#তুমি_থেকে_যাও_আমার_হয়ে।
#লেখকঃরবিউল_হাসান।
#পর্বঃ০৩
অহনা দৌড়ে গিয়ে দেখে রবি শুয়ে আছে আর তার মাথায় একটা মেয়ে জলপট্টি দিচ্ছে। অহনা এটা দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে গেল।
অহনা প্রথমে ভুল কিছু মনে করলেও রবির মাথায় জলপট্টি দেওয়া মেয়েটা বলে ওঠল তোমরা বস তোমাদের জন্য নাস্তা দিতে বলছি।
অহনাঃআপনি কে?
–তোমরা যার খুঁজে এসেছ আমি তার বড় বোন প্রিয়া।
অহনাঃওহ আপনি তাহলে রবির আপু?
–হুম।বস তোমরা নাস্তা দিতে বলছি।
রবির রুমে থাকা সাজানো চেয়ার গুলোতে তারা দুই জন বসে পড়ল।আর রবির বোন প্রিয়া রবির মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। রবির অনেক জ্বর এসেছে।
আপু রিফাকে ডেকে নাস্তা দিতে বলল।রিফা হল রবিদের বাসার কাজের মেয়ে।রিফা কিছু সময়ের মধ্যে নাস্তা দিল।সবাই বসে আছে নিরবতা ভেঙে অহনা বলল…
অহনাঃরবির কি অবস্থা এখন জ্বর আসছে মনে হচ্ছে…
আপুঃহ্যাঁ জ্বর আসছে তাই তো ভার্সিটিতে যায় নি।
অহনাঃকখন থেকে জ্বর আসলো আমাকে তো একটুও বলল না।
আপুঃতুমি অহনা তাই না?
অহনাঃহ্যাঁ কিন্তু আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন?
আপুঃরবি তোমার কথা আমাকে অনেক বার বলছিল তাই জানি।
অহনাঃ কি… কি বলছিল আমার কথা?(একটু অবাক হয়ে)
আপুঃনা বলছিল তার একটা মেয়ে বেস্ট ফ্রেন্ড আছে।এর থেকে বেশি কিছু না।
অহনাঃওহ। তা রবি এখন ঘুমাচ্ছে নাকি?
আপুঃহ্যা সারা রাত ঘুমাতে পারে নি তাই একটু আগে ঘুমাল।কিছু খেতেও পারছে না।
অহনাঃতাহলে তো আপনিও ঘুমাতে পারেন নি।
আপুঃহ্যাঁ আমারো ঘুম হয় নি।তা তোমার পাশে এটা নিশ্চয় তোমার মামাতো বোন ইশিতা?
অহনাঃরবি বলেছে?
আপুঃহুম।
তখনই কেউ কলিং বেল চাপ দিল।রিফা গিয়ে দরজা খুলে দিল।রিফা রাশেদকে আগে থেকে চেনে তাই কিছু না বলে রিফা আবারো টিভির সামনে গিয়ে বসল।বলা যায় মেয়েটা টিভির পাগল।রাশেদ রিফাকে রবির কথা জিজ্ঞেস করলে রবির রোমে যেতে বলে।
রাশেদ সোজা রবির রুমে ঢুকে যায়। রবির রুমে শুধু আপু থাকার কথা কিন্তু এখানে আরো দুই জন আছে।রাশেদ মনে মনে খুশি হল কারণ ইশিতা আছে বলে।রাশেদকে দেখে আপু বসতে বলল….
অহনাঃতুমি এখানে?
রাশেদঃআমার বাড়িতে আমি আসব না তো কে আসবে, প্রশ্ন তো আমার করার কথা তুমি এখানে কেন?
অহনাঃরবিকে দেখতে এলাম।তোমার বাড়ি মানে কি?
রাশেদঃএটা আমার দ্বিতীয় বাড়ি।ছোট থেকে রবি আর আমি এক সাথে।অবশ্য আগে রবি আর আমি অন্য কোথাও ছিলাম।পরে এখানে চলে আসি।
অহনাঃওহ তাই বল।
আপুঃআচ্ছা তোমরা কথা বল আমি একটু রান্না বসায় তোমাদের জন্য।
অহনাঃনা না রান্না করতে হবে না।আমরা একটু পর চলে যাব শুধু রবিকে দেখতে এলাম।
রাশেদঃতা ইশিতা তোমার কি অবস্থা বল।কোনো কথাই তো বলছ না তুমি?
–তুমি যে আমাকে পটাতে চাও তা আমি খুব ভালো করে জানি(মনে মনে)
–না এমনি তোমরা তো কথা বলছ তাই আমি বলছি না।
রাশেদঃআচ্ছা চলো ছাঁদে যায় কি বল আপু তুমি?
আপুঃওকে তোমরা ছাঁদ থেকে ঘুরে এসো…
অহনা রবির পাশ থেকে যেতে না চাইলেও যেতে হল।অহনা, ইশিতা আর রাশেদ ছাঁদে গেল।ছাঁদে গিয়ে অহনা যেন কোনো অরন্যে ঢুকে পড়ল।চারপাশের ফুলের গাছ যেনে অহনাকে মুগ্ধ করল।অহনা ভাবলো এসে ভালোই হয়েছে মনটা ভরপুর হয়ে গেল।
বেশ কিছু সময় তিনজন আড্ডা দিল।রিফা এসে সবাইকে ডাকলো বিকালও হয়ে গেল।আপু নিজের হাতে কপি বানালো সবার জন্য। সবাই গিয়ে কপি খেয়ে নিলো।আপুর বানানো কপিতে যেন যাদু আছে।কেউ একবার খেলে দ্বিতীয় বার খেতে চাইবেই। ঠিক অহনারও তার ব্যতিক্রম হলো না।অহনা আপুকে বলেই দিল…
অহনাঃআপু আপনার হাতের কপিতে যেন যাদু আছে।
–তাই নাকি?
অহনাঃসত্যি বলছি আপু এখন মন চাচ্ছে আপনার বানানো কপি যেন সারাক্ষণ খাই।
—তা চলে এসো সময় পেলে কপির আড্ডা না হয় হয়ে যাবে।
অহনাঃঅবশ্যই আসব আপু।
আপনি না বললেও আসব রবি আছে না ওকে পটাতে হবে তো।আর তার জন্য আপনার কপি খেয়ে ওকে পটাবো হু…(মনে মনে)
ইশিতাঃআচ্ছা দেরি হয়ে যাচ্ছে মনে হয় আমাদের যেতে হবে বাবা আবার চিন্তা করবে।
অহনাঃ না আরেকটু থাকি না।
এই দিকে রবির ঘুম ভেঙে গেল।এখন জ্বর কিছু টা কমলো।রবি কারো আওয়াজ শুনে সেটা কে বুঝার চেষ্টা করলো।শুয়ে আর না থেকে বসে পড়ল।আপু কে ঢাকতে সবাই একসাথে এসে হাজির হলো।রবি তো অহনা আর ইশিতাকে দেখে অবাক।কারণ তারাতো রবির বাসার ঠিকানা জানতো না তাহলে এলো কি করে।হয়তো রাশেদ নিয়ে আসছে…
রবি অহনা আর ইশিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল….
–আরে তোমরা এখানে?
অহনাঃতোমাকে দেখতে এলাম।
–এত কষ্ট করে আমাকে দেখতে আসার কি আছে।
অহনাঃকি বল তুমি অসুস্থ আর আমি দেখতে আসব না তা কি হতে পারে?
—কেন হতে পারে না।আচ্ছা এসব বাদ দাও কখন আসলে তোমরা?
ইশিতাঃআসলাম ঘন্টা দু’এক হবে।তুমি ঘুমে ছিলে।
—ওহ নাস্তা করছ?
অহনাঃহ্যাঁ করছি।তোমার শরীরে কেমন এখন?
—হুম ভালোই।
ইশিতাঃআচ্ছা আমরা আজ আসি।দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আপুঃআচ্ছা সাবধানে যেও আর হ্যাঁ রাশেদ তুই ওদের বাসায় দিয়ে আয়।
আপুর কথা শুনে রাশেদ খুশি হল।কারণ যদি ইশিতার সাথে একটু কথা বলা যায় তাহলে তো ভালোই।
রাশেদ ওদের দুই জনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।রিকশা নিলে হবে না তাই সিএনজি নিলো।তিনজন পাশাপাশি বসল।ইশিতার কাছে রাশেদ বসলো যদি একটু পটানো যায় বলে…..
রাশেদ ইশিতাকে পটানোর ট্রাই করে যাচ্ছে পুরো রাস্তা এটা ওটা বলেই যাচ্ছে যদিও ইশিতার বিরক্ত লাগছে এসব।
ইশিতা আর অহনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে রাশেদ নিজের বাসায় চলে গেল।এইদিকে রবি একটু একটু সুস্থ হচ্ছে। রাতে হালকা খাবার খেয়ে নিয়ে ঔষধ খেয়ে রবি ঘুমিয়ে গেল।সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজেকে একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল।ভার্সিটিতে যেতে মন চাইলো না তাই গেল না।
অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসায় কে ফোন দিল তা জানতে ঐ নাম্বারে আবার ফোন দিল।প্রথমে ফোন বাজতেই কেউ ফোন ধরল।পরিচিত কেউ হ্যালো বলতেই রবি বুঝতে পারল আর কেউ নয় অহনা।
অহনাঃ তোমার শরীর কেমন আছে এখন আজকে ভার্সিটিতে অসনি।
— হ্যাঁ এখন একটু ঠিক আছি তবে কালকে যাব ভার্সিটিতে।আচ্ছা তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেলে রাশেদ থেকে নিয়েছো তাইনা?
অহনাঃ হ্যাঁ কালকে তুমি না আসায় রাশেদের থেকে নাম্বারটা নিলাম আর তোমাকে ফোন দিছিলাম। কিন্তু সে কালকে কতবার ফোন দিলাম তুমি তো ফোনই ধরোনি।
— আসলে ফোনটা সাইলেন্ট ছিল, তাই আমি বুঝতে পারি নি কেউ ফোন দিচ্ছে। আর শরীরটা খুবই খারাপ ছিল তাই বুঝতে পারি নি চারপাশে কি হচ্ছে। আচ্ছা রাখছি তুমি এখন তো ক্লাসে যাবে তাই না?
অহনাঃ যদি তুমি চাও তো ক্লাস না করে আজকে সারাক্ষণ তোমার সাথে ফোনে কথা বলবো কি বলো?
— আরে নাহ যাও তাড়াতাড়ি ক্লাস কর তারপর কথা বলবো। ক্লাস শেষ হলে ফোন দিও তখন নাহয় দু’একটা কথা বলব।
অহনাঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি এখন রাখছি বাই।
তারপর অহনার সাথে কথা বলে ফোনটা কেটে দিলে রবি বুঝতে পারল অহনা তাকে লাভ করে কিন্তু তার তো এসবে কোনো বিশ্বাস নেই।তাই সব বুঝেও রবি চুপ করে রইল।
ঠিক মতো খাওয়া বর রাতের ঘুম দিয়ে পরদিন সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হল রবি।
বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশা নিয়ে প্রায় দশ মিনিট পর রবি ভার্সিটিতে পৌঁছে গেল সবাইকে সেখানে বসে থাকতে দেখল।
রাশেদ অহনা আর তার মামাতো বোন ইশিতা সবাই একসাথে বসে আছে। রবি গিয়ে তাদের পাশে বসলো অহনা রবিকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল আর ইশিতার পাশ থেকে উঠে রবির পাশে বসলো।
ইশিতা এটা দেখে খুবই অবাক হলো। কারন তার পাশ থেকে তার মামাতো বোন কোথাও যাইতো না।কিন্তু আজ রবির পাশে গিয়ে বসল।রবি খুব ভালো বুঝতে পারল কেন এমনটা করল।
অহনা রবির পাশে বসতে বসতে তার কপালে হাত দিয়ে বলল “তোমার জ্বর এখনো আছে নাকি ”
–না ঠিক হয়ে গেছি আমি।
অহানঃগুড। একটু পর তো ক্লাস শুরু হবে চলো ক্লাসে যায় আর হ্যাঁ তোমার পাশে কাউকে বসতে দিবে না আমি বসব যদি সেটা রাশেদও হয় তাও না।
–কেন?
অহনাঃকেন আবার আমি বসবো তাই।
— ওকে চলো যায় তাহলে।
তারপর রবি আর অহনা ক্লাসে চলে গেল।রাশেদ আর ইশিতা যদিও তারা একে অপরের পাশে বসে নাই।কিন্তু যাওয়া সময় এক সাথে গেল।এইদিকে রবি আর অহনা পাশাপাশি বসল।তবে আজ পেছনে নয় মাঝামাঝি একটা বেঞ্চে। স্যার এসে ক্লাস শুরু করে দিল।কিন্তু অহনার সে দিকে মনোযোগ নেই সে চেয়ে আছে রবির দিকে।কখন স্যার আসলো ক্লাস শুরু হল তার খেয়ালই নেই।এক নাগাড়ে চেয়ে আছে রবির দিকে।রবির এসব অসহ্য লাগলেও কিছু বলছে না অহনাকে।
এভাবে বিরক্তিকর সময়ের মধ্য দিয়েই পুরো ভার্সিটি সব ক্লাস শেষ করল রবি। অহনা বুঝতে পারলো রবি এভাবে থাকতে বিরক্ত বোধ করতেছে। তাও রবিকে রাগানোর জন্য অহনা বসে ছিল।
সব ক্লাস শেষ হতে সবাই বাইরে চলে আসছে তারা চারজন একটা গাছের নিচে বসে পড়লো।অবশ্য রবি বসতে চায় নি কারণ অহান সে পুরোনো গল্প শুনতে চাইবে।
অহনার জোরাজোরিতে না বসে থাকতে পারল না।এইদিকে ভার্সিটি ছুটির পর রাশেদ তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যায় কারণ তার বাসায় কাজ থাকে।তাই আজও রাশেদ চলে গেল।অহনা, ইশিতা আর রবি বসে আছে গাছের নিচে।সবাই চুপচাপ দেখে অহনা বলে ওঠল…..
আচ্ছা তারপর কি হয়েছিল বল নাই যে, রাশেদ কি করছিল রিহির সাথে? এবার রবি বলতে শুরু করল…
–সবকিছু যেন আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে ওঠল।রাশেদ একদিন গিয়ে রিহিকে প্রপোজ করে বসল।কিন্তু রিহি রাজি হয় নি।কারন সে বুঝতে পেরেছিল রাশেদ তার সাথে টাইম পাস করতে চাই।
কিন্তু রাশেদ এসবে উস্তাদ। রিহি যতই বুঝতে পারুক না কেন, তাকে পটাবেই।যেমন ভাবলো তেমন করল।সারাক্ষণ রিহির পেছনে লেগে থাকলো।
রিহির কোনো এক বান্ধবী নাকি বকুল ফুল খুব পছন্দের কিন্তু পুরো শহরে কোথাও বকুল ফুল নেই।রাশেকে বলল বকুল ফুল এনে দিতে।পাশের শহরে এক বন্ধুকে ফোন করে সে বকুল ফুল আনালো।
রিহি রাশেদকে বলল তুমি এভাবে যদি আমার পেছনে পড়ে থেকো তাহলে তোমার ক্ষতি তার থেকে ভালো তুমি আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও। কিন্তু রাশেদের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে তাই সেও বলে দিল “যত দিন তুমি আমাকে মন থেকে ভালোবাসবে না তত দিন আমি তোমার পেছনে লেগেই থাকবো”
কিন্তু রিহি আবারো নিষেধ করল রাশেদকে তার পেছনে লেগে না থাকতে।কিন্তু রাশেদ হার মানবে-ই না।রিহির মনে রাশেদের জন্য ভালোবাসা জমাবেই।
এতটুকু বলে রবি থেমে গেল।এরপর একটা দীর্ঘ শ্বাস নিল।যেখানে মিশে ছিল রিহির প্রতি ভালোবাসা আবার তার ছলনার জন্য ঘৃণা।
#To_be_continue…….
#RK9023DXWC
#অনুমতি_ছাড়া_কপি_করা_নিষেধ।
#গল্পটা_কেমন_হল_জানাবেন।
#ভালো_লাগলে_শেয়ার_করবেন।
#সবাই_নিয়মিত_নামাজ_আদায়_করবেন।