বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤Part: 19..+20
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#…..

-_- আচ্ছা আগে কেকটা বানিয়ে ফেলি তারপর নাহয় বিয়ে,হানিমুন, বাচ্চা কাচ্চার সব প্লান হবে।

— ধুর….

তীব্র নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরল তার তুর ওকে দেখতে লাগল।

— এখানে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে না দেখে রুমে যাও। আমি কেকটা বানিয়ে নিয়ে আসছি।

— আজকে আর কেক খাওয়া.. [ একটা ভেংচি কেটে চলে গেল ]

এইটা দেখে তীব্র এক গাল হেসে দিলো।

তুর কেকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে প্রায় ঘুমিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তখনি তীব্র আসে….

— এই নেও হয়ে গেছে…

তুর বড় সড় একটা হাই তুলে কেকটা দেখে। দেখে অবাক হয়ে তীব্রের দিকে তাকায়।

— Wow… এত সুন্দর একটা কেক। ভাবা যায়… [ আজকে খাওয়াটাই মাটি ]

— আচ্ছা তুমি দেখ আমি আসছি।

তীব্র চলে আসতে নেয় ঠিক তখনি তুর ডাকে….

— আচ্ছা আমাদের বিয়ে কোথায় হবে? এই বাড়িতে….

কথাটা শুনে তীব্রের পা থমকে গেল। ও শান্ত ভাবে তুরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে তোলে….

— তুমি কোথায় চাও?

— আমি তো চাই যে শহরে আমার জন্ম হয়েছে সেই শহরে। কিন্তু আমি তো মেবি এখন চট্টগ্রামে তাই না।

তীব্র একটা হাসি দিল। কারন ওরা যে চট্টগ্রামে নেই তা তুরের অজানা।

— তুমি যা চাইবে তাই হবে….

তারপর চলে যায় তীব্র…. তুর কেকটা দেখে নেয়। অনেকটা পুরে গেছে। কিন্তু সেটা খাওয়ার রুচি বা মানসিকতা কোনোটাই ওর নেই। পোড়া নয় বলে তীব্রের হাতের ছোয়া আছে বলে। অতীত মন থেকে মুছে তীব্রের জন্য মনে একটা অতিরিক্ত বিষাদময় কিছু বিষ বৃক্ষের চাষ হয়েছে ওর মনে। তীব্রের কথা ভাবলেও সেখান থেকে হয় কাটা পায় না হয় বিষ……

ও কেকটাকে দেখে। কিন্তু তা ছুতেই যেন গা গুলিয়ে আসে তুরের। অথচ দিনের পর দিন মুখ বুজে ওর ছোয়াগুলো সহ্য করে যাচ্ছে তাও আবার মুখে হাসি ফুটিয়ে।
,

,
,
,
,
,তীব্র বাইরে গিয়ে রিদ্ধকে ফোন করে কিন্তু কল ট্রান্সফারের মাধ্যমে। কারন তীব্র কোথায় সেটা যেন কেউ চাইলেও ট্যাপ করতে না পারে। এমনকি রিদ্ধ নিজেও জানেনা তীব্র কোথায় আছে….. কোন দেশে তা জানলেও কোথায় তা জানে না।

_- হ্যাল রিদ্ধ..…

— স্যার আপনি কবে ফিরবেন। বিগত ১ মাস আপনার কোনো খোজ নেই। এখানে সবাই আপনার খোজ করছে বিশেষ করে তায়ান ভাইয়া। আমি প্রতিদিন ওনাকে কিছু না কিছু বলে ম্যানেজ করছি.….

— আমি দেশে ফিরছি ৩দিনের মধ্যে….

— ওকে স্যার। আমি আপনার জন্য সব রেডি করে রাখছি…. আর আপনার দেশে আসার ব্যবস্থা করছি…..

— একদম না রিদ্ধ।

-_ মানে…

— মানে আমি যে আসছি তা যেন কেউ জানতে না পারে। আমি এসে আমার বাড়িতে যাব না। গাজিপুরে যে বাংলোবাড়ি আছে সেখানেই যাবো।

— কিন্তু কেন স্যার?

— কারন আমি তুরকে নিয়ে আসছি।

— স্যার আপনি কি তুরকে ফিরিয়ে দেবেন।

— নাহহ….

— তাহলে…

— বিয়ে করব। আমি তুরকে বিয়ে করতে চাই। আর তার সমস্ত ব্যবস্থা করো। তবে সাবধান ভুলেও যেন এটা কেউ টের না পায়। আমি ওখানে বেশিদিন থাকব না। বেশি হলে ২ দিন তারপর আবার তুরকে নিয়ে ফিরে আসব। আর যেখানে আমরা থাকব তার সিকিউরিটির ব্যবস্থা এমন ভাবে করো যাতে ভিতরে একটা মাছি মশাও না গলতে পারে।

— সেটা ঠিক আছে স্যার। কিন্তু বিয়ে…..

— সেটা তুমি বুঝবে না। ওকে আমি ধর্ম মতে নিজের স্থী হিসেবে গ্রহন করতে চাই।

— স্যার সেটা ঠিক আছে কিন্তু এত রিক্স নিয়ে এখানে আসার কি দরকার যেখানে আপনি নিজেই তুরকে খোজার জন্য এতকিছু করেছেন। সেখানে যদি কোনোভাবে কেউ জানতে পারে তুর আপনার কাছে কিহবে ভাবতে পারছেন? এতটা রিক্স নেয়া ঠিক হবে স্যার..

— সেইজন্য তোমাকে সবটা গোপনে করতে বলেছি। যে ২দিন আমি সেখানে থাকব তার মাঝে কেউ যেন কিছু জানতে না পারে।

— ওকে স্যার….

— সব রেডি করো….

তারপর ফোনটা কেটে দেয় তীব্র। অদ্ভুত এক অনুভুতি গ্রাস করছে তীব্র। কিন্তু তা নিয়ে বেশিক্ষন ভাবলে চলবে না। ও দ্রুত তুরের কাছে যায়। তুর ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছিল। তীব্র গিয়ে রিমোট টা দিয়ে টিভি বন্ধ করে সোফায় বসে। তুরের দিকে তাকাতেই দেখে ও ঠোঁট উল্টে কান্নার ফেস করে রেখেছে…

— কিহল কাদঁছো কেন?

— আপনি টিভিটা বন্ধ করলেন কেন? [ চিপস খেতে খেতে ]

তীব্র কিছুক্ষন চুপ করে রইল। অনেক ভার নিয়ের তুরকে বলল..…

— তৈরি হও তুর। এই সপ্তাহের মাঝে তোমার আর আমার বিয়ে হবে।

কথাটা শুনে দুজনের মাঝেই কিছুক্ষন নিরবতা বিরাজ করল। পিনপন নিরবতাকে কাটিয়ে তুর বলে উঠল….

— ঠিক কবে….

ওর চোখের চাওনীতে অন্যরকম কিছু চাওয়া দেখতে পেল তীব্র। ইচ্ছে করছে না বলতে কিন্তু তবুও বলল….

— সেটা কবে বলতে পারছি না তুর। এইটুকু যেন রাখ সেই দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত দিন হবে। আর তোমার কাঙ্ক্ষিত আশার….. দেখি কারটা পুরন করে ভাগ্য….

তুর কিছু বলল না। তীব্রের কথাটাই এমন এলোমেলো ছিল তা গোছানোর ধৈর্য তুরের নেই। ও বসা থেকে উঠে তীব্রের কাঁছে গেল। এটা দেখে জিজ্ঞেসুর দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকাতেই খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তীব্রকে…. তীব্র কোনো রিয়েক্ট করে না শুধু নিজের চোখ জোরা বন্ধ করে নেয়। নিজের বুকে তুরের গরম নিশ্বাস আর হালকা ঠোঁটের ছোয়া পায়….

— আপনি নিজেও জানেন না তীব্র আপনার বন্ধ দরজার বন্দীনী আপনার তুমি হওয়ার জন্য কতটা অপেক্ষা করছে। নিজের ভালোবাসার মানুষের স্ত্রী হওয়ার মত সৌভাগ্য কয়জনের হয়।

তীব্র কিছু বলল না। শুধু শুকনো ঠোঁটে আলত মলিন হাসি ফুটিয়ে তুলল…. গভীর ভাবে ওর কপালে ভালোবাসার মৃদু পরশ আকে। শুধু এই কথাটাই ওর মুখে উচ্চারিত হয়….

— তৈরি থেক নিজের ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নেওয়ার জন্য।

এটা শুনে কিছুটা অবাক হয় তুর.…

— আপন করব মানে…..? আমি তো….

— কিছুনা।

[ আবার মৃদু হাসিতে তুরকে ছাড়িয়ে চলে যায়। তুর বোকার মত ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে বুঝতে পারে না লোকটাকে।
,
,

,,

,,

,
,
,অদ্ভুত ভাবে সারাদিনে তুর তীব্রের দেখা পায় না। অনেকরাত হয়ে গেলেও তীব্র ফেরে না। ওর অপেক্ষায় এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে যায় তুর। সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখে তীব্র ওর কাছে। হতবাক হয়ে সরে যায়। কারন তীব্র খাটে মাথা দিয়ে মেঝেতে বসে ঘুমিয়ে আছে তাও তুরের পায়ে হাত দিয়ে…. এমনটা আশা করেনি তুর। ও গিয়ে তীব্রের মাথায় হাত বুলাতেই তীব্রের ঘুমের রেশ কাটে…. ও তীব্রের দিকে তাকাতেই একটা প্রশান্তির হাসি দেখতে পায় ঠোঁটে…..

— কি হয়েছে আপনার? আমার পায়ের কাছে পরে আছেন কেন?

— পায়ের কাছে কোথায়? আমি তো তোমার সামনে বসে.….

— সেটা তো আমি নিয়ে এসেছি।

— ও আচ্ছা….

উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়।

— পাগল তো আগেই ছিল এখন কি বিবাগী হতে চায় নাকি রে বাবা। সেটা যাই হোক আমার বিয়েটা হলেই হবে….
,
,
,
,

,,

,
,ফ্রেশ হয়ে আসতেই তুর ফ্রেশ হতে চলে যায়। এসে দেখে তীব্র খাচ্ছে… এটা দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় ওর দিকে…. এই মাসের ১দিনো তুরকে ছাড়া খায়নি তাহলে আজ। তীব্র ওর দিকে না তাকিয়ে বলে উঠল….

— কাল সারাদিন আমি কিছুই খায়নি। তার খবর নেওয়ার প্রয়োজন পরেনি তোমার। আমি এখন খাচ্ছি বলে চোখে বাধছে নাকি।ন
কথাটা শুনে তুরের শুকনো গলায় কাশি উঠে। এই লোকটা আসলেই কি?

— আরে আজব ত আপনি খাননি তো আমি কি করব? আমি কি আপনার বউ নাকি?

— তাহলে আমি বিয়ে করছি কাকে?

— দেখুন আগে বিয়েটা করুন তাহলে বউয়ের মত খেয়াল রাখব। তার আগে আপনার বউ হবার ফরমায়েশ খাটতে পারব না।

_- মানে কি? বিয়ের পর দাসী থাকতে রাজী অথচ রানী হয়ে থাকতে রাজি নয় তাই না। [ খেতে খেতে ]

— আপনি…. [ রেগে গিয়ে ] আমিও বা কি কার কাছে কি বলছি? আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার।

তীব্র নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে…. তুর চলে যেতে ধরেও থেমে গেল। তারপর অভিমানী গলায় বলে উঠল.. ….

— বিয়ের পর স্বামীর সেবা করতে মেয়েরা কখনো দাসী হয় না। বরং তার সংসারের কাজ আর স্বামীর সেবা করেই সে সেই ঘরের রানী হতে পারে। আর সেটা যে কি সন্মানের হয় সেটা আপনি বা আপনাদের মত কিছু পুরুষ বুঝবেন না।

বলেই তুর চলে গেল। আর তীব্র খাবারটা মুখে দিতে গিয়েও দিল না। খাবারটা যেন গলায় আটকে গেল। তীব্র তা ছেড়ে উঠে গেল…..

,
,
,

,

,

তুরের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কেন এমনটা হচ্ছে বুঝতে পারছে না। একটা মুহূর্ত যেই তীব্র ওকে শান্তি দিত না। একটার পর একটা আবদার নাহলে অর্ডার করে ক্লান্ত করে দিত আজ সারাদিনে বাসায় থেকেও তুরের সাথে একটা কথাও বলেনি। এমনকি ভালোভাবে ওর দিকে তাকিয়েও দেখেনি। কিসব পেপার আর ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। তুর বার বার ওর সাথে কথা বলার জন্য গেলেও বার বার ইগনোর করেছে ওকে… তুরের রাগটা যেন এবার কন্ট্রোল করার মত না। ও গিয়েই তীব্রের ল্যাপটপটা কেড়ে নিল। বেশ বিব্রত হলো তীব্র….

— আমার ল্যাপটপটা দেও।

_- দেব না।

— তুর দেখ আমার মেজাজ গরম করোনা। ল্যাপটপ টা দেও।

— বললাম তো দেব না।

বলেই ল্যাপটপ টা ধরে একটা আছাড় মারল। এটা দেখে তীব্র বেশ রেগে যায়….

— এটা কি করলে তুমি? [ প্রচন্ড রেগে ]

— বলেছি তো দেব না। তাহলে।চাইলেন কেন?

— বেশি লাই দিয়ে মাথায় উঠিয়ে দিয়েঁছি। আমার মুখে মুখে তর্ক করছ….

— করেছি বেশ করেছি।

— তুর….

তুরকে থাপ্পড় মারতে ধরলেই ও চোখ বন্ধ করে নেয়। এটা দেখে তীব্র নিজের হাত নামিয়ে নেয়।

— কি করবেন মারবেন? তাই করুন। যেটা বাকি আছে সেই স্বাদও পুরন করে নিন। [ ছলোছলো চোখে ]

এটা শুনে তীব্র হালকা হাসে… তারপর ওর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।

— আচ্ছা বাদ দেও এবার বলো কি হয়েছে?

— আপনি আমার সাথে আজ সারাদিনেও কথা বলেননি কেন?

— ও এই ব্যাপার… ১ মিনিট…

বলেই তুরের মুখে কিছু স্প্রে করে। মুহুর্তেই ওর কাশি উঠে যায়।

— এটা কি তীব্র….

— একটু পর বুঝতে পারবে।

মুহূর্তেই তুর ওর কোলে ঢোলে পরে। তীব্র তুরকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। কপালে চুমো দেয়…

— আমার দুর্বলতা এভাবে কাজে লাগানো উচিত হয়নি তোমার। তোমাকে আমি মারব না তুমি জানো আর তাই…..

ওকে শুইয়ে নিজের কাজ শেষ করতে চলে যায়। ওকে সব কিছু গুছাতে হবে তাও তুরের অলক্ষে। আজ রাতেই ওর বাংলাদেশের ফ্লাইট। তবে এবার আর ও আগের মত তীব্রের ওয়াইফ হিসেবে যেতে পারবে না। ওকে sR হাসপাতালের পেসেন্ট হিসেবে নিয়ে যাবে। যার পুরো দায়িত্ব হাসপাতালের উপর।

— বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার কারন দুটো। তোমার ইচ্ছে…. আর আমার প্রাপ্তি…

তারপর সবকিছু গুছিয়ে তুরকে নিয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশে…… বাংলাদেশে আসতে Sr হাসপাতালের একটা অ্যাম্বুলেন্সে এয়ারকমিটি নিজেই তুলে দেয় ওর কাগজপত্র দেখে। সেখান থেকে মাঝ পথে তুরকে নিজের গাড়িতে নিয়ে নিজের বাংলো বাড়িতে নিয়ে যায় তীব্র। রিদ্ধ আগে থেকেই সবটা রেডি করে রেখেছিল।

তীব্র সোজা তুরকে ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। তীব্র ওকে শুইয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর নিজেক তুরের পাশে শুয়ে ওকে বুকে জড়িয়ে নেয়। তীব্র আর দেরি করতে চায় না। কালই বিয়ে হবে ওর আর তুরের….

চোখে আলো পরতেই ঘুমটা হালকা হয়ে আসে তুরের। হঠাৎ ওর চিরচেনা কিছুর আভাস পায়। বাতাসে অন্যরকম কিছু ফিল হচ্ছে… অনেক দিন পর চেনা কিছুর আভাস পেল। জানিনা কেন এতদিন আবহাওয়াটা অচেনা লাগত নিজের না। আজ যেটা নিজের মনে হচ্ছে….. ও বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে কচলাতে কচলাতে ঘুম থেকে উঠে তুর…. তখনি কারো গলার গম্ভীর আওয়াজ পায়…

— গুড মর্নিং মাই লেডি…..

— গুড মর্নিং…

বলে আবার শুয়ে পরে। এটা দেখে তীব্র হ্যাচকা টানে বিছানার কোনে নিয়ে এসে ওকে কোমর ধরে বসিয়ে দেয়….. ঘটনাটা এতটা দ্রুত ঘটে সবটা তুরের মাথার উপর দিয়ে যায়। ও চোখ বড় বড় করে তীব্রের দিকে তাকায়….

— তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো। কাজ আছে আমার…

একহাতে তুরের কোমর আরেকহাতে তুরের থুতনি ধরে। তুর সম্পুর্ন ভর তীব্রের কাধে যদি সরে তাহলে একেবার মাটিতে মুখ থুবড়ে পরবে…..

— কি বলেছি বুঝেছ..…

— হুমম… [ মাথা নাড়ায় তুর ]

তীব্র ওকে সোজা করে দিতেই ওয়াসরুমে ভো দৌড়।

— এ আমি কাকে বিয়ে করেছি রে বাবা….

তুর ফ্রেশ হয়ে আসতেই। তীব্র ওকে ধরে খাটে বসিয়ে দেয়…. তুর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীব্র ওকে বলে….

— এখনি দেখতে পাবে….

তীব্র মেহেদী দিয়ে তুরের হাতে মাঝ বরাবর ছোট করে কিছু লেখে। পুরোটা না বুঝলেও উপরের লেখাটা T সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না।

তীব্র লেখা কমপ্লিট করে কাকে যেন আসতে বলে। তখনি দুটো মেয়ে রুমে প্রবেশ করে। তীব্র সরে যেতেই তারা ওর হাতে মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। তুর অবাক হয় কিন্তু কিছু বলে না। একদিকে সকাল বেলা অনাগত অতিথি তার উপর পেটের ইদুর। দুহাতে মেহেদির জন্য খেতেও পারে না। বেশ বিরক্তি নিয়েই বলে….

— আচ্ছা না খেয়ে মরে গেলে আমি মরব। তাতে আপনার কি আসে যাবে আপনি তো ঠিকি আরেকমেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবেন…. 😡

তীব্র আর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেল। রাগ উঠলেও তা প্রকাশ করল না। ও গিয়ে তুরের জন্য নাস্তা নিয়ে তুরের সামনে দিল…

— আল্লাহ নাক দিলা মানলাম কিন্তু হাতির মত শুড় দিলা না কেন? তাইলে নাক দিয়েই খেতাম হাত তো বাধা…

তীব্র রেগে গিয়েই ওকে খাওয়াতে থাকে। এটা দেখে তুর আরো বেশি অর্ডার করে। কারন জানে এই মেয়েদের সামনে ও কিছুই বলবে না। আর মেয়েদুটো মুখ টিপে টিপে হাসতে থাকে। খাওয়ানো শেষ হলে ওরা আবার নিজেদের কাজে মন দেয়। হাতে মেহেদি পরানো শেষ হলে ওরা বিদায় নেয়। আর তীব্র ওর পাশে বসে….. ব্যাথায় হাত টনটন করছে তখনি হাতটা পরে যেতে নেয়। আর তীব্র ধরে ফেলে। মেহেদী শুকানো না পর্যন্ত তুরের দুহাতের ভর তীব্রের হাতে। আর তুর ওর বুকে মাথা দিয়ে নিজের অলসতা দুর করে। এভাবে কতক্ষন বসে থাকে তীব্র জানা নেই। মেহেদী শুকানোর পর তীব্র নিজেই তুলে দেয়। আর বিছানা থেকে না নামার কথা বলে…. তখনি তুর ওকে ডাকে…

— আচ্ছা আমরা এখন কোথায় আছি…

— গাজিপুর আমার বাংলো বাড়িতে….

তারপর চলে যায়।

,
,
,
,

,
,,
দুপুরের দিকে তুর শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াসরুমে ঢুকতেই তীব্র বাধা দেয়… তুরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লক করে দেয়.….

— একি আপনি…. 🙄

— কেন কোন সমস্যা…

—- নাহহ.. এই নাহ সমস্যা আছে। আমি এখন গোসল করব।

— আমিও তো সেইজন্যই এসেছি কারন তুমি গোসল করবে…

—- মানে… 😱

— মানে আবার কি?

বলেই পিছনে ফিরে কিছু একটা করে তীব্র। য়ুর উকি মেরে দেখার চেষ্টা করে…

— সালা লম্বু জানি কোথাকার..

হঠাৎ পিছলে পরে যেতে নেয় আর তীব্র ধরে নেয়। তীব্রের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে কিছুটা সন্দেহ নিয়ে ওকে দেখে…

— আচ্ছা “কানচানা” মুভির মত আপনার ঘাড়েও কি ভুত উঠছে….

— মানে?

— তাহলে মেয়েদের মত পুরো মুখে হলুদ কেন?

— সেটা এখনি দেখতে পাবে.…

এক ঝটকায় তুরের হাত দুটো দেয়ালে চেপে ধরে। নিজের গালের হলুদ তুরের গলায় গালে মেখে দেয়। তুর প্রথমে ছটফট করলেও পরে শান্ত হয়ে যায়। তীব্র আলত করে একটু একটু হলুদ নিয়ে ওর হাত জোরা আর গলায় মাখিয়ে দেয়….

— শুনেছি বিয়ের সময় হলুদ ছোয়াতে হয় বরের গায়ের। এখানে তো তেমন কেউ নেই তাই আমি দিয়ে দিলাম।

তুর একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তীব্রের দিকে।

— হলুদ তো লাগালাম বাকি আছে মিষ্টি।

তীব্র আলত করে ওর ঠোঁটে আলত পরশ বুলায়।

— তারাতাড়ি বের হয়ে এসো… [ মুচকি হেসে ]

তীব্র বেড়োতেই তুর হাটু গেড়ে বসে পরে। ওর কেমন রিয়েক্ট করা উচিত জানা নেই।

,
,

,
,
,

,

সারাদিন বিছানায় শুয়েই কেটে যায় তুরের। সন্ধ্যার পর পার্লারের মেয়েগুলো আসে। তীব্রের কথা অনুযায়ী হালকা মেকাপ আর লাল শাড়িতে বউয়ের মত সাজায় তুরকে।

এখন শুধু অলংকার পরানো বাকি। তখন তীব্র ওদের বেড়িয়ে যেতে বলে। ওরা চলে যায় আর তুর উঠে দাড়ায়… কিন্তু তীব্র ওকে আবার বসিয়ে দিয়ে আয়নার নিজেদের দুজনকে দেখে বলে…..

— আমার চাদ এতটা আলো দেয় জানা ছিল না। এই আলোতে সারাজিবন ভিজলেও হয়তো স্বাদ মিটবে না।

তুর কোনো কথা বলে না। তীব্র সবটা গহনা এক এক করে তুরের শরীরে জড়িয়ে দিতে থাকে।

— হয়ে গেছ তীব্র আপনার বউ সাজানো।

— নাহহহ.…

— আর কত?

— নজর ফোটা যে এখনো বাকি মানে…

— মানে….

— মানে….

আলত হেসে তুরের গলার নিচের সেই বাইটের জায়গায় স্পর্শ করে। আলত করে স্পর্শ করে সেখানে গভীর চুমো আকে তীব্র। তারপর তুরের হাতের পিঠে চুমো দিয়ে বলে….

— তৈরি হও তুর। একটু পর শরীয়ত মোতাবেক তুমি আমার স্ত্রী হতে চলেছ। আমাদের সম্পর্ক ধর্মীয় ভাবে বৈধ হতে চলেছে।

তুর কিছু বল না। শুধু অশ্রুসিক্ত চোখে মাথা নাড়ল। কিন্তু চোখের পানি কিসের জন্য তা বুঝতে পারল না।

তীব্র চলে গেল রুম থেকে। রিদ্ধ আর ম্যানেজার এসেছে। ম্যানেজারকে খুশি দেখাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। হয়তো ওনি এটাই চেয়েছেন। যে হুজুরকে ডেকে আনা হয়েছে তিনি সবটা তৈরি করে নিচ্ছেন।
,
,

,বেশ খানিকক্ষণ পর হুজুর তুরকে নিয়ে আসতে বলে। তীব্র তুরকে আনার জন্য রুমে যেতেই থমকে যায়।

কিছুক্ষন পর রিদ্ধ আসে….

— স্যার সবাই অপেক্ষা ক….. স্যার…

তীব্র খাটের উপর বসে একটা পুতুল নিয়ে খেলছে।

_- স্যার আপনি বসে আছেন কেন? নিচে সবাই অপেক্ষা করছে…. আর তুর মেম কই?

— ও তো চলে গেছে রিদ্ধ….

— চলে গেছে মানে…… [ বেশ অবাক হয়ে ]

— ওদিকে দেখ….

,
,

,
,
,
,
তুর রাস্তায় দিয়ে বউয়ের বেশে কোন মতে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে কোনোমতে মেইন রাস্তায় এসে পরে….

— আপনার বিয়ে আপনাকে মোবারক হোক মি. তীব্র। আপনার মত পশু রুপী মানুষকে বিয়ে করার চেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়াটা বেশি সহজ মনে করব।

তখনি দুর থেকে একটা আলো দেখতে পায়। আলোটা ধীরে ধীরে কাছে আসছে….

_- সরি মা… সরি বাবাই.. তোমাদের সাথে হয়ত দেখা হবে না। আমি যদি আজ বেচে যাই আর ওই লোকটার হাতে পরে যাই তাহলে আমার কি হবে আমি জানিনা। এতদিন ওনার পুতুল থাকলেও এবার আমি জানিনা আমার কিহবে? এর চেয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়াই ভালো…..

বলেই সামনে আসা গাড়ির নিচে ঝাপ দেয় তুর……

,
,

, ওদিকে…

— স্যার বসে আছেন কেন? ওনাকে খুজতে হবে?

— যে নিজে চলে যায় তাকে পাওয়া যায় না।

— কিন্তু স্যার।।।।

— I need her… যেখান থেকে পারো নিয়ে আসো। আমি ওকে আমার চোখের সামনে দেখতে চাই।

রিদ্ধ কিছু বুঝতে পেরে বেড়িয়ে গেল।

— অভিনয় তুমি ভাল করলেও অতটা ভালো অভিনেত্রী নয় তুমি তুর। আমাকে নিজের মন থেকে বিয়ে করতে চাও না আমি জানতাম। কিন্তু আমাকে ছেড়ে গিয়ে একদম ঠিক করোনি তুমি। মিথ্যে অভিনয় হলেও তুমি আমার কাছে আমার হয়েই ছিলে। কিন্তু তা তুমি করলে না। শাস্তি তো তোমায় পেতেই হবে….

,
,
,
,
,
,

,
,
ওদিকে…. গাড়ি দ্রুত ব্রেক করার কারনে বাড়ি খেয়ে তুর নিচে পরে যেতেই গাড়ি থেকে একটা ছেলে দ্রুত নেমে আসে…. তুর ঝাপসা চোখে কোনো ছেলেকে দেখে….

— এইযে শুনছেন..

কিন্তু তুর কোন জবাব দিতে না পেরে জ্ঞান হারায়।।।

,
,
,#বন্ধ_দরজায়_তুমি🖤
#Written_By_Mêhèriyâr_Mêhèr
#Part: 20…….

ওদিকে…. গাড়ি দ্রুত ব্রেক করার কারনে বাড়ি খেয়ে তুর নিচে পরে যেতেই গাড়ি থেকে একটা ছেলে দ্রুত নেমে আসে…. তুর ঝাপসা চোখে কোনো ছেলেকে দেখে….

— এইযে শুনছেন..

কিন্তু তুর কোন জবাব দিতে না পেরে জ্ঞান হারায়।

আর ওদিকে তীব্র রুমে থেকে বেড়িয়ে প্রচন্ড জোরে চিতকার করতে থাকে। বাড়ির সবাই জরো হয়ে যায়। সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে আছে….. রিদ্ধ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস বলল….

— স্যার…

— এতো টাইট সিকিউরিটির পর তুর পালালো কিভাবে…

— স্যার আমি ভাবিনি তুর পালাবে। তাছাড়া আমি তো….

— তোমার কি মনে হয় আমি কারো ভয়ে তোমাকে সিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে বলেছিলাম। 😡

— সরি স্যার….

— আমি জানতে চাই তুর কিভাবে পালালো।

তখনি একজন রান্নার লোক এসে বলল…. ম্যাম রান্না ঘরে দিকে গিয়েছিল। আমি কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে সে বলল…. তাকে শরবত করে দিতে। আমি বললাম রান্না ঘরে থাকা ড্রাম গুলো বুঝিয়ে আসি। তারপর আমি আমার কাজ শেষ করে রান্নার ওনার জন্য শরবত বানিয়েছি। কিন্তু দোতলার রুমে গিয়ে তাকে পাইনি।

তীব্রের বুঝতে বাকি রইল না তুর কিভাবে বাড়ির বাইরে গেছে। ও দ্রুত বাড়ির বাইরে ড্রামের গাড়ির কাছে যায়। আর একটা ড্রাম হেলানো দেখে… তারমানে ওর ধারনা সঠিক ও এই ড্রামের ভিতরে ঢুকেই বাইরে এসেছে।

— তুর ভাগ্যের জোরে তুমি আজ আমার থেকে পালালে। দেখি এই ভাগ্য কতক্ষন সাথ দেয় তোমায়। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে তোমার নজরে পবিত্র করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তা হতে দিলে না। এবার তীব্রের হিংস্র রুপটাও তুমি দেখবে…. রিদ্ধ…

— স্যার….

— ওর যত আত্নীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাছের যারা আছে সবার বাসায় লোক পাঠাও এখান থেকে পালালেও যেন ওদের কাছে পৌঁছাতে না পারে।

[ তুরকে খোজার নাম করে তোয়ার কাছ থেকে সব ইনফরমেশন নিয়েছে তীব্র। তাই আর কোনো সমস্যা নেই এইটুকু সময়ে সবটা ব্যবস্থা করার….]

ওর লোক অনেক আগেই তুরকে খোজার জন্য গেছে। তীব্র নিজেও বেড়িয়ে যায়। আজকে তুরকে হাতে পেলে যে ও কি করবে তার ধারনা তীব্রের নিজেরো নেই। ওর একটাই কথা ওর তুর চাই। তাও যেকোনো মুল্যে…..

,
,
,
,

ওদিকে তুরের কপাল থেকে রক্ত পরতে দেখে ছেলেটা ঘাবড়ে গেল।

— আচ্ছা আপদ জুটলো তো। আরে ভাই মরার জন্য আমার গাড়ি পেলে। আর কাউকে পেলে না। এখন যদি পুলিশ জানতে পারে তাহলে কি হবে। ড্রাংক করে ড্রাইভ করলে কান ধরিয়ে ছেড়ে দেয় কিন্তু এখন..

আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নেয়। না কেউ নেই।

— তাইলে আর কি ঝামেলা না নেওয়াই ভালো। কেটে পর…

তখনি ছেলেটা চলে যেতে নেয়। কিন্তু আবার কি ভেবে তুরের দিকে ফিরে তাকায়…

— নাহহ এভাবে মেয়েটাকে রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। অপরাধ যখন করছি তাইলে আরকি… [ আকাশের দিকে মুখ তুলে ] হে আল্লাহ এইসব মুছিবতে আমাকেই ফেলতে হয়। কেন অন্য কেউ ছিল না। এমনি কম ঝামেলায় আছি. আচ্ছা এক্সিডেন্ট করাবা করাবা একটা ছেলেকেই করাতে। হ্যা জানি তুমি নিজের মর্জির মালিক। তাই বলে মেয়ে… দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ে থেকে ভাগছে এখন যদি ওর বাড়ির লোকেরা আমার কাছে পায় তখন। এই নিয়ে কয়টা কেস হলো???

তখনি কয়েকটা গাড়ি আসতে দেখে….

— ওরে তাড়াতাড়ি ভাগ এরা বুঝতে পারলে ডায়রেক্ট জেলে।।

তুরকে কোনো মতে পাজা কোলে তুলে গাড়িতে শুইয়ে দেয়। তারপর দ্রুত ড্রাইভ করে বেড়িয়ে যায়৷ ওদিকে পাগলের মত তীব্র ওকে খুজতে থাকে…..
,
,

,
,
,
,
,
,
,
,

তুরকে নিয়ে কি করবে ভেবে পায় না ছেলেটা। তাই গাড়িতে বসেই ডক্টরকে ফোন দেয় ও…..

— হ্যালো… এত রাতে…

— আংকেল প্লিজ আপনি বাসায় চলে আসেন। একটা বড় সড় সমস্যা হয়ে গেছে।

— কিন্তু..…

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও লাইনটা কেটে দেয়। তারপর ড্রাইভ করে কয়েকঘন্টার মাঝেই নিজের বাড়িতে চলে যায়। তুরকে নিয়ে বাসায় যাবে কিনা ভাবতেই মনে পরে আজ মা বাসায় নেই। তাই ও একটু ভয়েই বাসায় ঢোকে….

— সানিয়াদ এটা কি ধরনের মজা 😡 আমাকে আসতে বলে…

তখনি ওর কোলে বিয়ের সাজে একটা মেয়েকে দেখতে পায়….

— এই মেয়েটি কে?

সানিয়াদ এবার মুশকিলে পরে যায়। কি বলবে ভেবে পায় না। যদি বলি এক্সিডেন্ট করেছে তাহলে খবর আছে…..

-_ [ সানিরে সানি ভাব কি বলবি। আইডিয়া.. ] গা.. গা.. গার্লফ্রেন্ড… হা ও আমার গার্লফ্রেন্ড… 😬😬

তারপর তুরকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই ডক্টর ওর মাথায় ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে..

— তা গার্লফ্রেন্ড এই অবস্থায় কেন?

— আসলে ওর মা বাবা জোর করে বিয়ে দিতে গিয়েছিল তো। তাই পালিয়ে আমার কাছে এসেছিল। আমি বুকে পাথর চেপে ওর বাবা মায়ের কথা ভেবে বললাম..” তোমার বাবা মায়ের কথা রেখে বিয়ে করে নেও” বর্তমানের মেয়েদের তো জানেন। ব্যস হয়ে গেল বিশ খেতে গেলো….

— কিন্তু চোট তো মাথায় লেগেছে..

— লাগবেই তো… বিষ খেতে চেয়েছিল বলে থাপ্পড় মেরেছি তাই পরে গিয়ে চোট পেয়েছে। এই গাল দেখতে যাবেন না। মেকাপ করেছে তাই বোঝা যাচ্ছে না। 😁😁

ডক্টর একবার তুরকে দেখে নিল। তারপর বলল….

— সানিয়াদ যদিও তোমার কথা আমার বরাবরের মতই বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তবুও বলব… মেয়েটা কিন্তু খুব কিউট তোমার জন্য পার্রফেক্ট বিয়ে করে নেও। তাছাড়া এতটা ভালোবাসে তোমাকে….

— নেব বিয়ে করে নেব। কিন্তু এই কথা মাকে বলবেন না। তাইলে….

— কি??

— কিছুনা।

ডক্টর একগাল হেসে বেড়িয়ে গেল…. আর যাওয়ার আগে বলে গেল ওর মাথায় যেন প্রেসার না পরে। তাইলে কিন্তু সমস্যা হবে।
,
,
,
,
,

,,

,
সকালে কলিংবেল বেজে উঠতেই সানিয়াদ মাটি থেকে উঠে বসল। তুর ওর বিছানায় তাই ও মাটিতে শুয়ে ছিল। কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। ও দরজা খুলতেই শকড…

— মা তুমি তোমার না না ফেরার কথা ছিল। না মানে কয়দিন পর আসার কথা ছিল।।

ওর মা কোন কথা না বলে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে সোজা সানিয়াদের রুমে… সানিয়াদ আটকানোর জন্য গেলেও লাভ হলো না।

— মেয়েটা কে সানি😡😡

— কাজের মেয়ে… 🙄 তোমার জন্য এনেছি।

— কাজের মেয়ের শরীরে এরকম দামী শাড়ি গয়না। বল কে? 😡😡

— তা আমার বউ… [ রেগে গিয়ে ]

— তারমানে আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে নিলি।।😭 কি ছেলে পেটে ধরলাম রে…. ডক্টর আহসান তারমানে ঠিকি বলছে।

তখনি সানি ওর মায়ের মুখ চেপে ধরে…

— আরে ধ্যাত বউ না গার্লফ্রেন্ড… [ বিরক্তি নিয়ে। কারন মায়ের খবর জানে। গার্লফ্রেন্ড শুনলে শান্ত হবে। আর বউ শুনলে এখনি বাসর করিয়ে নাতিপুতি জন্য লাফাবে। ]

— আমাকে আগে বলিসনি কেন? তোকে কত বলছি বউ নিয়ে আয়। আর এতসুন্দর একটা মেয়ে একে কিনা😡😡

— আগে বলিস নি কেন… [ ব্যাঙ্গ করে ] এইজন্য বলিনি… গার্লফ্রেন্ড আমার। বিয়েটা আমার গার্লফ্রেন্ডের হবে তোমাকে কেন বলব?

তখনি তুর হালকা চোখ মেলে উঠে বসে।

— চুপ করবি তুই…. মেয়েটা উঠে গেছে।

— আপনারা কারা..

— আমি সানির মা…

— কে সানি…

— এই সানি তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে চিনতে পারছে না।

— কি বলো তাই নাকি। তাহলে এটা আমার না। বাইরে বের করে দিয়ে আসি… 😤😤

— চুপ বদজাত ছেলে… 😡 তা মা তোমার নাম কি?

— আমার নাম…. আমার নাম কি?

এটা দেখে শব্দ করে সানি হেসে বলে…

— এলো এনি দেহি নিজের নাম ভুলে গেছে আমার নাম কি মনে রাখব। আসলে মনে হচ্ছে মাথায় আঘাত পেয়ে সব ভুলে গেছে এসব হয়।

তখন ও ডক্টরকে ফোন দিয়ে বলে…

— আংকেল গার্লফ্রেন্ড আমার নিজের নাম ভুলে গেছে।

— এটা শর্ট ট্রাম মেমোরি লস হতে পারে। মাথায় আঘাত লাগার কারনে। তবে ভয় লাওয়ার কিছু নেই। ১ বা ২ সপ্তাহে ঠিক হয়ে যাবে।

— আচ্ছা…

তুর অবাক হয়ে ওদের দেখতে লাগল। এইটা দেখে সানি ওর মাকে বলল এই আগে খাবার দাওতো।

ওর মা চলে যায়। তখন ও তুরের কাছে যায়। তুরের কাছে যেতেই একটু ভয় পায় তারপর বলে…

— তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড….

— ঠিক বলতে পারছি না। কিন্তু আমার মায় যখন জানছে কপাল যে দুঃখ আছে তা বুঝতে পারছি। নাম কি তোমার।

— আমার তো মনে পরছে না।।

— তোমার দোষ নাই। দোশ এই কপালের।এই পাগলা গারতে ভালো মানুষ পাগল হয় সেখানে তুমি এখনো সুস্থ্য।

— তুমি তো আমার।বয়ফ্রেন্ড হয়ে আমার নাম জানো না।

_- কেন জানব না। [ একটা দিয়া দেই। নিজের নাম মনে নাই তার আবার নাম। ] তোমার নাম চুকলি…

— চুকলি কারো নাম হয় নাকি?

— আরে মাইয়া এইটাই তো কথা চুকলি কারো নাম হয় নাকি। কিন্তু তোমার নাম হয়। আর এই বাড়িতে যারা থাকে তাদের নাম হয়। 😡[ রেগে চলে গেল ]

সানি ইঞ্জিনিয়ারিং পরছে। মায়ের বিয়ের পর নাতিপুতি দেখবে। কিন্তু সানি সেটা চায় না।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,

এভাবে দেখতে দেখতে কেটে গেল ১ সপ্তাহ তুর এখনসুস্থ। তবে ব্যান্ডেজ এখনো খোলা বাকি। কিন্তু সানি শান্তিতে নেই। এতদিন শুধু মায়ের পাগলামি সহ্য করলেও এখন তুরের বয়ফ্রেন্ডের পাগলামি ওকে আরো অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ওর এত ন্যাকামি একদম সহ্য করার মত না। কিন্তু মায়ের জন্য কিছু বলতে পারছে না। নিজেকে কেমন ফাকা আমের আটি মনে হচ্ছে…. তুর আর ওর মা মিশে গেছে কিন্তু ওর কোনো কখর নেই। ওদিকে বিয়ের কথা বলে পাগল করে দিচ্ছে সানিকে….

৭ দিন পর সানি আজ ভার্রসিটিতে যাবে। তখনি ওর মা ওকে ডাকে…

— ওই চুকলিকে নিয়ে যা তোর সাথে। বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে…

— কেন এখন কি খারাপ লাগছে ডাক্তার ডাকব😡😡

— চুপ কর সবসময় শুধু বাজে কথা। যা বলেছি তাই…

— আরে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে.… আরেকদিন নিয়ে যাব।

— কই আমিতো রেডি😁😁

— – এই মেয়েকে তো😠😠 জালা সহ্য করতে না পেরে ভার্রসিটিতে যাচ্ছি আর ওইখানেও… ওই আমি পারব না।

— মা…. 😭😭😭

— সানি😡😠😡……..

— ওই আগে চল…

তরের হাত ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। তারপর বাইকে উঠতেই তুর ক্যাবলা হাসি দিয়ে। এটা দেখে আরো রেগে যায় সানি….

— কিছু বলার আগেই দাত কেলায় আর কিছু বললেই ছাগলের বাচ্চার মত ম্যা ম্যা করে। যেন ফিটার খাওয়াতে হবে। ম্যা ম্যা।।। যত্তসব.।। 😠😠

— কিহল চলো… 😘😘

সানি ওকে নিয়ে ভার্রসিটির গেটে ঢুকতেই একটা মেয়ে এসে সানিকে জড়িয়ে ধরল…

— বেবি তুমি এতদিন কই ছিলে জান কত মিস করেছি তোমায়। আমাকে একবার বলতে আমি তোমার কাছে চলে যেতাম।

— পারতে না গো আমি জাহান্নামে গেছিলাম। সবে মাত্র ল্যান্ডিং করছি.….

— what… 🙄🙄

— ও কিছুনা.।।

তখনি তুর এসে ধাক্কা মেরে ওকে সরিয়ে দেয়।

— তোমার সাহস হয় কি করে আমার বয়ফ্রেন্ডকে টাচ করার।

-_ ও তোমার বয়ফ্রেন্ড মানে.।। সানি বেবি.. 😭

— এই সানি তোমার মা লাগে নাকি। বেবি বলছে না।

— আরে চুকলি এটা সেই বেবি না।

— ওও.. এই তোর বয়ফ্রেন্ড মানে। সানি আমার বিএফ.।।

— তাইলে আমি কে?

— সত্যি তো কে তুই…

সানির এই প্রথম মজা লাগল। দুইটা মেয়ে ওর জন্য চুলছিড়াছিড়ি করছে এইটা দেখে ও বাইকে বসে বাদাম খাচ্ছে। আর মজা নিচ্ছে… তার এক পর্যায়ে দেখল ওই মেয়েটি তুরের গালে চড় মারতে চাইল.।।।

— ঠিক তখনি ওর হাত ধরে ফেলল..

— সিনিন… এইটা না…

-_ তুমি এই মেয়েটার জন্য আমাকে।।। তারমানে ও সত্যি তোমার গার্লফ্রেন্ড। তাহলে আমার সাথে রিলেশন….

— দেখ সিনিন আমি আগেই তোমাকে বলেছি। কিন্তু তুমি জোর করে আমাকে নিজের বিএফ বানিয়েছ। তেমনি ও আমাকে জোর করে বিএফ বানিয়েছে। এতে আমি কি করতে পারি…

— ঠিক আছে তাহলে আজ ব্রেকাপ… [ বলে চলে গেল। ]

— আলহামদুলিল্লাহ…. বইনা চুকলি এই প্রথম তোকে ধন্যবাদ দিতে মন চাইছে। এদিকে আয় একক্ষান চুমা দি…

ওর কাছে যেতেই তুর খুব জোরে ঠাটিয়ে একটা চড় দিল। এটা দেখে সানি অবাকের শীর্ষে। সারাদিন বিএফ বিএফ করে মরে যায়। অথচ সামান্য কথাতেই এইটা করল।

_- আরে আমি কি তোকে সত্যি সত্যি চুমা দিতাম নাকি… আজব তো…

— এই আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড হলে ওইটা কে? এখন শুধু থাপ্পড় মারছি এবার তো… [ পাশে থেকে একটা লাঠি নিয়ে মারা শুরু করল। ]

— হায় আল্লাহ এইটা দেখি ওইটার চেয়েও ডেঞ্জারাস। ওইটা তাও মিষ্টি কথা বলত… ওই থাম থাম… তোরে আইস্ক্রিম খাওয়ামু তাও থাম। আসলে ওইটা প্যারা ছিল তাই আর কি? আর তুই তো আমার জিএফ মানে গুড৷ ফ্রেন্ড নাইলে এত বড় উপকার করতি…

য়ুরের নাক টেনে।

— ঠিক আছে চলো…..

এরপর দুজনে আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগল। তবে সানির কেন জানিনা তুরের অনেক কাজে কেমন কেমন লাগে… মাঝে মাঝে মনে হয় ও জেনে বুঝে ইচ্ছে করে করছে। এই কয়দিনে বিএফ বিএফ করে মরেছে। অথচ ভুলেও সানির সামান্য স্পর্শ ওর গায়ে লাগেনি। এমনকি ভুলেও যদি সানি কাছে চলে আসে ও চিল্লিয়ে একসাথ করে। সেটা প্রথম প্রথম গায়ে না মাখলেও পরে ব্যাপারটা ভাবায়। যদি সত্যি বিএফ ভাবে তাহলে এমন করবে কেন? কিন্তু ওর মায়ের জন্য কিছু বলে না। ওর কি ও মা খুশি হলেই খুশি…..

,
,
,
,

ওরা আইসক্রিম খাচ্ছিল। ঠিক তখনি রাস্তার সিগনেলের মধ্যে বসে ছিল তীব্র। এই কয়দিন পাগলের মত খুজেছে ও তুরকে। হাসপাতাল থেকে শুরু করে সব জায়গায় কোথাও বাদ রাখেনি… ক্লান্ত তীব্র এখনো অক্লান্ত ভাবে তার তীব্রকে খুজে বেরাচ্ছে। ঠিক তখনি তীব্রের নজর যায় আইসক্রিম পার্লারের দিকে… হঠাৎ মনে হল ও যেন তুরকে দেখছে…. কিন্তু প্রথমে ভুল ভাবলেও বঝতে পারল এটা ভুল নয়… সত্যি তুর.. ওকে দেখে নিজের রাগটা আরো বেড়ে গেল। কারন ও একটা ছেলের সাথে। তাও এমনি এমনি নয় বেশ হেসে খেলেই আছে… সিগন্যাল ছেড়ে দিতেই তীব্র ওদের দিকে গাড়ি নিয়ে যেতে লাগল….

— এইযে চলুন…

তারপর তুর আর সানি বাইকে উঠে বাইকে স্টার্ট দিল.।। তীব্র ওখানে পৌছানোর আগেই ওরা চলে গেল। কিন্তু তীব্র ওকে ধরার জন্য ওর পিছু নিল…. ওর মাথায় একটাই চিন্তা আজকে তুরকে পেলে তীব্রকে ছেড়ে আসার শাস্তি ওদের হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবে।। তবে তীব্রের রাগটা বাড়িয়ে দিচ্ছে তুরের সাথে থাকা ছেলেটা….
,
,

,

,,

,
,
,
,
[ বাকিটা পরের পর্ব জানবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here