#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৭
রবি অহনাকে কিছু বলতে যাবে তবুও যেন বাকরুদ্ধ হয়ে রইল। রবির মনে এক অজনা ভয় কাজ করতে লাগল।
পরের লোকমা খাইয়ে দিতে যাবে ঠিক সেই সময় অহনার চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে রবির হাতে পড়ল।যেটা রবিকে ভীষণ ভাবে চিন্তিত করে তুলে।রবি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে অহনার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল…
–কি হয়েছে অহনা তোমার চোখে পানি কেন?
অহনাঃজান আমার খুব ভয় করছে।
–কেন বল না।
অহনাঃসারাজীবন এভাবে কেউ পাশে থাকুন আমি খুব করে চাইতাম।কিন্তু দেখ এখন তুমি আসলে।সারাজীবন থাকবে তো আমার সাথে ভালোবাসবে তো?
রবি অহনাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে যেটা অহনা জানে না।রবি কখনো অহনাকে ভালোবাসি বলে নি কারণ রিহির মতো সেও যদি চলে যায় সেই ভয়ে।ভালোবাসার কথা বললে চলে যেতেই পারে আর বন্ধুত্ব সেটা তো সারাজীবন থাকে।রবি চুপ করে রইল কিছু বলছে না।অহনা খুব বাজে ভাবে চোখের পানি ছেড়ে দিছে যেটা রবির একদম সহ্য হচ্ছে না।
রবি হাতের প্লেটটা অহনার পাশে রেখে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে অহনার মুখটা দুই হাতে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল”আর একটু ধৈর্য ধরো,কাল ভার্সিটিতে এসো তুমি যা শুনতে চাও তাই বলব”।
এই বলে রবি চলে আসতে কয়েক পা বাইরে এলো।অহনা দাঁড়িয়ে রবির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল…
হঠাৎ রবি ফিরে এসে অহনাকে অনেক জোরে জড়িয়ে ধরল।রবি অহনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল”এখনো কি বুঝ না ভালোবাসি কি না তোমায়”
অহনাঃনা।যতক্ষণ তুমি বলবে না ততক্ষণ আমি বুঝবো না।
–ঠিক আছে কালকে ভার্সিটিতে এস তাহলেই সব বুঝতে পারবে।
অহনাঃআচ্ছা ঠিক আছে।
–আর শুন ভুলেও চোখের জল আর একবারও ফেলবে না।
অহনাঃআচ্ছা ঠিক আছে সাবধানে যেও।
–তুমি নিজেকে রেখো।
তারপর রবি অহনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে এলো।পেছন পেছন অহনাও আসল যেটা রবি খেয়াল করে নি।রবি গিয়ে আন্টি আর ইশিতার কাছ থেকে বিদায় নিল।একটু সামনে গিয়ে পেছনে অহনার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
রবি বাসায় যেতেই আপু সামনে এলো আর অহনা কোথায় জিজ্ঞেস করল।কিন্তু অহনা তো আসবে না সেটা রবি আপুকে ফোনে বলেছিল।তাই আপু আর কিছু বলে নি।রবি নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আপুকে একটা কফি দিতে বলল।আপু রবিকে একটা কফি দিল।রবি কফিটা খেয়ে একটু শুয়ে রইল।
পরে ওঠে পড়তে বসল।কিন্তু পড়ায় তেমন মনোযোগ বসছে না।কালকে অহনাকে কিভাবে প্রপোজ করবে এসব ভেবে যেন রাতটা শেষ করে দিল।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।অন্য সময় নাস্তা দিতে রিফাকে বলে কিন্তু আজ আপুকে ডাকলো। আপু আসতে রবি বসা থেকে ওঠে গেল।রবির এই অবস্থা দেখে আপু বুঝতে পারল রবি একটু অস্বাভাবিক হয়ে আছে।হয়তো ভয় পাইছে কিছুতে নয়তো অন্য কোনো কারণ আছে।রবির অবস্থা দেখে আপু একটু চিন্তিত হয়ে পড়লো।রবিকে হাত ধরে বসালো আর বললো….
আপুঃকি হয়েছে তুই ঠিক আছিস তো?
–আপু আজকে অহনাকো প্রপোজ করতে হবে কিন্তু জানি না কেমনে করব।আর ভয়ও লাগতেছে যদি ভুল কিছু করে বসে।
আপুঃএত চিন্তা করিস কেন সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই শুধু গিয়ে নিজের মতো করে প্রপোজ করবি।আর অহনা যেহেতু তোকে ভালোবাসে তাহলে সে রাজি হবে।
–আপু আমার কেন জানি অন্য রকম লাগতেছে।
আপুঃআহারে তুই এত চিন্তা করিস কেন?
–আচ্ছা বাদ দাও চলো নাস্তা করে নিয় তারপর তুমি বলে দিবে আমি অহনাকে কিভাবে প্রপোজ করব।আমি ঠিক সেভাবে প্রপোজ করব।
আপুঃদেখ ভাই কিভাবে কি করবি তা আমি জানি না।তুই রাশেদের সাহায্য নিতে পারিস।
–হ্যঁ তাই করতে হবে।
তারপর রবি আপু আর রিফা তিন জনই নাস্তা করে নিলো।রবি খুবই উত্তেজিত অহনাকে কিভাবে প্রপোজ করবে এই ভেবে।রাশেদকে ফোন দিল কিন্তু সেও তেমন কিছু বলে নি।এবার রবিকে একাই প্রপোজ করতে হবে।
হাতে দুইটা গোলাপ নিয়ে রবি চললো ভার্সিটির দিকে।আজকে ১৪ ফেব্রুয়ারী। আজকে অহনাকে প্রপোজ করবে আর অহনা রাজি হয়ে যাবে এসব ভেবে রবির যেন অন্যরকম একটা অনুভুতি কাজ করছে।রবি অহনাকে ফোন দিয়ে জানতে পারলো অহনা ভার্সিটিতে চলে আসছে।আর পেছনের দিকে সবাই বসে আছে অহনাও সেখানে।
রবি গোলাপ দুইটি নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে যেতে লাগল সে দিকে।এই বুঝি অহনার সামনে যাবে আর হাঁটু গেড়ে বসে ভালোবাসি বলবে।রবি এগুতে লাগল এক বুক সাহস আর তার জন্য ভালোবাসা নিয়ে।হঠাৎ রবি অহনাকে দেখতে পেলো সানির সাথে হেসে কথা বলছে।রবির একটু খারাপ লাগলো।রবির উপস্থিত দেখে অহনা সানির সাথে হাসাহাসি বন্ধ করে দিল।রবি গিয়ে অহনার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।সানি এটা দেখে পাশে থাকা সবাইকে ডেকে বলল “হেই গায়েস রবি অহনাকে প্রপোজ করছে দেখো তোমরা” সানির কথা শুনে সবাই রবির দিকে তাকিয়ে রইল।
হাতে থাকা দুইটি গোলাপ এগিয়ে দিয়ে বলল….
–এই গোলাপ দু’টো আমাকে বলছে”হে ব্যথিত মনের প্রেমিক তুমি যাকে ভালোবাস তাঁকে কখনো ভালোবাসি বলো না।
তুমি তাকে বুঝতে দাও তুমি যে তাকে ভালোবাস।যদি তোমার ভালোবাসার কথা সে বুঝে নেওয়ার আগে বলে দাও তোমার ভালোবাসা ঠুকনো হয়ে যাবে।কেবল তুমি তাকে বুঝতে দাও নদীর গভীরতা বেশি হলে যেমন নদীর বয়ে চলার শব্দ কম হয় ঠিক তেমনি নীরব ভালোবাসার গভীরতাও সাগরের থেকে বিশাল হয়।
তুমি তাকে বুঝতে দাও তোমার গভীর ভালোবাসার কথা।কখনো হাসহাসি কখনো গানের সুরে। কেবল তুমি বুঝিয়ে যাও তোমার ভালোবাসা।
শুনে রেখো…..
যতক্ষণ না প্রিয় মানুষটা তোমার ভালোবাসা বুঝতে না পারে ততক্ষণ বুঝিয়ে যাও তোমার ভালোবাসার কথা।তবে কখনো মুখ ফুটে বলে দিও না।
প্রয়োজন কিংবা অপ্রয়োজনীয় ভাবে একটু অধিকার দেখাও। মান – অভিমান করো তাও বুঝাতে হবে তোমার ভালোবাসার কথা।
গোলাপ আমাকে আরো বলছে…
শুনে রেখ হে প্রেমিক…তুমি যাকে ভালোবাসবে সে হবে ধন্য।কারণ তোমার ভালোবাসার গভীরতা আমিও কখনো ধরতে পারে নি।
সব শেষে বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি অহনা।আমি কখনো তোমাকে ভালোবাসি বলতে চাই নি ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তুমি নিজের থেকে বুঝতে না পার।আজ তুমি গোলাপের বলার মতো বুঝতে পারলে বলেই আমার মুখ ফুটে বলতে আর নেই কোনো সমস্যা। অনেক ভালোবাসি তোমায় অহনা।এই গোলাপ দুইটি নাও আমার ভালোবাসা স্বীকার করো অহনা।আবারো বলছি তোমায় ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।
রবির কথা শেষ হতে না হতে চারপাশে যেত হাত তালিতে ভরে ওঠল সানিও হাসছে তালিও মারছে।অহনা রবির কাছ থেকে ফুল নিচ্ছে না তাই রবি ফুল গুলো আরেটু এগিয়ে দিয়ে অহনাকে বলল”অহনা ফুল গুলো নাও আমাকে ভালোবাসি বলো”।
হঠাৎ সবাই হাত তালি বন্ধ করে দিল।এতক্ষণ রবি অহনার মুখের দিকে তাকায় নি।সবার হাত তালি বন্ধ হয়ে গেলে রবি হালকা ভয় পেয়ে অহনার দিকে তাকায়।অহনা আস্তে ধীরে ফুল গুলো রবির হাত থেকে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে….
অহনাঃআজ প্রথম কেউ আমাকে সাহিত্য বলে প্রপোজ করল।তোমরা সবাই জান আমাকে ভার্সিটির অনেক ছেলে প্রপোজ করেছে কিন্তু আমি রাজি হয় নি।অনেক বড় লোকের ছেলেও আমাকে প্রপোজ করেছে তাও রাজি হয় নি।
এই ভার্সিটিতে এসে অনেক দিন ধরে একটা কথা আমার কানে বাজছিল সেটা হচ্ছে রবি কখনো ভার্সিটির কাউকে প্রপোজ করে নি।এমন কি তাঁকে কেউ প্রপোজ করলেও সে নাকি না করে দিত।কারণ সে রিহি নামের কাউকে ভালোবাসত।
কিন্তু আজ তোমরা সবাই দেখ রবি আজ আমাকে প্রপোজ করছে রিহির কথা ভুলে গিয়ে।
-রবি বুঝতে পারল অহনা এত দিন তার সাথে নাটক করেছে।
অহনা আবার বলা শুরু করল….
আমি সে দিন নিজে থেকে ঠিক করেছি আমি রবির সাথে থেকে রবি যাতে আমাকে প্রপোজ করে সে ব্যবস্থা আমি করব।আজ ঠিকই সবার সামনে রবি আমাকে প্রপোজ করল।কিন্তু আফসোস সে প্রপোজ করার আগেই আমি সানির প্রপোজালে রাজি হয়ে যায়।
রবি এবার দাঁড়িয়ে গেল আর অহনাকে বলল..
–অহনা কি বলছ এসব আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তুমিও আমাকে ভালোবাস।তুমি তো বললে আজকে তোমাকে প্রপোজ করতে।তাই তো করলাম।কিন্তু তুমি এখন এসব কি বলছ?
অহনাঃঐ যে বললাম সবার মুখে শুনেছি তুমি কোনো মেয়েকে পাত্তা দাও না।তাই সবার সামনে তোমার মাথা নিচু করতে এই ছোট্ট খেলাটা খেলতে হলো আমায়।
আর তুমি কি করে ভাবলে তোমার মতো একটা ছেলের সাথে আমি রিলেশন করব?গায়ের কাপড় কিংবা পায়ের জোতা পড়ে আছ দেখো খেয়াল করে।তুমি জান আমি কে?
–জানি না, জানতেও চাইনা শুধু এত টুকু জানি বড়লোক বাবার অহংকারী মেয়ে।
কথাটা শেষ হতে না হতে অহনা রবির গালে ঠাসস করে চড় বসিয়ে দিল।হঠাৎ কোথথেকে রাশেদ বেরিয়ে আসতে রবি তাঁকে ধরে নিলো।কারণ কারো সাথে রাশেদ একবার ঝামেলা করলে সে যত বড় লোক কিংবা নেতা, মন্ত্রী হউক মাটিতে নামিয়ে ছাড়ে।
চড় মেরে অহনা বলা শুরু করল….
অহনাঃআচ্ছা তোর বিবেক বলতে কিছু নেই?কি আছে তোর যে আমাকে ভালোবাসতে চাস?না আছে টাকার জোর না আছে পায়ের জোর।আসছে আমাকে ভালোবাসতে।
এই বলে রবির দেওয়া গোলাপ দুইটি রবির গায়ে ছুড়ে মারাল।হঠাৎ ইশিতা কোথথেকে এসে অহনাকে থামিয়ে দিল। আর বলল…
ইশিতাঃআরে এসব তুই কি করছিস তুইও তো রবিকে ভালোবাসিস তাহলে এখন এসব কিসের পাগলামি?
অহনাঃভালোবাসা তাও এই ছোট লোক টাকে?
ইশিতাঃতুই বলেছিস যে তুই ওকে ভালোবাসিস।সে আগে তোকে ভালোবাসি বলতে আসে নি।
অহনাঃহ্যাঁ বলেছি যাতে আমি চ্যালেঞ্জ জিততে পারি।
ইশিতাঃকিসের চ্যালেঞ্জ
অহনাঃঐ ছোট লোকটা নাকি কোনো মেয়েকে ভালোবাসতে সুযোগ দেয় না তাই আমি ফ্রেন্ড দের সাথে চ্যালেঞ্জ করছি ওকে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাওয়াব।
ইশিতাঃবড় ভুল করেছিস।রবির মতো তুই দ্বিতীয় কাউকে পাবি না।আর যদি আমি জানতাম তুই রবির সাথে এমনটা করবি তাহলে কখনো আমি রবিকে এসবে জড়াতে দিতাম না।আজ আমার ঘৃণা হচ্ছে তোর প্রতি এত ছোট মন কেন তোর…
অহনাঃতুই কিন্তু বেশি বলছিস।
রবি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে অহনাকে বলল…
–অহনা আমি জানি তুমি অন্য কারো প্রলোভনে এসব করেছ।আমি জানি তুমি ভুল করেছ।আমি তোমাকে ভালোবাসি অহনা প্লিজ থেকে যাও না আমার হয়ে।
অহনাঃতোর মতো পাগল আমি নয় বুঝলি।যা দূর হয়ে যা এখান থেকে আর কখনো যদি ভালোআাসিস বলে সামনে আসিস তাহলে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেব।
–ঠিক আছে আসব না।কিন্তু আমার কিছু জানার আছে।
অহনাঃকি বল তাড়াতাড়ি।
–এত দিন যা ছিল আমাদের মাঝে সব কি মিথ্যা? আমার বাসায় যাওয়া কফি খাওয়া।আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড নিয়ে সব মেয়েদের আনফ্রেন্ড করা সব কি মিথ্যা ছিল?এমন কি আমার উপর রাগ করে ভার্সিটিতে না আসাও কি মিথ্যা ছিল?
অহনাঃসত্যি কেন হবে এসব।সব তো তোকে আমার জালে ফাঁসিনোর চাল ছিল।
–খুব ভালো খেলতে পার তুমি।আরেকটা কথা টাকার জোর তো অনেক দেখিয়েছ শুনি তোমার বাবা কি করে?
অহনাঃআমার বাবা এমপি।তুমি কি করে ভাবছ এমপির মেয়ে হয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসতে যাব?
—আমি জানতাম না তুমি কার মেয়ে।যাই হোক ভালো থেকো।আর ভুলেও তোমাকে ভালোবাসি বলার জন্য আমি কখনো আসব না।শুধু মনে রেখ আজকে যেভাবে আমার সাথে খেললে সেভাবে কেউ যাতে তোমার সাথে না খেলে।
পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে রবি হাটতে লাগল বাসার দিকে। হঠাৎ কেউ এসে তার কাঁধে হাত রাখলো।সাথে সাথে সে বুঝতে পারল এটা আর কেউ নয় রাশেদ।
রবি রাশেদকে বললো, গিয়ে ইশিতাকে প্রপোজ করতে।রাশেদের প্রপোজালে ইশিতা রাজি হয়ে যাবে…..
#To_be_continue……
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।