বাসন্তী
পর্ব-১৭
লিমু

—– ” সরি ব্রো!”

—– “তোর সরি ধুয়ে তুই বেলের শরবত খা।”
—–” আই হেট বেলের শরবত,এন্ড অলসো বেল।”

——” জানি,তাইতো এটা খেতে বললাম।

—– “আরে আমি কি জানতাম নাকি? ”
তুমি যার জন্য মজনু হয়ে গেছো সেই লায়লাই এই লায়লা।

—– ” প্রণয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
কারন আসলেই প্রিয়মকে দোষ দিয়ে লাভ নেই,কারন ও তো আর পুষ্পকে চিনতো না। কারন প্রণয়ের কাছে না পুষ্পর কোন ছবি ছিল,না সে পুষ্পর নাম জানতো তখন। তাই এজন্য প্রিয়মকে দায়ী করা যায় না।

—– ” কুল ব্রো কুল। এখনতো সব ঠিক ঠাক-ই এগুচ্ছে তাই না। তাহলে আমার প্রতি রাগ দেখিয়ে কি লাভ বলো?
একটা কিউট কিউট ফেইস করে প্রিয়ম কথাটা বললো।

—–” প্রণয় বললো,এই হলো তোর প্লাস পয়েন্ট জানিস, মিস্টেক করার পর এমন ইনোসেন্ট লুক নেস যে সামনের ব্যাক্তিকে পটিয়ে ফেলিস।

—–” এটা শুনে প্রিয়ম ওর শার্টের কলারটা উঁচু করলো,চুলটা ঠিক করে বললো,” ইয়ে ম্যারা ট্যালেন্ট হ্যায় ব্রো, তুম তো জানতা হু না?
—– ” প্রণয় প্রিয়মের মাথায় একটা দিতে চাইলো কিন্তুু তার আগেই প্রিয়ম লাপাত্তা।
একদৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল,প্রণয় পিছন পিছন বলতে লাগলো এই ইনোসেন্ট লুকটা দিয়েই তো মেয়েদের কাবু করিস। তা এখন কত নাম্বার সিরিয়াল চলে তোর?

—– ” এটা শুনে প্রিয়ম সিড়িতে দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর প্রণয়কে উদ্দেশ্য করে বললো,”আমি কি তোমার মত মজনু নাকি,যে এক লাইলাতেই আটকে থাকবো। তাহলে যে বাকী লাইলারা আমার প্রতি রুষ্ট হবে,এ যে আমি মানতে পারবনা। সুন্দরী লাইলারা কষ্ট পেলে যে, আমার হৃদয় ব্যাথিত হয়। আমি সবার মন রেখে চলি,এটা আমার ক্রেডিট।

—– ” প্রণয় ভ্রু কুচকে তাকালো, এটা কি করে কারো ক্রেডিট হয় সেটা প্রণয়ের ভাবনার বাইরে। দুইভাই এর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। একজন উত্তর, তো আরেকজন দক্ষিণ। প্রিয়মের গায়ের রং একদম ফর্সা,অনেকটা বিদেশীদের মতো। চোখের মণিও কালো নয়,বাদামী। যেটা ওর চেহারাটায় একটা ভিন্ন লুক এনে দিয়েছে। গালভর্তি চাপ দাড়ি,মাথার চুল একদম সিলকি,মেয়েরা ওর দিকে একবার তাকালেই আরেকবার ঘুরে দেখতে বাধ্য।

– ” তবে ও সবাইকে লাইন দেয়, মন দেয় না।”
– ” বিশ বছর বয়সে মনে হয় হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেছে মেয়ে পটানোর। অবশ্য পটানো বললে ভুল হবে,কারন একজনকেও ও নিজে পটায় নি। মেয়েরাই ওর পিছনে লাইন লেগে থাকে। স্কুল লাইফ থেকে মেয়েদের প্রপোজাল পেয়ে আসছে। তার মধ্যে বিদেশিও আছে বেশ কয়েকজন। দুইবছর যাবত বাংলাদেশে আছে। অথচ এ দুবছরেই মনে হয় ঢাকার মেয়েদের জাতীয় ক্রাশের লিস্টে সে আছে। দু’দিন পর পর যখন নিউ নিউ লুক নিয়ে ছবি আপলোড দেয়,মেয়েদের লাভ রিয়েক্টে ভেসে যায় তার প্রোফাইল। ভার্সিটির সিনিয়র আপুরাও আছে এই লিস্টে। আর রিসেন্টলি প্রিয়ম একটা সিনিয়র মেয়ের সাথে ডেটিং করছে। প্রিয়মের ধারনা লাইফে সব রকম এক্সপেরিয়েন্স থাকা উচিত। আর এজ ডাজেন্ট ম্যাটার ইন রিলেশানশিপ। তার উদাহরণতো বর্তমানে অহরহ। সর্বশেষ নিক প্রিয়াংকা জুটি তো আগের সব রেকর্ড ভেংগে দিল।

– ” কিন্তুু প্রিয়মের একটাই সমস্যা, কিছুদিন ডেট করার পরই তার আর ঐ মেয়েকে ভালো লাগে না।

– ” আসলে কোন মেয়েই প্রিয়মের মনে এখনো সেই অনুভূতি জাগাতে পারে নি,যে অনুভূতি একজনকে নিয়েই ভাবতে বাধ্য করে। সব কল্পনা জুরে শুধু একজনই বিচরণ করে, একজনের অস্তিত্বে মিশে যায় আরেকজন।
আর প্রিয়ম ডেটে গেলেও কোন মেয়ের হাতও স্পর্শ করে না। বরং মেয়েরাই গায়ে পড়তে চায়,যেটা ওর ভালো লাগে না।

-” যদি কথার মাধ্যমে একজন আরেকজনকে আবিষ্কার করতে না পারে,শরীর ছুঁয়ে কি হবে!”

-” হয়তো সেই মানুষটা এখনো আসার সময়ই হয় নি,যে এসে কারো সবকিছু পাল্টে দেয়। আমরা নিজেরাই বুঝতে পারিনা যে আমরা পাল্টে যাচ্ছি। অথচ সেই মানুষটা অল্প সময়েও আমাদের সবটা দখল করে নেয়। সেই বিশেষ কোন মানুষটার অপেক্ষায় প্রিয়ম, জানেনা সে কবে আসবে। তবে আসবে লুট করতে হৃদয়টাকে।

-” হ্যালো,হুজ স্পিকিং?
-” আপনি আমাকে চিনেন না? ওহ এখন চিনবেন কেন,এখনতো আর আমাকে কোন প্রয়োজন নেই। যা পাওয়ার তা তো পেয়ে গেছেন।
– ” মানে?”
– ” মানে আবার কি?
– ” আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছিনা।
– ” ওরেমা…এখন আমি আপনি হয়ে গেলাম তুমি থেকে। শুনুন আমাকে ছাড়া না আপনার একদন্ডও চলবেনা। কিছু আছে আপনার মাথায়? পারেনতো শুধু গিটার নিয়ে লাফাতে। বু ঠিকই বলে আপনার ব্যাপারে।
– ” সরি, আপনি যাকে ভাবছেন আমি সে নয়।
– ” বাহ,গানের সাথে সাথে একটিং ও ভালোই জানেন দেখছি। অস্কার দেওয়া উচিত আপনাকে। এতো গুণ কোথায় রাখবেন,কিছু মানুষকে দান করে দিন। জানেনতো দান করলে সম্পদ বাড়ে,আপনারও গুণ বৃদ্ধি পাবে আরো।

– ” এতো বেশি কথা বলেন কেন আপনি?
আগে আমার কথাটা তো শুনুন,বাঁচাল মেয়ে কোথাকার।

– ” হোয়াট! আরেকবার বলুন তো কি বলেছেন। আর আপনি কে আসলে?
এমন অভদ্র খরুশের মতো কথা বলছেন কেন?
– ” হোয়াট ডিড ইউ সে?

– ” বিদেশ থেকে আসছেন নাকি,ইংলিশ কেন, বাংলা জানেন না। নাকি ইংলিশ বলে নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করতে চান?

– ” ও হ্যালো,আমি এমনিই স্মার্ট। ইংলিশ বলে স্মার্ট প্রমাণ করার কিছু নেই ওকে। আর আপনার মতো কয়েকশো মেয়ে না রোজ হুঁশ হারায় আমার স্মার্টনেস দেখে।

– ” আহারে তাই নাকি? আসছে আমার প্রিন্স হ্যারি রে। নিজেকে কি মনে করেন মিস্টার ওয়ার্ল্ড?

-” আই নো হোয়াট আই অ্যাম,দ্যাট নান অফ ইউর বিজন্যাস।”

– ” রাখেন আপনার ইংরেজি। এরকম ইংরেজি আমাদের বাসার সামনের সেলুনের দোকানের পটকাও জানে। আসছে ইংরেজি বলতে।

– ” হ্যায় ক্রেজি গার্ল,হু আর ইউ? হাউ ডেয়ার ইউ টু টক টু মি লাইক দিস?

– ” আর একটা ইংরেজি বললে এই ফোনেই আপনার মুখে চুইংগাম লাগিয়ে দিবো,তাও আমার মুখের খাওয়া।

-” ইয়াক ছিহ!

– ” এইতো এখন একটু বাংলা বের হচ্ছে।
এসব বিদেশি ভাবওয়ালা বাবুদের কথায় কথায় ইংরেজি বলা কিভাবে ছুটাতে হয় তা আমার বেশ ভালো করে জানা আছে।

– ” ক্রেজি গার্ল কোথাকার।

– ” একদম মুখ সামলে কথা বলুন ওকে। আর আমি আমার টাকা খরচ করে এতো কথা বলছিই বা কেন আপনার মতো খাটাশ এর সাথে। দরকার পড়লে কাস্টমার কেয়ার এর ছেলেদের সাথে কথা বলবো কল দিয়ে, তাও টাকা গুলো খরচ করে শান্তি লাগবে। এমন খাটাশ এর সাথে কথা বলে টাকাগুলো অপচয় করলে,সেই টাকাগুলোও আমাকে অভিশাপ দিবে। এটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো মেয়েটা।

– ” প্রিয়ম পুরো বোকা বনে গেল, এটা কি কোন মেয়ে নাকি স্টেইনলেস স্টিল। মানে আমার কথা না শুনেই চটাং চটাং করে ফোন রেখে দিল।

– ” প্রিয়ম আবার কলব্যাক করলো। একবার বাজতেই রিসিভ হলো।

– ” হ্যায় ডিজিটাল ফকিন্নি আমি কি বলি মন দিয়ে শুনুন।

– ” হাউ ডেয়ার ইউ?

– ” বাহ,এবার আপনার মুখ দিয়ে ইংরেজি বের হচ্ছে দেখি। তা এখন আমিও কি একটু লেকচার দিবো নাকি, একটু আগে আপনি যেমনটা দিয়েছিলেন। নাহ থাক,আমি আর নতুন করে দিতে পারবনা আপনি যেগুলো দিয়েছিলেন ঐগুলোই দিলাম আপনাকেও।

-” ওপাশ থেকে কোন সাউন্ড আসলোনা। তবে প্রিয়ম স্পষ্ট বুঝতে পারছে ঐপাশের বালিকা রাগে ফুঁসছে।

বালিকা বলছে কারন মনে হচ্ছে ওপাশের কন্ঠটা অল্পবয়সী কোন মেয়ের। কন্ঠ শুনে তেমনটাই মনে হলো প্রিয়মের।

আপনি যার কাছে ফোন দিয়েছেন সে ওয়াশরুমে,আমি তার ছোট ভাই। আর এ কথাটাই আমি আপনাকে বলতে চেয়েছিলাম। বাট আপনি তো ইন্টারসিটি ট্রেনের গতিতে কথা বলে যাচ্ছিলেন। সে কি লেকচার!
– ” আপনার ভাষণ শেষ হয়েছে? হলে ফোন রাখুন। আর ভদ্রভাবে কথা বলতে না জানলে কারো ফোন রিসিভ না করাই বেটার। আর আপনার পরিচয়টা শুরুতেই দিলে এতো প্যাচাল পারতে হতো না আমার। শুধু শুধু কতগুলো কথা খরচ করলাস।

– ” নাহ শেষ হয়নি। আর ফোনতো এখন আমি দিয়েছি সো আপনার তো টাকা ফুরানোর টেনশন নেই ডিজিটাল ফকিন্নি।
আর আমি পরিচয় বলতে চেয়েছি শুরুতেই,আপনিই ননস্টপ কথার খই ফুটাচ্ছিলেন।

– ” আর একবার একটা বাজে কথা বললে না বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ফেলে আসবো।

– ” ওহ রিয়েলি? আই ওয়ান্ট টু গো বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। বলুন ঠিক আর কি কি বাজে কথা বললে, কিভাবে বললে আমাকে ঐখানে রেখে আসবেন?

– ” আর ইউ ম্যাড?”

– ” ছিলাম না, তবে এই কয়মিনিট এক সিলি গার্লের সাথে কথা বলার পর কিছুটা অসুস্থ বোধ করছি।

– ” গুড বাই।

– ” আরে আরে শুনুন শুনুন। কেন ফোন দিয়েছিলেন সেই কারনটা তো অন্তত বলুন। ব্রো কে তো সেটা বলতে হবে।

– ” সেটা বলার মত মুড বা রুচি কোনটাই নেই এখন আমার।
– ” যাহ… ফোনটা কেটে দিল। মাথার স্ক্রু মনে হয় সবকয়টা ঢিলা,এটা মেয়ে নাকি আর কিছু। এতদিন প্রিয়ম শুনতো যে মেয়েরা ঝগড়াটে,আজ নিজে লাইভ দেখলো। মেয়েতো নয় যেন পুরা গোলাবারুদ!

– ” তখন থেকে ফোন দিচ্ছে কলি কিন্তুু পুষ্পর ফোনটা সুইচড অফ দেখাচ্ছে। আটটা বাজে পুষ্প এখনো বাসায় আসে নি। সবাই অনেক টেনশনে পড়ে গেছে। পুষ্পতো কখনো এমন করে না। ও বাইরে গেলে ওর ফোনে সবসময় ফুল চার্জ রাখে। আর যেহেতু বাটন ফোন, তাই চার্জ তাড়াতাড়ি ফুরায়ও না। আর বাইরে কোথাও সময় নষ্ট করার মেয়ে পুষ্প নয়।
তাহলে আজকে কি হলো,দেরি হচ্ছে কেন!”

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here