#গল্পের_নাম: ||প্রেম পায়রা ||পর্ব_১১
#লেখনীতে: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
তিথি রাগী চোখে তাকাতে সম্পদ বুকে হাত চেপে বলল,
—‘এভাবে তাকাবে না প্লিজ!এখানে জ্বলে পুড়ে যায়।’
সম্পদের মুখোভঙ্গিতে তিথির প্রচন্ড হাসি পেল।হাসি লুকাতে সে দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিল।
সম্পদ উঠে গিয়ে টেবিল থেকে মেডিসিনের বক্সটা নিয়ে আসলো।সূক্ষ্ম ভাবে প্রেসক্রিপশন পরখ করে একগাদা ট্যাবলেট খুলে হাতে রাখল।হাতের তালুতে সবগুলো নিয়ে তিথির দিকে বাড়িয়ে দিল।
এতগুলো ট্যাবলেট একত্রে দেখে তিথি শুকনো ঢোক গিলল।অসহায় চোখে একবার সম্পদের দিকে তাকালো।সম্পদের মুখে কঠোরতা!সে চোখ দিয়ে ইশারা করতে তিথি মুঠোয় পড়ে সবগুলো ট্যাবলেট একত্রে খেয়ে ফেলল।
সম্পদ হাসি মুখে বলল,
—‘গুড গার্ল!’
তিথি উত্তর দিল না।সম্পদ তিথির হাতের গ্লাসটা হাতে নিল।তিথির খাওয়া অর্ধ গ্লাস পানিকে চুমুক দিয়ে বলল,
—‘তোমার ডান হাতটা দেখি?’
তিথি কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—‘আমার ডান হাতে কি ছ’টা আঙুল?এত হাত দেখতে চান কেন?যেদিন প্রথম আমায় দেখতে এলেন সেদিনও বললেন, তোমার হাতের আঙুল দেখি?আজব!’
সম্পদ মিষ্টি করে হাসল।যে কেউ সে হাসিতে নিজেকে হারাতে বাধ্য!তিথি দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।সম্পদ সম্পূর্ণ গ্লাস খালি করে নিজে থেকে তিথির ডান হাতটা টেনে হাতের ভাঁজে নিল।গভীর দৃষ্টিতে সে হাতের দিকে চেয়ে থাকতে তিথি ম্লান হেসে হাতটা ছাড়িয়ে নিল।
সম্পদের মনোযোগ ঘোরাতে বলল,
—‘আপনি অফিসে যাবেন না?’
—‘না!ম্যানেজারকে সব ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিয়েছি।’
তিথির ভেতর উসখুস শুরু হলো।সারাটা দিন তাহলে সম্পদ আর সে এক রুমে থাকবে!কি অস্বস্তিকর পরিবেশ!
—‘শুয়ে পড়ো এখন!ঘুমাও।’
সম্পদের কথায় তিথি বলল,
—‘আপনি কি করবেন?’
—‘আমিও ঘুমাব।রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি।এখন ঘুমাব!সারা রাত তুমি আমার বুকের মাঝে ছিলে।এবার আমি তোমার বুকের মাঝে থাকবো!’
সম্পদের নির্বিকার সুরে তিথি ভড়কে গেল।লজ্জা মিশ্রিত চোখে এদিক ওদিক তাকাল।নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
—‘রাতের জন্য স্যরি!আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না।’
—‘আই উইশ,এরপর থেকে প্রতিটা রাত,প্রতিটা দিন!প্রতিটা সময় তুমি নিজের মধ্যে না থাকো।শুধু আমার মাঝে থাকো।’
তিথি শুনেও না শোনার ভান করলো।জোরপূর্বক সম্পদকে বলল,
—‘বড় মা আর বড় বাবাকে ডেকে দিন তো।তারা সরাসরি ভেতরে আসতে লজ্জা পাচ্ছে।আমাকে এক পলক না দেখলে তারা সারাদিন উসখুস করবে।’
—‘এখনি ডেকে দিতে হবে?না মানে একটু ঘুমাও।দুপুরে কথা বলো।’
—‘আপনি এখনি ডেকে দিন তো!থাক আপনাকে ডাকতে হবে না।আমি নিজেই ডাকছি।’
তিথি সঙ্গে সঙ্গে গলা উঁচিয়ে বলল,
—‘বড় মা!বড় মা!বড় বাবা।কোথায় আপনারা?’
সম্পদ এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলল,
—‘তোমাকে ডাক্তার চেঁচিয়ে কথা বলতে বারণ করেছে।পায়ের তরুনাস্থিতে টান লাগবে।আমি ডেকে দিচ্ছি।’
সম্পদ বাইরে বের হয়ে গেল।ড্রয়িং রুমের সোফায় রেশমা আর সিদ্দিকুর রহমান বসে ছিলেন।সে কাছে গিয়ে অতিশয় বিনয়ের সহিত বলল,
—‘বড় বাবা!আর বড় মা!আপনাদের দুজনকে তিথি ডাকে।’
উনারা উঠে তিথির রুমের দিকে পা বাড়ালেন।সম্পদ সোফায় বসে পড়লো।প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্নেহাকে কল করলো।স্নেহা ফোন তুলল না।তার মানে সে অলরেডি ভার্সিটি চলে গেছে।
বাবাকে ফোন করলো সে।দু বার রিং হতেই সোবাহান রিনরিনে গলায় বললেন,
—‘কে?’
সম্পদের হাসি পেল।তার বাবার মুদ্রা দোষ এটা।ফোন ধরেই জিগ্যেস করবেন কে?যতবার ফোন করবে ততবার বলবেন কে?সম্পদ হাসি থামিয়ে বলল,
—‘তোমার ছেলে বলছিলাম বাবা!’
—‘অহ।কেমন আছিস তোরা?বৌ মা কেমন আছে?’
সম্পদ তিথির পায়ের ব্যাপারটা লুকিয়ে গেছে।গতরাতে স্নেহার সাথে ফোনে কথা বলার সময়ও বলেনি।আজ বাবাকেও বলবে না।অচল মানুষ,আসতে পারবে না।কিন্তু চিন্তা করবে ঠিকই!সে স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—‘বাবা তোমার বৌ মা ভালো আছে।তুমি সকালের নাস্তা খেয়েছ?’
—‘তা খেয়েছি।স্নেহা খাবার খাইয়ে,মেডিসিন খাইয়ে তারপর ভার্সিটি গেছে।’
—‘রিলাক্স!খাওয়া দাওয়া করেছ কি না সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।’
—‘তোরা কয়দিন থাকবি?তাড়াতাড়ি চলে আসিস!’
—‘চলে আসবো বাবা!’
সম্পদ ফোন রাখল।তিথির রুমের দিকে এক পলক তাকাল।রেশমা আর সিদ্দিকুর রহমান এখনো বের হননি!বাবা-মা আর মেয়ের কথাবার্তার মধ্যে সে ঢুকতে চাচ্ছে না।তারা নিজেদের মতো কথা বলুক।
সম্পদ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে খবরের কাগজ হাতে নিল।প্রথম পাতায় উল্লেখযোগ্য কিছুই চোখে পড়লো না।সে পেজ উল্টাল।দু চার লাইনে চোখ বুলিয়ে বিনোদন পেইজে গেল।বিনোদন পেইজে বড় করে শাকিব খানের ছবি দেয়া।হয়তো নতুন কোনো মুভি রিলিজ হবে।সে আগ্রহ খুঁজে পেল না।পেপারের প্রতিটি পেইজ উল্টে শেষ পাতায় গিয়ে তার হাসি পেল।
একটা সময় ডেইলি খবরের কাগজের খুঁটিনাটি না পড়লে তার সকালের নাস্তা হজম হতো না।অথচ বিয়ের পর খবরের কাগজের প্রতি তা৷ বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই।সব আগ্রহ তিথিকে ঘিরে।সব মানে সব!
হাত পা ছড়িয়ে মাথাটা সোফায় এলিয়ে দিল সম্পদ।চোখ দুটো বন্ধ করে পা নাড়ানো শুরু করলো।তার ঠোঁটের কোণে উপচে পড়া হাসি!
সিদ্দিকুর রহমান আর রেশমা বের হয়েছেন।তাদের পদধ্বনিতে সম্পদ তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়ালো।দু চারটে কথা বলে সে রুমের দিকে এগোল।খুব ঘুম ঘুম পাচ্ছে!
তিথি পা টান করে শুয়ে পড়েছে।দরজা লাগানোর শব্দে মাথা ঘুরিয়ে দেখল সম্পদ।সে বিস্মিত হয়ে বলল,
—‘দিনে দুপুরে দরজা বন্ধ করছেন কেন আপনি?’
সম্পদ এগিয়ে এলো।তিথিকে পাশ কাটিয়ে একলাফে অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।লম্বা একটা হাই তুলে বলল,
—‘ছিটকিনি লাগাইনি!আটকে আসবো?’
—‘কোনো দরকার নেই!’
—‘দরজা ভিড়িয়ে দিয়েছি শুধু।ধাক্কা দিলে কিন্তু খুলে যাবে।’
—‘খুলুক না!’
সম্পদ বালিশটা একটু এগিয়ে আনতে তিথি বাঁধ সেধে বলল,
—‘একদম কাছে আসবেন না।আমি অসুস্থ!অসুস্থতার মাঝে নো ঘেঁষাঘেঁষি!’
সম্পদ শব্দ করে হেসে ফেলল।তিথির ডান হাতটা টেনে নিজের হাতে নিল।আঙুলের ভাঁজে আঙুল ঢুকিয়ে বলল,
—‘এতেই চলবে!আর কিছু চাই না।’
তিথি অবাক চোখে সম্পদের দিকে তাকালো।যত দিন যাচ্ছে ছেলেটা তত তার চারপাশে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছে।দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে এই মুগ্ধতার সাগরে।সে কি এই মুগ্ধতা থেকে ভালোবাসা খুঁজে নিতে পারবে?ভেঙে চূড়ে ভালোবাসতে পারবে সম্পদকে?
সম্পদের চোখ বন্ধ।কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে সে চিৎ হয়ে শুলো।তিথির ধরে রাখা হাতটা বুকে নিতে গভীর নিঃশ্বাসের শব্দ কানে এলো।তিথি মাথাটা হালকা উঁচু করে সম্পদের ঘুমন্ত মুখচ্ছবির উপর অপলক চেয়ে রইলো।
১৯.
তিথি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।সম্পূর্ণ আকাশ জুড়ে তার দৃষ্টি বিচরণ করছে।সে গভীর মনোযোগ দিয়ে আকাশের রঙ পর্যবেক্ষণ করছে এবং অবাক হয়ে লক্ষ করছে যে গড় হিসেবে প্রতি সাত মিনিট অন্তর অন্তর আকাশের রঙ পাল্টে যাচ্ছে।
বাম পায়ে হালকা ভর দিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো।ছাদের একদম রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফোনে শেষ ছবিটা ক্লিক করলো।তারপর গ্যালারিতে পরখ করে দেখল।সবমিলিয়ে বিভিন্ন রঙের একচল্লিশ টা ছবি সে উঠাতে পেরেছে।বিগত দুই ঘন্টা যাবত সে ছাদে বসে আছে।চুপচাপ বসে না থেকে আকাশের ছবি তুলে ফেলল।
রেলিং থেকে কিছুটা পিছিয়ে সে বসে পড়লো আবার।কয়েক মিনিটের মধ্যে সন্ধ্যার আযান পড়বে।ঠিক সেই সময় সে আরেকটা ছবি তুলবে।তারপর নিচে নামবে।
বেশিক্ষণ বসে রইলো না তিথি।ময়লা ছাদেই ওড়নার এক অংশ বিছিয়ে শুয়ে পড়লো।হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে মাথার নিচে রেখে আকাশের দিকে তাকালো।তার বড় বাবা প্রায়ই বলতো,’আকাশ দেখবি তিথি!সময় সুযোগ পেলেই আকাশ দেখবি।দীর্ঘক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে অন্য ধরনের প্রশান্তি পাবি।উঁচু কোনো জায়গা শুয়ে আকাশ দেখার মজাই আলাদা।নিজেকে কেমন উল্টো মনে হয় তখন।মনে হয় এই বিশাল আকাশে আমার ঘরবাড়ি!নিজেকে ছন্নছাড়া, মুক্ত বিহঙ্গের মতো লাগে রে।আকাশ দেখবি বেশি বেশি।আকাশ দেখলে, আকাশ ভালোবাসলে মন আকাশের মতো বড় হয়!’
তিথি আকাশের পশ্চিম কোণে হাতের আঙুল রেখে বিভিন্ন আকিঁবুকি করলো কিছুক্ষণ।দেড় মাসের মতো হলো তার পা ভেঙেছে।সিরিয়াস ফ্র্যাকচার না হলেও পা সারতে দীর্ঘদিন লেগে গেল।দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পরো গোড়ালি বেকায়দায় পড়লে ব্যথা লাগে।তবে হাঁটা চলা সমস্যা হয় না!
চট করে উঠে বসলো সে।জামাটা গুটিয়ে সে বাম পা টা টিপে দেখলো।সব সময় ব্যথা লাগে না!হঠাৎ হঠাৎ ভেতরে সূক্ষ্ম চিনচিনে ব্যথা হয়!
চায়ের কাপে চামচের টুংটাং আওয়াজে তিথি ঝট করে পেছন ঘুরে তাকায়।সম্পদ ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে।তার বাম হাতে এক কাপ চা।ডান হাতের সাহায্যে চামচ দিয়ে তাতে নাড়া দিচ্ছে।সম্পদের হাঁটা ভঙ্গি দারুণ।কেমন যেন মন কাড়া!পা ফেলে অথচ মনে হয় মাটিও লজ্জা পেয়ে মুখ লুকাচ্ছে!
সম্পদ তিথির কাছাকাছি এসে থেমে গেল।ময়লা ছাদ দেখে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে বসলো।চায়ের কাপে প্রথম চুমুক দিয়ে সামনের বিস্তীর্ণ আকাশের শেষ সীমানায় দৃষ্টি মেলল।স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল,
—‘চা খাবে?’
তিথি কিঞ্চিৎ ঘাড় ঘুড়িয়ে আড়চোখে সম্পদকে দেখলো।অফিস থেকে ফিরে শাওয়ার করে তারপর বোধ হয় ছাদে আসলো।মাথার চুলগুলো এখনো আধভেজা!এলোমেলো হয়ে আছে।হোয়াইট টিশার্টের কলার এবড়োথেবড়ো।সে চোখ সরিয়ে বলল,
—‘কখন এসেছেন?’
—‘মিনিট তিরিশেক!’
—‘কিছু খেয়েছেন?’
—‘এই তো চা খাচ্ছি।’
তিথি আর কথা খুঁজে পেল না।বেশ কিছুদিন হলো সে লক্ষ্য করছে সম্পদ কেমন যেন হয়ে গেছে।আগের মতো কথা বলে না,আগের মতো অধিকার খাটায় না!জোর গলায় কিছু বলে না,দুষ্টমি করে না!সবকিছুতে কেমন গা ছাড়া গা ছাড়া ভাব।তার খেয়াল রাখে ঠিকই,তার যত্ন করে,খুঁটিনাটি সব বিষয়ে নজর দেয় তবুও!তবুও তিথির মনে হয় কোথাও যেন সুর কেটে গেছে।সেই আগের সম্পদকে কেন জানি বড্ড মিস করছে সে!
তিথি ঘুরে বসলো।সম্পদের দিকে তাকিয়ে আগ্রহ নিয়ে বলল,
—‘আপনার মাথার চুল ভেজা।ঠান্ডা লেগে যাবে তো।’
সম্পদ এক পলক তার দিকে চেয়ে কেমন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।অকপটে বলল,
—‘রুমে গিয়ে মুছে নিব।’
তিথির চোখ সরু হয়ে এলো।সম্পদের উত্তর তার যুতসই হলো না।সে জানে সম্পদ আগের মতো উচ্ছল থাকলে বলতো,’তিথি চট করে তোমার ওড়না দিয়ে মাথাটা মুছে দাও তো!’
তিথির কেন জানি কান্না পেল খুব।সে দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে রইলো।ইতোমধ্যে চারিদিকে অন্ধকার নামা শুরু হয়েছে।সামনের প্রতিটি ফ্ল্যাটে আলো জ্বলে উঠছে।সম্পদ ঠান্ডা চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—‘চলো নিচে যাই।বাতাস উঠছে।শীত লাগছে না তোমার?’
কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে তিথির গালে পড়লো।ভাগ্যিস অন্ধকার বলে সম্পদের চোখে পড়লো না।সে মুখটা আরেক ধাপ নিচু করে বলল,
—‘আপনি যান!আমি আসছি।’
—‘তাড়াতাড়ি চলে এসো তাহলে।ঠান্ডা লেগে যাবে।’
সম্পদ চায়ের কাপটা রেখেই চলে গেল।সিঁড়িতে ধুপধাপ পা ফেলার শব্দ মিলিয়ে যেতে তিথি ডুকরে কেঁদে উঠলো।সে বেশ বুঝতে পারছে সম্পদ পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন।সেই আগের সম্পদ তাকে একা ছাদে রেখে কিছুতেই যেতো না।প্রয়োজনে জোরপূর্বক কোলে তুলে নিয়ে যেতো।
সন্ধ্যা হওয়ার ঘন্টা খানেক পর তিথি নিচে নামলো।সরাসরি নিজের রুমে ঢুকলো না।সে প্রতিজ্ঞা করেছে।সম্পদ যেমন তাকে ইগনোর করছে।সেও ইগনোর করবে।যেচে পড়ে কথা বলতে যাবে না।সম্পদ কি করতে চাচ্ছে, কি বোঝাতে চাচ্ছে সে দেখেই ছাড়বে।
সে সোবাহানের রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালো।
সোবাহানের রুমে রাতের খাবার দিয়ে গেছেন।কিন্তু তিনি খাননি!তাঁর হাতে হেনরি রাইডার হ্যাগার্ডের একটা বই।আর অল্প কয়েক পেইজের মতো আছে।টান টান উত্তেজনা চলছে।রোজামুন্ডের দায়িত্ব কে নিবে?কে হবে রোজামুন্ডের স্বপ্ন পুরুষ?উলফ নাকি গডউইন?
তিথি দরজার বাইরে থেকে ক্ষীণ স্বরে বলল,
—‘বাবা! ‘
সোবাহান বই বন্ধ করে রাখলেন।বাকি পেইজ কয়েকটা গভীর রাতে নিরিবিলিতে পড়বেন।আপাতত চিন্তা করা যাক।এরপর কি হয়?বা কি হবে?এতে ছোট্ট একটা পরীক্ষা হয়ে যাবে।তার কল্পনা শক্তি কেমন তার পরীক্ষা!তিনি হাসিমুখে বললেন,
—‘মা গো ভেতরে এসো।’
তিথি রুমে আসলো।বেশ কিছুদিন হলো সে শাড়ি পড়া বাদ রেখেছে।লম্বা লম্বা গোল জামা পড়ে।মাথায় ওড়নাটা পেঁচিয়ে সে সোবাহানের পাশে বসে বলল,
—‘খাবার খাইয়ে দিই বাবা?’
সোবাহান চোখের চশমাটা খুলে রাখলেন।চশমা ছাড়া তিথিকে দেখতে তার ভালো লাগে।তিনি হাসিমুখে বললেন,
—‘অবশ্যই মা!তাহলে তো আমি দিনদিন আরো অলস হয়ে যাব।’
তিথি ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ভাজি দিয়ে মিক্সড করলো।হাসিমুখে সোবাহানের মুখে খাবার তুলে দিল।
২০.
ডিনার শেষে তিথি অনেক্ক্ষণ স্নেহার রুমে গল্প গুজব করল।রাত বাড়তে সে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল।
দরজা আধ খোলা ছিল।তিথি ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো সম্পদ অল্প একটু জায়গা নিয়ে শুয়ে আছে।হাত পা কুঁচকে জড়োসড়ো করে রেখেছে।ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে দরজার ছিটকিনি আটকে দিল।
বিছানার মাঝখানে কোলবালিশ রেখে সম্পদ ঘুমিয়ে পড়েছে।তিথি সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকলো।চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলো সে।লাইট নিভিয়ে মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখল।বিছানার দিকে এগিয়ে গিয়ে সম্পদের অপর পাশে শুয়ে পড়লো।
সম্পদের দিকে ঘুরে সে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে রইলো।সম্পদ তার দিকে পিঠ করে শুয়ে আছে।তিথি সাবধানে উঠে বসলো।সামান্য একটা পরীক্ষা করার জন্য অস্ফুট স্বরে মৃদু চিৎকার করে উঠলো।দু সেকেন্ড অতিবাহিত না হতেই সম্পদ এক লাফে উঠে বসলো।হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে তিথির সারা গায়ে হাত বুলাল।চিন্তিত কন্ঠে বলল,
—‘তিথি,তিথি!তু-তুমি ঠিক আছো?কি হয়েছে?কোথাও ব্যথা পেয়েছ?’
তিথির মুখে অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠলো।সম্পদ এখনো তার প্রতি ততটাই কনসার্ন যতটা আগে ছিল।তাহলে প্রকাশ করে না কেন?কি হয়েছে তার?
তিথি ম্লান মুখে বলল,
—‘কর্নারে শুয়েছিলাম তো!সেজন্য ঘুমের ঘোরে পড়ে যেতে নিয়েছিলাম।’
—‘কোথাও লাগেনি তো তোমার?’
—‘না!’
সম্পদ তিথির কাঁধ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল।একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।কিছুক্ষণ আবছা অন্ধকারে কিছু একটা চিন্তা করলো।তিথি ক্ষীণ স্বরে বলল,
—‘আপনি শুয়ে পড়ুন।আমিও শুয়ে পড়ছি।’
তিথি আবার কর্নার ঘেঁষে শুয়ে পড়তে সম্পদ বাঁধা দিল।মাঝখানের কোলবাশিলটা তিথির পাশে কর্ণারে রেখে বলল,
—‘এদিকে এসে ঘুমাও।না হলে পড়ে গিয়ে হাত টাত ভেঙে যেতে পারে। তোমার তো আবার ভাঙাভাঙির অভ্যাস আছে।’
তিথি মাথা নেড়ে শান্ত হয়ে শুয়ে পড়লো।সম্পদ কিছুক্ষণ বসে থেকে অপরদিকে মুখ করে আবার জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়লো।
(চলবে…..)
দুদিন গল্প দিতে পারিনি।খুবই দুঃখীত।রাতে বড় করে আরেক পর্ব দিব।