#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_১১
#Sanchita(Writer)
“দোস্ত তোর কি নুন্যতম জ্ঞান নাই যে যারে তারে ইনভিটেশন কার্ড ছাড়া বিয়ে বাড়িতে শুকতে দেস!(কোমড়ে হাত দিয়ে)
সিমানের কথা শুনে সাদাত কপাল চাপড়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো।
” আরে ইয়ার ও বোনুর ফ্রেন্ডের বোন হয়!আর তুই কি তখন থেকে বাজে বকে যাচ্ছিস মাথা ঠিক আছেতো তোর?(কপাল চাপড়ে)
সিমান ভ্রু কুচঁকে পূর্ণির দিকে তাকালো।
পূর্ণি কনে পক্ষ থেকে এসেছে,আর সে ভেবেছে বিনা দাওয়াতে ফ্রীতে এখানে খেতে এসেছে।
এদিকে পূর্ণি চুপচাপ সিমানের দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে ভাবছে,
“এটাকে পাবনা থেকে কে ছেড়ে দিলো! তখন থেকে উল্টা পাল্টা কথা বলেই যাচ্ছে! (মনে মনে)
সিমান বিড়বিড় করে বলে উঠলো।
” আমি ভেবেছিলাম ফ্রীতে খাইতে আসছে কারন মানুষ তো বিয়ে বাড়িতে সেজেগুজে আসে বিয়ে খেতে আর এতো বিধবা বিধবার মতোন এখানে আসছে ভাবছিলাম ফ্রীতে খাইতে আইসে! (বিড়বিড়িয়ে)
সিমান বিড়বিড়িয়ে চলে গেলো সাদাত পূর্ণিকে সরি বলে সেও কাজে লেগে পড়েছে।একমাত্র বোনের বিয়ে সবাইকে সব রকমের জিনিস এগিয়ে দিচ্ছে যা যা প্রয়োজনিয়।
তিথি গেছে তার ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে একটু পর তো বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে। পূর্ণি চুপচাপ সেখানেই দাড়িয়ে রইলো। ভাবছে তিথি এখনো আসছেনা কেনো। এদিকে চারদিকে মানুষের প্রচুর সমাগম, বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
পূর্ণি সবার আনন্দ,হাসি-কান্নার একটু আচঁ,ব্যাস্ততা দেখছে চেয়ে চেয়ে। এই মুহুর্তে নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে তার কেনো জানি এত লোকের মাঝে নিজেকে মানতে পারছেনা সে।
“পূর্ণি আপু চলো ওদিকে বরযাত্রী এসে গেছে, কিছুক্ষণ পর বিয়ে শুরু হবে। (মৃদ্যু স্বরে)
তিথির কথায় তিথির দিকে তাকালো পূর্ণি। তিথি মুখটাকে ছোট করে রেখেছে। পূর্ণি হুম বলে তিথির সাথে হাটাঁ শুরু করে দিয়েছে।
সব নিয়ম কানুন মেনে বিয়েটা হয়ে গেলো, এখন প্রায় ভোর সকাল সবাই কনেকে বিদায় দেওয়ার জন্য কান্না করছে। তাদের বাড়ির আদরের মেয়েটা অন্য বাড়ির হয়ে যাবে চিরজীবনের জন্য। তিথি আর পূর্ণি চুপচাপ তাদের কান্না দেখছে। বিয়েতে আসা অবধি তারা চুপ করে আছে।
অবশেষে বিদায়ের পালা শেষ হলো।তিথি আর পূর্ণি তাদের বাড়িতে চলে আসলো।অনেক টায়ার্ড তারা।
” আপু তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি ঘরটা একটু গুছিয়ে নেই! (বলেই তিথি ঘর গোছাতে লাগলো)
পূর্ণি চুপচাপ ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
তিথি ঘর গোছাতে লাগলো আর একা একা ভাবতে লাগলো।হঠাই তার নজরে পড়লো বিছানার নিচে তার ডায়েরীটা পড়ে আছে “অন্তিথির প্রেমকাহিনী” ।ডায়েরীটাকে দেখে শত স্মৃতি,সময় মনে পড়ে গেলো তিথির। হালকা চোখে সব ঝাপসা দেখছে সে।
চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি পড়ছে তার।সে ভাবছে এই ডায়েরীটা তো সে ওয়ারড্রবে রেখেছিলো তাহলে এখানে কিভাবে আসলো।
তিথি ভাবলো পূর্ণি এটাকে বের করে পড়েছে।
তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলল শব্দহীন ভাবে ওটাকে আবার ওয়ারড্রবে রেখে দিলো।
.
.
“নিদু তুমি রেডি হয়ে নাও আমরা আজকে হানিমুনে যাবো! বিয়ের এতদিন হলো অথচ হানিমুনে যাওয়া হয়নি কোথাও! হানিমুনে সাজেক যাবো। (ধীর স্বরে)
নিদিয়া তীন্ক্ষ চোখে তাকালো নির্ঝেরের দিকে তাে কথা শুনে। নিদিয়া ভাবছে এই লোকের কত ক্ষতি করলাম সে চুপ থাকবে না সে বেহায়ার মতো হানিমুনে যেতে চাইছে।
এটা অবশ্য নিদিয়ারই লাভ কারণ সেখানে সে নির্ঝরকে অতি সহজেই মারতে পারবে।সব ভেবে নিদিয়া রেডি হতে লাগলো আজ কিংবা কালই যে নির্ঝরের শেষ দিন তা সে ঠিক করে রেখেছে
কারন তার পক্ষে আর নির্ঝর কে সহ্য করা যাচ্ছেনা। সর্বক্ষণ নির্ঝরকে দেখলে তার বোনের কথা মনে পড়ে তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে নিদিয়ার প্রচন্ড বেগ পেতে হয়। সব ভেবে নিদিয়া বাকাঁ হাসি দিলো।
.
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰
https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share
.
” পূর্ণি আপু তুমি আমার ডায়েরীটা পড়েছো তাইনা? (স্মিত হেসে)
পূর্ণি চুপ হয়ে দাড়ালো, তিথির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো আর নিচুস্বরে বলে উঠলো।
“দুঃখিত তিথি তোমাকে না জানিয়ে তোমার পার্সোনাল জিনিসে হাত দিয়েছি আসলে ডায়েরীর মলাটে লিখা নামটা দেখে আর সেটাকে হাত থেকে নামাতে পারিনি পড়ে ফেলেছি! তবে আমি দুঃখিত তিথি তোমার জীবনে তোমার সাথে যা হয়েছে তার জন্য। আমি নিজেও হতবাক মেয়ের ভালোবাসাকে কিভাবে একজন বাবা,ভাই এভাবে মেরে ফেলতে পারে? আমি অন্তিকের সেই রক্তাক্ত অবস্থার ছবিগুলো দেখেছি! (মাথা নিচু করে)
তিথি গভীর নিশ্বাস ফেলল তার চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। সব স্মৃতি গুলো আবার তার মনে পড়ে যাচ্ছে। যেনো তার সবকিছু বর্তমানে বিষাদ, অন্ধকারময় লাগছে।
তিথি কিছুই না বলে ব্যালকনিতে চলে গেলো।এদিক চুপচাপ দাড়িয়ে আছে পূর্ণি।
.
.
দুদিন পর।
আজকে তিথি আর পূর্ণি সপিংমলে যাচ্ছে পূর্ণির জন্য কিছু কাপড়-চোপড় কিনতে। পূর্ণি এইআসা অবধি তিথির কাপড়-চোপড় পড়েছে। তিথির হাতেও কিছু টাকা ছিলো সেটা দিয়েই সে পূর্ণির জন্য কাপড়-চোপড় কিনবে।
তিথি ভেবেও রেখেছে দ্রুত একটা জব খুজবে এভাবে থাকলে তো তার আর চলা যাবেনা, বাবার এত টাকা থাকতেও ঘৃনায় সেগুলো কিছুতেই ব্যাবহার করেনা তিথি। অবশ্য গত একবছর ধরে তার মা বাবা,ভাইয়ের সাথে কথা বলেনি সে।
পূর্ণির নিজেকে অনেক ছোট মনে হচ্ছে এভাবে একজন অপরিচিত মেয়ের কাছে সে থাকছে,খাচ্ছে আর তার টাকাগুলো দিয়ে কাপড়-চোপড়ও কিনছে এটা তার কাছে অতি লজ্জাজনক একটা ব্যাপার।
পূর্ণি ভাবছে তারও এভাবে চললে হবেনা সেতো মোটামুটি পড়ালেখা করেছে। ভাবছে কয়েকটা টিউশনি করাবে সেও তাহলে কোনমতে একদিক সামাল দেওয়া যাবে।
কেনাকাটা শেষে তিথি আর পূর্ণি বাড়িতে চলে আসলো।
তারা দুজন অনেক ক্লান্ত,
তিথি যেই সোফায় বসতে যাবে ওমনি তার ফোনটা বেজে উঠলো একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকালো দেখলো আননোন নাম্বার।বিরক্তিতে ভ্রু কুচঁকে ফোনটা রিসিভ করে ব্যালকনিতে চলে গেলো।
“হ্যাঁলো! কে বলছেন? (বিরক্তি নিয়ে)
ওপাশ থেকে কেউ কোন কথা বলছেনা শুধু নিশ্বাসের শব্দটা শোনা যাচ্ছে। তিথি আবারো জিজ্ঞাসা করলো কে বলছেন।
তবে এখনো ওপাশ থেকে কোন জবাব মেলেনি শুধু জোরে জোরে নিশ্বাসের শব্দই শোনা যাচ্ছে।
এবার তিথি রেগে কটুক্তি করতে যাবো তখনি কেউ কান্নারত স্বরে বলে উঠলো।
” আমাকে ক্ষমা করে দে তিথি! (কান্নারত সববরে)
তিথি মুহুর্তেই কন্ঠটা শুনে বুঝতে পারলো ওপাশের ব্যাক্তিটা কে। তিথি যেনো থমকে গেলো তিথি। লোকটা তার কাছে ক্ষমা চাইছে তিথি যেনো বিশ্বাস করতে পারছেনা। তিথির মস্তিস্ক ফাকা ফাকা লাগছে এই মুহুর্তে যেনো সব অন্ধকার হয়ে গেছো। তিথির হাত, পা কাপঁছে গলা শুকিয়ে গেছে তার।
তারান কল করেছে কন্ঠটা তারানেরই।
তারান হলো তিথির ভাই যে নিজ হাত বাবার সাথে মিলে তিথির ভালোবাসাটাকে চিরজীবনের জন্য সরিয়ে দিয়েছে।
“আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দে তিথি! আর কত এভাবে আমাদের সাথে কথা না বলে থাকবি মানলাম আমি আর বাবা খুনি, তোর ভালোবাসার খুনি তোর খুশি থাকাটার খুনি! তবে আমাদের দোষের ফল মা পাচ্ছে, দয়া করে মাকে প্লিজ আে কস্ট দিস না গত একটা বছর মা তোর সাথে দেখ, কথা না বলতে পেরে নিজেকে দোষি ভাবছে। ভাবছে তোর ভালোবাসাটাকে তিনিই মেরে ফেলেছে নিজেকে দোষ দিতে দিতে একটা সময় মা নিজেকে মৃত্যু পথ পর্যন্ত বেছে নিয়েছে! মা এংম মৃত্যুসয্যায় আছে তিথি দয়া করে তুই আমাদের ক্ষমা করে দে, মায়ের সাথে দেখা কর মা বারবার তোর কথাই বলছে আর কেমন করছে! হয়তো আর বাচঁবেনা! (কন্দনরত অবস্থায়)
তিথির হাত – পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেলো।যেনো সে ঘোরের মধ্যে আছে, ঠাস করে তিথির হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পড়ে গেলো।
#চলবে,,