#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৩
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“ইশানের গলার লকেটের মধ্যে ছোট করে E লেখা। আমার হঠাৎ করে সেই চিঠিগুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। সেখানেও E লেখা ছিলো”। আমি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলাম..

‘তাহলে কি ইশান’ই আমাকে চিঠি গুলো দিয়েছে? ও কি আমাকে চিনে? আমাকে না চিনার ভান করছে শুধু’?

এসব আকাশ-পাতাল ভাবছিলাম এর মাঝে ইশান আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বললো…

‘কি মিস, হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? এতো কি ভাবছেন বলুন তো’?

‘না তেমন কিছু না। আচ্ছা আপনার গলার….আমার কথার মাঝেই ইশানের ডাক পড়লো। ইশান আমাকে বললো, আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি একটু আসছি তারপর ইশান চলে গেলো’।

“ইশান চলে যেতেই ইশানের গলার লকেটের নাম আর চিঠিগুলো আমাকে অনেক ভাবাচ্ছে, এই দু’জন কি এক নাকি আলাদা? মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না”। এসব ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক বেলা হয়ে গেছে আবার আকাশও মেঘলা হয়ে আছে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, তাই আর দেরি না করে ইশানকে বলে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম। হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম হঠাৎ মাঝ রাস্তায় ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো। এখন আমি কি করবো? আমার কাছে তো ছাতাও নেই। বৃষ্টির জন্য এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু হঠাৎ এতো সুন্দর বৃষ্টি দেখে নিজেকে আর আটকাতে পারলাম না, দৌঁড়ে চলে গেলাম বৃষ্টির মাঝে। দু’হাত বাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি। বৃষ্টি প্রতিটা ফোঁটা আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মুহুর্তেই মন’টা কেমন যেনো ভালো হয়ে গেলো। ফুড়ফুড়ে একটা মন নিয়ে বাসায় ফিরলাম। কলিংবেল বাজাবো ঠিক তখনই দেখি আজকেও দরজার সামনে একটা খাম আর একটা গোলাপ ফুল। আজকে বেশি অবাক হলাম না কারন এসব তো আমি প্রায়ই পাই তাই ওগুলো হাতে উঠিয়ে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম”।

“বাসায় ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সেই খাম’টা খুললাম, তাতে লেখা….

‘আজ একটা বৃষ্টিবিলাশী’কে দেখলাম। আমার বৃষ্টি পছন্দ ছিলো না কিন্তু আজকের বৃষ্টিবিলাশী’কে দেখে বৃষ্টি আমার পছন্দের তালিকায়’যুক্ত হয়ে গেলো। আমি আমার এই বৃষ্টিবিলাশী’কে কবে, কোথায় এতটা ভালোবেসে ফেললাম নিজেও জানি না’।

“আমি অবাক হয়ে চিঠিটার দিতে তাকিয়ে রইলাম। কে হতে পারে এটা? একবার মনে হচ্ছে এটা ইশান কিন্তু আবার মনে হচ্ছে অন্য কেউ হতে পারে। আজকে তো ইতি-E লেখা নেই তাহলে কে পাঠাতে পারে? এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ আমার ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি ইশান ফোন দিয়েছে”। তাই ফোন’টা রিসিভ করে কথা শুরু করলাম….

“এভাবে কথা বলতে বলতে দু’জন দু’জনের সাথে অনেক ফ্রী হয়ে গেছি। এখন আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে। ইশান এখন আমার অনেক খেয়াল রাখে, ওর জন্য আমাকে কোনো বিপদ গ্রাস করতে পারে না। একদিন কলেজের কিছু খারাপ ছেলে আমাকে খারাপ ভাষায় কিছু কথা বলে, হঠাৎ কোথা থেকে যেন ইশান দৌড়ে এসে ছেলেগুলোকে এলোপাতাড়ি মা’র’তে শুরু করলো। কেউ ওকে আটকাতে পারছে না। আমি ওর এমন কাজে মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। মা’রা’মা’রি’র এক পর্যায়ে ও ছেলেগুলোকে বলছে ‘তোরা আমার বৃষ্টিবিলাশীর দিকে চোখ দিয়েছিস। ওকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিস। তোদের এতো সাহস’। ওর এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম, তার মানে ইশান’ই ওই চিঠিগুলো পাঠাতো। ও তাহলে আমাকে আগে থেকে চিনতো? এসব ভাবনার মাঝেই দেখি ইশান আমাকে হাত ধরে টেনে সেই জায়গা থেকে নিয়ে আসলো। এখনো রাগে গজগজ করছে। আমি ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে বললাম…

‘পানি’টা খাও’।

‘না’

‘চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম, খাও বলছি’।

“তারপর ইশান পানি’টা খেয়ে একটু শান্ত হলো। এবার আমি একটু গম্ভীর হয়ে ইশানকে জিজ্ঞেস করলাম…

‘আমাকে ভালোবাসো ইশান’?

‘ইশান একটু চমকে উঠে, চুপ করে রইলো’।

‘কি হলো, চুপ করে আছো কেন’?

‘না মানে, আসলে…’

‘কি না মানে, মানে করছো? স্পষ্ট করে বলো’।

‘হ্যা ভালোবাসি’।

‘কবে থেকে’?

‘গত ৩ বছর থেকে’।

‘আমি অবাক হয়ে বললাম, মানে’?

‘মানে তুমি যখন ক্লাস ৯ এ পড়ো তখন থেকেই তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার পড়ালেখা নষ্ট হবে বলে কখনো তোমার সামনে যায় নি’।

‘তাহলে আমার কাছে যেই ছোট ছোট চিঠিগুলো আসতো সেগুলো তুমিই পাঠাতে’?

‘হুমম’

“আমি আর কিছু না বলে সেখান থেকে বাসায় চলে আসলাম। ইশান আমাকে পিছন থেকে অনেকবার ডেকেছে কিন্তু আমি কোনো জবাব দেই নি। তারপর কে/টে গেছে ৪/৫ দিন আমি কলেজেও যাই নি, ইশানের সাথে কোনো কথা বলি নি…..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here