‘ধূম্রজাল’
ষোড়শ পর্ব
তাবিনা মাহনূর
____________
প্রতীক্ষা শব্দটা একেক জনের কাছে একেক অর্থ বয়ে আনে। কেউ অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় বসে থাকে, কেউ অশান্ত মনে বারবার বলে ওঠে, ‘কখন সময় হবে!’ কেউ আবার ঠোঁটে মুচকি হাসি রেখে প্রতীক্ষার প্রহর গুনে, কেউ আতংকে মুহূর্তগুলো অনুভব করতে পারে না প্রতীক্ষার অবসান ঘটার আশংকায়।
বাহারের প্রতীক্ষায় কোনো অনুভূতি ছিল না। প্রায় এক মাস যাবৎ সিয়ামের সাথে কথা হয়নি, এ ব্যাপারে খুব কষ্টে রাজি করানো গিয়েছিল সিয়ামকে। আজ বিয়ের দিন। গতকাল গায়ে হলুদ হয়েছে। যদিও এসব লৌকিকতা তার পছন্দ হয়নি, বেশ কয়েকবার মানা করা সত্ত্বেও হানজালা শুনলেন না। বড় একটা রিসোর্ট ভাড়া করে সেখানে আধুনিক চাকচিক্যময় পরিবেশ গড়ে তিনি গায়ে হলুদের বিশাল আয়োজন করেছিলেন। বাহারের ফুপি সালমা বাসায় থেকেছেন, এতে তার আরো মন খারাপ হয়েছে। ফুপির ভাষ্যমতে, বিয়েতে যত কম খরচ হয় ততই বরকত বাড়ে। অথচ বাহারের পরিবার আর আশেপাশের সামাজিক জীবগুলো যেন উল্টো কথায় বিশ্বাসী। যত বেশি খরচ হবে, বিয়ের স্মৃতি ততই মধুর হবে।
আজকের অনুষ্ঠানও বেশ বড় এক কনভেনশন হলে হবে। এই বিয়ে নিয়ে বাহার বরাবরই উদাসীন। কোনো এক কারণে বিয়েতে মন টানে না তার। ফুপির পরামর্শে ইস্তিখারা করেছিল, কোনো ফলাফল বোঝেনি সে। স্বপ্নও দেখেনি। ফুপিকে শুধু বলেছে তার মন ভালো নেই। ফুপি মুফতি কিংবা আলিম নন, তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে ভয় পেলেন। বিজ্ঞ মানুষের কাছে যেতে বললেন। কিন্তু বাহার কাউকে পায়নি, সময়ও মেলেনি তার।
সিয়ামের প্রতীক্ষার ফল ঠিক এর উল্টো। গত কাল বাহারকে বাসন্তী রঙা শাড়ি আর হলুদ চন্দ্রমল্লিকায় মেতে ওঠা লম্বা বিনুনিতে দেখে সিয়ামের চোখ থেকে যেন ধোঁয়া উড়ছিল। দুষ্টুমি করে বাহারের গালে একটু হলুদ লাগিয়ে দিয়েছিল সে, বাহার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু কিছুই বলেনি। সারাক্ষণ সে কেমন অপ্রসন্য মনে বসে ছিল। সিয়ামের চোখ এড়িয়ে যায়নি। তবে সে আজ নিশ্চয়ই প্রিয়তমার মন ভালো করবে, এই বিশ্বাস রেখে আজ সে মহা খুশি।
বাহার হিজাব পরা ধরেছে। অনুষ্ঠানেও হিজাব পরতে চেয়েছিল কিন্তু হানজালা আর বাকি আত্মীয় স্বজনদের কথার অত্যাচারে সে নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারেনি। ফুপি সালমা কথা বলা থামিয়ে দিয়েছিলেন বহু আগেই। কিন্তু কাল ভাতিজির ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে তিনিও আওয়াজ তুলেছিলেন। প্রতিবারের মতো এবারও তাকে অপমানই পেতে হয়েছে। বিশেষ করে হানজালার বোনেরা খুব কটূক্তি করছিলেন, ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলছিলেন। বাহার নিজের ফুপির অপমান সহ্য করতে না পেরে রাগ প্রশমনের চেষ্টা করে ফুপিকে ঘরে যেতে বলেছিল। সে জানে, কোনোভাবেই সে হিজাব পরতে পারবে না। শুধুই অপদস্থ হবে তার ফুপি।
বাহার সিয়ামকে বলার সুযোগ পায়নি সে পর্দা করতে চায়। ভেবেছে বিয়ের পর বলবে, যদি করতে না দেয় তাহলেও সে পর্দা শুরু করবে। সিয়াম বাড়াবাড়ি করলে সে মায়ের কাছে চলে আসবে। মেয়ের কষ্ট নিশ্চয়ই মা হিসেবে তখন হানজালা মেনে নিবেন না। বাহার আরো একটা পরিকল্পনা করে রেখেছে। জাপানে সে যাবে না।নিজস্ব একটা চেম্বার খুলে সেখানেই মানসিক চিকিৎসা দিবে সে। আর ফেসবুকে আগেই একটা পেজ খুলে রেখেছে সে। সেখানে মাঝে মাঝে কিছু মনোবিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য শেয়ার করে সে। ওটা ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে, এসব কাজেই তার ব্যস্ততা চলে আসবে।
অন্য একজন মানবও প্রতীক্ষায় ছিল এতদিন। আজ সাদির মামলা প্রত্যাহারের দিন। সাংবাদিকরা ইতিমধ্যে ভিড় জমিয়েছে। আদালতে সাদিকে আনা হয়েছে। রণজিৎ আর ডক্টর স্টেরি মামলা তুলে নিচ্ছেন। এই সংবাদে পুরো মিডিয়া দুনিয়া এখন এই রহস্যের সমাধানের খোঁজ করছে। সাদি আজ তার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে চলেছে। তবে সে যেমন আশায় বসে আছে, তেমনই আশংকা গ্রাস করছে তাকে। আল্লাহর নাম নিয়ে সে আদালতে প্রবেশ করলো।
__________
গন্ধরাজ ফুলের তৈরি সারি সারি মালা দিয়ে গুলবাহারের বসার স্থানের সামনে দরজা সদৃশ তৈরি করা হয়েছে। বাহারের পাশে বসতে হলে ফুলগুলো দু হাত দিয়ে পর্দার মতো সরিয়ে তারপর বসতে হচ্ছে। এরকম অনন্য সাজে সাজানো আসনে বাহারের মন খারাপ। সবাই তার মুখ দেখেই বুঝতে পারছে সে ভালো নেই। সবার ধারণা, বিয়ের দিন মেয়েদের যেই চিন্তাটা হয় সেটাই হচ্ছে বাহারের। বাবা মাকে ছেড়ে সে কীভাবে থাকবে? সংসার নামের ভার সে কীভাবে বহন করবে? এসব ভেবেই বাহারের হয়তো মলিন মুখ। তারা আসছেন, আদর করে ডাকছেন। তারা বুঝলেন না বাহারের আসল আপত্তি কোথায়।
সালমা এবার এসেছেন, বিয়েতে না এসে পারেননি। আড়ম্বর আয়োজন দেখে তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন, পানাহ কামনা করলেন যেন এমন চকচকে সৌন্দর্যে তিনি অভিভূত না হন। ঈমান হারিয়ে না ফেলেন। প্রিয় ভাতিজির মুখ দেখে তিনিও মন খারাপ করে বাহারের পাশে বসলেন। মৃদু কণ্ঠে বললেন, ‘ওদিকে গেট ধরার টাকা নিয়ে ঝগড়ার অভিনয় চলছে। নাজকে দেখলাম হাত নাড়িয়ে ঝগড়া করছে, মেয়েটাকে কি সুন্দর দেখাচ্ছে মা শা আল্লাহ।’
বাহার বললো, ‘বরযাত্রী চলে এসেছে?’
– হ্যাঁ মা। সিয়ামকে বসানো হবে ওর আসনে। এরপর কাজী ডাকা হবে। আগে বিয়ে পড়িয়ে তারপর খাওয়া দাওয়ার পর্ব সারবে।
– ওহ।
– মনে অশান্তি চলছে না রে মা?
– খুব। মনে হচ্ছে কিছুই ঠিক নেই।
– এই দিনে সব মেয়েরই এমন মনে হয়। তবে তোকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছে। এ যুগের মেয়েরা নাকি শুধু হাসে। বিয়ের দিন হাসতেই থাকে, এমনকি বিদায়ের সময়েও। কি দিন এলো হায় আল্লাহ!
হেসে ফেলল বাহার, ‘আমিও হেসে ফেললাম ফুপি তোমার কথা শুনে।’ সালমাও হাসলেন। বাহারের চিবুক ধরে তিনি বললেন, ‘হাসি আজীবন অটুট থাকুক। দুআ করি তোর জীবনে হিদায়াহর বর্ষণ ঘটুক।’
– আমিন।
বর পক্ষকে ঢুকতে দেয়া হয়েছে। গেট ধরার টাকা ত্রিশ হাজার পেয়েছে অবিবাহিত ছেলে মেয়েগুলো। তাতেও খুশি নয় তারা। তাদের দাবি এক লাখ, পরে সেটা কমিয়ে পঞ্চাশে নামানো হয়েছিল। কিন্তু সিয়াম ত্রিশ হাজার ছাড়া দিতেই চাইলো না। বউ নাকি ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করবে যদি ঢুকতে না দেয়া হয়। এসব খুনসুটি
শেষে সিয়ামকে বসতে দেয়া হলো তার আসনে। ঠিক তার বিপরীতে সে দেখতে পেলো অপরূপা বাহারকে। লাল রঙের পাকি-স্তানি গাউন আর অফ হোয়াইট নেটের ওড়নায় ঘোমটা দিয়েছে তার প্রিয়তমা। সিয়াম অপেক্ষায় থাকলো কখন কাজী আসবে।
অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। কাজী এলেন সিয়ামের কাছে। বিয়ে পড়ানোর সময় সিয়ামের তাড়াহুড়ো দেখে তার আশেপাশে থাকা সবাই হেসে ফেলল। বন্ধুরা অশ্লীল উক্তিও বলে ফেললো, তাতে হাসির দফা আরো বাড়লো। সিয়ামের বিয়ে পড়ানো শেষে কাজী ছুটলেন বাহারের কাছে।
বাহারের সামনে বসে আছেন কাজী। পাশে তার বাবা সাখাওয়াত, আর দুই পাশে বসেছেন তার এক মামা ও চাচা। মামা সাক্ষী এবং উকিল বাবা হবেন চাচা। সব কিছু ঠিক করে কাজী কত রকম দুআ পড়লেন, সবাই চুপচাপ শুনছেন। মহিলাদের কান্নার বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে হানজালার কান্নার কারণে মহিলারা তাকে থামানোর চেষ্টা করছে নিজেরাও কাঁদছে। সালমা একটু দূরে দাঁড়িয়ে অশ্রু ঝরাচ্ছেন নিঃশব্দে।
কাজী এবার উপরে তাকালেন। আন্তরিক কণ্ঠে বললেন, ‘পিতা সাখাওয়াত ইসলাম ও মাতা হানজালা শিকদারের বড় কন্যা গুলবাহার সাখাওয়াত, পিতা সরফরাজ জিদান ও মাতা হাফসা জামিলের মেজো পুত্র সিয়াম সরফরাজের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইবে। গুলবাহার মা, বলুন আলহামদুলিল্লাহ কবুল?’
বাহারের শরীর কাঁপছে, তার চোখে কোনো অশ্রু নেই। শুষ্ক জ্বলজ্বলে চোখ দুটো তাকিয়ে আছে রেজিস্ট্রি পেপারে। ঠোঁট কাঁপছে তার। বুকে তীব্র যন্ত্রণা, এই ব্যথা শারীরিক নাকি মননগত সে জানে না। চোখ দুটো বন্ধ করলো সে। আশেপাশে মৃদু কণ্ঠে কেউ কেউ বলছে, ‘কবুল বল মা, বল!’
কাজী আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘মা, বলুন আলহামদুলিল্লাহ কবুল?’
__________
মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আদালতে সাদিকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ ভুল প্রমাণ করে। ওখানে সাদির ছবি বসিয়ে দেয়া হয়েছে এমন একটা অভিযোগ দায়ের করে মামলার নিষ্পত্তি ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত নতুন করে আবার ভিডিও বানিয়ে সাদির গলায় একটা কাটা দাগ বসিয়ে বোঝানো হয়েছে ভিডিওতে সাদি নেই। সাদির ছবিটা কেউ বসিয়ে দিয়েছে।
সাদি নিজ চোখে দেখলো এখানে কত রকম দুর্নীতি হতে পারে। সে চেয়েছে মামলা তুলে নেয়া হোক, কিন্তু তাই বলে মিথ্যে প্রমাণ! ব্যারিস্টার জানেন, উকিল জানেন, পুরো আদালত জানে ওই সব মিথ্যে, ভণ্ডামি। অথচ কত সুন্দর অভিনয় করে সবাই সবকিছু না জানার ভান করছে, ফলাফল জানা সত্ত্বেও ফলাফল দিচ্ছে নির্বিকার চিত্তে। সাদি হতবাক, মুখোশ পরিহিত মানুষ নামের পুতুল দেখে। পুতুলের শরীরগুলো কার নিয়ন্ত্রণে চলছে? নফস নাকি শয়তান?
সাদি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে গাঢ় নীল পোশাকের গার্ডরা হাঁটতে শুরু করলো। একজন আস্তে করে বললো, ‘অণুজীব আর পেপার কোথায়?’
সাদি বুঝে গিয়েছে সব। এরা তার সাথে রিসার্চ সেন্টার পর্যন্ত যাবে। তার আগে ছাড়বে না এক মুহূর্ত। সাদি বললো, ‘তোহা রিসার্চ সেন্টার। ওখানে স্যারের কামরায় যাবো।’
কয়েকজন বডি গার্ড সমেত সেন্টারে পৌঁছে গেল সাদি। সেখানে গিয়ে তোহা স্যারের কক্ষে যাওয়ার পূর্বে নিজের ঘরে গেল সে। গার্ডগুলো তার সাথেই আছে। একটি ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষনযন্ত্রের উপর চোখ রেখে সাদি মুচকি হেসে উঠলো। গার্ডগুলো নিশ্চয়ই মূর্খ। তা নাহলে সাদির এমন কাজে বাধা দিতো তারা। কিন্তু তারা ভ্রু কুঁচকে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের এমন অঙ্গভঙ্গি সাদির ঠোঁটের কোণ বাকিয়ে তুলছে বারবার। সে চেষ্টা করছে না হাসতে। ফোন বের সাদি দশ সেকেন্ড অতিবাহিত করার পরপরই একজন গার্ড সেটা ছিনিয়ে নিয়ে বললো, ‘স্যার না আসা পর্যন্ত কোনো প্রকার ডিভাইস ব্যবহার নিষেধ।’
সাদির কাজ অবশ্য শেষ হয়ে গিয়েছে ওই দশ সেকেন্ডের মাঝেই। কারণ সে পূর্বেই কাজ এগিয়ে রেখেছিল, মোবাইলের স্ক্রিনে শুধু একটা প্রেস করলেই সম্পূর্ণ কাজ হয়ে যাবে যা ইতিমধ্যে সাদি করে ফেলেছে। গার্ডের কথা শুনে সাদি ঠোঁট বাকিয়ে কেমন দুষ্টু হেসে বললো, ‘কি আর করার! টিভি দেখতে পারবো?’
বডিগার্ডগুলো চুপ করে আছে। সাদি হাঁটতে হাঁটতে দরজার কাছে গেল গার্ড ডিঙিয়ে। সে তাহমিদের কেবিনে গিয়েও আবার উল্টো ঘুরে গেল তোহা স্যারের কেবিনে। গার্ডগুলো কেমন তার পিছে পিছে তাহমিদ স্যারের কেবিনে গিয়েও বোকা হয়ে ফিরে এলো! দেখেই সাদির হাসি আসছে। নিজের গাম্ভীর্য ধরে রেখে সে ভাবলো, অণুজীবগুলো ব্যাসিলাস টাইপের ছিল। এরা লম্বা হয়ে থাকে। অনেকটা ক্যাপসুলের মতো। দলবদ্ধ হয়ে ঘুরতে থাকা অণুজীবগুলো দল ছেড়ে কেমন নিথর পড়ে আছে!
তোহা স্যারের ঘরে গিয়ে টিভি চালু করলো সাদি। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর উচ্চ আওয়াজে পদধ্বনি তুলে স্টেরি আর রণজিৎ এসে হাজির হলেন। সাথে আছে এএসপি নাকিব, সিআইডি সাগর আর দুজন অপরিচিত লোক। তবে লোকদের দেখে মনে হলো তারা স্টেরির কাছের কেউ হবেন। রণজিৎ কোনো কথাই বললেন না। স্টেরি বললেন, ‘প্রথমে অণুজীব হস্তান্তর করো।’
সাদি হেসে একটা বাক্সের দিকে আঙ্গুল তাক করে বললো, ‘ঐযে হলুদাভ রঙের কাচের বাক্স। ওটাই আপনাদের কাঙ্ক্ষিত অণুজীব।’
একজন গার্ড ওটা ধরতে গেলে স্টেরি বললেন, ‘খালি হাতে ধরা যাবে না।’
গার্ড সাদির কাছে গ্লাভস চেয়ে নিলো। বাক্সটা হাতে রেখে দাঁড়িয়ে রইলো সে। স্টেরি বললেন, ‘এটা আমার কক্ষে নিয়ে আমি পরীক্ষা করবো। তবে এখন কাগজগুলো দাও।’
সাদি একটা ফাইল এগিয়ে দিলো। ফাইলটা হাতে নিয়ে স্টেরি দ্রুত তা খুলে দেখলেন। ভ্রু কুঁচকে তিনি বললেন, ‘হোয়্যাট দ্যা হেল স্যাডি? ইটস ব্ল্যাংক! (এটা ফাঁকা)’
সাদি একটু শব্দ করে হেসে বললো, ‘বাট ইটস দ্যা পেপার ইউ ওয়ান্টেড। (কিন্তু এটাই সেই পত্র যা তুমি চেয়েছিলে।)’
– আর ইউ কিডিং উইদ মি? (তুমি কি আমার সাথে মজা করছো?)
স্টেরির রাগের মাত্রা বাড়ছে দেখে সাদি মুচকি হেসে বললো, ‘ডক্টর স্টেরি, কাগজ আর অণুজীব আমার কাছে কেন থাকবে বলুন? এগুলো সব আপনার কাছে। আপনি স্যারের স্ত্রী, অথচ স্যার আমাকে কেন সব দিয়ে যাবেন?’
সাদির ছক্কা উল্টে যাওয়ায় স্টেরি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। নাকিব দৌড়ে এসে সাদির কলার ধরে বললো, ‘যা দিতে বলছে তা দিয়ে দে। নাহলে আবার গারদে পুড়বো।’
স্টেরি কোনো কথা বললেন না। রণজিৎ আক্রোশের সাথে বললেন, ‘প্রিয়ংশু, যাই করো না কেন কোনোভাবেই তুমি ছাড় পাবে না।’
সাদি কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, ‘আমার কাছে কিছুই নেই। সব স্টেরির কাছে। সেই জানে তার হাজবেন্ড কি রেখে গিয়েছে। আমি কিছুই জানি না।’
সাগর চিৎকার করে বললেন, ‘অ্যারেস্ট হিম!’
সাদিকে গুম করা হবে। সাদির হাতে হাতকড়া পরিয়ে নাকিব সাপের মত ফুঁসে উঠে বললো, ‘এইবার দেখিস আগের চেয়ে কেমন ডলা দিই।’
সাদি নির্বিকার। একমনে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে সে। হঠাৎ সাগরের ফোন আসলো। তিনি কানে ফোন রেখে সাদির দিকে হতবাক চিত্তে তাকিয়ে আছেন। কানে ফোন নিয়েই তিনি বললেন, ‘সাদি!’
___________
– বলুন আম্মা কবুল?
গুলবাহার হঠাৎ পিঠ টানটান করে বসলো। মুখ তুলে তাকালো সে সম্মুখে। চোখ দুটো বন্ধ করে বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল, কবুল, কবুল!’
সাদি হাসরাত মুচকি হেসে বলছে, ‘ইয়েস সিআইডি সাগর। দ্যা গেম ইজ ওভার। আমি সব ফাঁস করে দিয়েছি।’
টিভিতে ভেসে আসছে সদ্য পাওয়া খবর,
‘তোহা হত্যা মামলার নতুন মোড়। অভিযুক্ত আসামি সাদি হাসরাতের জামিনের পর আজ মামলা প্রত্যাহার। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাদি হাসরাত আইডি থেকে তোহা মামলা সম্পর্কিত তথ্য ফাঁস হয়েছে যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ঝড় তুলে দিয়েছে। তথ্য সূত্রে জানা গিয়েছে, সাদি হাসরাতের আইডেনটিক্যাল টুইন অর্থাৎ যমজ ভাই হিমাংশু ব্যানার্জি এ হত্যার সাথে জড়িত…’
____________
(চলবে ইন শা আল্লাহ)