#ফিরে_আসা_সিক্রেট_মাফিয়া (Politics_02)
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৯(শেষ)

এইদিকে ভোটের ফলাফল ভালো হবে না জেনে সবার অগোচরে এমপি মালয়েশিয়াতে চলে গেল।

মালেশিয়া থেকে রাহীকে একজন ফোন দিয়ে এমপির পালিয়ে যাওয়ার কথা বলে।রাহী সোজা বলে দেয় এমপিকে ওখানে মেরে দিতে।নির্বাচনের পরের দিন এমপিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।বিকালের দিকে খবর পেলো এমপির লাশটা মালয়েশিয়ার কোনো ডাস্টবিনে।

রাশেদের নির্বাচিত লোক মানে বর্তমান এমপি শপথ নিবে দুই মাস পরে।এই সময়ের মধ্যে রবি নিজের সব কাজ শেষ করে নেওয়ার চিন্তা করলো।নির্বাচনের পরের দিন একটা লাশ পাওয়া গেল।পাশে চিরকুট তাতে লেখা ধর্ষকের শাস্তি দিলাম R.K।এই খবর কয়েক মিনিটের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো।

পুরো শহরে থমথমে অবস্থা শুরু হলো।ডিসি নিজের অপরাধ স্বীকার করে জেলে চলে গেছে।অপরাধীদের মধ্যে শুধু আছে রাধিকা।সেও দেশ ছাড়ার চিন্তা করছে।

রাতে কাগজ পত্র সব ঠিক করে নিলো।সকালে দেশ ছেড়ে চলে যাবে।

অনেক দিন রবি আর রাশেদের আড্ডা দেওয়া হয় না তাই ওরা দুই জন বসে আড্ডা দিচ্ছে। তখন তাদের আড্ডার ফাঁকে রবির ফোনটা বেজে ওঠল। রবি ফোন রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে বলল ‘ভাই রাধিকা মানে এমপির সিক্রেট হাত, ও কাল সকালে দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করবে।”
রবিঃওর বর্তমান ঠিকানা টা চায়।
–জ্বি ভাই পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রবি আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিল।রাশেদের চোখে স্পষ্ট ভয়ের চাপ দেখা যাচ্ছে। কারণ সে রবিকে ভালো করে চেনে আর এই হাসির মানে কারো মৃত্যু অনিবার্য তাও জানে।রাশেদ রবিকে বলল….
—আজ কার পালা?
রবি একটু মুচকি হেঁসে বলল যাকে আমি লাইফের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসছিলাম তার।
–মানে রাধিকার?
রবিঃহুম।
–কোথায় এখন সে?
রবিঃআছে আমাদের পাশে খুব একটা দূরে না রিকশা ভাড়া দশ টাকা আর হেটে গেলে রিকশার আগে যাওয়া যাবে।
–তার মানে আমাদের এলাকায়?
রবিঃহুম। তাহলে থাক তুই আমি চ্যাপটার টা ক্লোজ করে আসি।জানি না পারব কি না।
–রাহীকে নিয়ে যা সে ভালো পারবে।

রবি মন খারাপ করে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল আমি নিজে ওকে মারব।যখন আমি একটু বেইমানির গন্ধ পাই না তখন সামনে যা হয়ে যাক ঐ বেইমানকে আমি ছাড়ি না।
–আমাদের একজনকে তো খুঁজে পাচ্ছি না তোর নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে…
রবিঃনিশ্চয় ছাদেক কে?
–হুম কিন্তু তুই এটা কিভাবে জানিস?
রবিঃআমি আগেই বলছি আমার সামনে যাই হয়ে যাক বেইমান কে আমি বিন্দু পরিমান ছাড় দিয় না।
–তার মানে ছাদেক কে তুই মেরেছিস আর সে বেইমান ছিল?
রবিঃআমাকে রাধীকার প্রেমের ঝালে ফাঁসানোর সবচেয়ে বড় ভুমিকা ছিল ছাদেকের।আর আমাকে মেরে দেওয়ার আগে আমি ওর মুখটা দেখে চিনে যায়।তারপর সেখানে একজনের গুলি নিয়ে আমি ওখানেই বেইমানের চ্যাপটার ক্লোজ করে দিয়।
—আমাদের মধ্যেও বেইমান ছিল?

রবিঃএটা তেমন কোনো ব্যাপার না।বেইমান ছিল আছে আর থাকবে।তাদের খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। ওঠি এখন রাত অনেক হলো।

রবি ওঠে নিজের বাসায় গেল।স্পেশাল বাইক স্পেশাল পোশাক পড়ে নিলো।প্রতিবার খুন করার আগে যেমন মাস্ক পড়ে তেমন মাস্ক পড়ে নিল।বাইকে চড়ে চলতে শুরু করল রাধিকার বাসার দিকে। বাইক ছিল তাই নিমিষেই পৌঁছে গেল রাধিকার বাসায়।রাধিকা ঘুমাচ্ছে ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটিকে বেশ মায়াবী লাগছে।কিন্তু এই মায়াবী চেহারার পেছনে লুকিয়ে আছে বিষাক্ত কালনাগিনী।

রবি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রাধিকার ঘুমন্ত মুখটা দেখলো।তারপর আস্তে আস্তে রাধিকার কাছে গেল।রবির ভীষণ ইচ্ছে করছে একবার তাঁকে জড়িয়ে ধরতে।

রবি রাধিকাকে আস্তে আস্তে ডাকলো।রাধিকা চোখ খোলার আগেই রবি তার মুখ চেপে ধরলো যাতে চিৎকার করতে না পারে।রাধিকা চোখ খুলে দেখে কেউ তার মুখ চেপে ধরছে আর মুখে মাস্ক পড়া।রাধিকা চিৎকার করতে গিয়েও পারলো না।ধীরে ধীরে রাধিকা শান্ত হতে শুরু করে।একটু পর নাড়া ছাড়া বন্ধ করে রবির দিকে তাকিয়ে আছে। রবি আস্তে করে নিজের মুখের মাস্কটা খুলল।রাধিকা রবিকে দেখে আরো বেশি ভয় পেয়ে গেল।তার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল।

রবি আস্তে করে রাধিকাকে বলল চিৎকার করে লাভ নেই কেউ শুনতে পারবে না তোমার চিৎকার। তারপর রাধিকার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিতেই রবি রাধিকার মুখে একটা স্প্রে করে দিল।এটা সাধারণ কোনো স্প্রে ছিল।এমন একটা স্প্রে যা কারো মুখে দিলে সে কথা বলতে পারবে না।বাকি সব সাধারণ ভাবে করতে পারবে শুধু কথা বলা ছাড়া।

তারপর রবি রাধিকাকে ছেড়ে দিল।তারপর রাধিকাকে বিছানায় বসিয়ে বলা শুরু করল…
কি দোষ ছিল আমার তোমাকে ভালোবাসা?তোমাকে এতটা ভালোবাসতাম মৃত্যু যেনেও তোমার সাথে চলেছি।তোমাকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখেছি।কখনো আমি ভাবতেই পারি নি তুমি আমাকে মৃত্যুর ফাঁদে ফেলে দিয়ে তুমি চলে আসবে।আমি ভাবছিলাম কি জান?
ভাবছিলাম তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি জেনে তুমি আমাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে না দিয়ে বাঁচাতে চেষ্টা করবে।কিন্তু জান যদি ঐ সময় একটি বার বাঁচাতে চেষ্টা করতে তাহলে কেউ আমাকে সে দিন মারতে পারতো না।

বরং তুমি আমাকে মেরে ফেলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে।জান আমি কখনো ভাবি নি তুমি কিছু টাকার জন্য আমার জীবন নিয়ে খেলবে।তোমার হাতে আরো অনেকে শিকার হয়েছে তা আমি জানি।কিন্তু আমি সারাক্ষণ চেয়েছি আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনব।কিন্তু আমি পারি নি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে হতো আমাকে।

আজকের পর তুমি আর কারো জীবন নিয়ে খেলতে পারবে না।আজ আমি এখানেই তোমার চ্যাপটার ক্লোজ করে দেব।অনেকের জীবন নিয়ে খেলেছ তুমি।আর কারো জীবন নিয়ে খেলতে পারবে না।

রবির কথা শোনে রাধিকার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।হাত জোর করে রবির পায়ে পড়ে গেল।মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না।চোখ দিয়ে পানি আর হাত জোর করে আছে।কাঁদতে কাঁদতে রবির পা জড়িয়ে ধরলো। হয়তো রাধিকার এখন অপরাধ বোধ কাজ করছে।কিন্তু মৃত্যুর কিছু সময় আগে তওবাও নাকি কবুল হয় না।

রবির ভীষণ ইচ্ছে করছে রাধিকাকে একবার জড়িয়ে ধরে বলতে ভালোবাসি।রাধিকার এমন অবস্থা দেখে রবির চোখের কোনে পানি জমে গেছে।ভীষণ যে ভালোবাসে রাধিকাকে।রবি রাধিকাকে ধরে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে।খুব জোরে রাধিকাকে বুকে চেপে ধরে।

বেইমানির চেহারা ভেসে ওঠতে রবি রাধিকাকে বলল তোকে আজো ভীষণ ভালোবাসি কিন্তু বিশ্বাস কর আর ফিরে পেতে চাই না।পারলে আমায় মাফ করে দিস।কথা শেষ হতে না হতে রবি কোমর থেকে চুরি বের করে রাধিকার পেটে মেরে দিল।তখনো রবি রাধিকাকে জড়িয়ে ধরে আছে।রাধিকার রক্ত পড়ছে আর রবি বলছে ‘আমি সব সহ্য করতে পারি জানিস কিন্তু কেউ আমার সাথে মিথ্যা বললে বা বেইমানি করলে তাঁকে আমি শেষ করে দেয়।এই দুইটা জিনিস আমি মোটেও সহ্য করতে পারি না।ভালো থাকিস ওপারে।

যদি তোর পুনর্জন্ম হয় তবে সে দিনও আমি তোকেই চাইব।তবে সে দিনও বেইমান হলে নয় খুব ভালো একজব মানুষ হলে। ভালো থাকিস ওপারে।

রাধিকার খুব কষ্ট হচ্ছে। মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে না পারলে কিছু শব্দ বের হচ্ছে মৃত্যুর আগে মানুষের যেমন শব্দ বের হয়।ইক ইক ইক শব্দ করছে রাধিকা।রবি আর রাধিকার কষ্ট সহ্য করতে পারছে না।
কোমর থেকে গুলি বের করে রাধিকার কপালে ধরে বলল ভালো থাকিস ওপারে। আর আমায় ক্ষমা করে দিস।রবি আর কোনো কথা না বলে রাধিকার মাথায় শুট করে দিল।রাধিকা পড়ে যেতে লাগলে রবি রাধিকাকে ধরে ফেলে আর বিছানায় শুয়ে দেয়।

রাধিকা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করল।একদম শান্ত হয়ে শুয়ে আছে।রবি দেয়ালে পিঠ লাগিয়ে কিছু সময় রাধিকার মুখের দিকে তাকিয়েছে।তারপর চলে আসলো সেখান থেকে।রেখে এলো এক চিরকুট যাতে লেখা ছিল “বেইমানীর ফল মৃত্যু ”

পরদিন সকালে পুলিশ রাধিকার লাশটা নিয়ে যায়। শেষ হলো কিছু খারাপ মানুষের জীবনী। বাকি রইলো মেয়র আর তার ছেলে।মেয়র কোনো ধর্ষণের সাথে জড়িত ছিল না। কিন্তু চোখের সামনে ধর্ষণ করতে দেখেও চুপ থাকা ঐ অপরাধ করার মতো অপরাধ।
রাতে মেয়র শুয়ে ভাবছে সে তো বেশি অপরাধ করে নি তাহলে কি R.K তাকে ছেড়ে দেবে?ঘুম আসছে না তার কিন্তু তার ঘরেই তো একটা ধর্ষণ লুকিয়ে আছে।

রাত গভীর হতে রবি পোশাক পড়ে মেয়রের ছেলের রুমে উপস্থিত। মেয়রের ছেলেকে বেঁধে শুধু বলল ধর্ষণের শাস্তি দিলাম।মেয়রের ছেলের মুখ বাঁধা ছিল তাই কথা বলতে পারছে না।রবি মেয়রের ছেলের গলা কেটে দিয়ে মাস্ক টা মুখ থেকে সরিয়ে নিল।সাথে সাথে মেয়রের ছেলের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।পরে মেয়রের রুমে গিয়ে রবি হুমকি দিয়ে এলো।যদি মেয়র সময়ের আগে ভালো হয়ে না যায় তাঁকেও মৃত্যু পথযাত্রী হতে হবে।

অনেক দিন অজয়ের সাথে কথা হয় না।তাই রবি বিকালের দিকে অজয়ের বাসায় গেল।রবিকে আসল চেহারায় দেখে অজয় বেশ খুশি। অজয়ের ছোট বোন সাইফা এক নাগাড়ে রবির দিকে তাকিয়ে আছে।তবে সাইফা অনেকটা শুকিয়ে গেছে বলা যায়। সাইফার এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে অজয় বলে রবি চলে যাওয়ার পর থেকে সাইফা মন মরা হয়ে থাকে। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করে না তাই এই অবস্থা।

রবি ভাবলো সাইফাকে একটা সুযোগ দিলে বোধয় খুব খারাপ হবে না।রবি যখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিল তখন অজয় তার মা আর সাইফা পাশে ছিল।যে দিন রাত এক করে রবিকে মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছে সে আর যাইহোক রবির খারাপ চাইতে পারে না।

রবি সাইফার সাথে একটু আলাদা হয়ে কথা বলতে চাইলো।সাইফা রবিকে ছাঁদে নিয়ে গেল।দুই জনের হাতে কফি।রবি কফিতে চুমুক দিতে দিতে সাইফাকে বলল….
রবিঃএসব পাগলামির মানে কি?
–এত কিছুতো জানি না শুধু জানি আপনাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি।
রবিঃতুমি হয়তো জান না আমার চলাফেরা মাফিয়াদের মতো।যেকোনো সময় যে কেউ আমাকে মেরে ফেলতে পারে।
–জানি আমি সব।আপনার দুইটা জিনিস সবচেয়ে খারাপ লাগে কেউ মিথ্যা বললে আর বেইমানি করলে।কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি না মিথ্যা বলি, না কখনো বেইমানি করব।ভীষণ ভালোবাসি যে আপনাকে।
রবিঃতোমার পরিবার কি মেনে নেবে?
–ওরা সবাই জানে আমি আপনাকে ভালোবাসি।কিন্তু ভাইয়া ভয় পাই যদি আপনি রাজি না হন আর কোনো ঝামেলা করেন তাই।
রবিঃআচ্ছা ভেবে দেখব তোমার ব্যাপারটা।

–আরো কত দিন ভাবতে হবে আপনাকে?
রবিঃআমি আগেও কি তোমাকে নিয়ে ভেবে দেখার সময় নিয়েছি?
–না নেন নি কিন্তু আপনাকে নিয়ে আমি প্রতিটি সময় ভেবেছি।
রবিঃতাহলে এখন আমার কি করার আছে?
–হয়তো আমার সময় ফিরিয়ে দেন…
রবিঃআর নয়তো?
–নয়তো আমায় ভালোবাসুন।
রবিঃপ্রথমটা মানে সময় তো কখনো ফিরিয়ে আনা বা ফিরিয়ে দেওয়ার যায় না।
–তবে আমায় ভালোবাসুন।
রবিঃভালোবাসতে বাধ্য করবে নাকি?
–আপনি না বাসলে তো বাধ্য করবই।
রবিঃবাধ্য হয়ে ভালোবাসা যায় নাকি?
–হুম যায়।
রবিঃকিভাবে?
–কাছে আসুন আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

রবি আর কিছু বলার আগে সাইফা রবির দিকে আসতে লাগলো।রবি সাইফাকে বলল একটা সুযোগ দিতে পারি তবে কথা দিতে হবে কখনো ছেড়ে যাওয়া যাবে না।সাইফা রবির হাত ধরে বললো বেঁধে রাইখেন আপনি।

বেইমানীর পরে শুরু হলো নব ভালোবাসার।সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকুক প্রিয় মানুষ টি।

…………………..সমাপ্ত……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here