#ফিরে_আসা_সিক্রেট_মাফিয়া (Politics_02)
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০২

অজয়ঃভাই হয় সবার।আমারও ভাই।
–দেখুন নিজেকে সামলান। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।সরি রোগীর অবস্থা এখন আগের থেকে খারাপ। রুগী এখন আইসিইউ তে চলে গেছে।আমাদের একটা মিটিং বোর্ড গঠন করা হয়েছে সবার মতামত অনুযায়ী রোগী আইসিইউ থেকে বের হওয়ার আশা মাত্র ৩%।

অজয়ঃদেশের বাইরে নিলে বেঁচে ফিরার আশা কত পার্সেন্ট?
–দেখুন দেশের বাইরে নিয়ে ও তেমন কোনো লাভ নেই রুগীর অবস্থা ততটাও ভালো নয়।আর বাইরের দেশ অন্য দেশের রুগীর প্রতি ততটা সিরিয়াস হয় না।তার থেকে ভালো হবে আপনি রুগীকে বাসায় নিয়ে যান। সেখানে সেবা করুন তাহলে হয়তো রুগীর বেঁচে ফেরার আশা কিছুটা বাড়তে পারে।
অজয়ঃআচ্ছা তাহলে রোগীকে আমার বাসায় নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
–জ্বি তাই করুন।প্রয়োজনে একটা নার্স রাখবেন রোগীর দেখা শোনার জন্য।
অজয়ঃতাহলে আমরা আসি।

অজয় হসপিটালের সব কাগজ পত্র ঠিক করে নিয়ে রবিকে বাসায় নিয়ে আসলো।অজয়ের বাসায় তার মা বাবা আর একটা ছোট বোন আছে।বাসাটা দুই তলা।রবিকে উপর তলায় একটা রুমে নিয়ে গেল।

শুধু রবির জন্য সে রুমটাকে হসপিটালের মতো বানিয়ে ফেললো।একটা নার্স রাখা হলো সারাক্ষণ সে রবির খেয়াল রাখে।সময় যেতে লাগলো কিন্তু রবির ঠিক হওয়ার কোনো নাম নেই।পুরো একটা মাস শেষ হয়ে গেল তাও কোনো ভাবে রবি ঠিক হচ্ছে না।

নার্স রবির পালস চেক করছিল তখনই কম্পিউটার স্কিনে তাকিয়ে দেখল অস্বাভাবিকভাবে রবির পালস বেড়ে যাচ্ছে। নার্স বুঝতে পারলো অল্প সময়ের মধ্যে রোগী হার্ট অ্যাটাক করতে পারে।নার্স তাড়াতাড়ি একটা ইনজেকশন দিয়ে রবিকে হসপিটালে নিয়ে গেল।সেখানে ভিন্ন আরো তিনটা ইনজেকশন পুশ করা হলো।

নিমিষেই রবির দেহ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।ডাক্তার বের হয়ে বললো রোগীর অবস্থা আগের থেকে খারাপ যে কোনো সময় আরো খারাপ কিছু হতে পারে।নার্সকে আরো ভালো করে কেয়ার করতে বললো।তারপর রবিকে আবারো অজয়ের বাসায় নিয়ে আসা হলো।

যতটুকু পারছে সবাই রবির দেখাশোনা করছে।বেশিরভাগ সময় নার্স রবির পাশে থাকে।রাতের বেলায় নার্স চলে গেলে অজয়ের বোন সাইফা আর তার মা দেখাশোনা করে।মাঝে মধ্যে অজয় রবির অবস্থা কেমন তা দেখে যায়।অজয়ের বাবা মা ও কেউ জানে না রোগীর নাম কি।যখন অজয়ের থেকে জানতে চাই তখন শুধু বলে সময় হলে ওর নাম বলব।তার আগে বললে বিপদ হবে। তাই আর বাবা মাও অজয়কে চাপ না দিয়ে সময় দেয়।এভাবে চলতে থাকে আরো দীর্ঘ সময়।প্রায় একটা বছর পর রবির হাতের আঙুল নড়ে ওঠে।
হঠাৎ রবির পালস আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করে।রাতের বেলায় এমন হওয়ার কারণে নার্স ছিল না।রবির ঘরে ছিল সাইফা।রবির হাতের আঙুল নড়ে ওঠায় সাইফা চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে লাগলো।

সাইফার চিৎকার শোনে অজয় এবং তার মা দৌড়ে সে রুমে এলো। সাইফা কিছু না বলে রবির দিকে হাত ইশারা করল আর সবাই তাকিয়ে দেখে রবির হাতের আঙ্গুল এখনো একটু একটু নড়ছে, কিন্তু তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

অজয় দেরি না করে নার্সকে ফোন। নার্স হসপিটালে নিয়ে যেতে বলল তাড়াতারি। তারপরে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে গেল।ডাক্তার-রোগীর সবকিছু চেক করার পর হাসিমুখের বের হল সবাইকে বলল আশা করি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু একটা সমস্যা আছে সেটা হচ্ছে রোগী আগের কোনো কিছু মনে আছে কিনা সেটা এখনো আমাদের বোঝা মুশকিল। যতক্ষণ না রোগীর জ্ঞান ফিরবে ততক্ষন আমাদের বোঝা মুশকিল।

রোগী বেঁচে উঠেছে এতে সবাই অনেক খুশি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা যদি রোগীর আগের মেমোরি লস না হয় তাহলে সব থেকে ভালো হয়। ডাক্তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর জ্ঞান ফিরার কথা বলে। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ার পরেও রোগীর জ্ঞান ফিরে না। সবাই ভয়ে আছে।সে ভয় দূর হলো আরো দুই ঘন্টা পরে।

আরো দুই ঘন্টা পর রবির জ্ঞান ফিরে।কিন্তু সেখানে আরেক বিপত্তি তার জ্ঞান ফিরলেও নিজেকে চিনতে পারছে না।মানে তার অতীত ভুলে গেছে।ডাক্তার রবিকে আরো কিছু পরিক্ষা করে বললো।অতীত খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে আর যতদিন এই অতীত ফিরে না আসে ততদিন খুব সাবধানে থাকতে হবে।

অজয় সবার সামনে রবির নাম নিতে পারবে না তাই রবির নামের দ্বিতীয় অংশ হাসান বলে সবার কাছে সম্মোধন করল।সবাই এখন হাসান বলে চেনে।রবি এখন হাসান নাম ধরে অজয়ের পরিবারে সময় পার করতে লাগে।অজয়ের সাথে ঘোরাঘুরি করে। একদিন হঠাৎ রবি আর অজয় বিকালের দিকে ঘুরতে বের হলো।হঠাৎ কতগুলো লোক গুলি নিয়ে রবি অজয়কে চারপাশে ঘিরে ফেলে।দুই জন কিছু বুঝতে পারছিল না কি করবে।হঠাৎ গাড়ি থেকে একজন বের হয়ে রবির কাছে আসে আর বলে….
–ভাই আপনি এতদিন পর কোথথেকে আসছেন?আর এমন সাধারণ ভাবে কেন?আপনাকে আমরা সবাই কত খুঁজছি জানেন!

রবিঃআমাকে খুঁজছ মানে?
–আরে ভাই এসব মানে পরে হবে আগে চলেন তো বাসায় যায়।আমাদের হবু ভাবি অপেক্ষা করছে।

পাশ থেকে অজয় বলল, আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে এ আপনাদের ভাই নয়।

–তুমি চুপ কর তো।চলেন ভাই পুরো তিনমাস পর আপনাকে পাইছি।
রবিঃতোমাদের ভাইয়ের নাম কি?
–আরে ভাই আপনি আপনার নাম জানেন না?আপনি তো আমাদের রাফসান সাকিব ভাই।

রবি তাঁকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল।কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে চাই না।শেষে রবি তাকে বলল…
রবিঃসিওর তো তুমি আমাকে চেন আর আমি-ই তোমাদের ভাই?
–হ্যাঁ ভাই আপনি তে আমাদের ভাই।
রবিঃঠিক আছে কাল বিকাল চারটায় এখানে চলে এসো আমি কাল যাব তোমাদের সাথে।

–ঠিক আছে ভাই।তাহলে এখন আসি অনেক কাজ ঐ দিকে।

তারপর তারা চলে যেতে লাগলো।গাড়ির কাছে গিয়ে একজন ভাইকে খুঁজে পেয়েছি বলে শূন্য আকাশে গুলি ছুটল।গুলির আওয়াজ শোনে রবি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।তার অনেক মাথা ব্যথা শুরু হল।রবি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজ্ঞান হয়ে গেল।
লোক গুলো গুলি চালিয়ে চলে গেল।রবির কি হয়ছে তারা খেয়াল করে নি।অজয় তাড়াতাড়ি রবিকে পাশের হসপিটালে নিয়ে গেল।ডাক্তার রবিকে দেখে বলল তেমন কিছু হয় নি শুধু মাথা ব্যথা হয়েছে আর একটু ঘুম দিলে ঠিক হয়ে যাবে।অজ্ঞান অবস্থায় রবিকে ঘুমের একটা ইনজেকশন দিয়ে দিল।

প্রায় দুই ঘন্টা পর রবির ঘুম ভাঙতে চারপাশে তাকিয়ে দেখে হসপিটালের বেড়ে শুয়ে আছে আর অজয় তার পাশে।রবি অজয়কে দেখে বলল….
রবিঃঅজয় তুমি এখানে কেন আর আমি বা এখানে কেন?

অজয় রবির কথা শোনে বেশ অবাক হলো।অজয় রবিকে বলল..
–ভাই আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?
রবিঃহ্যাঁ চিনব না কেন তুমি আমাদের জুনিয়র অজয়।কিন্তু তুমি আর আমি এখানে কেন?
–এখানে বলা যাবে না।আগে চলুন আমার বাসায় তারপর সব বলব।
রবিঃতোমার বাসায় মানে?

পাশ থেকে ডাক্তার রবিকে বলল আপনি অজ্ঞান ছিলেন উনি তো আপনাকে হসপিটালে নিয়ে আসলো।এবার এবার কিছু টা অবাক হলো।কি হয়েছে তার সাথে এখনই বা কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

রবি অজয়ের সাথে তার বাসায় গেল।অজয় মাকে চিৎকার করে করে ডাকা শুরু করে।অজয়ের চিৎকার শোনে তার মা আর তার বোন সাইফা বাইরে আসে।সাইফা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? তখন অজয় বলে ওর সব সৃতি ফিরে আসছে।

সাইফাঃহাসান ভাইয়ার?
–হ্যাঁ কিন্তু ও আসলে হাসান নয়।

অজয়ের কথা শোনে তার মা আর বোন দুই জনই অবাক আরো বেশি অবাক হলো রবি।অজয় এসব কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না।সাইফা বলল হাসান না হলে কে তাহলে?

রবি পাশ থেকে বলে ওঠল আন্টি অজয় এসব কি বলছে কিছু বুঝতে পারছি না।

অজয় বলল এতদিন আপনি এখনে ছিলেন এটা কি মনে আছে?পুরো দেড় বছরের মধ্যে কি হয়েছে আপনার মনে আছে?

রবিঃদেখ অজয় তুমি কি বলছ আমি কিছু বুঝতে পাটছি না।একটু গুছিয়ে বল প্লিজ।

পাশ থেকে আন্টি বলল আচ্ছা দাড়িয়ে নয় বসে কথা বলি চলো বস সবাই।

তারপর সবাই বসল।রবি একটা সোফায় আর বাকিরা অন্য পাশে।রবি অজয়কে বলতে বলল আসলে।কি হয়েছে।তারপর অজয় বলল “আমরা কয়েক জন গ্রামের বাসায় বেড়াতে গিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়।আমরা মাছ ধরার মাঝখানে কাউকে পড়ে থাকতে দেখে কাছে যায়। আর গিয়ে দেখি সেটা আপনি।আপনাকে আমরা অজ্ঞান অবস্থায় নদীতে পায়।পাশে একটা হসপিটালে ভর্তি করি।আপনার শরীরে ডাক্তার তিনটা বুলেট পাই কেউ আপনাকে গুলি করছিল।তারপর গ্রামের হসপিটাল থেকে ঢাকায় নিয়ে আসি।আপনি আইসিইউ তে চলে যান।এক বছর পর আইসিইউ থেকে বাইরে আসেন।আর মাস দুই মাস হলো জ্ঞান ফিরছে আর আপনার অতীত ভুলে গেছেন।আপনার কিছু মনে পড়ছে?”

এতটুকু বলে অজয় থেমে গেল।রবি মাথায় হাত দিয়ে ভাবছে তার সাথে কি হয়েছিল।বার বার মাথায় চাপ দিতে লাগলো। একটু একটু মনে পড়ছে তার।

#To_be_continue…….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here