আজ আবারো দুইটা লাশ পাওয়া গেল …………বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছন থেকে।
এটা তেমন নতুন কোনো ব্যাপার না,প্রায় সময় এমন টা ঘটে।তবে অনেক দিন যাবত কোনো লাশ পাওয়া যায় নি, তাই পুলিশ চুপ হয়ে গেছিল এখন আবারো লাশ পাওয়া গেল এখনও কি পুলিশ বসে থাকবে? নাকি যে, খুন গুলো করেছে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে…..?
সবার আগে জানতে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে। আপনাদের সাথে আছি আমি রোবাইয়া নাসরিন।
আমি খবরটা শুনে একটু মুচকি হাসলাম।অনেক দিন যাবৎ কলেজে এই ঘটনা ঘটে আসছে।বিশেষ করে আমি কলেজে যাওয়ার পর থেকে।
আমার পরিচয় টা জেনে নিন।
আমি রবিউল হাসান,মায়ের বড় ছেলে। আর আমার একটা বড় বোন আছে।
বাকিটা সাথে থাকলে জানতে পারবেন।
প্রতিবারের মত আমি এই বারও কলেজে যাচ্ছি,তবে পড়তে নয় ফুচকা বিক্রি করতে।
হুম আমি ফুচকা বিক্রি করি যে কলেজে খুন হয়ছে সে কলেজে।
আমার বাসা থেকে কলেজ প্রায় ২০ মিনিট দুরে। কলেজে এসে দেখি আমার পরিচিত কিছু মানুষ বের হচ্ছে। কিন্তু তারা আমাকে চিনতে কখনো পারবে না।কারণ আমি আমার আসল চেহারা লুকিয়ে রাখছি সেই একটা এক্সিডেন্টের পর থেকে।(কি এক্সিডেন্ট সেটা পরে জানতে পারবেন।)
তো ফুচকা যেখাবে বসে বিক্রি করে সেখানে চলে গেলাম।আমার নিয়মিত কয়েকটা কাস্টমারও আছে।তারা হল রাকিব+ইতি,রিজয়+সানিয়া।
এই চারজন আমার নিয়মিত কাস্টমার।
আজকেও এরাই আগে আসছে।
রাকিবঃমামা ফোচকা দেন তো।
আমিঃঠিক আছে মামা (তারা যতবারই ফুচকা খাই ৪ প্লেটই থাকবে।চার জনই একসাথে আসে একসাথে খাই তাই কয় প্লেট জিজ্ঞেস করি নি।)
৫ মিনিট পর তাদের ফোচকা দিলাম।তারা খেয়ে টাকা দিয়ে চলে গেল।আমিও বসে বসে ফোচকা বিক্রি করতে লাগলাম।হঠাৎ ২-৩ জন পুলিশ আমার কাছে আসল।
পুলিশঃএই ছেলে তুর নাম কি?(ফুচকাওয়ালা বলে এমন ব্যাবহার করছে।স্বাভাবিক এটা)
আমিঃজ্বী স্যার মুই হইলাম হাসান(রবিউল বললে অনেকে বা তারাও চেনে পেলবে তাই শেষ নামটা বললাম)
পুলিশঃএখানে কত দিন ধরে ফুচকা বিক্রি করিস?
আমিঃজ্বী স্যার ৮-৯ মাস মত হবে।
পুলিশঃএকে অপরের দিকে থাকাল।
পুলিশ ২;এখানে যা যা খুন হয়ছে তাও তো ৮-৯ মাস আগে থেকে শুরু হয়ছে।
পুলিশ ৩;হ্যা তাহলে কি এই খুনের পেছনে এই ছেলেটাও হাত আছে?
পুলিশ ১; আমার মনে হয় না এই ছেলেটার হাত থাকতে পারে।এই ফুচকা অলার সাথে ওদের কোনো কানেকশন থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না।
পুলিশ ২;হতেও পারে এটা কাকতালীয় ভাবে মিলে গেছে।
পুলিশ ৩;তাও হতে পারে।
পুলিশ ১;আচ্ছা তুই কি এখানে সন্ধ্যা বেলায়ও থাকিস?(আমাকে বলল)
আমিঃনা স্যার কলেজ যতক্ষণ খুলা থাকে ততক্ষণ থাকি এর পর মোর ঘরে চলে যায়।
পুলিশঃআচ্ছা তুই কি কাল এমন কাউকে দেখেছিস যাকে দেখে নতুন মনে হয়েছে?মানে আমি বলতে চাচ্ছি কাউকে সন্দেহ হয় এমন?
দেখেছিস……?
আমিঃনা স্যার এমন কাউরে তো মোই দেহি নাই।কাল কলেজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ছিল তাই মুইও তাড়াতাড়ি চলে গেছি।
পুলিশঃআচ্ছা ঠিক আছে।সন্দেহ জনক কাউকে দেখলে আমাকে জানাবি।
আমিঃআইচ্ছা স্যার কমু নে।
আমিও নিজের মত ফুসকা বিক্রি করতে লাগলাম।
আজকে কলেজে তেমন ক্লাস হয় নি তাই আমিও চলে আসলাম নিজের সেই ভাঙা বাসায়।
রাতে কিছু কাগজ দেখলাম।দেখে পুড়িয়ে দিলাম।কারণ আমি কোনো প্রমাণ রাখি না।আবারো খবর দেখলাম হসলাম অনেক্ষণ। চলুন খবর টা শুনে আসি……
ব্রেকিং নিউজ, সকালে যে লাশ দুইটা পাওয়া গেছে তাদের ঘায়েও লিখা আছে RK কে এই আর কে জানতে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলে।আপনাদের সাথে ছিলাম আমি রোবাইয়া নাসরিন।
এই খবর টা শুনে হাসলাম।জনগণ এবারও নিশ্চিত যারা কোন হয়েছে তারা ধর্ষণকারী ছিল।যাদের গায়ে R.K লিখা থাকে তারা ধর্ষণকারী।
যারা খুন হয়েছে তারা বড় লোকের সন্তান ছিল।তারা এই খবর শুনে তো R.K এর উপর প্রচন্ড রেগে গেল।
সবার একটা কথা কে এই R.K, কি তার আসল নাম?
পুলিশ সহ সবার মুখে শুধু এই একটাই প্রশ্ন।
আজকেও আমি কলেজে যাচ্ছি ফুচকা বিক্রি করতে।
এই সকাল বেলা আবার রাস্তায় কেউ মারামারি করতেছে দেখে আমি একটু দুরে দাড়িয়ে পড়লাম।নিজেকে যদি তাদের মধ্যে ডুকায় তাহলে আমার বাকি কাজ করা লাগবে না।তাই কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না।তাই কিছুক্ষণ পর যখন ঝামেলা শেষ তখন কলেজে গেলাম।
গিয়ে দেখি আমার নিয়মিত কাস্টমার বসে আছে।
রাকিবঃতা মামা আজ দেরি হল কেন?
আমিঃআসলে হইছে কি মামা আসার সময় কারা জানি মারামারি করছে মুই তো আর তাগোরে চিনিনা।আর মুরে যদি মারে তাও কেউ কিছু কইব না তাই দুরে দাড়িয়ে থেকে দেরি কইরা আসলাম।
রাকিবঃওকে মামা এখন ফুচকা দাও।
আমিঃওকে মামা।এই নেন।
তারা খাচ্ছে আর গল্প করতেছে…….
রিজয়ঃআচ্ছা এখানে যে খুন গুলো করতেছে R.K তারা তো সবাই ধর্ষণকারী,তাহলে যদি পুলিশ R.K কে ধরতে পারে তাদের কি জেলে নিয়ে যাবে?
রাকিবঃতাতো নিবেই।আর আমার যতটুকু মনে হয় R.K এমন কোনো সাধারণ লোক না যে তাকে থানা পুলিশে রাখতে পারবে।
ইতিঃহ্যা সাধারণ নাও হতে পারে, তবে যদি কোনো কারণে R.K কে পুলিশ নিয়ে যায় তাহলে এই কলেজে এবং কলেজের চারপাশে ধর্ষণকারী বেড়ে যাবে।
সানিয়াঃঠিক বলেছিস। R.K যতদিন আছে ততদিন ধর্ষণকারী রেহাই পাবে না।একদিন না একদিন R.K ওদের খুন করবেই।
রাকিবঃসানিয়া তুই R.K কে চিনিস নাকি?যেভাবে বলতেছিস মনে হয় তুর পরিচিত?
সানিয়াঃআরে কি বলিস আমার পরিচত হবে কেন?কোথায় R.K আর কোথায় আমি।তাছাড়া R.K কে আমি যতটুকু জানি কেউ দেখে নি।
রিজয়ঃদেখে নি তবে দেখছে এমনও তো হতে পারে?
রাকিবঃমানে তুই দেখছিস নাকি?
রিজয়ঃআমি দেখছি বলেনি।অন্য কোনো মানুষ হয়তো দেখছে।
সানিয়াঃকি জানি কে কে দেখছে?
রাকিবঃএই যে খাওয়া শেষ টাকা নেন।
আমিঃহ্যা মামা টাকা দেন।
একটু পর আরো অনেকে আসল, কিন্তু একটা মেয়েকে দেখে আমার অদ্ভুত লাগল।
ওর চলাফেরা তেমন ভালো লাগতেছে না।
তবে মেয়েটা অনেক সুন্দর। হাটার সময় চারপাশে বার বার থাকাচ্ছে।
মেয়েটাঃএক প্লেট ফুচকা দেন তো।
আমিঃজ্বী দিচ্ছি।আপনি বসেন।
মেয়েটাঃওকে তারাতাড়ি দিন।
আমিঃএই লন আপা।
মেয়েটাঃTnx
আমিঃকি কন আপা ইংরাজিতে বুজি না তো…..
মেয়েটাঃআপনাকে ধন্যবাদ দিলাম।
আমিঃ ধন্যবাদ কি আপা?
মেয়েটাঃকারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ধন্যবাদ বা tnx বলে…..
আমিঃঅহ তাই কন আপা, মুই তো বুঝি নাই।
মেয়েটাঃআচ্ছা আপনি পড়াশোনা কতটুকু করছেন?দেখে তো ফুচকাওয়ালা মনে হয় না।
আমিঃকি যে কন আপা কোনো মতে কেলাস ৩ বরাবর পড়ছিলাম।আর পড়া হয়নি।
মেয়েটাঃBy the way আমি এখন থেকে নিয়মিত ফুচকা খাব।আমি এই কলেজে ট্রান্সপার হয়ে আসছি।
আমিঃআপা টেনেসপার কি ওটা তো বুঝি না।
মেয়েটাঃমানে বদলি হয়ে আসছি।অন্য কলেজ থেকে এখানে আসছি পড়তে। ওহ হ্যা আপনি তো আমার নাম জানেন না।
আমিঃকেমনে জানুম আপা আপনি তো কন নি?
মেয়েটাঃআচ্ছা আমার নাম হচ্ছে জান্নাতুল রিমি।আপনার নাম কি?
আমিঃআপা সবাই তো ফুচকাওয়ালা হিসেবে জানে,কেউ তো আর নাম ধরে ডাকে না।তবে নাম হল মুর হাসান।
রিমিঃআচ্ছা আপনার বাবা-মা নেই?
আমিঃআছে আপা।একটা বইনও আছে।
রিমিঃতাই নাকি? তা আপনার সাথে কি থাকে তারা?
আমিঃনা আপা উনারা মুগো ঘরে থাকে, মুই কলেজের পাশে একটা ঘর বাড়া করছি ওখানে থাকি।
রিমিঃওহ আচ্ছা নিন। ফুচকার প্লেট এগিয়ে দিয়ে।
আমি প্লেট টা নিলম।আর রিমি ১০০৳ দিল।
আমি ফেরত দিতে যখন টাকা বের করলাম তখন সে বলল ফেরত দিতে হবে না।বাকিটা আপনার বকছিস।
আর ফুচকা অনেক মজা হয়ছে।
আমিঃতাহলে আপা আরেক প্লেট দিয়?
রিহিঃনা না অন্য একদিন খাব। এখন আমি যাই।
রিমি কলেজে চলে গেল,মেয়টাকে আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে। তাই মেয়েটা যাওয়ার পর আমি আমার পুরনো নকিয়া ফোনটা বের করলাম।একজন কে ফোন দিলাম।কিন্তু ফোন বন্ধ পাচ্ছি।
ওই একজন টা হল আমার বন্ধু। (এখন নাম বলা যাবে না)
তারপর আরো ফুচকা বিক্রি করে কলেজ শেষে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় একটু চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।দেওয়ালের পাশ থেকে কেউ একজন সরে গেল মনে হল।তাই দেখতে গেলাম, কিন্তু কেউ নাই।
(কিন্তু আমিতো জানি কেউ ছিল, কলেজের পর থেকে কেউ আমার পেছন পেছন আসছে সেটা আমি লক্ষ্য করছি,সে এখন আমার ভাঙাচোরা বাসায়)
টিভি অন করলাম।কিন্তু আসল উদ্যেশ্য টিভি দেখা নয়, কে ফলো করছে আমাকে সেটা দেখা।
একটু খবর দেখলাম।তারপর টিভি অপ করলাম।ঘর থেকে বের হয়ে দেখি কেউ একজন বেরিয়ে যাচ্ছে। আমিও তার পিছু নিলম।কিছু দুর গিয়ে চিন্তা করলাম এখন তাকে ফলো করলে সমস্যা হবে।
তাই ফলো করা ছেড়ে দিলাম।
বাসায় এসে আবারো চারপাশে চোখ বুলালাম।সব ঠিক ঠাক।তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
রাত ১ টা ঘুম ভাঙলো।
মাঝ রাতে শহরটা ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে।তাই বের হলাম।কিছুদুর যাওয়ার পর দেখি কিছু গোন্ডা টাইপের লোক গাড়ি থেকে বস্তা ভরে কি যেন পেলে দিল।কিন্তু সে বস্তার ভিতর থেকে আহ্ বলে একটা আওয়াজ আসল।
লোক গুলো চলে যাওয়ার পর আমি গেলাম সেই বস্তার কাছে।
বস্তা খুলে দেখি একটা মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থা। জ্ঞান আছে,আমি থাকে বললাম।কি হয়ছে আপনার, আপনার এই অবস্থা কেন?আর যারা আপনাকে পেলে দিল তারাই বা কারা?
সে শুধু বলল আমাকে বাঁচান (তার পর অজ্ঞান হয়ে গেল।
চারপাশে থাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কি না।
কিন্তু কেউ নাই তাই পকেট থেকে ফোন বের করে একজনকে ফোন দিলাম ১০ মিনিটের মধ্যে ৩ টা গাড়ি আসল।তার আগে আমি ওখান থেকে সরে গেলাম।
#To_be_continue…..
#ফুচকা_ওয়ালা_যখন_স্পেশাল_অফিসার
#লেখকঃরবিউল_হাসান
#পর্বঃ০১
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।