বাসন্তী
পর্ব-০৮
লিমু
____”আরে…আরেকটু হলে তো সাপে কামড় দিতো আপনাকে।”
-” এমনি পুষ্প ভয়ে ছিল কে হাত ধরে টান দিলো,তারমধ্যে সাপের কথা শুনে আরো ঘাবড়ে গেল। চোখমুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো সামনের ছেলেটার দিকে। পুষ্প কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলনা, ওর চোখমুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
-” আপনার ঠিক বাম পাশেই একটা সাপ দাঁড়িয়েছিল,ভয় নেই এখন অবশ্য চলে গেছে। সাপ যদিও সহজে কারো ক্ষতি করে না। একটা নীতি মেনে চলে,তার ক্ষতি না করলে,সেও কোন ক্ষতি করে না।
কিন্তুু তবুও নিজেদের সতর্ক থাকাই উত্তম।
-” পুষ্প মাথা নাড়ালো শুধু,কোন কথা বললোনা।
-” আপনাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে,তা রাতের বেলায় একা কোথায় যাচ্ছেন?
জানেন তো বর্তমানে মেয়েদের জন্য একা চলাফেরা করাটা কত রিস্ক,তাও আবার রাতের বেলায়।
-” জীবনটাই তো রিস্ক,তাই নয় কি?
-” হু…তবে নিজেদেরই সেই রিস্ক বুঝে চলাফেরা করতে হয়। বেশি সাহস দেখালেও বিপদ,আবার বেশি ভয়ে থাকলেও।
-” তা ঠিক। তবে জানেন কি, এই পৃথিবীতে প্রয়োজনের কাছে সব কিছু তুচ্ছ।”
-” তা ঠিক বলেছেন অবশ্য। ঐ যে একটা প্রবাদ আছে না,নেসেসিটি নোজ নো ল। মানে প্রয়োজন কোন আইন মানেনা।
-” হু…সেটাই। প্রয়োজনে মানুষ সব করতে পারে,ভীতুকেও সাহসী করে তোলে প্রয়োজন। কারন যখন আপনি দেখবেন আপনার পাশে সাপোর্ট দেয়ার কেউ নেই তখন আপনাকে নিজেকেই উঠে দাঁড়াতে হবে। নিজেকেই নিজের ইন্সপারেসান দিতে হবে,জানেন তো কারো বিপদে খুব কম মানুষই এগিয়ে আসে।
-” ওয়াও…আপনি তো দারুণ কথা বলেন। তা আপনার সাথে কি পরিচিত হতে পারি,মানে আপনার নাম কি,কি করেন?
-” আফরা পুষ্প,অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি বাংলাতে,আপনি?
-” ভেরি গুড। আমি প্রিয়ম,বিবিএ সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি, তারমানে আমরা ব্যাচমেট।
-” পুষ্প একটু হাসলো।
-” ফ্রেন্ডস?
-” পুষ্প ঠিক বুঝলনা,তাই প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-” আপনার আইডি দেওয়া যাবে? যোগাযোগ রাখতে চাইছিলাম আর কি,অবশ্য যদি আপনি চান তবেই।
আমি আবার সহজেই মানুষকে আপন করে নিতে ভালোবাসি,যদিও অনেকে সেটা পছন্দ করে না। আর আপনাকে দেখে কেন যেন দারুণ ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন একজন মনে হচ্ছে। আর এই ধরনের মানুষকে আমার ভালো লাগে।
-” পুষ্প হালকা হাসলো প্রিয়মের কথায়। একবার দেখেই এতকিছু বুঝে গেলেন?
-” ঐ আমি মানুষের সম্পর্কে একটু সহজে অনুমান করতে পারি। হ্যা অনেক সময় ভুল হয়,তবে বেশিরভাগ আমার অনুমান ঠিক হয়।
-” তাই,তাহলে তো আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতেই হয়। কিন্তুু আমিতো ফেসবুকে নেই। ঐসব আমার ভালো লাগে না।
-” প্রিয়ম যেন পুষ্পর কথাটা ঠিক নিতে পারলনা। এ সময়ে কোন শিক্ষিত কেউ এফবি ইউজ করে না,এটাতো মানতে একটু সমস্যা হওয়ারি কথা।
-” তবু যথাসম্ভব নরমাল থাকলো,কারন হতেই পারে, কারো ভালো নাই লাগতে পারে। এই সোশাল সাইট সবাইকে যে পছন্দ করতেই হবে,তার কোন মানে নেই।
-” তাই প্রিয়ম পুষ্পকে বললো, ওকে তাহলে আমার নাম্বারটা রাখেন,আপনারটা চাইছিনা কারন মাইন্ড করতে পারেন। এটা বলে প্রিয়ম একটা কার্ড বের করে দিলো,আর বললো কখনো ইচ্ছে হলো যোগাযোগ করবেন।”
-” পুষ্প একটু অসস্থি নিয়ে কার্ডটা নিলো,যদিও ছেলেটাকে যথেষ্ট ভদ্রই মনে হচ্ছে। তারপরও হুট করে কাউকে বিশ্বাস করা কি ঠিক হচ্ছে!
-” হ্যা তাকে একটা বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে তার মানে এই নয় যে তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে হবে। কিন্তুু ভদ্রতার খাতিরে পুষ্প কার্ডটা নিয়ে, এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকশা খুঁজছিল।
-” একটা খালি রিকশা দেখেই পুষ্প ডাক দিল রিকশাওয়ালাকে। প্রিয়মকে ধন্যবাদ জানিয়ে রিকশায় উঠে গেল,প্রিয়ম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। প্রিয়মের মনে হলো মেয়েটা একটু অদ্ভুত,বর্তমান যুগে এমন টাইপ মেয়ে অকল্পনীয়। তবে মেয়েটার মুখটা ভীষণ মায়াবী,আর চোখদুটো ভয়ংকর সুন্দর। আর দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ সিরিয়াস টাইপ।
.
-” বেশ কয়েকদিন পর পুষ্প কলেজ গেইটে দাঁড়িয়েছিল,তন্নী আজকে কলেজে আসে নি। তাই একটা ক্লাস করে বাসায় ফিরে যাচ্ছে পুষ্প, টিউশনি তো বিকালে। তাই এখন বাসায় গিয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর যাওয়া যাবে। পুষ্প হেটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলো,কিন্তুু আজকেও মনে হচ্ছে কেউ ওর পিছন পিছন আসছে। কিন্তুু পিছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেল না,আবার হাঁটতে শুরু করলো। কি যে হচ্ছে ইদানিং,মনে হচ্ছে কেউ ওকে ফলো করছে কিন্তুু কাউকেই দেখতে পায় না।
পুষ্প এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল,হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো,” আমাকে খুঁজছো?”
-” আকস্মিক একদম কানের কাছে কথাটা শুনায় পুষ্প ভয় পেয়ে যায়। এমনি ওর মনে ভয় কাজ করছিল তাই। আমরা যখন মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকি,তখন স্বাভাবিক বিষয়ও অস্বাভাবিক লাগে।
কিন্তুু সামনের ব্যাক্তিটাকে দেখে পুষ্পর ভয় হাওয়া হয়ে গেল। তারমানে কি এই লোকই তাকে ফলো করছিল,কিন্তুু তাহলে ও দেখতে পাই নি কেন? বা এ কয়দিন ওর সামনে আসে নি কেন? পুষ্পর সব গুলিয়ে যাচ্ছে। অনেকসময় আমরা যেটা ভাবি, তার আড়ালেও আরো কিছু থেকে যায়।
-” মিস করছিলে আমায়?
-” এই কথা শুনে পুষ্প ওর ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর চোখমুখ কুচকে বললো,আপনাকে মিস করতে যাবো কোন দুঃখে? আপনি কোথাকার কোন রাজা,আসছে আমার সম্রাট শাহজাহান।
-” প্রণয় হো হো করে হেসে দিল পুষ্পর কথা শুনে,তারপর বললো রাজা হলে কি মিস করতে? তোমরা মেয়েরা কি লোভী।
আজ রাজা নয় বলে কেউ মিস করে না,সবি কপাল!
-” প্রণয়ের কথা শুনে পুষ্পর একইসাথে রাগ হচ্ছে, আবার শেষের কথাটা শুনে হাসিও পাচ্ছে। কিন্তুু নিজেকে সামলে বললো,এখানে লোভের কি দেখলেন? ঐটা আমি কথার কথা বলেছি,আপনি কে যে আমার মিস করতে হবে।
-” বিশেষ কেউ না,একজন সাধারণ মানুষ।
-” এটা শুনে পুষ্প স্থির দৃষ্টিতে প্রণয়ের দিকে তাকালো। সহজ সরল স্বীকারোক্তি, যেটা পুষ্পর ভালো লাগলো। কিন্তুু না, পুষ্পর একদম ভালো লাগা লাগি নেই,একদম না। এসব পুষ্প ভাবনাতেও আনতে চাই না এখন,ওর উপর অনেক দায়িত্ব। এসব ভুলভাল বিষয় নিয়ে পুষ্প একদম ভাববে না,ওর কাছে ওর পরিবারই সব।
-” কিন্তুু আজ পুষ্পর কি হলো,ও আড়চোখে প্রণয়কে দেখছে। একটা সাদা টি-শার্ট, ব্লু জিন্স প্যান্ট আর নেভিব্লু ব্লেজার। যদিও প্রণয় ফর্সা নই,কিন্তুু নেভিব্লু আর সাদা রংটাতে মারাত্মক লাগছে। সত্যি বলতে পুরুষ মানুষের শারীরিক গঠনটাই যথেষ্ট তাদেরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। মেয়েরা হাজার সেজেও পুরুষের সৌন্দর্যের কাছে কিছুই না। কিন্তুু সেটা খুব কম মানুষই অনুধাবন করতে পারে।
-” পুষ্প অনিচ্ছা স্বত্বেও বারবার আড়চোখে দেখছে। কি হচ্ছে ওর সাথে কিছু বুঝতে পারছেনা। মন এত অবাধ্য কেন!
-” প্রণয় খেয়াল করলো পুষ্প কেমন একটা অসস্থি ফিল করছে,কিন্তুু কেন ঠিক বুঝতে পারছেনা। ও কি বেশিই বিরক্তবোধ করছে,এবার প্রণয়ের নিজের কাছেই গিল্টি ফিল হচ্ছে। এভাবে রাস্তায় ডিস্টার্ব করাটা বোধহয় ঠিক না,কিন্তুু এছাড়া তো কথা বলার বা দেখার কোন চান্স নেই।
এখন যদি তার ফোন নাম্বার চাই,তাহলে আমাকে ইভটিজিং কেসে পুলিশে দিতে বোধহয় দুইবার ভাববে না। এটা কল্পনা করেই প্রণয় একঢোক গিললো।
-” আপনার আর কোন বক্তব্য আছে?
-” পুষ্পর এ কথায় প্রণয় একটু হাসলো,তারপর বললো হ্যা আছে। আর তা হলো, সরি।
-” ফর হোয়াট? পুষ্প একটু অবাকই হলো।
-” আসলে ভালোবাসাটা একটা সূক্ষ্ম অনুভূতি,কিন্তুু এর গভীরতা বিশাল। আর এটা জরুরি নয় আমি যাকে ভালোবাসি,তারও আমাকে ভালোবাসতে হবে। এই পৃথিবীতে জোর করে কোনদিন কেউ ভালোবাসা পায় নি,আর কোনদিন পাবেও না। ঐ হৃদয় নামক যন্ত্রটা ভারী অদ্ভুত জানো,যে তোমাকে ভালোবাসবেনা তার জন্যই সে উতলা হবে। প্রতিটি মুহুর্তে তার কথা ভাববে,তাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হবে। প্রতি মুহুর্তে তাকে অনুভব করতে চাইবে,কি অদ্ভুত না!
-” আসলে ভালোবাসা শব্দটাই জানি কেমন অদ্ভুত,চার অক্ষরের একটা শব্দ কারো জীবন রাঙিয়ে দেয় আবার কারো জীবন বিষাদে ঢেকে দেয়। তবুও আমরা সেই ভালোবাসার পিছনে ছুটি,চার অক্ষরের শব্দটার সে কি বিশাল জোর।
কিন্তুু কিছু ভালোবাসা বোধহয় মরিচিকার মতো,যতই খুঁজি ততই দূরে যায়।
-” কিন্তুু দিনশেষে এটাই সত্য সে তোমাকে ভালোবাসে না,তার মনে তোমার জন্য কোন ফিলিংস নেই। আর যাই হোক ফিলিংস তো আর জোর করে আনা যায় না,ঐটা সম্পুর্ণ হৃদয়ের ব্যাপার। হৃদয়ে হৃদয়ে মেলবন্ধনই তো ভালোবাসা তাই না। আমাদের সেখানে কোন হস্তক্ষেপ নেই।
হৃদয় যে বড্ড স্বৈরাচারী!
-” সবাই তো আর সবার ভালোবাসা পায় না,খুব কম মানুষই পায়।
আমি হয়তো ঐ কম মানুষদের কেউ নয়।
#চলবে…..