বাসন্তী
পর্ব-১০
লিমু

-” পুষ্প কলিকে পাত্তা না দিয়ে শাওয়ার নেয়ার জন্য জামা নিয়ে রেডি হচ্ছিল। ঠিক তখনি কলি ওর পথ আটকিয়ে সামনে দাঁড়ালো।

-” পুষ্প জিজ্ঞেস করলো,” কি হইছে? এমন ভূতের মত বিহেভ করছিস কেন?

-” কিন্তুু আমিতো জানতাম সাইন্সের স্টুডেন্টরা নিজেরাই একেকটা ভূত,তাই তারা ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করে না। তাহলে তোর ক্ষেত্রে উল্টো কেস কি করে হলো,সেটা তো ভাববার বিষয়।

আজকাল কি ভূতেরাও মানুষের মতো নীতি ভুলে যাচ্ছে নাকি!

-” কোন চালাকি করে লাভ নেই বু,তুমি কার সাথে কথা বলছিলে সেটা বলো।
কলি পুষ্পর হাত থেকে জামা কাপড় ওর হাতে নিয়ে নিল,যেন না বলে যেতে পারে।

-” কলি সব বিষয়ে তোর গোয়েন্দাগিরি না করলেও চলবে। আমি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম।

-” কোন ফ্রেন্ড?

-” সেটা তোর জানা জরুরি নয়।

-” ওকে,জানলাম না। কিন্তুু ফ্রেন্ডকে কি কেউ আপনি করে বলে?

-” এত প্যাচাল পারিস না তো,শরীর কেমন লাগছে কাপড় দে তাড়াতাড়ি গোসল করবো। পুষ্প কাপড় নিতে চাইলে কলি না দিয়ে কাপড় পিছনে সরিয়ে নেয়। আর বলে, আমি কিন্তুু তোমার সব কথা শুনে ফেলেছি আড়ালে থেকে। পুষ্প ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল,কলি বাথরুমে শাওয়ার নিচ্ছিল। পুষ্পর কথা বলা শেষ হতেই দেখে কলি সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে,তাও রাগী ভাব নিয়ে।

-” কি শুনেছিস তুই?

-” যা বলেছো।

-” কি বলেছি হুম?

-” যা শুনেছি।

-” কলিইইই…..ফাজলামি বেশি শিখে গেছিস। একটু আগের কানমলাটার ব্যাথা কি চলে গেছে,দৈনিক কয়েকবার কানমলা না খেলে তোর পেটের ভাত হজম হয় না,তাই না।

-” নাহ,কলির সহজ স্বীকারোক্তি।

-” পুষ্প হতাশ চোখে তাকালো কলির দিকে,এই মেয়েকে কিছু বলে লাভ নেই। মানুষ খাবারের গন্ধ পেলে তার উৎস সন্ধান করে,আর লেডি আইনস্টাইন রহস্যের গন্ধ পেলে তার উৎস খুঁজে।
কেন যে একে সাইন্সে পড়তে দিলাম, এখন তার সব এপ্লাই আমার উপরই করছে।

-” তোর কি মনে হচ্ছে আমি আমার বিএফ এর সাথে আলাপ করছিলাম?

-” সে আশা তোমাকে দিয়ে করা যায় না।
সেটা হলে বরং আমি খুশিই হতাম।

( আর মনে মনে বললো,” আমিতো সেটাই চাই। তুমি খুব করে কাউকে ভালোবাসো,কারন তুমি সেই জিনিসটা ভুলতে বসেছো দায়িত্বের চাপে। তুমি কখনোই তোমার অনুভুতি প্রকাশ করতে চাওনা,সবসময় চেপে রাখো। যেন বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে তোমাকে,তাই সবসময় কঠোর থাকো। কিন্তুু তোমার বোন হয়ে যদি তোমার মনের কথা না বুঝতে পারি,তাহলে কি করে হবে। আর কি হবে সাইন্সের এত থিউরি পড়ে,যদি মনের থিউড়িই না বুঝতে পারি।)

-” হঠাৎ পুষ্প কলির হাত থেকে টান মেরে কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল,কলি কিছু বুঝার আগেই।

-” কলি বললো,আচ্ছা যাও যাও। পালাবে আর কোথায়, দেখ না তোমার জন্য কি সারপ্রাইজ আসছে সামনে। অবশ্য এটাকে সারপ্রাইজ নয়,বোম বলা যেতে পারে। তোমার রিএকশান দেখার অপেক্ষায়, যখন সেই বোম ব্লাস্ট হবে। উফফ….আমি আর ভাবতে পারছিনা। কখন আসবে সেই সময়টা।

-” অনেক সময় আমরা উপায় খুঁজে পায় না শত ভেবেও,কিন্তুু সৃষ্টা ঠিকই আমাদের উপায় দেখিয়ে দেন। জাস্ট সেটা সঠিকভাবে প্রয়োগের উপায় জানতে হয়।

.

-” আজকে সকাল থেকেই কলির মন বেশ ফুরফুরে,তার নাকি কোন অতিথি আসবে। কিন্তুু কে সেটা বলছেনা,ঐটা নাকি সারপ্রাইজ। সিরিয়াসলি এই মেয়ে পারেও,অতিথি আসবে সেটাও নাকি সারপ্রাইজ। আর ওর কোন ফ্রেন্ড তো নয়,তাহলে কে?

-” ওর ফ্রেন্ড হলে ও এতটা এক্সাইটেড হতো না,আর সেটা লুকিয়ে রাখার তো কোন মানেই হয় না। পুষ্প আর ভাবতে পারছেনা,এই মেয়ের কার্যকলাপই এমন উদ্ভট।

-” আর এদিকে ওকে রান্না করতে হচ্ছে তার স্পেশাল গেস্টের জন্য। ওর মা পার্লারে,কারন ব্রাইডাল মেকাপ করাতে হবে। বেশ কয়জন কনের সিরিয়াল আজকে,বিয়ের মৌসুম বলে কথা।

-” পুষ্প কি রান্না করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই কলিকে ডাক দিল।

-” কি হয়েছে?

-” কি রান্না করবো বুঝতেছিনা। এটাও তো বলছিস না গেস্ট ছেলে না মেয়ে।

-” ছেলে মেয়ে দিয়ে কি হবে?

-” কি হবে মানে?

-” মানে রান্না করবে সেখানে লিঙ্গ জানার কি দরকার?

-” আশ্চর্য,এতটুকু বিষয় বুঝতে পারছিস না,আবার বিয়ে করতে বললে রাজি হয়ে যাস।

-” কলি মুখ ভ্যাংগালো।

-” পুষ্প বললো,ছেলে মেয়ের পছন্দের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। মেয়েদের পছন্দের খাবার একরকম,ছেলেদের আরেকরকম। খুব সিম্পল বিষয় এটা।

-” কলি মাথা চুলকিয়ে বললো,ওহহ এই কথা।”

-” আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার পছন্দ অনুযায়ী রান্না করে ফেলো,যেগুলো তোমার ফেবারিট।

-” আমার পছন্দে অতিথি আপ্যায়ন করলে,সেই অতিথি আর জীবনে আসবেনা। কারন আমার পছন্দ সব ভর্তা জাতীয় জিনিস,অথবা ঝাল জাতীয় আইটেম। তোর অতিথি খেয়ে পালানোর পথ খুঁজে পাবে না,এটা বলে পুষ্প ফিক করে হেসে দিল।

-” কলি পড়লো মহা চিন্তায়। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বললো,সমস্যা নেই এগুলোই করো। শেষে মিষ্টি খেলেই ঝাল চলে যাবে। এটা বলে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে কলি চলে গেল,যার মানে পুষ্প কিছুই বুঝলনা।

এই মেয়ের কাজ কারবার পুষ্পর ধারণারও বাইরে,কি যে চলে এর মাথায় পুষ্প কখনোই বুঝতে পারে না।

.

-” চুলে হাত খোপা করে,ওড়না কোমড়ে গুঁজে রান্নাঘরে রান্না করছিল পুষ্প। সামনের কাটা চুল গুলো বড্ড বিরক্তি লাগছে ওর। পুষ্প চুল কাটতে চায়নি,কলি গত ঈদে জোর করে সামনের চুলগুলো লেয়ার কাট দিলো। এই মেয়ের সাথে কথায় পারে না পুষ্প। পুষ্পর মাঝে মাঝে মনে হয় পুষ্পই ছোট,আর কলি ওর বড় বোন।

-” হঠাৎ পুষ্পর চোখে কি পরে গেল,চোখ ভীষণ জ্বালা করছে। কিন্তুু ওর হাত দিয়ে ধরতেও পারছেনা,কারন কাচামরিচ কেটেছে কিছুক্ষণ আগে। এখন চোখে হাত ছোঁয়ালে খবর আছে,এত পরিমাণ জ্বলবে বলার বাইরে।
পুষ্প এক চোখ বন্ধ করে রান্নাঘর থেকে বারান্দা দিয়ে হেটে কলির কাছে যাচ্ছিল।
আর কলিকে ডাকছিল,কিন্তুু কলির কোন সাড়াশব্দ নেই।

-” ঠিক তখনি পুষ্পর চোখ আটকে গেল কাউকে দেখে। ওর ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না,ভাবছে নিশ্চিত ওর মাথাটা গেছে। এখন তাকে সব জায়গায় দেখছে,কিন্তুু প্রিয়ম যে বললো এটা জাস্ট আমার একটা মোহ। সে আমার পিছন পিছন ঘুরেছে, এইজন্য তার প্রতি আমার একটা মায়া কাজ করছে,এর বেশি কিছু না।

কিন্তুু পুষ্পর কেন যেন মনে হচ্ছে প্রিয়মের কথাগুলো ঠিক নয়,এটা মায়া নয়। তারচেয়েও বেশিকিছু নিশ্চিত,কেমন অদ্ভুত অনুভূতি। ভালোলাগার অনুভূতি, হয়তো আরো বিশেষ কিছু। কিন্তুু কি সেটা পুষ্প জানেনা,জানতে চায়ও না।

-” পুষ্প দেখতে পেল একটা ব্ল্যাক ফুলহাতা শার্ট,ব্ল্যাক স্যাুট, টাই আর ব্ল্যাক সানগ্লাস পরে প্রণয় ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোটের কোণায় তার হাসি লেগে আছে।

-” পুষ্প প্রণয়কে হ্যালুসিনেশন ভেবে রুমে ঢুকে কলিকে ডাকতে লাগলো। আর মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিচ্ছে পুষ্প,ওর মাথাটা পুরোটাই গেছে। না হলে দিনের দুপুরে একটা জলজ্যান্ত মানুষকে সে ওর চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। অথচ সেই মানুষটার এখানে আসার কোন সম্ভাবনাই সেই বিন্দুমাত্র।

-” পুষ্প কলির সাথে সাথে এবার তোর মাথাটাও গেছে বোধহয়। সারাক্ষণ এই লেডি আইনস্টাইনের বকবকানি শুনতে শুনতে তুইও ওর মতো হয়ে যাচ্ছিস,দ্যাটস নট গুড।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here