দুঃখগাথার রাজকন‍্যা
কলমে:লাবণ‍্য ইয়াসমিন
পর্ব:১4

আরাভ হতাশ হয়ে বসে পড়লো। মেয়েটা এই অচেনা শহরে কোথায় আছে কি করছে কে জানে। তারপর আবার গতদিন এই বাড়ির প্রাক্তন কাজের মহিলার লাশ পাওয়া গেছে যদি রাত্রির লাশ ও এভাবে পাওয়া যায় তখন কি হবে? না না এমন কিছুই হয়নি। মেয়েটা বিপদের সময় ওকে সাহায্য করেছিল কিন্তু ও তো কিছুই করতে পারলো না। এই বাড়িতে ওকে রাখাই ভুল হয়েছিল। তখন যদি কোথাও রেখে আসা যেতে। এখন আফসোস হচ্ছে। কথায় বলে চোর চলে গেলে বুদ্ধি বাড়ে ওর বেলায়ও তাই হয়েছে। ওর ভাবনার অবসান ঘটলো সোনিয়া মির্জার ডাক শুনে। পুলিশ আরাভকে ডাকছে। আরাভ বাইরে বেরিয়ে আসতেই পুলিশ ওকে জেরা করতে শুরু করলো,
> রাত্রী কি আপনার স্ত্রী?
>জ্বী
> আপনি দেখতে সুদর্শন, যতদুর জানি আপনি পড়াশোনাতেও খারাপ না। ভালো পরিবারের ছেলে হয়ে রাত্রীর মতো একটা কাজের মেয়ের উপরে কিভাবে নজর পড়লো? আপনি কি নিজের খুশীতে বিয়েটা করেছিলেন না অন‍্য কিছু ছিল? মানে অনৈতিক কোনো সম্পর্কের জন্য বাধ্য হয়ে?

> অন‍্যকিছু কি? দেখুন ভুলভাল না বকে ওকে খুঁজে বের করুন। আমি নিজের ইচ্ছায় এবং দুজনের সম্মতিতে বিয়েটা করেছি।হাসিখুশি মেয়েটাকে সকালবেলায় দেখে গিয়েছি আর এখন শুনি ওকে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনারা গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়ান তারপর যখন কিছুই কাজের কাজ করতে পারেন না তখন ভিকটিমের পরিবারের পিছনে উঠে পড়ে লাগেন। শুনুন যদি রাত্রীর কিছু হয়েছে না সবাইকে আমি দেখে নিবো।

আরাভ হাত উচু করে শাসিয়ে কথাগুলো বলল।ওর কথায় উত্তর আসলো

> আহা আপনি রেগে যাচ্ছেন কেনো। কথায় বলে সরিষার মধ্যেই ভুত থাকে। অনেক কেস দেখেছি স্বামী নিজে স্ত্রীকে খুন করে এমন ভাব করে যেনো কতোই না নিজের বউকে ভালোবাসতো। এসব অহরহ ঘটছে নতুন কিছুনা।

> আচ্ছা আপনারা কি বলতে চাইছেন?

আরাভ রীতিমতো পুলিশের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেছে। ওর রাগ হচ্ছে। ভেবেছিল শান্ত থেকেই সমস্যার সমাধান করবে কিন্তু পুলিশের আঁকাবাঁকা কথা শুনে ও বারবার উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। ওকে এভাবে ঝগড়া করতে দেখে মির্জা সাহেব ধমক দিলেন,
> বেয়াদবি করছো কেনো? উনাদের কথার উত্তর দাও।
> উনাদের কথা বলার ধরন শুনেই মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আমি নাহয় রাত্রীকে লুকিয়ে রেখেছি তাহলে আমাদের বাড়ির আর মেয়েগুলো কোথায়? ওদেরকে কে গায়েব করেছে?
ওদের কথার মধ্যেই কলিংবেল বেজে উঠলো। রবি গিয়ে দরজা খুলতেই কয়েকজন লোক ভেতরে চলে আসলো। সঙ্গে একটা ভদ্রমহিলাও আছে। মির্জা সাহেব এগিয়ে গিয়ে জিঙ্গাসা করলেন,
> আপনারা কে?
মির্জা সাহেবের কথায় আরাফাত উত্তর করলো,
> আঙ্কেল ওরা রাত্রীর পরিবার। রাত্রীর স্বামী রাহুল ওর ভাই সজীব আর ওইটা ওর মা। মেয়েটা বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিল আমি বিষয়টা জানতে পেরে ওদেরকে খবর দিয়েছি। হয়তো মেয়েটা কিছু অনুমান করে ফেলেছে তাই বাড়িতে ফিরবেনা বলে আবারও পালিয়ে গেছে।
আরাফাতের কথা শুনে উপস্থিত সবার মাথায় হাত চলে গেলো। রাত্রী বিবাহিত এবং ওর স্বামি আছে এই কথাটা কেমন বজ্রপাতের মতো ঝড় তুললো। আরাভের মাথা ভনভন করে ঘুরছে। যদিও ওর খারাপ লাগার কথা না। ও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। মীরা মনে মনে ভীষণ খুশী। ও এগিয়ে গিয়ে বিস্তারিত শুনছে। রাত্রীর মা ঢুকরে কেঁদে উঠে বললেন,
> আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। ওকে নিয়ে আমি দেশে ফিরে যাব। কতো সখ করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। সেই বাড়িতে মেয়ে খুশীও ছিল হঠাৎ কি জানি হলো জামাইয়ের সঙ্গে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে আসলো।
আরাভ এবার চুপচাপ থাকতে পারলো না। এগিয়ে গিয়ে জিঙ্গাসা করলো?
> রাত্রী আপনার মেয়ে এটা কিভাবে বিশ্বাস করবো? তাছাড়া রাত্রী নামে কি সারা দেশে একজন মেয়ে আছে। হাজারো রাত্রী সূর্যের আলোতে ঘুরঘুর করছে। প্রমাণ করুন রাত্রী আপনার মেয়ে। তাছাড়া যতদুর জানি রাত্রীর কেউ নেই।

আরাভের কথায় ভদ্র মহিলা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> মেয়ের ছবি তো আনিনি। ভেবেছিলাম সামনে থেকেই পাবো কিন্তু এখানে এসে নিরাশ হলাম। তবে সমস্যা নাই পুলিশের কাছে বাসা থেকে ছবি পাঠিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ। বাবা আমার মেয়েটার একটু মাথায় সমস্যা আছে। সবাইকে নিজের মনে করে। তাছাড়া ছেলেদের প্রতি একটু বেশীই কৌতূহলী।

> আপনি মা হয়ে নিজের মেয়ের সম্পর্কে এসব বলছেন কিভাবে?
> বাবা আমার বয়স হয়েছে। আজ আছি কাল থাকবো না। এই বয়সে এসে মিথ্যা বলাটা কেমন হয়? রাত্রী এর আগেও একাধিক ছেলের সঙ্গে..

আরাভ ভদ্র মহিলার কথা শেষ করতে দিলো না। তার মধ্যেই ধমক দিয়ে বলল,
> একদম আজেবাজে কথা বলবেন না। ওর সঙ্গে আমি কয়েক রাত পার করেছি। খারাপ কিছু হলে আমার সঙ্গেও হতে পারতো। হয়নি কিছুই তাই ওসব ফালতু কথা বাদ দিয়ে মেয়েটিকে খুঁজতে সাহায্য করুন।।
আরাভের কথা শুনে ওপাশ থেকে রাহুল এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছে নিয়ে বলল
> আমার স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিন। আমি এবার থেকে ওর সব কথায় শুনবো। ওকে নিয়ে ঘরজামাই হতে রাজি আমি। ওর জন্য নিজের পরিবার ত‍্যাগ করতে অসুবিধা নেই। তবুও ওকে চাই আমার।

আরাভ ভ্রু কুকচে রাহুলের দিকে তাকালো। লোকটা ঘনঘন নাক টানছে। দেখতে কেমন অহস‍্য লাগছে। এদের কথাবার্তা শুনে ওর বিশ্বাস হচ্ছে না। নিজের মানুষের বদনাম করতে আগে কখনও শুনেনি। তবে মীরা ওর পাশে এসে ফিসফিস করে বলল,

> তোমার প্রাণের রাত্রীর চরিত্র দেখেছো বাধিয়ে রাখার মতো। যার জন্য তুমি আমাকে প্রত‍্যাখান করেছো। এবার বুঝো।
আরাভ ওর কথার উত্তর করলো না। ওখান থেকে নিজের রুমের উদ্দেশে পা বাড়ালো। এখানে থাকলে মাথা খারাপ হবে। নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যা করতে হবে নিজের মতো করে। এদিকে পুলিশ ওদের সঙ্গে কথা বলে বিদায় নিলো আর যাবার সময় বলে গেলো রাত্রীর ছবি পাঠিয়ে দিতে। আরাফাত গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলোকে ওদের আরেকটি বাড়িতে থাকার ব‍্যবস্থা করে দিলো। যতদিন না রাত্রীর সন্ধান পাওয়া যাবে ততদিন ওরা এখানেই থাকবে। রাত্রীকে নিয়ে তবেই ওরা বাড়িতে ফিরবে। এসব ঘটনায় মির্জা সাহেব ভীষন রেগে গিয়েছেন। উনারা আরাভের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। ছেলেটা একটু ত‍্যাড়া টাইপের। কারো কথায় বিশ্বাস করেনা। মির্জা সাহেব রেগেমেগে নিজের ঘরে চলে গেলেন। অন‍্যদিকে সোনিয়া মির্জা একপা দুপা করে আরাভের ঘরে সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ছেলেটার সঙ্গে কিছু কথা ছিল কিন্তু এই মূহুর্ত্তে কথাগুলো বলা ঠিক হবে কি এসব ভেবে উনি শেষপর্যন্ত দরজায় নক করলেন। আরাভ চোখ বন্ধ করে শুয়েছিল হঠাৎ দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে উঠে আসলো। ও বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই সোনিয়া মির্জা ভেতরে ঢুকে পড়লেন। আরাভ ভ্রু কুচকে জিঞ্জাসা করলো,
> খালামনি কিছু বলবে?
> হুম যদি রাগারাগি না করিস তবে কথাটা বলতে পারি।
> আচ্ছা বলো।
> আমি তোকে নিজের ছেলের মতো ভালবাসি। তুই কি আমাকে তোর মায়ের মতো ভালোবাসিস? আচ্ছা ছাড়া ভালোবাসা লাগবে না সম্মান করলেই হবে। করিসতো?
> কি বলো তুমি? সেই ছোট থেকে তোমার কাছে আছি। মায়ের ভালোবাসা কেমন জানিনা। কিন্তু তোমাকে দেখেছি। তুমিই তো আমার মা। তোমাকে মায়ের মতো না একদম মা ভাবি বুঝলে?
> তাহলে আমার মাথায় হাত রেখে বল আমি যা বলবো তুই তাই শুনবি।
সোনিয়া মির্জা কথাটা বলে আরাভের হাতটা নিজের মাথার উপরে রেখে আবারও বললেন,
> কথার খেলাপ হলে কিন্তু আমার ক্ষতি হবে। এমনকি আমি মারাও যেতে পারি এবার বল শুনবি?

আরাভ কথাটা শুনে ঢোক গিলল। ওর বুকের মধ্যে
ধুকপুক করছে। মা কখনও ছেলকে এমনভাবে রাজি করাই কি ওর জানা নেই। মা তো সন্তানের ভালো চাই। ছেলে যেমনি হোক মায়েদের চোখে কখনও সে খারাপ হয়না কিন্তু ওরতো মা নেই। যদি খালার কথা না শুনে তাহলে এই ভালোবাসাও হারাতে হবে। না এমন হওয়া ঠিক না। আরাভ কথাগুলো ভেবে শুকনো মুখে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল,

> তুমি যা বলবে আমি শুনবো। কি করতে হবে বলো?

> মীরাকে বিয়ে কর। আমি ব‍্যবস্থা করছি। মীরা তোকে ভালোবাসে তুই ভালো থাকবি। সারাজীবন তোরা আমাদের কাছে যত্নে থাকবি।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন। সময়ের স্বল্পতায় লিখতে বসতে পারছিনা তাই রেগুলার গল্প পোস্ট করতে পারছিনা। দয়াকরে কেউ কিছু মনে করবেন না।

আসুন নামাজ ও কোরআন পড়ি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here