আপনার পছন্দের কোন একটা গান ধরুন না।
কলির কথা শেষ না হতেই,প্রিয়ম বললো,
বাচ্চা মেয়ে আবার রোমান্টিক গানও চিনো? তোমার মতো বয়সে তো আমি টম এন্ড জেরি দেখতাম।
প্রিয়মের কথা শুনে কলি অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো। প্রিয়ম এমন ভাব করলো যেন কিছুই বলেনি ও। পুষ্প চুপচাপ ওদের কান্ড দেখছিল। এরা দুইটাই তো সারাক্ষণ টম এন্ড জেরির মতো লেগে থাকে।

—–” প্রণয় একটা চিৎকার দিয়া দুজনকে থামিয়ে দিলো। আর বললো, একদম চুপ দুজন। এখানে ঘুরতে এসেছি আমরা ওকে,ঝগড়া করতে নয়। ঝগড়া করার জন্য বাসাবাড়ি আছে,টাকা খরচ করে এই সাজেকে এসে ঝগড়া করতে হবে না। এখানে এসে ঝগড়া করলে,সেটা ভিন্ন কিছু হয়ে যাবে না। বরং কখন কে কাকে ঝগড়া করে পাহাড়ের খাদে ফেলে দিবি, কে জানে। এটা বলে প্রণয় মৃদু হাসলো,আর ওরা দুজন চুপ। তাও একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কি যেন বললো।
হঠাৎ গিটারের টুং টাং আওয়াজে সবাই প্রণয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো। প্রণয় গিটার নিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে গান ধরলো।

পুষ্প স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রণয়ের দিকে। এই ছেলেটা কেন এতো ভালোবাসে, কি আছে পুষ্পর,কিছুই নেই। পুষ্পর চোখ টলমল করছে,আর প্রণয় গান গাইছে।

—-” তোমার নামের রোদ্দুরে,
—–“আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে,
—–” জানিনা যাবো কদ্দুরে এখনো…

—–” আমার পোড়া কপালে
—–” আর আমার সন্ধ্যে সকালে,
—–” তুমি কেন এলে জানিনা এখনো…
—–“ফন্দি আঁটে মন পালাবার,
—-” বন্দি আছে, কাছে সে তোমার…..

—-” যদি সত্যি জানতে চাও,
—-“তোমাকে চাই, তোমাকে চাই।
—-” যদি মিথ্যে মানতে চাও,
—-” তোমাকেই চাই।

গান শেষ হওয়ার আগেই পুষ্প কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়িয়ে
চলে গেল।
প্রণয় তখনও গেয়ে চলছে,

যদি সত্যি জানতে চাও,
তোমাকে চাই,তোমাকে চাই।
যদি মিথ্যে মানতে চাও,তোমাকেই চাই।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here