#গল্পের_নাম: ||প্রেম পায়রা||পর্ব ০৪
#লেখনীতে: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে কয়েক পা এগোতে সম্পদ হুট করে সামনে এসে তিথির দু কাঁধ খামচে ধরে।বিনিময়ে তিথি ভয়ার্ত চোখে সম্পদের দিকে তাকালো।রক্তলাল চোখে সম্পদ তার দিকে তাকিয়ে আছে।যেন চোখের আগুনে ঝলসে ফেলবে তাকে।ক্ষণে ক্ষণে তার কপালের রগ দুটো ফুলে ফুলে উঠছে।সেই সাথে কাঁধ চেপে রাখা হাত দুটো ক্রমেই শক্ত হয়ে আসছে যেন মাংস ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যাবে।তিথির শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল রক্তস্রোত বয়ে গেল।সে ভয়ার্ত চোখে মুখে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললো,
—‘ক-কি হয়েছে?এমন করছেন কেন?’
সম্পদ দাঁতে দাঁত চেপে অস্ফুট স্বরে বলে উঠে,
—‘এতক্ষণ কোথায় ছিলে?সেই সকাল আটটা তেরো মিনিটে রুম থেকে বের হয়েছ।এখন দশটা সাতচল্লিশ বাজে!’
—‘নিচে ছিলাম।বাতাসী খালাকে রান্নায় সাহায্য করছিলাম।’
—‘তোমাকে বাতাসী খালার জন্য বিয়ে করে এনেছি যে তাকে সাহায্য করবে?তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?বাতাসী খালাকেই বিয়ে করতে!’
তিথি প্রথম বার অদ্ভুত দৃষ্টিতে সম্পদের দিকে তাকালো।সম্পদ এখনো তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তাকে এত কাছে অনুভব করতে কেমন অস্বস্তি শুরু হলো তিথির।সে সম্পদের হাতদুটো ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু ব্যর্থ হলো।বিড়বিড় করে বললো,
—‘আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে বাতাসী খালাকেই বিয়ে করবো।’
তারপর স্পষ্ট সুরে টেনে টেনে বললো,
—‘কাঁধ ছাড়ুন।ব্যথা পাচ্ছি!’
সম্পদ প্রতিত্তরে আরো জোরে চেপে ধরলো।তার আর তিথির মাঝে যে সামান্যটুকু দূরত্ব ছিল, কয়েক সেন্টিমিটার এগিয়ে সে দূরত্ব টুকুও ঘুচিয়ে ফেলল।মাথা নিচু করে বললো,
—‘তিথি,তোমাকে তিন কবুল বলে বিয়ে করেছি আমি।এই সম্পদ জুহায়ের!বাতাসী ফাতাসী নয়!আমি তোমাকে বিয়ে করেছি সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকার জন্য।সেটাই করবে।আমি যতক্ষণ বাসায় থাকবো ততক্ষণ চেয়ার পেতে আমার চোখের কয়েক ইঞ্চি সামনে বসে থাকে।মনে থাকবে?’
তিথির গলা শুকিয়ে আসছে।তার চোখে মুখে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলা বিষণ্ণ সুন্দর কন্ঠের মানুষটি কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে?এত তাড়াতাড়ি?এক রাতে কি করে সম্ভব!ভালো না বাসলে তাকে চোখে হারাচ্ছে কেন?সে দ্বিতীয় বারের মতো সম্পদের হাতে স্পর্শ করে কাঁধ ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো।তার হাতের স্পর্শে সম্পদ কেমন কেঁপে উঠলো এবং সঙ্গে সঙ্গে কাঁধ ছেড়ে দিল।
তিথি দ্রুততার সহিত দু পা পিছিয়ে যেতে আবার বাঁধা পড়লো।সম্পদ তাকে হ্যাঁচকা টানে বুকের উপর ফেলল।তিথি কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল।
তিথির শিরায় শিরায় কাঁটা দিয়ে উঠলো যেন।বুকের ভেতর ঝড় বয়ে গেল।এই মানুষটার স্পর্শে কিছু একটা ছিল যা তাকে এলোমেলো করে দিল।মনের ভেতর অন্য রকমের অনুভূতির আবির্ভাব ঘটলো।নিশান ভাই তো অনেক বার তার হাত ধরেছে!এমন পাগল পাগল অনুভূতি তো হয়নি?সে আর ভাবতে পারছে না।মাথা ঝিমঝিম করছে।দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে!এই নতুন অনুভূতির সাক্ষী সে কিছুতেই হবে না।পরিচিত হবে না আর কোনো অনুভূতির সাথে।নিজেকে আর কারো মায়ায় জড়াবে না।সে হাঁসফাঁস করতে করতে সম্পদকে নিজের থেকে আলাদা করতে চাইলো।কিন্তু পারলো না।তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে কোনোরকমে বললো,
—‘ছাড়ুন!ছা-ছাড়ুন আমায়।’
তারপরই কচু পাতার মতো নেতিয়ে পড়লো সে।চোখ জোড়া আপনা-আপনি বন্ধ করে ঢলে পড়লো সম্পদের বুকে।তিথিকে নিজের বুকের মাঝে স্থির দেখে সম্পদের হাত ঢিলে হয়ে আসলো।তাকে জড়িয়ে মুখটা সামনে এনে চোখ মুখ কুঁচকে গেল।সেই সাথে চিন্তার ভাঁজ পড়লো কপালে।সে ডান হাতে তিথির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বার কয়েক ডাকলো,
—‘তিথি!এই তিথি!কথা বলো।’
তিথি কোনো রেসপন্স করলো না।সম্পদ দ্রুত তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল।তিথির হাত পায়ের তালুতে ঘষে দিল।বিস্মিত গলায় বার বার তিথিকে ডাকলো।তার চোখে মুখে বিস্ময় ভাব কাটছে না।বিশ্বাস হচ্ছে না সামান্য জড়িয়ে ধরেছে বলে এতোবড় একটা মেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেল?কিভাবে সম্ভব?
টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে চিরাচরিত পন্থা অবলম্বন করলো।হাতে পানি নিয়ে তিথির মুখে পানির ঝাপটা দিতে চাইলো।কিন্তু তার আগেই তিথি আচমকা চোখ খুলল।বড় বড় চোখে বোঝার চেষ্টা করলো চারপাশে কি হচ্ছে।
সম্পদ শ্বাস নিল।হাতের গ্লাসটা নিচে নামিয়ে রেখে তিথির পাশে বিছানায় বসে পড়লো।হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করতেও ফিরিয়ে আসলো।মেয়েটা এখনো সহজ হয়নি।তাকে সময় দিতে হবে!সহজ করতে হবে।তার ভালোবাসা বোঝাতে হবে।সম্পদ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
—‘তিথি!এতটুকুতে কেউ সেন্সলেস হয়?আমার মনে হয় তুমি অনেক দূর্বল।ডক্টরের কাছে যাবে?’
তিথি দূর্বল ভাবে না বোধক মাথা নেড়ে চোখ বন্ধ করলো।বড় বাবার কথা মনে পড়ছে খুব।সকালবেলা একবার কথা হয়েছে শুধু বড় বাবার সাথে।নিশান ভাইয়ের এখনো কোনো খোঁজ নেই।একবারও ফোন করেনি!সে খুব করে চায় নিশাস ভাই যেন কোনোদিন ফোন না করে!কোনোদিন যেন তার মুখোমুখি না হয়!ভালো থাকুক না সে নিজের কাছের মানুষদের নিয়ে!
৮.
নিশান অন্ধকার বেলকনিতে বসে আছে।তার দৃষ্টি উদাস।চোখে মুখে উদ্ভ্রান্ত ভাব।ডান হাতের আঙুলের ফাঁকে সিগারেট!সিগারেটের মাথায় আগুন জ্বলছে।সেই সাথে আগুন জ্বলছে তার বুকে।আজ দুদিন পর বাসায় ফিরে যখন শুনতে পেল তিথির বিয়ে হয়ে গেছে তখন তার মনের রাজ্যে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।ভাঙচুর হয়ে গেছে হৃদয় প্রাচীর।সে আর নিজের মধ্যে নেই।জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে ভেতরটা!মন চাইছে তার হৃদয়ের সাথে সাথে পুড়িয়ে ফেলুক এই গোটা পৃথিবী!
—‘রাতের খাবার খাবেন না আপনি?’
রাতের অন্ধকার চিঁড়ে মেয়েলি একটা কন্ঠ এসে নিশানের বুকে বিঁধল।অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে পেছন ঘুরে তাকাল।সিগারেটে একটা ফুঁক দিয়ে তার ধোঁয়া ছাড়লো।উদ্ভ্রান্ত কন্ঠে বললো,
—‘কে?’
—‘আমি!আমি তুলি।’
তুলি আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল নখে পেঁচাচ্ছে।মাথার চুল গুলো কাঁটা দিয়ে আটকানো।মাথায় কাপড় নেই।নিশান আবছা অবয়বটি থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
—‘তুলি আমি একা থাকতে চাই।চুপচাপ সরে পড়ো।’
তুলি নিতান্ত বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নেড়ে বললো,
—‘ঠিক আছে।আমি ঘুমিয়ে পড়ছি।আপনার খাবার রুমে টেবিলে ঢাকা দিয়ে রেখেছি।ইচ্ছে হলে খেয়ে নিবেন।’
তুলি নিঃশব্দে বেলকনি ত্যাগ করলো।তবুও নিশানের কানে তার ধ্বনি বাজলো।বুকে ব্যথার জায়গা নতুন ব্যথা শুরু হলো।মনে হলো তুলি নামের কিশোরী মেয়েটা তার বুকের ক্ষতের উপর দিয়ে হেঁটে গেল।
নিশান আধ টুকরো সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল।মাথার চুল টেনে ধরলো দুহাতে।মাথার ভেতর ধপধপ করছে।তার কাউকে পাশে প্রয়োজন।মন খারাপের গল্প বলার জন্য।সে কাউকে তার মন ভাঙ্গার গল্প শোনাতে চায়।প্রিয়জন হারানোর বেদনা কারো সাথে ভাগাভাগি করতে চায়।সে যে সইতে পারছে না।
দুদিন আগে শুক্রবারে ভোরের দিকে সে বাসা ছেড়েছিল।বাসে করে বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছে সকাল সাতটার ট্রেনে খুলনা গিয়েছিল।সবটাই তার বাবার হুকুমে।খুলনা জেলখানাতে তার বাবা গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেপারস আনতে পাঠিয়েছিল।অফিস বন্ধ ছিল বলে সে দ্বিরুক্তি করেনি।জেলখানাতে তার বাবার পুরনো বন্ধুর পরিবার অনেক আপ্যায়ন করেছে।মাঝে একদিন কিছুতেই ছাড়ছিল না।আজ দুপুরের ট্রেনে রওনা করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল।
ফ্রেশ হয়ে সে খাবার খেল।ড্রয়িং রুমে দীর্ঘক্ষণ বসে রইলো তিথিকে এক পলক দেখার জন্য।কিন্তু তিথি নিজের রুম থেকে বের হলো না।শেষ মেষ যখন বিকেল ফুরিয়ে সন্ধ্যা হলো তখন সে আর চুপ থাকতে পারলো না।
ইতি উতি করে তিথিকে খুঁজতে খুঁজতে মাকে জিজ্ঞেস করতে তার মা জানাল,তিথির বিয়ে হয়ে গেছে।ছেলে এস্টাবলিস্ট!ঢাকাতে দুটো গার্মেন্টসের মালিক।তাদের পোশাক কারখানাতে তৈরি পোশাকের মডেল পশ্চিমা দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।ছেলের বাবা প্রথমদিকে পারিবারিক বিজনেসের দেখাশোনা করতো।একটা এক্সিডেন্টে তার কোমড় থেকে নিচের অংশ প্যারালাইসড হয়ে যাওয়ার পর ছেলে বাবার বিজনেসের হাল ধরেছে।ততদিনে ছেলের বিজনেস স্টাডিজে গ্রাডুয়েশন কমপ্লিট।উত্তরাতে তাদের ডুপ্লেক্স বাসা।মা নেই!একটা বোন নিয়ে সুন্দর ছিমছাম পরিবেশ!তিথি সুখে থাকবে।ছেলের এটা আছে,ওটা আছে!আরো বহু কিছু।কিন্তু সেসব নিশানের কর্ণকূহরে প্রবেশ করেনি।তার মাথায় একটা শব্দ বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল যে তিথির বিয়ে হয়ে গেছে।
কোনোরকমে নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে সে বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করলো।তিথিকে নিয়ে বোনা স্বপ্ন সুতোয় টান পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে দূর আকাশে মিলিয়ে গেল যেন।বার বার চোখের সামনে তিথির মুখটা ভেসে উঠছিল।
নিশান নতুন করে আরেকটা সিগারেট ধরাল।উদাস দৃষ্টিতে কয়েক টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে অতীতের কথা মনে পড়লো।
তিথির প্রতি তার অনুভূতি বহু বছরের নয়।তিথিকে যখন তার বাবা বাসায় নিয়ে আসলো তখন নিশানের বয়স নয় বছর।তিথিকে তার তেমন পছন্দ হতো না।বাবা-মা তাকে রেখে এই কুড়িয়ে পাওয়া মেয়েকে নিয়ে আদিখ্যেতা করতো,ভালোবাসতো।এসব তার পছন্দ হতো না।এক প্রকার হিংসা থেকে সে জিদ ধরলো বাসায় থাকবে না হোস্টেলে গিয়ে পড়াশোনা করবে।তার জিদের কাছে হার মেনে ক্লাস সিক্সে থেকে সে বাবা-মার থেকে আলাদা হয়ে মোহাম্মদপুর হোস্টেলে পড়াশোনা করতে থাকে।বাসায় খুবই কম যেত।বছরের দুটো ইদের ছুটিতে শুধু।গিয়ে তিথির দিকে ভুলেও তাকাতো না।তিথিও ভয়ে তার থেকে আড়ালে আড়ালে থাকতো।
আজ থেকে বছর তিনেক আগে,সে তখন অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ে।প্রথমবার পূজোর ছুটিতে বাসায় এসেছে।সেদিন রাতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।তার কিছুতেই ঘুম আসছিল না।বেলকনি থেকে ঠিকমতো বৃষ্টি দেখা যাচ্ছিল না।সেজন্য ছাদে উঠার মনস্থির করলো।হাতের ফোনটা বিছানায় রেখে সে ছাদে উঠে গেল।
ছাদে পা রাখতে তার দৃষ্টি আটকে গেল তাদের এক তলা ছাদে হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা মেয়েটির উপর।সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ক্ষণে ক্ষণে বিজলি চমকাচ্ছিল।তার স্নিগ্ধ আলো মেয়েটির মুখে পড়ে যখন তখন তাকে অপ্সরীদের মতো লাগছিল।সেই রাতে তার আর বৃষ্টিতে ভেজা হলো না।চুপচাপ রুমে এসে ভেজা কাপড়ে সারারাত কাটিয়ে দিল।পরদিন থেকে অদ্ভুত ভাবে সবসময় তিথির সাথে দেখা হওয়া শুরু হলো।হয়তো সে পানির খাওয়ার জন্য ডাইনিং এ গিয়েছে! গিয়ে দেখে তিথি রয়েছে,রান্নাঘরে কফির জন্য গিয়ে দেখে তিথি রয়েছে, সোফায় টিভি দেখার সময় চোখে পড়ে ইত্যাদি।একটা সময় যখন তিথির কথা ভাবতে ভাবতে তার মাথা নষ্ট অবস্থা, তখন সাহস করে নিজের সম্পুর্ণ আবেগ ঢেলে তিথিকে প্রেমপত্র লিখলো।প্রেমপত্রের উত্তর জানার সাহস তার ছিল না।সেজন্য চিঠি দিয়েই নিজের আস্তানায় চলে গেল।
এরপর চার মাস পর যখন বাসায় ফিরলো তিথি তাকে যত্ন করে তার চিঠির উত্তর দিল।সে রাজি!সেও তাকে ইতোমধ্যে ভালোবেসে ফেলেছে।ব্যস!তার পরের সময় টুকু ছিল তার জন্য স্বর্গতুল্য।তিথিকে হুটহাট একটু দেখতে পেলেই মন ভালো হয়ে যেত।
বৃষ্টির ঝাপটায় নিশানের ঘোর কাটে।হঠাৎ করে মাথা খোলাসা হওয়া শুরু করে।তার বাবা ইচ্ছে করে তাকে খুলনা পাঠিয়েছিল না তো, যাতে তিথির বিয়েটা তার অগোচরে নির্বিঘ্নে মিটে যায়?হ্যাঁ,সেটাই!নিশানের বুকের ভেতর আবার পোড়া শুরু হলো।সে থাকলে কিছুতেই তিথিকে অন্যের হতে দিতো না।কিন্তু তিথি!তিথি কি করে অন্য একটা ছেলেকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিল?কেন তাকে বুঝতে চাইলো না?বোঝার চেষ্টা করলো না?
তিথির প্রতি অভিমানে নিশানের মন ভরে উঠলো।বৃষ্টির বেগ বাড়তে সে বেলকনি থেকে উঠে রুমে ঢুকলো।এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে গেল।তার মাথা ঘুরছে।সিগারেট খাওয়া বেশি হয়ে গেছে। সে টলমল পায়ে বিছানায় ঝুপ করে শুয়ে পড়লো।রুমে আবছা আলো।সবুজ রঙের ড্রিম লাইট জ্বলছে।সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সে কাত ঘুরে বিছানার কর্ণারে যেতে ফ্লোরে শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে চোখ গেল।তুলি কম্বল বিছিয়ে শুয়ে আছে।তার রুমে সোফা নেই বলে মেয়েটা প্রথম থেকেই ফ্লোরে ঘুমায়।এতে তার একটু খারাপ লাগলেও সেই খারাপ লাগাটা ততটা প্রকট হয়নি।
নিশান মনে মনে বললো, আহারে!তার দৃষ্টি আর একটু তীক্ষ্ণ হতে বুঝতে পারলো তুলি নামের মেয়েটার বুকের উপর থেকে কাপড় সরে গেছে।মেয়েটা গভীর ঘুমে বলে টের পাচ্ছে না হয়তো।সে দ্রুত চোখ সরিয়ে কাত ঘুরে চোখ বন্ধ করলো।
৯.
তিথি গম্ভীর মুখে বিছানায় বসে আছে।সম্পদ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।বিয়ে উপলক্ষে তিন দিন যায় নি।এই তিনটা দিন তাদের মধ্যে তেমন কোনো কথা হয়নি।কিন্তু সম্পদ তাকে পাঁচ হাত দূরেও যেতে দেয়নি।সত্যি সত্যি বিছানা থেকে এক হাত দূরে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে।আর সম্পদ বিছানায় শুয়ে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থেকেছে।কি এক অস্বস্তিকর অবস্থা!
আজ অফিস গেলে তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।হঠাৎ করে সম্পদ গলার টাইটা বেঁধে তিথির সামসে এসে দাঁড়াল।কন্ঠে মধু ঠেলে বললো,
—‘তিথি, আমি আর হাত নষ্ট করবো না।খাবারটা খাইয়ে দাও তো!’
তিথি এই ভয়টাই পাচ্ছিল।বাতাসী খালা নাস্তার প্লেট দিয়ে গেছে ঘন্টা খানেক হলো।কিন্তু এই বদের হাড্ডি শুধু ঘোরাঘুরি করছে।খাবারের দিকে ভুলেও তাকাচ্ছে না।
সম্পদ তিথির মুখ বরাবর বিছানায় বসে বালিশের পাশ থেকে ল্যাপটপটা কোলের উপর নিয়ে অন করলো।এক পলক তিথির দিকে চেয়ে বললো,
—‘কি হলো?তাড়াতাড়ি করো।অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে তো।’
এটুকু বলে ল্যাপটপের স্ক্রিণে চোখ রাখলো।তিথি পারবো না বলতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিল।উঠে গিয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিল।
(চলবে)