#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি পর্ব : ৩
লেখা : মান্নাত মিম
পর্ব : ৩
______

আর্ট এক্সিবিশনে এসেছিল মানসিক শান্তির জন্য। সেটা তো হলোই না উলটো ইউশ্যানের মনে হলো বিপদকূলে দাঁড়িয়ে সে। কখনো সিঁড়ি বেয়ে উপরে তো কখনো নিচে নেমে এক দেয়াল থেকে অন্য দেয়ালের ওপারে নিজেকে আড়াল করে রেখেও বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারছে না। বিপদটা আসলে তার অবচেতন মস্তিষ্কের ফল নাকি আসলেই এভিগ্রিল তার পিছু নিয়েছে; সেটা তার বুঝে আসছে না। যেখানেই যাচ্ছে আগেপিছে এভিগ্রিলের অস্তিত্ব দেখতে পাচ্ছে। ছেলেটার মধ্যে এসব এক্সিবিশন দেখার প্রবণতা হঠাৎ করে কোথা থেকে উদয় হলো? ভাবনার মাঝে ফের নিজ স্বগোতক্তি করল, ‘হায়! তুই কি কখনো এভিগ্রিলের নৈকট্য লাভ করেছিলি যে, তার পছন্দ- অপছন্দ নিয়ে গবেষণা করছিস?’ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেখল না আসলেই সমুখে এভিগ্রিল আছে। ভয় ও আতংকিত হয়ে দ্রুত পদক্ষেপে লিফটে ডুকে পড়ল। কিন্তু ততক্ষণে এভিগ্রিল লিফটের ডোর পা বাজিয়ে বন্ধ থেকে আটকে রেখে নিজেও ঢুকে পড়ে ভেতরে।

বেশ সময় হলো কারো মুখে কোনো কথা নেই। এভিগ্রিল তো বরাবরের মতোই চুপচাপ থাকার মানুষ, তবে কেন ইউশ্যান তাকে কোন ধমকিটমকি দিতে পারছে না। সে কেন এতো নিরুত্তাপ, নিস্তেজ? ভেবেও কোনো উত্তর এলো না যাও এলো তা ভাবনার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দেখা দিলো৷ তাও নিষিদ্ধ চাহিদা হয়ে! যখন এক পা এক পা করে এভিগ্রিল তার দিকে ধাবিত হচ্ছিল, তখন তার পিঠ গিয়ে ঠেকে লিফটের দেয়ালে। আর তখনই একদম ঘনিষ্ঠ হয়ে দূরত্বহীন অবস্থান দু’জনের। হঠাৎই ইউশ্যানের কী হলো কে জানে; আচমকাই এভিগ্রিলের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতে নিলো। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে এভিগ্রিল ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। ইউশ্যান ততক্ষণে বদ্ধ উন্মাদনা থেকে একটু তীরে ফিরে এলেও ঘোর ভাঙা হয়নি তার। এভিগ্রিল যেন এই আশাতেই ছিল, সে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিল ইউশ্যানের মনের অবস্থা, কতটুকু তাকে চায়। হঠাৎ করে আগ্রাসী রূপ দেখে মনে মনে কি কিঞ্চিৎ হাসল? দেখা গেল না বরাবরই গোমড়ামুখো থাকা কঠিন গাম্ভীর্যে খোলস পরা এভিগ্রিলের সেই চোরা হাসি।

বলিষ্ঠ এক হাত ইউশ্যানের কোমরে গিয়ে আরো ঘনিষ্ঠে করে নিকটে আনে এভিগ্রিল। আরেক হাতের স্পর্শ করায় মেয়েটার গালের মসৃণ, নরম চামড়ায়। এই বিষাক্ত স্পর্শে যেন মরণদশা হয় ইউশ্যানের। মুষড়ে পড়ে এভিগ্রিলের বাহুতে, আবেশে আবদ্ধ হয়ে আসে দু’চোখের পাতা। ছেলেটার প্রতিটি স্পর্শ তার শরীরে গোলাপের কাটার মতো ফুটছে বোধহয়। উত্তেজিত ও আন্দোলিত হচ্ছে ভেতরের আত্মা এবং বাহিরের দেহাংশ। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা! দু’টো মানুষের মধ্যকার অবস্থান ধীরলয়ে আদিমত্তায় গিয়ে পৌঁছায়। তাদের অন্তরঙ্গতার নিঃশ্বাস আছড়ে উষ্ণতা ছড়ায় লিফটের দেয়ালে দেয়ালে। নিষিক্ত এক সম্পর্কে গড়ায় দু’জনে।
______

বেশ কয়েকদিন ধরে উৎফুল্ল দেখা যাচ্ছে ইউশ্যানকে। কিন্তু তার এই উৎফুল্লতার কোনো উৎস র‍্যাংকন খুঁজে পেল না। খুঁজে না পাওয়ার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এই যে মেয়েকে সময় দেয় না, যার কারণে মেয়ে তাকে বিচারও দিয়েছে। তবে স্কুল থেকে দিয়ে-নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে করছে। মেয়ের বিচার নাহয় অবুঝপনায় তার কাছে দিলো। কিন্তু সে কার কাছে দিবে? ইউশ্যানের কাছে? সময় হলে তো! মেয়েটা ইদানীং তাকে সময়ই তো দিচ্ছে না। ঘনিষ্ঠ হতে গেলে অনীহা দেখায়। এই তো সেদিন রাতের কথা, র‍্যাংকনের চোখের ইশারা যাকে মাত করত, সে-ই এখন তার উষ্ণ স্পর্শে নিথর হয়ে অনাগ্রহতা দেখায়। উপরন্তু কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সময়টা তাকে বাড়িতে পাওয়া যায় না। এই নয় সেই কাজে ইউশ্যানের অবস্থান থাকে তখন বাইরে। আর আসে যখন অত্যন্ত প্রফুল্লচিত্তে দেখা গেলেও র‍্যাংকনের উপস্থিততে তাকে বিমর্ষ, মেঘমন্দ্র দেখায়।

ইউশ্যানের এখন চলছে রঙিন দুনিয়ার নেশায়। লেট নাইট পার্টি, লং ড্রাইড, সি-বীচ, ফুর্তি-আড্ডায় কাটছে সময়। আর সেই সময় পেলেই মুহুর্তেই বন্দি হয়ে যাচ্ছে এভিগ্রিলের অন্তরঙ্গ আলিঙ্গনে। বেপরোয়া হয়ে ওঠে দু’জনে যেন সকল নিষিদ্ধকরণ বাঁধা তাদের সমুখে অদৃশ্য। নিয়মবহির্ভূত হয়ে আকাশে তাদের বিচরণ, বাতাসে প্রণয়ের ঘ্রাণ। আনন্দ-উল্লাস যে একসময় উত্তাল-বেসামাল ঢেউয়ের কারণ হবে তা হতে বেখবর দু’জন।
______

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আসক্তি প্রচুর পরিমাণে কাজ করে। তবে সেই আসক্ততা একপর্যায়ে এসে শেষ হয়। সেই চাহিদার পরিমাণ হয় ভয়াবহ! উপলব্ধিটাও হয় তিক্ত অভিজ্ঞতা দিয়ে।

ইউশ্যান কান্নায় ভেঙে পড়েছে আজ। নিজের অপরাধবোধ তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এমন দিন আসার কথা যদি ঘুনাক্ষরেও সে টের পেত তাহলে সেসবে মেত উঠতো না। তার করা ভুল না ঠিক ভুল নয় পাপাচার, সেই পাপাচার প্রতিফলিত হচ্ছে অন্যকারো উপরে, সেটা তাকে নিদারুণ কষ্ট দিয়ে শিক্ষা দিচ্ছে। চার্চে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে প্রাণভিক্ষা চাচ্ছে সে। আদৌও কি সে ক্ষমার যোগ্য? ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবে? নিজের মেয়ের প্রতি এই বেখেয়ালির বশে জীবন-মরণ পথে মেয়েটার আজ এই অবস্থা।

স্কুল থেকে নিয়ে আসার কথা ছিল ম্যাশাকে। অথচ সে এভিগ্রিলের কল পেয়ে ছুটে যায়। যার ফলে অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর মেয়ে তার একা বেরিয়ে পড়ে। রাস্তা পার হওয়ার সময় যা ঘটার ঘটে যায় ছোট্ট শরীরের ম্যাশার সাথে। হৃদয় নিংড়ানো আত্ম চিৎকারে ভারি হয়ে আসে হসপিটালের বাতাস। দেয়ালে দেয়ালে আহাজারির শব্দগুলো ফিরে আসে তীক্ষ্ণ ফলার কাটা হয়ে ইউশ্যানের কাছে। সবকিছু যেন তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ভুল নয় পাপ করার পরিণাম।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here