‘ধূম্রজাল’
চতুর্থ পর্ব
লিখনে : তাবিনা মাহনূর
___________
– কিরে আপু? সাজগোজ করা শেষ হয়নি? তাড়াতাড়ি কর না।
গুলনাজের কথায় ধ্যান ভাঙলো বাহারের। আজ রাতে তাদের খালাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। সে শাড়ি পরে তৈরি হলেও কোনো প্রসাধনী মাখা হয়নি। নাজ ইতিমধ্যে গারারা পরে তৈরি। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও তৈরি হয়ে বসে আছে। শুধু সালমা ফুপি যাবেন না। এসব অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ তার কোনোকালেই ছিল না।
বাহার গালে ব্লাশন লাগিয়ে উঠে দাঁড়ালো। শুভ্র মসলিন শাড়িতে তাকে সাদা ময়ূরের মতো দেখাচ্ছে। কিন্তু তার মুখ মলিন হয়ে আছে। বারবার মনে পড়ছে সাদির বলা সেই কথাগুলো।
সাদি তাকে থমকে দিয়ে নীচে তাকিয়ে ছিল। কেন যেন বাহার আর উপরে তাকিয়ে কথা বলতে বলেনি। তারপর সাদি অবিরাম বলে চলছিল কিছু কথা…
‘রণজিৎ ব্যানার্জি আর শামসুজ্জামান তোহা স্যারের একটা সম্পর্ক আছে। কারণ বি-অ্যারোমা কোম্পানির একমাত্র মালিক রণজিৎ এর একটি বিশেষ পণ্য তৈরিতে তোহা স্যারের অবদান আছে।’
বাহার প্রশ্ন করেছিল, ‘কিন্তু বি-অ্যারোমা তো আপনার দাদার কোম্পানি?’
– দাদার মৃত্যুর পর আমার ছোট কাকা আর রণজিৎ এর নামে হয়ে যায় সেটা। ছোট কাকা অনেক আগে থেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। কোম্পানির অংশ পাওয়ার দু বছরের মাথায় তিনি মারা গেলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন অবিবাহিত, তাই সবকিছুর মালিক রণজিৎ হয়ে গেলেন।
– রণজিৎ আপনার বাবা।
– হুম, কিন্তু বাবা ডাকতে ইচ্ছে করে না।
– তারপর?
– তারপর তার কূটবুদ্ধির কারণে তিনি অনেক বড় ব্যবসা তৈরি করতে পারলেন। আর এখন তিনিই আমার বিরুদ্ধে পেপার্স সরানোর অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন। কেন জানেন?
কৌতূহলী বাহার প্রশ্ন করেছিল, ‘কেন?’
সাদি মুচকি হেসে বলেছিল, ‘খুঁজে বের করুন এর অর্থ কি হতে পারে। কেন মিস্টার ব্যানার্জি আমার পেছনে লেগেছেন, নিজের ছেলের বিরুদ্ধে?’
– আপনি জানেন কেন?
– হয়তো।
– তাহলে বলুন?
– না।
– কি আশ্চর্য! সব বললে আপনি ছাড়া পেতে পারেন।
– উহু, আমাকে এখান থেকে কেউ বের করতে পারবে না। আল্লাহ তা’লা যদি আমাকে করুণা করেন, তবেই সম্ভব।
বাহার ধৈর্য হারা হয়ে বলেছিল, ‘বলে দিন না সত্যটা। কি হচ্ছে আসলে?’
– সত্য বললে আপনি পুলিশকে সব বলে দিবেন। তখন আমার উপর অত্যাচার আরো বাড়বে, কমবে না।
– বলবো না কিছু, আপনি আমাকে বিশ্বাস করুন। দয়া করে বলুন না সব? আমরা চাই সত্য উন্মোচন হোক।
সাদি চোখ বন্ধ করে বলেছিল, ‘আমিও চাই। কিন্তু আমার দ্বারা নয়। কারণ আমি সব বললে আমার কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যাবে। আল্লাহ যেন কষ্টের বিনিময়ে আমাকে ক্ষমা করে দেন। নাহলে যে ইস্তেগফার করার সময় মিলবে না…’
________
অনেকক্ষন ধরে সিয়াম লক্ষ্য করছে শুভ্রমায়াকে। কেমন আনমনে কনভেনশন হলের এক কোণে শাড়ির আঁচল হাতে পেঁচিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। সেই শূন্য দৃষ্টি সিয়ামের নজর কেড়েছে। গুনগুনিয়ে গান গাইতে ইচ্ছে করছে তার। ভাব জমাতে গেলে মেয়েটা তাকে অভদ্র ভেবে বসতে পারে। তাই সে নিজেই খোঁজ শুরু করলো, কে এই শুভ্রদূত।
সিয়ামের চোখে ধরা পড়া শুভ্রদূত বাহার এখন প্রশ্ন সাজানোয় ব্যস্ত। কিছুক্ষণ আগেই রাতের খাবার খাওয়া হয়েছে। তার আগে বিভিন্ন মানুষের সাথে কুশল বিনিময় করা হয়েছে। আপাতত একাকী সময় কাটাচ্ছে সে এক কোণে দাঁড়িয়ে। কারণ এখন সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত। তাকেও ডেকেছে অনেকবার, সে ক্লান্ত অনুভূত হওয়ার অজুহাতে সরে এসেছে। আজ রাতের মধ্যে তার আর সাদির কথোপকথন গুছিয়ে স্যারকে ইমেইল করতে হবে। কাল অফিসে গিয়ে নিজ মুখে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং স্যারের যদি মনে হয় সে সাদির সাথে সখ্যতা গড়তে পারছে, তাহলে সে পরশু আবার যাবে সাদির কাছে।
সাদি যা যা বলেছে তার সবটাই সে বলে দিবে। শুধু সাদির মায়ের সাথে যোগাযোগ হওয়ার ব্যাপারটা সে বলবে না। কারণ সাদির মা, রাধিকা ব্যানার্জিকে তার খুব প্রয়োজন। নিশ্চয়ই এই একমাত্র মানুষই জানেন সাদি কি করেছিল, বা করছে।
ভাবনার মাঝেই বাহারকে কেউ বলে উঠলো, ‘মা, নাম কী তোমার?’
সামনে দাঁড়ানো আড়ম্বরপূর্ণ বেশভূষায় একজন মধ্য বয়স্ক নারীকে দেখে চিনতে পারলো না বাহার। তবে সে মুচকি হেসে বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি গুলবাহার।’
– ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা। তুমি কি বর পক্ষ না কনে পক্ষ থেকে?
– কনে সিনথিয়া আমার খালাতো বোন হয়।
– আচ্ছা, এজন্যই চিনতে পারছি না কে তুমি। আমি বর, মানে সবুজের আপন মামী হাফসা।
এমন অপরিচিত মানুষের সাথে কিভাবে আলাপ চালিয়ে যেতে হয় তা বাহারের জানা নেই। এর মাঝে আবার কাজের চিন্তা তাকে আরো অপ্রতিভ করে তুলেছে। তবে মহিলা নিজের সম্পর্কে কিছু কথা বলে গেলেন। কথাগুলোর সারাংশ এই, সবুজের মতো ছেলেই হয় না। এতো ভালো ছেলে, সিনথিয়াকে খুব ভালো রাখবে। উনারও তিন ছেলে। বড় ছেলে ব্যবসায়ী, বিবাহিত। মেজো ছেলে নৌবাহিনীর সাথে জড়িত। মেজো ছেলেটা একদম সবুজের মতোই ভদ্র আর আন্তরিক। অর্থাৎ, বেশিরভাগ কথা উনার মেজো ছেলেকে নিয়েই বললেন। বাহারের জানা হলো না ছোট ছেলেটা কি করে!
বাহার বুদ্ধিমতী মেয়ে। তাকে এসব কেন বলা হচ্ছে সে খুব ভালো করেই বুঝেছে। তবে এগুলো তার কাছে সাধারণ বিষয়। বিয়ের বয়স অনেক আগেই হয়েছে, তাই বিয়ে ওঠা স্বাভাবিক। কত বিয়ের প্রস্তাব এলো, তার চাকরির কারণে কেউ কেউ নিজ থেকেই পিছিয়ে যায়। আবার কেউ আগ্রহ দেখালে তার মা-বাবাই না করে দেয়। এভাবেই চলছে। দেখা যাচ্ছে, এই মহিলা একদিন তার বাড়িতে মেজো ছেলের জন্য প্রস্তাব পাঠাবেন। তারপর দু পক্ষের যেকোনো একজন এ ব্যাপারে অনুৎসাহিত হয়ে বিষয়টা ওখানেই থামিয়ে দিবেন। তাই বাহার মিষ্টি হেসে গল্প চালিয় গেল। আপাতত কাজের চিন্তা বাদ দিয়ে মস্তিষ্ককে ছুটিতে রাখাই শ্রেয়।
অনুষ্ঠান থেকে ফিরতে বেশ রাত হয়ে গেল সবার। এই মুহূর্তে বাহারের বিছানায় শুয়ে আরাম করতে ইচ্ছে করলেও উপায় নেই। ইমেইল না পাঠিয়ে সে কাল কাজে যেতে পারবে না। বেশি দেরি হয়ে যাবে। কারণ শাওন স্যার অফিসে থাকলেও শুভ্রত স্যার কাল থাকবেন না। তাই তাকে অন্তত ইমেইল পাঠাতেই হবে।
সাদির সাথে তার আলাপের মূল অংশগুলো লিখে সে ইমেইল পাঠিয়ে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ হেলান দিয়ে বসে থাকলো। আবারো মনে পড়লো সেই দিনের কথা, যেদিন সাদি তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলেছিল, ‘আবার দেখা হবে!’
প্রিয়ংশু, স্ত্রী সাবিত্রীকে আলিঙ্গন করে এক হাত তার কাঁধে রেখে বলেছিল, ‘মাই ওয়াইফ, সাবিত্রী ব্যানার্জি।’ বাহার বিস্মিত হয়ে দেখেছিল, সাবিত্রী যেন রূপ নগরের রাজকন্যা। রূপের জাদু দিয়ে প্রিয়ংশুর মন জয় করেছে। সাবিত্রীকে দেখে বাহারের নিজেকে কুৎসিত মনে হয়েছিল। সে হাসিমুখে খুব অল্প সময় নিয়ে আলাপ সেরে সরে গিয়েছিল। রাতের খাবার খেয়ে বান্ধবী রাশার হাত ধরে যখন সে বের হবে, ওই মুহূর্তে রাশা তাকে থামিয়ে বলে উঠে, ‘একবার বিদায় নিয়ে যাওয়া উচিত। ওই দেখ, ওখানে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।’
বাহারের প্রিয়ংশুর কাছে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। দ্বিতীয়বারও রাশা তাকে যেতে বাধ্য করলো। রাশার সাথে মুচকি হেসে প্রিয়ংশু বিদায় নেয়ার পর তার দিকে তাকিয়েছিল। তারপর তার জ্বলজ্বলে চোখ দুটো ছোট করে একপেশে মুচকি হেসে বলেছিল, ‘ইউ লুক গর্জিয়াস। আবার দেখা হবে।’
বাহার হতভম্ব হয়ে ভেবেছিল, তাহলে এই লোক স্ত্রীর সামনে অবুঝ ভদ্র সেজে থাকে। আর স্ত্রী যখন আশেপাশে থাকে না তখন তার মুখ থেকে স্তুতি বাক্য বেরিয়ে আসে। কি নোংরা! ছি!
অদ্ভুত সুদর্শন প্রিয়ংশুকে দেখে একটুখানি মন দোলা দিয়েছিল, এ কথা অস্বীকার করবে না বাহার। কিন্তু সেটা আজকালকার তথাকথিত ক্রাশ নামক অনাকাঙ্ক্ষিত মন বিনিময় ভেবেই উড়িয়ে দিয়েছিল সে। এখন নতুন করে প্রিয়ংশুকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে তাকে। না, ক্রাশ নয়। চিন্তার বিষয় সাদির পরিবর্তন। কেন সে এতো বড় পরিচয় ছেড়ে দিয়ে সামান্য একজন কর্মচারী রূপে ঘুরে বেরিয়েছে এতোকাল? ইসলাম গ্রহণের পর সে নামকরা বেসরকারি সংস্থার চাকরিটা হারিয়েছিল। তারপর থেকে তোহা সেন্টারে মধ্যম মানের বেতনে কাজ করতো সে। কেন বিলাসিতা ছাড়তে হলো তাকে? কেউ জোর করেনি তো?
পরশু দিনের অপেক্ষায় থাকতে ভালো লাগছে না আর। সারারাত এপিঠ-ওপিঠ করে কাটিয়ে দিলো বাহার। পরদিন ভোর হতেই সে শরীরচর্চায় মনোযোগ দিলো। শারীরিক সুস্থতা ও কাঠামো ঠিক রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করে বাহার। তাই ত্রিশের কাছাকাছি বয়স হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিশ বছরের সদ্য তারুণ্যে পা রাখা তরুণী মেয়ে বলে মনে হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর গোসল সেরে শাড়ি পরলো বাহার। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে নাস্তা খাওয়ার উদ্দেশ্যে চেয়ার টানতেই সালমা বললেন, ‘আজ এতো তাড়াতাড়ি যাচ্ছিস?’
বাহার প্লেটে নাস্তা রাখছে আর বলছে, ‘কাজ আছে ফুপি। তুমি খেয়েছো?’
– না রে মা। এখন খেতে এলাম। তোর মা আজ উঠেনি, কাল রাত করে ফিরে ক্লান্ত হয়তো।
– খালামনি তোমার কথা জিজ্ঞেস করছিলেন, তুমি কেন গেলে না?
সালমা হেসে বললেন, ‘চাকচিক্যময় পরিবেশে থাকতে থাকতে একটা সময় অমন আভিজাত্যে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে, ওই ভয়ঙ্কর ইচ্ছেটা যেন না করে তাই যাইনি।’
বাহার ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘মানে?’
– মানে বুঝিসনি? এই ধর, আমি যদি কাল যেতাম তাহলে আমাকে অনেক মানুষ দেখতে হতো যারা জাঁকজমক পূর্ণ সাজে এসেছে। যাদের অনেক টাকা পয়সা। মা শা আল্লাহ, তোদেরও অনেক টাকা, তোরা শিল্পপতি। কিন্তু বাসায় তোরা খুব সাধারণ হয়ে চলিস। এর জন্য তোর মাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। যাক সেসব কথা, যেটা বলছিলাম। ওইসব সাজ আর দুনিয়াবী ঝলমলে রূপ দেখে আমার মনে হয়তো একটু প্রভাব পড়তো। আমি ভাবতাম, আজ আমি সাদা চুল কালো করে এলেও পারতাম। হিজাবের দরকার কি ছিল! অথবা ভাবতাম, আমার সোনালী পাড়ের মেরুন রঙা শাড়িটা পরলেই ভালো হতো। এসব ভাবতে ভাবতে একদিন দেখতি সত্যিই আমি সব ছেড়ে বড়লোক মহিলাদের মতো ঘুরাফেরা শুরু করে দিচ্ছি।
বাহার মুচকি হাসলো, ‘সেটা কি করে সম্ভব? তুমি এমনিতেই অনেক ধর্মভীরু মানুষ। আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন।’
– আল্লাহ ভালোবাসেন কিনা জানি না মা। কিন্তু ভয় হয়, নিজের চোখেই দেখেছি কত মেয়েকে। বোরকা নিকাব পরে তালিমে আসে, আবার ওই মেয়েরাই সব ছেড়ে চুল খোঁপা করে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে।
বাহার অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠলো, ‘আর এমনও দেখেছি, উচ্চ বংশীয় মর্যাদা ছেড়ে আসল সত্যের পিছে নিজের অস্তিত্ব ভুলে যেতে…’
সালমা কথাটা শুনলেন, কিন্তু এর পেছনের অর্থটা ধরতে পারলেন না। তাই তিনি নিজের মতো করে বললেন, ‘হ্যাঁ, কতজন জিন্স গেঞ্জি পরে কোচিং করে। তারাই দেখবি একদিন মাথা না ঢেকে নিজের খালুর সামনেই যাচ্ছে না। গায়রে মাহরাম বলে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াহ দেন, যাকে ইচ্ছা তাকে লাঞ্ছিত করেন।’
হানজালা এলেন। মেয়ের পাশের চেয়ারে বসে তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘সব একা একা করেছিস? আজ তো বুয়া আসেনি।’
কিছুটা অবাক হলো বাহার, ‘আমি এসব করিনি মা।’
সালমা খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। প্লেট গুছিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন, ‘হানজালা, সাখাওয়াতকে নিয়ে তুমিও খেয়ে নাও। আর নাজ কলেজে যাবে না আজকে। তাই ওর উঠতে দেরি হবে।’
হানজালা মনে মনে বিব্রত বোধ করলেন। তার একমাত্র ননদ অনেকটা শাশুড়ির মতো আচরণ করেন। বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটা অত্যন্ত নম্র স্বভাবের। হানজালা অনুতপ্ত হলেন নিজের কর্মে। প্রায়ই তিনি বিরক্ত হন উটকো ঝামেলা রূপে সালমার আগমনে। কিন্তু আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। হানজালার অনুপস্থিতিতে মেয়ে দুটোর সব রকম খেয়াল রাখেন সালমা।
________
– চমৎকার! চমৎকার কাজ করেছো বাহার!
শাওন স্যারের প্রশংসায় বাহার মৃদু হাসলো। এমন গুণকীর্তন তাকে প্রায়ই শুনতে হয়। এসবে সে অভ্যস্ত। তবে শাওন স্যার শুধু বিস্মিত নন, বাহারের কাজ তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি কণ্ঠে উচ্ছাস প্রকাশ করে বললেন, ‘কেউ ওর মুখ থেকে কথা বের করতে পারেনি, তুমি কীভাবে পারলে? মেন্টালি ম্যানিউপুলেট করা খুব দক্ষতার কাজ। তুমি কিভাবে কথা বলেছো বলো তো?’
বাহার মিষ্টি হেসে বললো, ‘তেমন কিছুই না। আমি অভিনয় করেছি যে তার বন্ধু আমি, সে যাই বলুক আমি কিছু বলবো না। আর এমনভাবে কথা বলেছি যে তার প্রতিটা কথায় আমি হতবাক। আর এতে সে আগ্রহ বোধ করেছে। একজন মানুষ যখন কথা বলে তখন অপর মানুষের মুখভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি তাকে সেই কথা বলার ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী করে তোলে। মানুষটা তখন মন খুলে সব বলতে চায়। কারণ সে মনে করে, সে যাকে কথাগুলো বলছে তার অভিব্যক্তি খাঁটি।’
শাওন হাসলেন, ‘এসব আসামিদের সাথে মাথা ঠান্ডা করে কথা বলা সত্যিই দুষ্কর। তুমি সেটা পারো। আমার বয়স হয়েছে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি ধীরে ধীরে। এখন একজন ভরসাযোগ্য মানুষ পেলাম।’
বাহার হেসে উঠলো। সে নিজের কর্মস্থানে একটা শক্ত জায়গা তৈরি করতে পারছে। অচিরেই তার একটি নিজস্ব পরিচয় তৈরি হতে যাচ্ছে।
কিন্তু বাহার বোঝেনি, সাদির সাথে তার পরের দুটো দিন বেশ ধৈর্যহীন কাটবে…
________
(চলবে ইন শা আল্লাহ)