বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 28.
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
……
“ ভালোবাসা আর মৃত্যু দাওয়াত বিহীন।
এরা কখন আসবে কেউ জানেনা।
এদের মধ্যে একজন কেড়ে নেয় মন,
আর অন্যজন জীবন…..। “
তায়ানের এই কবিত্বময় বানীগুলো নিয়ে একসময় বেশ মজা করত তীব্র। তায়ান ওর তাচ্ছিল্যের বিপরীতে জবাব দিত না। নিজেও একটা মন ভোলানো হাসি দিয়ে বলত,
——–” আরে সালার নাতি। যেদিন কোন কন্যাকে নিজের বাম পাশের দিকটা কাছে পেতে চাইবে সেদিন বুঝবি। এই কথা গুলোর মানে। ভালোবাসা তো পৃথিবীতে এমনি এমনি অমর হয়নি। ভালোবাসায় মানুষকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। যে ভালোবাসায় বাধা নেই তা ভালোবাসা নয়। দেখবি সব ঠিক আছে কিন্তু যখন তার কাছে যেতে চাইবি তখনি সব ধুলোয় মিশিয়ে যায়। তাইত ভালোবাসার আরেক নাম হয় কলঙ্ক। তুমি যেই হও না কেন প্রেম মানে তোমাকে কলঙ্কিত হতেই হবে। ”
তায়ানের এমন পাগলের প্রলাপে তীব্রের উত্তর হত একটা,
———” যদি কোন মেয়েকে ভালো লেগে যায় তবে এত ঝামেলা কেন রে ভাই। এসব কলঙ্ক টলঙ্ক আমার দ্বারা হবে না। তাই তোমার ভাষ্য মোতাবেক এই অধমের কোন যোগ্যতাই নাই ভালোবাসা নামক ডিগ্রী অর্জন করার। তাই এর ব্যর্থ চেষ্টাও আমি করব না। ”
কথাগুলো ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো। তখন কথাগুলো পরিহাস করলেও আজ নিজেকে পরিহাস করতে ইচ্ছে করছে, কেন তখন মজা করেছিল? তবে এ নিয়ে তীব্রের মনে যথেষ্ট শংশয় রয়েছে যে, ও আদো তুরকে ভালোবাসে কিনা? যে মেয়েটা ওর চেয়ে এতটা ছোট, সম্পুর্ন বিপরীত, বিপরীত তার চিন্তাচেতনা তাকে কিনা ও ভালোবাসে? কিভাবে সম্ভব?
মেয়েটাকে তো একটা ভুলের কারনে তুলে এনেছিল। সেই ভুলকে আরেকটা ভুুুুলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গিয়েছিল সেদিন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। না চাওয়া সত্ত্বেও ওই ভুলটাকে বাঁচানোর তাগিদে নিজের প্রানবায়ু দিয়েছিল। বার বার নিজের অজান্তেই ভুলটা ওকে গ্রাস করে নিচ্ছিল। কখনো নিজের অজান্তেই ভুলটা ওকে নিজের কাছে টানত নাহলে তীব্রকেই বাধ্য করত ভুলটাকে কাছে টানার জন্য। হ্যা সেই ভুলটাই তো মেয়েটা । মেয়েটা পুরোটাই শুধরে না নেওয়ার মত একটা ভুল ছিল । কিন্তু এই ভুলটাই রাগে পরিণত হয়েছিল সেদিন ………
ক্ষিদায়-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে মেয়েটা যেদিন খাবার ভেবে ওর ঠোঁট কামরে দিয়েছিল। অদ্ভুত শিহরন জাগিয়েছিল ক্লান্ত মেয়েটির স্পর্শ সে রাতে। প্রথম কোন মেয়ের সংস্পর্শে এসে অচেনা এক ঘোর কাজ করেছিল। বড্ড রাগের কারন ছিল এই অবাঞ্চিত স্পর্শ। তবুও কেন অদ্ভুর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে নিজের বুকে ওর মাথাটা রেখে নিজ হাতেই খাইয়ে দিয়েছিল। আর এই মায়া জিনিসটাই কাল হলো। বার বার না চাওয়া সত্ত্বেও মেয়েটার দিকে ধাবিত হতে বাধ্য হল। সেদিন যে কাজ মেয়েটা ভুল করে করেছিল।সেই কাজটাই বার বার মেয়েটির সাথে করে গেল। এ যেন এক অদ্ভুত প্রতিশোধ আমাকে বিনা অনুমতিতে ছুইয়েছ তাহলে আমিও তা কেন পারিনা? এমন কিছুই ছিল কী? তবে এটাই কি তায়ানের বলা সেই ভালোবাসা। কিন্তু তাও বা কিভাবে সম্ভব?
দিনে দিনে মেয়েটাকে নিয়ে নিজের ভাবনা, ওকে কাছে পাবার তাড়না, বার বার ছুয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষা , ওর কান্না, ওর হাসি, ওর একাকিত্ব সবই যেন ওর একার। কারো ভাগ নেই সেখানে। আচ্ছা এই এত আকাঙ্খা, কাছে পাওয়ার এত তাড়না, দুরে থাকার নরক যন্ত্রনা, অস্থিরতা এই সব কিছু কি ” ভালোবাসা ” নামক একটা শব্দ দিয়ে আদো বোঝানো সম্ভব। কিন্তু ওর কেন তা মনে হয় না? এত অনুভুতির নাম এই একটা মাত্র শব্দ কি করে হতে পারে? মৃত্যুর ন্যায় যন্ত্রণাদায়ক এসব অনুভুতি এতটাই ঠুনকো যে “ভালোবাসা” নাম দিলেও তা বোঝানো যায়? কী জানি? কোন মানে হয় না তার?
নিজের ভাবনায় বিভোর তীব্র জেলের বন্দী কারাগারে দেয়াল গেশে বসে মনে মনে এসব আওরাচ্ছে। কোনটারি উত্তর যখন ওর মনের মত হলো না তখন শিয়ালের ওই ব্যর্থতা লুকানোর ভাষ্য ” আঙুল ফল টক ” এর মত ওর সান্তনা উত্তর বের হলো,
——— ” আসলেই ভালোবাসা বলতে কিছু হয় না। আর যদিও কিছু থেকে থাকে তবে সেটা কলঙ্ক। ”
এটা তীব্রের উত্তর নয়। বরং গুরুজনদের বানী। ভালোবাসার আরেক নাম কলঙ্ক। নাহলে জীবনের একটা রাত এমন জায়গায় এভাবে কেন কাটাবে তীব্র। তাহলে সত্যি কি তুরকে ভালোবেসে ফেলল? ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। কারন প্রশ্নের যে উত্তর ও এতক্ষন বসে খুজে বের করল। সেই উত্তরটাও এখন তীব্রের কাছে আরেকটা প্রশ্নে রুপান্তরিত হলো।
প্রশ্নের উওর নিজেই এখন ওর কাছে আরেকটা প্রশ্ন মনে হচ্ছে। তাই তীব্র আর এই প্রশ্ন-উত্তরের খেলা খেলতে চাইল না। বিরক্তি লাগল। নিজের চোখ দুটো বন্ধ করতেই তুরের সেই অশ্রুসিক্ত চোখের শুকনো মুখটা তীব্রের সামনে ভেসে উঠল। অস্ফুটস্বরে তীব্রের মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো,
——– ” প্রিয়ো আমার নিজের যন্ত্রনা দুর করতে কান্নায় ব্যস্ত। এখন এটা তাকে কে বোঝায়, সে বুকের যন্ত্রনার জন্য কষ্ট পাচ্ছে না। বরং কষ্টদাতার বুকে মাথা রেখে কষ্ট পাবার সুখ নিতে না পারার কারনে যন্ত্রনা পাচ্ছে। সে যাই হোক আমিও দেখব এই দুরত্ব আমাকে কতটা কষ্ট দিত পারে আর তাকে কতটা দেয়…. ।”
★—————————★—————————★
তীব্রের চোখে যেমন ঘুম নেই, ঠিক সেই রকম তুরের চোখের সাথেও নিশীরাজ আজ অভিমান করেছে। জালানার পাশে দেয়ালে মাথা গুজে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে । ঠান্ডা বাতাসে আলত করে চুলগুলো উড়ছে। তবে শীতগুলো যেন আজকে স্পর্শ করছে না। কারন বাইরের ঠান্ডা বাতাস তুরের বাইরেটা শীতল করলেও ভিতরটাকে না। তখনকার বলা তীব্রের কথা গুলো ওর কানে বাজছে। বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে । অস্থিরতা জালে বন্দি হলেও সামান্য প্রকাশের ছাপ নেই তুরের মুখে। আজ সবই আছে ,নেই শুধু পুরানো সেই তুর । তীব্র নামের ঝড়টা সব কিছু লন্ড-ভন্ড করে দিয়েছে । কথায় আছে না, “ভাঙ্গা আয়না জোরা লাগালেও একটা দাগ থেকে যায় । ‘’ তীব্র ওর মনে এমন একটা দাগ কেটে দিয়েছে যা মেটানোর ক্ষমতা তুরের নেই। আজ তীব্র নেই কিন্তু কি লাভ হলো তাতে ? যে যন্ত্রনা ওর কাছে থেকে পেত , তার চেয়েও বেশি যন্ত্রনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে এখন।
তীব্রকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছে, ওর সান্নিধ্য , ভালোবাসা , মায়া কোন কিছুই অনুভব করতে পারছে না তুর। তবুও ওর কথা গুলো আজ তুরের ভিতরের কিছুকে বার বার নাড়িয়ে দিচ্ছে। অস্থির করে তুলছে ওকে।
হঠাৎ নিজের শরীরে গরম কিছু অনুভব করতে পারল ও। সাথে সাথে চোখটা খোলে , বুকের মাঝে একটা চাপা ব্যাথা অনুভূত হল। নিশ্বাসের গতিটাও বাড়তে লাগল। অস্ফুট কন্ঠে বলে উঠল,
—– “ তীব্র ? “
তীব্র নামটা উচ্চারন করেই ও দ্রুত পিছন ফিরতেই থমকে যায় তোয়াকে দেখে। তোয়া ব্যাপার বুঝেও এড়িয়ে যায় । কারন কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর মানুষের নিজেকে খুজতে হয় । অন্য কারো থেকে সেই উত্তর গুলো মন মানতে চায় না।
তোয়া স্বাভাবিক ভাবেই চাদরটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল,
—– “ কিরে এই শীতে একা একা দাড়িঁয়ে কি ভাবছিস? আজকে তো তোর শান্তিতে ঘুমানোর কথা । যে তোর এত বড় ক্ষতি করেছে তাকে তার যোগ্য জায়গা দেখাতে পেরেছিস। “
তোয়ার কথায় তুর উত্তেজিত না হয়ে আবার জানালার বাইরে শান্ত ভাবে তাকিয়ে বলল,
—– ‘‘ জানিনা রে আপু। এতটা শান্তির পরও কেন এতটা অস্থির লাগছে? যেন এটা শেষ নয় আরো বড় কোন ঝড় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। যত মনকে শান্ত করতে চাচ্ছি ততই যেন আরো বেশি অশান্ত হয়ে পরছে। বড্ড বেশি ভয় করছে। “
—– ‘‘ ধুর এত বেশি ভাবিস না। দেখবি যা হবে ভালোর জন্যই হবে।চল ঘুমাতে চল। “
—– ‘‘ নারে আপু ঘুম আসছে না। “
—– “ এভাবে থাকলে এমনি ঘুম আসবে না। “
তোয়া জোর কারেই তুরকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষন কেটে যাবার পর তুর বলে উঠে,
—– “ আপু। মাথায় একটু বিলি কেটে দিবি ?“
তোয়া ওর মাথায় বিলি কাটতে কাটতে কিছুক্ষন পর বলে উঠে,
—– ‘‘ হ্যারে…। ইদানিং একটা জিনিস লক্ষ্য করছি বিলি কেটে না দিলে তুই ঘুমোতে পারিস না। এমনটা তো আগে ছিল না। “
তুর চোখ বন্ধ করে নিজের খেয়ালে ডুবে ছিল। তোয়ার কথার জবাবে আনমনেই ও বলে উঠে,
—— ‘‘ অভ্যাস হয়ে গেছে। ”
তুর কি বলল তা ভাবার পর্যায়ে নেই। ওর দায়িত্ব উত্তর দিয়েই শেষ। তোয়া আর জানার প্রয়োজন বোধ করল না কে ওর অভ্যাসে খারাপ মাত্রা যোগ করে দিয়েছে ? এমনিতেই তা স্পষ্ট। শুধু মনে মনে ভাবল,
—– “ যে ওর এই বদ অভ্যাস তৈরি করেছে , সে হয়ত ভেবেছে নিজের তৈরি করা অভ্যাস কখনো বদলানোর প্রয়োজন হবে না । সারাজীবন নিজেই ওর অভ্যাস রক্ষা করে যাবে। নাহলে এটা ভেবেছে , কোনদিন যদি তার থেকে দূরে যায় তবে এই বদ অভ্যাসের জন্য হলেও তাকে ভাবতে বাধ্য হবে। এখন প্রকৃত কারন কোনটা সেটা অভ্যাস দাতাই ভালো বলতে পারবে। “
আপনাতেই তোয়ার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে । কে জানে কি হয় সামনের দিন গুলোতে……।
★—————————★—————————★
বাড়িতে আজ বিয়ে। কিন্তু বিয়ের তোরজোর শুধু কিছু মানুষের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে। বিয়েটা যে তায়ান এখন করতে চেয়েছিল তা নয় এক রকম বাধ্য হয়েই করতে চলেছে। চেয়েছিল কিছুদিন পিছিয়ে দিতে কিন্তু তোয়ার বাবা মায়ের অনুরোধে না পারেনি। ওনাদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। এর আগেও তোয়ার বিয়ে ভেঙেছে। কারন যাই হোক। এবার এই বিয়েটা যদি পিছিয়ে যায় তাহলে পাড়া প্রতিবেশীর কথা শোনাতে যে ছাড় দেবে না সেটা কারোই অজানা নয়। আর মেয়ের বিয়ের জন্য সব বাবা মায়েই এমন চিন্তাও অমুলক নয়। তবে বিয়েটা যে জমকালো ভাবে করা হবে এমনটা নয়। কারো মনের পরিস্তিতি তেমন নেই। সবার মাঝেই একটা ভার বিদ্যমান কারন অপরাধের দোষী আর ভিক্টিম উভয়ই তাদের আপন জন।
সন্ধ্যার পর বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। তবে বোঝা দায় এখানে আদো বিয়ে হচ্ছে কিনা। বিয়ের কন্যা থেকে শুরু করে বর সহ বাকি সকলের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান। যাতে একটু ও খুশি নন তোয়া বাবা- মা। হবেই বা কি করে নিজের মেয়ের বিয়ে কেউ এভাবে আশা করেনা। কিন্তু তবুও যে শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হচ্ছে এটা ভেবেই শান্তি পাচ্ছে।
পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতার মাঝেই বিয়েটা সম্পুর্ন হল। আহামরি তেমন কিছুই হয়নি। রেজিষ্ট্রি করে হুজুর ডেকে বিয়ে পরিয়ে মিষ্টি মুখ এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে তায়ান বুঝতে পারল ব্যাপার তোয়ার মা-বাবার জন্য সুখকর নয়। সেই সুবাদে তায়ান পরে একটা অনুষ্ঠানের কথা বলে। এটা সব বাবা মায়ের কাম্য নিজের মেয়ের বিয়েতে যেন তারা সাধ্যের শেষটুকু করতে পারে। সেই সুখ থেকে তাদের বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই।
বিয়েটা সম্পুর্ন হলেও তোয়াকে এখন নিয়ে যাবে না। আগে পরিস্তিতি স্বাভাবিক হোক তারপর অনুষ্টান করে তোয়াকে বউ করে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিয়ের শেষে হতে হতে অনেক রাত হয়ে গেল। অন্যদিন হলে হয়ত এই জায়গায় হাসি মজার রোল পরে যেত। কিন্তু আজ তেমন নয় সবাই যার যার মত ঘুমিয়ে গেল। তুর আর তোয়া নিজেদের রুমেই ছিল।
★—————————★—————————★
গভীর রাত…..
তায়ানের ঘুম আসছিল না। তাই ও বাড়ির বাইরে বাগানে পায়চারি করছে। আর তীব্রের কথা ভাবছে। কিছুতেই হিসেব মেলাতে পারছে না। কী করেই মিলাবে যেই ছেলেটাকে সারাজীবন নারী বিদ্বেষী বলে জেনে এসেছে সে এভাবে কারন ছাড়া একটা মেয়েকে আটকে রাখল। তাও ভালোবাসার দোহাই দিয়ে। তীব্র এমন ছেলে মানুষী করবে এটা আদো কি সম্ভব? যদি ওর কথাগুলো মেনেও নেয় তাহলে কোথাও একটা কিন্তু থেকেই যায়?
আর যদি ধরেও নেওয়া হয়, তীব্র সত্যি একটা মেয়েকে ভালোবেসে এমন করেছে। তাহলে সেই মেয়েটাই কেন? যাকে তায়ান ওর জন্য পছন্দ করেছে। তীব্র সবসময় নিজের জন্য তায়ানের পছন্দ পাধান্য দিয়েছে। তাহলে এবারও কি তীব্র নিজের অজান্তেই তায়ানের পছন্দ মেনে নিল। এতটা কাকতালীয় ভাবে কিভাবে সম্ভব?
তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এটা তীব্র বলল, ও যা করেছে সব ভালোবেসে। এমনকি বিয়েটাও! অথচ বিয়ের কথা বলতেই তীব্র সবসময় সাফ নাকোচ করে দিত। যার কাছে বিয়ে, ভালোবাসা, ইমোশন এর কোন ভ্যালুই ছিল না। সে একটা মেয়েকে দেখে ভালোবেসে ফেলল। তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করার জন্য যা করার দরকার তাই করল। নিজের গায়ে আচর লাগার জন্য কাউকে ছাড় দিত না। সে কিনা এত কষ্ট সহ্য করছে ভালোবাসার টানে?
রাতারাতি কিভাবে এতটা পরিবর্তন হতে পারে কোন মানুষ? এত বছরের চিন্তা-ভাবনা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে এত পরিবর্তন হতে পারে। তাও তীব্রের মত এমন ইন্টিলিজেন্ট মানুষের। যার লাইফে লজিক ছাড়া কিছু নেই।
তায়ান এটা বুঝতে পারছে যেটা দেখছে সেটা পুরোপুরি সত্যি নয়। আর সত্যিটা যে কতটা মারাত্মক তার ধারনা ওর নেই। এখানে অনেক বড় কিছু রয়েছে। নাহলে তীব্র নিরবে এসব সহ্য করত না। আর আবেগের বশবর্তী হয়ে বা অপরাধ বোধে তীব্র এমন করবে ভাবাটাও বোকামি। হাতের তুরিও যে কারন ছাড়া বাজায় না। নিজের এত ক্ষতি সে এমনি হতে দেবে? তীব্রকে সবচেয়ে বেশি যে বোঝে সে হচ্ছে তায়ান। তবুও যেন ধোয়াশাই মনে হয় ওকে।
তীব্র সার্থপর নয় কিন্তু বিনা স্বার্থে ও কোনদিন কোন কাজ করবে না। আর তাই তুরকে ও তীব্রের জন্য পছন্দ করেছিল যাতে তীব্রকে একটা সঙ্গী দিতে পারে যে কিনা সরল মনে ওকে ভালোবাসবে। কারন তীব্র ইমোশনলেস হলেও আরেকজনের অনুভুতিকে কখনো আঘাত করে না। আর না নিজের দায়িত্বের অবহেলা। তুরকে ও খুশিতেই রাখবে। কারন তীব্রের মত মানুষেরা নিজেদের লুকিয়ে রাখে নিজেদের দায়িত্ববোধ আর বুদ্ধিমত্তার আড়ালে। যারা নিজেদের কখনো জাহির করে না। তাইত দুনিয়ার কাছে তাদের পরিচিতি হয় “মি. পারফেক্ট ” নামে।
এই তীব্রকে তায়ান চেনে না? যে বিপদের আগেই তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করত। সে এত বড় বিপদে চুপ করে বসে আছে? হয় তীব্র অবিবেচকের মত কাজ করছে নয়ত এমন কিছুর জন্য যা ধারনার বাইরে। মানুষ সব কিছুকে সাধারন ভাবে নিতে চায়। কিন্তু যখন তার সাথে “অ” অক্ষর যোগ হয় বিপত্তি বাধে তখন। কারন “সাধারনের” সাথে “অ” টা যোগ করলেই সেটা “অসাধারণ” হয়। তায়ান শব্দটার সব অক্ষর জানলেও শুধু “অ” অক্ষরটা রয়েছে তীব্রের কাছে। আর ওই একটা মাত্র অক্ষরি হচ্ছে গোলক ধারার সেই রহস্য সবটা সমাধান করার পর হার মেনে মানুষ সান্ত্বনা হিসেবে বলে, ” একটা জিনিসের জন্য পারলাম না। ” কিন্তু তারা এটা ভুলে যায় গোলক ধারার রহস্য থাকেই একটা জায়গায়। আর বাকি গুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য যে,” সে সব ধাপ অতিক্রম করতে পেরেছে শুধু একটাতে আটকে গেছে।এই সান্ত্বনার দুটো কারন…
১. যাতে সে নিজের আত্নবিশ্বাস না হারায়। আর
২. অন্যরা যাতে বুঝতে না পারে গোলকের ভিতর আসল রহস্য কোথায়? তারা যেন আবার প্রথম থেকে রহস্য উদঘাটন করে চায়। মানে তাদেরও পথ ভ্রষ্ট করা। ”
আনমনে তায়ান হাটতে হাটতে হঠাৎ করে পরে যেতে ধরে। তখনি কেউ ওকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে। বুঝতে বাকি থাকে না কে?
—– ” তোয়া এত রাতে তুমি এখানে ?”
—– “হুমম আমার বাড়িতে আমি থাকাটা কি স্বাভাবিক নয়? ” [ওকে ছেড়ে দাঁড়ায়। ]
—— ” তুমি কখন এলে? ”
—— ” অনেকক্ষন। তুমি নিজের ভাবনায় বিভোর ছিলে তাই ডাকিনি। তা রায়হানের কথা ভাবছিলে? ”
তায়ান কিছুই বলল না। কিছুক্ষন তোয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তোয়া খুব শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে….
_—- ” এত ভেব না। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
তায়ান কিছু বলল না। শুধু একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে “হুমম ” শব্দটা উচ্চারণ করল।
পরের দিন দুপুরের পর তায়ান নিজের বাড়ি চলে আসে। বিয়ের সব ঝামেলা শেষ হলে গেল তুরের বাবা নিজের বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। এই বাড়িটা তুরের জন্য এখন অভিশপ্ত মনে হচ্ছে। গতকালের পুরোটা দিন তুর নিজের ঘরের মধ্যেই ছিল। এমনকি বিয়ের সময় ও বাইরে বের হয়নি । পুরোটা সময় খোলা জানালার বাইরেটা দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে। শুষ্ক মুখের কান্নার ছাপ না থাকলেও অদ্ভুত এক অস্তিরতা ছিল । কিন্তু তা তুরকে উত্তেজিত নয় বরং নিস্তেজ করে দিয়েছে। যখন মানুষ কোন কিছুর সাথে পেরে উঠে না তখন যেমন শান্ত হয়ে যায় , ঠিক সেরকম। তুর আজ ঝড় উঠার আগের প্রকৃতির মতই শান্ত। আবার বলা যায় ঝড় বয়ে যাবার পর বিধ্বস্ত প্রকৃতি। কারন দুটি সময় প্রকৃতির একটাই রুপ পরিলক্ষিত হয় আর তা হচ্ছে
‘‘ নিরবতা ’’।
তুরের বাবা তার সিদ্ধান্তের কথা সবাইকে জানালে তাতে বাধা দিল তোয়া। কারন হিসেবে বলে যেহেতু তীব্রকে কাল কোর্টে তোলা হবে তাই তারা যেন এখানেই থাকে । কারন নিজেদের বাড়ি ফিরে গেলে সেখান থেকে আসতে ঝামেলা হতে পারে। তাছাড়া তোয়ার কাছে থাকলে ওর ভালো লাগবে। ওর বাবা খুব ভালো করেই জানে তোয়া ওনার মেয়ের খারাপ চাইবে না। যদিও ওনি থাকতে চান না। কিন্তু তোয়ার কথায় যুক্তি খুঁজে পেলেন। আসলেই নিজেদের বাড়ি গেলে আবার আসতে গেলে অনেক সমস্যা । তাই ওনি সিন্ধান্ত নিলেন রবিবারের শুনানির পরেই যাবে।
★—————————★—————————★
তুর নিজের ঘরেই বসে ছিলো। কাল পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখলেও এখন জানি কেমন অস্থির লাগছে৷ প্রতিটি মুহুর্ত পার হচ্ছে আর ওর মনে হচ্ছে ওর হৃদপিন্ডের ভিতরের একটা চাপা যন্ত্রণা অনুভুত হচ্ছে। গতকাল এমন হয়নি কিন্তু আজ? আজ যেন অস্থিরতা কমার নাম নেই। অনেক চেষ্টা করল নিজেকে শান্ত করার। কিন্তু পারছে না।
না চাইতেও বার বার তীব্রের কথা মনে হচ্ছে। তীব্রের কথা মনে পরতেই তীব্রের সেই কথা গুলো ওকে পাগল করে দিচ্ছে। শুধু কী ওর কথা? নাহ… ওর কথা গুলো না চাইতেও বাধ্য করছে সেই মুহূর্ত গুলো ভাবাতে৷ যা চায় না তুর। নিজেকে শান্ত করতে কিছুতেই পারছে না। বার বার শুধু এটাই জানতে ইচ্ছে করছে আসলেই তীব্র ওকে ছাড়বে কিনা? এটাকেও কি ছাড়া বলে? ওর থেকে দুরে অথচ সারাটা সময় না চাইতেও ওকে নিয়ে ভেবে চলেছে। তীব্রকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, ” কী করলে মুক্তি পাবে এই স্মৃতি নামক যন্ত্রণা থেকে? ” এভাবে আর কতক্ষন ? কাল কোর্টে ওর সাথে দেখা হবে। কিন্তু কাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। অস্থির হয়ে পরেছে ও। তীব্রের সাথে ওকে কথা বলতেই হবে?
তখনি তোয়া রুমে আসে। ও রুমে আসতেই তুর দৌড়ে তোয়ার কাছে। এক রকম অস্থিরতা নিয়ে বলে উঠে,
——- ” আপু আমি তীব্রের সাথে দেখা করতে থানায় যেতে চাই। ”
তুরের এমন অদ্ভুত আবদারে অবাক হলো তোয়া। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৪টা বাজে। ও এখন তীব্রের সাথে দেখা করতে যেতে চায়। একটু অবাক হয়েই বলে উঠে,
——- ” কাল ওকে কোর্টে দেওয়া হবে। কাল এমনিতেই দেখতে পাবি। ”
ওর কথায় বেশ রেগে যায় তুর,
——- ” তোমার কি মনে হয় আমি ওনাকে দেখার জন্য যেতে চাইছি। আমার ওনার সাথে কিছু কথা আছে। ”
তুরের এমন কঠোর কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে। নিজেকে সামলে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তুর আবার কড়া কন্ঠে বলে উঠে,
—— ” তুমি নিয়ে না গেলে আমি নিজেই যেতে পারব। ”
তোয়া বুঝতে পারল সেই আগের শান্ত তুর এখন নেই। তীব্র নামের নেশা চেপেছে এখন আর একে আটকানো যাবে না। তাই নিরবে সন্মতি জানালো ও। কাউকে কিছু না বলে বাইরে যাবার কথা বলে তুরকে নিয়ে বেড়িয়ে এলো। গাড়িতে বসে তুর পুরোটা সময় জানালার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আর তোয়া এটাই ভেবে চলেছিল কি অদ্ভুত এই দ্বন্ধ। এই দ্বন্ধে দুজনেই কাছে আসার জন্য পাগল। একজন প্রেমের বীজ বুনতে আরেকজন সেই বীজ গজিয়ে উপরে ফেলার উলায় জানতে।
থানায় গিয়ে তোয়া শাওনের সাথে দেখা করতেই শাওন ওদের পারমিশন দিয়ে দেয়। কারন তোয়া আগেই সানিকে ফোন করে জানিয়েছিল তুর তীব্রের সাথে দেখা করতে চায়। আর সানি শাওনকে জানায়। শাওন সানির ফ্রেন্ড। আর তোয়া সানির পরামর্শ নিয়েই শাওনের কাছে গিয়েছিল। আর সেদিন তীব্রের বাড়ি যাওয়ার আগে সানির কাছে গিয়েছিল তুর। সানির আর ওর মিথ্যে সম্পের্কের জোড় ভাঙতে। তখনি তীব্রের ব্যাপারে সবটা জানতে পারে সানি। তীব্রের বিয়ের প্রপোজাল আর সব কথা শোনার পর সানি বলেছিল তীব্রের মুখ থেকে সত্যিটা বের করতে। কিন্তু কিভাবে তা যখন ভেবে পাচ্ছিল না। তখন তুর নিজেই বিয়ের মিথ্যে প্লানটা করে। আর বাকি কাজ সানি করে দেয়। যাতে ফেসে যায় তীব্র।
তুরকে একা তীব্রের সাথে দেখা করতে দিতে চায় না শাওন। কিন্তু তুরের কথায় রাজি হয়। আর শাওনের মনে হয় তীব্র এখন নিজেকে বাচানোর জন্য হলেও তুরের ক্ষতি করবে না।
তীব্র চেয়ারে হাত কড়ি লাগানো অবস্থায় হাতটা সামনে থাকা টেবিলের উপর রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। আর বার বার আলত করে হ্যান্ডকাফ দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে খেলা খেলছে। মাথার উপর একটা লাইট জ্বলছে। আর ওর সামনে থাকা টেবিলের সামনে একটা চেয়ার। সম্ভবত যে ওর সাথে দেখা করবে তার জন্য। তীব্রের ভাব এমন যেন কিছুই হয়নি। খুব শান্ত ভাবে বসেই অপেক্ষা করছে বললে ভুল হবে আরেকজনের অপেক্ষার প্রহর শেষ করার জন্য বসে আছে। যেন ও জানত কারো অপেক্ষার অবসান ওকে করতে হবে। আর সে কেউটা হচ্ছে তুর।
তুর একটা রুমে ঢুকেই চেয়ারে বসা তীব্রের পীঠ দেখতে পেল। একজন কনস্টেবল ওকে দিয়ে চলে গেল। এতক্ষন মনে অদম্য সাহস থাকলেও এখন কেন জানি তা ভয়ে পরিনত হলো। ও এখানে তীব্রকে কিছু শোনাতে এসেছিল। কিছু প্রশ্নের উওর নিতে এসেছিল।কিন্তু এখন এটা বুঝতে পারছে না যে কি জিজ্ঞেস করবে? আদো কি এটা বলতে পারবে ওর কথায় অস্থির হয়ে বাধ্য হয়ে ও তীব্রের দ্বারে আসতে বাধ্য হয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে এক পা দু পা করে তীব্রের দিকে এগোতে থাকল। তীব্র কাছে হঠাৎ সব নিরব হয়ে গেল। বুঝতে বাকি রইল না সে এসেছে, তীব্র পিছনে না তাকিয়েই টেবিলে আলত করে হাত বারি দিতে দিতে বলে উঠল,
——- ” জানতাম আমাকে ছাড়া থাকা তোমার সম্ভব না। সেইতো এলে কিন্তু এতটা জালিয়ে তারপর। ”
কথাটা শুনে তুর রেগে গিয়ে ওর সামনে টেবিলের ওপাশে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসতে থাকে। ও কিছু বলবে তার আগেই তীব্র বলে উঠে,
——- ” আমাকে ছেড়ে থাকতে পারোনি বলেই এসেছ। ”
তীব্র ওখনো নিচের দিকে তাকিয়েই আছে। ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি। যা দেখে সইলো না তুরের। ও তীব্রের শার্টের কলার ধরে বলল,
——- ” ভাবেন কি নিজেকে? ”
এবার তীব্র শান্ত চোখে ওর দিকে তাকাল। টেবিলের এপাশে ও ওপাশে তীব্র। তীব্রের চোখে চোখ পরতেই আপনাতেই তুরের হাতের বাধন আলগা হয়ে এলো। এই চোখ দুটোতে না চাইতেও তুর বার বার ডুবে যায়। আজও যাচ্ছে। গভীর সেই চাওনী। যে কেউ এর নেশায় পরে যাবে। তুর ওকে ছেড়ে দিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতেই তীব্র বলে,
——- ” আমার কথায় এতটা ভয়? যাও আর বললাম না। তোমার কথাই শুনি। আমাকে দেখে নিজের অস্থিরতা দুর করতে এসেছ নাকি আমি কতটা অস্থির তোমার জন্য তা দেখতে এসেছ। ”
কিছু বলবে না বলেই আবার ফোড়ন কাটল। তুর এবার নিজেই ইতস্তত। কী জিজ্ঞেস করবে ও? কারন যাই জিজ্ঞেস করবে তার বাকা উত্তরই পাবে। কিন্ত এটাও ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে ওর এই অস্থিরতা দুর করবে।
তুর কিছু ভেবে পেল না। ওর এখানে আসার কোন যুক্তিযুক্ত কারন ও নিজেই জানেনা তীব্রকে কি বলবে? তাই ও কোনমতে নিচের দিকে তাকিয়ে এটা জিজ্ঞেস করল,
—— ” আপনি কেন করছেন এরকম?”
এটা শুনে তীব্র তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। তারপর বেশ কঠোর গলায় বলল,
—— ” কথা বলতে হলে চোখে চোখ রেখে বলো। অপরাধী আমি তুমি নও। আর আমি কিছুই করিনি। করলে অবশ্যই বলতাম । কেন করেছি, কী করেছি সব?”
তুর এবার রেগে টেবিলে দুহাত বারি দিয়ে বলে উঠে,
——- ” আমার লাইফটা নষ্ট করেও শান্তি হয়নি আপনার। এখন আমাকে মানসিক ভাবে যন্ত্রণা দিচ্ছেন। কেন করছেন এমন? কী শান্তি পাচ্ছেন আপনি? আর কী চাই বলুন? ”
তীব্র একদৃষ্টিতে ওর দিকে এতক্ষন তাকিয়ে ছিল।ওর কথা বলা শেষ না হতেই হঠাৎ তীব্র চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজের হ্যান্ডকাফ লাগানো হাত দিয়ে তুরের টেবিলে থাকা হাত চেপে ধরে। তুর কিছু বুঝতে পারার আগেই তীব্রকে নিজের খুব কাছে দেখতে পায়। তুরের মনে হল ওর ভিতরে কেউ জলন্ত লাভা ঢেলে দিল। যা শিরা-উপশিরা বেয়ে সারা শরীরে বৈদ্যুতিক শকডের মত কম্পন দিতে লাগল। কাপতে কাপতে তুর নিজের চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।
কারো পায়ের আওয়াজে তীব্র নিজের আগের অবস্থানে এসে বসে পরল। কি হল না হলো তুর কিছুই বুঝতে পারল না। ও নিজের নিজের হাতটাকে অবাক ভাবে দেখতে লাগল। শরীর প্রচন্ড বেগে কাপছে। তীব্র নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
——- ” তোমার কাছে আগে আমার চাওয়ার শুধু একটা জিনিস ছিল। কিন্তু তুমি আমাকে বাধ্য করেছ তাতে রুহকে সামিল করতে। রুহকে সামিল করে যখন তার লোভ আমাকে দেখিয়েছ এখন তো আমাকে লোভী বললে আমি মানব না। লোভ যখন নিজেই দেখিয়েছ এখন লোভী না বলে আমাকে তা হয় তুমি বুঝিয়ে দেবে নাহলে তা আমাকেই উসুল করে নিতে হবে। ”
তুর এখনো নিজের ঘোরে আছে। আর তীব্রের কথার মানে বোঝা ওর কাম্য না। ও পূর্বের ন্যায় দাড়িয়েই আছে। তখনি শাওন প্রবেশ করে। তুরের পাথরের মুর্তি দেখে ওকে ডাকে। কিন্তু তুর কোন রেসপন্স করে না। ও আলত করে তুরকে ঝাকাতেই ও একবার শাওন আরেকবার তীব্রের দিকে তাকায়। তীব্রের আবারো টেবিলে বারি দেওয়ার খেলায় মক্ত। শাওন কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওকে অবাক করে দিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে যায়। এটা দেখে ও তীব্রকে উদ্দেশ্য করে বলে,
——- ” কি করেছিস ওর সাথে? ”
তীব্র ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে হেয়ালি কন্ঠে বলল,
——- ” অপরাধের কথা অপরাধীর মুখ থেকে জানতে চাইছেন ইন্সপেক্টর। সে কি সত্যি কথা বলবে। আপনি না হয় ভিক্টিমের কাছ থেকেই জেনে নিন কি হয়েছে? তবে……। যদি সে ব…..লে তো। ”
তীব্রের হেয়ালীর মানে বুঝল না। ওকে আবার নিজের জায়গায় ফেরত পাঠালো। তীব্র সেখানে গিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে বলল,
—— ” কাল কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। সেই ধৈর্য হলো না। ছুটে চলে এলে। থাকবে কি করে আমাকে ছাড়া। কাল অনেক কিছুর ফয়সালা হবে। আমার যা চাই তারজন্য আমাকে আরো অপেক্ষা করতে হবে।তবে এটাও সত্য আমার আগের চাওয়া এখন আর নেই। সারাংশ এখন সম্প্রসারনের রুপ নিয়েছে। ”
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]