তুমি_আমারই_রবে
পর্ব_২৪
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

“যাবো না আমি, আপনার মতো খারাপ লোকের সাথে কোথাও। আর বিয়ে করা তো দূরে থাক। লামিয়া আর নীলার কাছেই আমি থেকে যাবো।”

উনি আমার পিছু পিছু ছুটছেন আর চেঁচিয়ে বলছেন,,

“তুমি যাবে না তোমার ঘাঁড় যাবে৷ জোর করে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। ধরে, বেঁধে তুলে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবে এই হিমুর কতো ক্ষমতা।”

আমি সিঁড়ি বেয়ে নামছি আর পিছু ঘুড়ে উনাকে বলছি,,

“আপনি আপনার ক্ষমতা নিয়ে পড়ে থাকুন ওকে? আমি তো কিছুতেই চট্টগ্রাম ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না।”

এর মাঝেই হিমু দৌঁড়ে এসে পেছন থেকে আমাকে হেচকা টান দিয়ে দেয়ালের সাথে চেঁপে ধরলেন। ক্ষনিকের মধ্যে এমন অভাবনীয় কিছু হওয়ায় আমি খানিক হকচকিয়ে উঠলাম। চোখ দুটো বড় বড় করে আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনার এই দৃষ্টিটা আমাকে খুব লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে। গাঁ টা একটু একটু করে শিউরে উঠছে। চোখ দুটো সংকীর্ণ হয়ে আসছে আমার। মাথা নিচু করে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। উনার দিকে তাকানোর সাহসটা পর্যন্ত কুলাতে পারছি না। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার উনি আমার এতোটা কাছাকাছি এলেন ঠিক একইভাবে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তবে ঐ সময় হিমুর নিজস্ব চেহারা ছিলো, উনি ড্রাংক অবস্থায় ছিলেন। আর এইবার উনার অন্য একটা চেহারা, তবে অনুভূতি গুলো ঠিক আগের হিমুর মতোই আছে। উনাকে আর আগের চেহারায় আমি দেখতে পাবো না এটা ভেবেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। চোখে খারাপ লাগা নিয়ে আমি উনার দিকে তাকালাম। উনি এতক্ষনে একটু একটু করে এগিয়ে এসে আমার ঘাঁড়ের কাছে থাকা তিলটায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন। উনার প্রতিটা গরম নিশ্বাস আমার চোখে, মুখে, ঘাঁড়ে এসে উপচে পড়ছে। তিলটায় চুমো খেতেই আমি সাংঘাতিক ভাবে কেঁপে উঠে উনাকে সরানোর চেষ্টা করছি আর বলছি,,

“হিমু প্লিজ ছাড়ুন। কি করছেন কি আপনি?”

উনি পর পর তিলটায় চুমো খাচ্ছেন আর বলছেন,,

“ছাড়ব না। আগে প্রমিস করতে হবে তুমি কুমিল্লায় যাবে।”

আমি হাত দিয়ে ঠেলে ও উনাকে সরাতে পারছি না। উনি আরো ক্ষীপ্ত হয়ে উঠছেন। আরো বেশি করে আমাকে চেঁপে ধরছেন। খুব বিরক্তি নিয়ে আমি উনাকে হালকা ধাক্কিয়ে বললাম,,

“হিমু প্লিজ বুঝার চেষ্টা করুন। কেউ হুট করে এখানে চলে এলে, আমাদের এই অবস্থায় দেখে নিলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

“তাহলে রাজি হয়ে যাও। আমার সাথে কুমিল্লায় যাবে।”

“ঠিক আছে যাবো। ছাড়ুন। তাড়াতাড়ি ছাড়ুন।”

উনি শেষ বারের মতো তিলটায় লম্বা একটা চুমো খেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি নাক, মুখ কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। বাঁকা হেসে উনি আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে উনার ঠোঁট জোড়া মুছে বললেন,,

“তিলটা কিন্তু খুব টেস্ট!”

“ছিঃ ছিঃ হিমু। কথাটা বলতে মুখে বাঁধল না আপনার?”

“নো। বাঁধবে কেনো? আমি আমার বৌ কে বলেছি। অন্য কাউকে তো বলি নি।”

আমি রাগী দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। উনি বেশ ভাব নিয়ে পান্জ্ঞাবির কলারটা উল্টিয়ে বললেন,,,

“দেখলে তো কিভাবে রাজি করাতে হয়?”

আমি ব্যাথায় নাক, মুখ কুঁচকে ঘাঁড়ের দিকে তাকালাম। তিলসহ আশপাশটা একদম লাল হয়ে আছে। জায়গাটা খুব জ্বলছে ও। তিলটায় হাত বুলিয়ে আমি ক্ষীপ্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছি বুঝলেন? মন থেকে রাজি হই নি। আপনি আস্ত একটা রাক্ষস। তিলটা পুরো খেয়ে নিলো আমার।”

উনি হাত দুটো ঝেড়ে দেয়ালে ডান হাতটা ঠেকিয়ে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বললেন,,

“তিল সহ পুরো তুমিই তো আমার। তাই আমার রাক্ষস হতে কোনো বাঁধা নেই। খুব শীঘ্রই তুমি ও মন থেকে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে রূপা। আমার ভালোবাসায় বন্দিনী হয়ে যাবে। যুগ যুগ ধরে #তুমি_আমারই_রবে।”

কিছু বললাম না৷ শুধু স্থির দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার সামনের চুলগুলোতে ফুঁ দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললেন,,

“আমার রূপাকে আজ এতোটাই দৃষ্টিনন্দন লাগছে যে, কিছুতেই তার থেকে চোখ সরাতে পারছি না। তার থেকে দূরে ও যেতে পারছি না। তার পাশ থেকে সরে গেলেই মনে হবে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হলাম। প্রিয়জনের সাহচর্যে থাকাটা এক স্বর্গীয় অনুভূতি যা জাগতিক সব কিছু থেকে ভিন্ন।”

“দেরিতে হলে ও বুঝতে পেরেছেন, আমি এতেই খুশি।”

উনি মলিন হেসে আমার কপালে চুমো খেয়ে অতি নরম স্বরে বললেন,,,

“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও রূপা। আজ রাতেই আমরা কুমিল্লায় রওনা হবো।”

আমি মন খারাপ করে বললাম,,

“কাল গেলে হয় না?”

“কেনো?”

“লামিয়া আর নীলাকে ছেড়ে যেতে আমার ইচ্ছে করছে না।”

“মন খারাপ করার কিছু নেই রূপা। বিয়ের পর, মাসের পনেরো দিন আমরা কুমিল্লায় থাকব। আর বাকি পনেরো দিন চট্টগ্রামে থাকব। এখন তো আমার দু দুটো মা, বাবা। দুদিকেই আমার ব্যালেন্স রাখতে হবে। যখন আমরা চট্টগ্রাম বেড়াতে আসব তখন লামিয়া আর নীলার সাথে তোমার দেখা হবে, কথা হবে, থাকা ও হবে। সো মন খারাপ করার কিছু নেই।”

এর মাঝই লোপা সিঁড়ির দিকে এসে গলা খাকারি দিয়ে বলল,,

“উহুম উহুম। ড্রইং রুমে সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রোমান্স শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলে এসো।”

হিমু গম্ভীর কন্ঠে লোপাকে বললেন,,,

“তোমার বোন তো আমাকে রোমান্স করতে দিচ্ছেই না শালিকা। শুধু দূরে দূরে সরিয়ে রাখছে।”

আমি দাঁত কিড়মিড়িয়ে আস্তে করে উনার কানের কাছে এসে বললাম,,

“লাজ লজ্জা তো সব খুঁইয়ে বসেছেন। কি দরকার ছিলো লোপার সাথে এতো কিছু বলার?”

“শালীকে সব বলা যায় বৌ। শালী মানেই তো আধা ঘরওয়ালী।”

কিছু বললাম না আমি। উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হনহনিয়ে লোপার হাত ধরে ড্রইং রুমের দিকে রওনা হলাম। উনি আমার পিছু পিছু আসছেন আর হাসতে হাসতে বলছেন,,

“আরে দাঁড়াও। আমি ও আসছি।”

ড্রইং রুমে তিন পরিবারের সবাই জট পাকিয়ে বসে আছেন। আমাদের দেখেই সবাই কথা বলা থামিয়ে একদম চুপ হয়ে গেলেন। ভাব দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো কথা বার্তা বা কোনো আলোচনাই হয় নি। চোখে, মুখে একরাশ কৌতুহল নিয়ে আমি সবার দিকে তাকিয়ে আছি। লামিয়া আর নীলা হাসি হাসি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে আমি হাসিমাখা মুখে ওদের দিকে তাকাতে পারছি না। ওদের দেখলেই বুকে এক প্রকার কষ্টের অনুভূতি হচ্ছে। যা চোখ দিয়ে জলরাশি হয়ে বের হচ্ছে।

আমাকে দেখতেই আম্মু ইশারা করে বললেন, আম্মুর পাশে এসে বসতে। আমি ধীর পায়ে হেঁটে মাথা নিচু করে আম্মুর পাশে এসে বসলাম। হিমু ও মাথা নিচু করে আমার শ্বাশুড়ী মায়ের পাশে এসে বসলেন। দু, এক মিনিট পর আমার শ্বশুড় আব্বু গলা খাকারি দিয়ে হিমু আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“হিমু, রূপা। আমরা চাইছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ধুমধাম করে তোমাদের বিয়েটা আবার নতুন করে দিতে। এতোক্ষন এই নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো আমাদের মধ্যে। দীর্ঘ আড়াই বছরের মতো গ্যাপ ছিলো তোমাদের সম্পর্কটার মধ্যে। তাই আমাদের মনে হচ্ছে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের বিয়েটা আবার নতুন করে হয়ে গেলে খুব ভালো হয়। তোমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাও। আমরা অপেক্ষায় আছি।”

আম্মু আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,,

“হিমুর পাশে গিয়ে বস। দুজন মিলে সিদ্ধান্ত নে। এরপর আমাদের জানা।”

আমি মাথা নাড়িয়ে বসা থেকে উঠে হিমুর পাশে এসে বসলাম। আমার শ্বাশুড়ী মা মুচকি হেসে হিমুর পাশ থেকে সরে এসে আমার আম্মুর পাশে এসে বসলেন। হিমুর পাশে বসতেই হিমু আমার কানে ফিসফিসিয়ে কাতর স্বরে বললেন,,,

“রাজি হয়ে যাও না প্লিজ।”

“কক্ষনো না।”

“প্লিজ রূপা। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

“বললাম তো না।”

“পায়ে ধরি প্লিজ রাজি হয়ে যাও।”

“এ্যাঁ। আপনি আমার পায়ে ধরবেন?”

উনি ভোলাভালা মুখ করে বললেন,,

“হুমম। হিমু রূপার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য সব করতে পারে। এমনকি রূপার পায়ে ও ধরতে পারে। যে করেই হোক বৌ কে তো মানাতেই হবে। দুইটা না তিনটা না, হিমুর একটা মাএ রূপা।”

আমি মুখ চেঁপে হেসে বললাম,,

“পায়ে ধরলে ও রূপা রাজি হবে না।”

“তাহলে কি করলে রাজি হবে রূপা? প্লিজ বলো?”

“দু শতো বার কান ধরে উঠ বস করতে হবে। তবেই রূপা রাজি হবে।”

“ওকে। আমি এক্ষনি সবার সামনে দু শত বার কান ধরে উঠ বস করছি।”

কথাটা বলেই উনি সোজা দাঁড়িয়ে কানে ধরতেই আমি এক টানে উনাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উনার কানের কাছে এসে বললাম,,

“উফফফ। আপনি না একটা মাথা মোটা। আমি কি বলেছি, সবার সামনে আপনাকে কানে ধরে উঠ বস করতে?”

“সবার সামনে বলো নি?”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,

“না। শুধু আমার সামনেই ধরতে বলেছি। ইডিয়ট একটা।”

“ইসস আগে বলবে তো। যাই হোক, তুমি যা বলবে তাই হবে৷ আমি তোমার সামনেই কানে ধরে উঠ বস করব। দরকার হলে পায়ে ধরব। প্লিজ এইবার রাজি হয়ে যাও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”

আমি মুখ চেঁপে হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। অমনি হিমু হাসতে হাসতে সবার সামনে আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন,,

“থ্যাংকস রূপা। ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস। তোমাকে বুঝাতে পারব না তুমি আমাকে ঠিক কতোটা স্বস্তি দিলে। যদি ও আমি জানতাম তুমি ঠিক রাজি হয়ে যাবে। তোমার হিমুকে বিয়ে করতে তুমি ঠিক রাজি হয়ে যাবে।”

“আপনার মাথা গেছে বুঝলেন? সবার সামনে আবার অসভ্যতা করছেন? ছাড়ুন বলছি। সবাই দেখছেন।”

উনি তাড়াহুড়ো করে আমাকে ছেড়ে দিলেন। লজ্জায় দুজনই মাথা নিচু করে বসে আছি। আশেপাশের তাকানোর সাহস কুলাতে পারছি না। হয়তো উপস্থিত সবাই ও লজ্জায় কাত হয়ে গেছেন। তক্ষনি লামিয়া আর নীলা শয়তানী হেসে পেছন থেকে হিমুর কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন,,

“কি জিজু? বৌ রাজি হয়ে গেছে? তাই বলে আবেগে আত্নহারা হয়ে গেছেন?”

হিমু ও বাঁকা হেসে মিনমিনিয়ে বললেন,,

“তোমরা খুব শীঘ্রই খালামনি হতে যাচ্ছ বুঝলে? আই থিংক তোমাদের ও উচিত আমার মতো আবেগে আত্নহারা হওয়া।”

“জিজু। আপনি তো দেখছি সুপার ফার্স্ট।”

হিমু গলা ঝেঁড়ে বললেন,,

“আড়াই বছরের সমস্ত ভালোবাসা জমে আছে তো, ফার্স্ট তো হতেই হবে।”

লামিয়া আর নীলা হু হা করে হেসে আমার কানে ফিসফিসিয়ে বলল,,,

“রূপা৷ তোর জন্য খুব টেনশান হচ্ছে রে। জিজু খুব ডিসপারেড হয়ে আছে। বিয়ের পর কি কি হয় আল্লাহ্ মালুম। সামলে থাকিস বোন।”

আমি খানিক লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেললাম। হিমু গলা খাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

“আমরা রাজি সবার প্রস্তাবে। আগামী সপ্তাহেই বিয়ের ডেইট ফিক্সড করা হোক।”

অমনি উপস্থিত সবাই খুশিতে ফেঁটে পড়লেন। আম্মু আমাকে ঝাপটে ধরে খুব আদর করছেন। আমার শ্বাশুড়ী আম্মু ও আমাকে বুকে নিয়ে খুব আদর করছেন। আন্টি হিমুর পাশে বসে হিমুর হাত ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বললেন,,

“এবার অন্তত রূপাকে খুশি রেখো “মেহুল।” স্যরি হিমু!”

কথাটা বলেই আন্টি খুব জোরে কেঁদে দিলেন। হিমু উদ্বিগ্ন হয়ে আন্টির হাত চেঁপে ধরে বললেন,,,

“আম্মু প্লিজ কাঁদবেন না। আপনি আমাকে মেহুল বলেই ডাকতে পারেন। সত্যি বলছি আমি মাইন্ড করব না। আমি তো আপনার ছেলের মতোই। আমার আরেকটা মা আপনি।”

আন্টি হিমুর মুখে হাত বুলিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,,

“কুমিল্লায় গিয়ে আমাকে ভুলে যাবি না তো মেহুল? মাঝে মাঝে আমাকে দেখতে আসবি তো? রূপাকে নিয়ে?”

“আমি তো ঠিক করে নিয়েছি আম্মু। মাসের পনেরো দিন আমি রূপাকে নিয়ে আপনার কাছে থাকব আর বাকি পনেরো দিন কুমিল্লায় আম্মুর কাছে থাকব। আপনি না বললে ও আমি ঠিক রূপাকে নিয়ে আপনার কাছে চলে আসতাম। আমি আপনাকে আমার আরেকটা মা হিসেবে মানি। আপনাকে ভুলার প্রশ্নই আসছে না আম্মু।”

আন্টি কাঁদতে কাঁদতে হিমুকে বুকে ঝাপটে ধরলেন৷ আঙ্কেল একটু দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছেন আর নিরিবিলি চোখের পানি ছাড়ছেন। আমি বসা থেকে উঠে চোখে জল নিয়ে আঙ্কেলের মুখোমুখি দাঁড়ালাম। আঙ্কেল আমাকে দেখে চোখের জল মুছে মলিন হেসে আমার দিকে তাকালেন। আমি আগ, পাছ না ভেবে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে মলিন কন্ঠে বললাম,,

“কাঁদবেন না আঙ্কেল। “হিমু” তো আপনারই “মেহুল”। আপনার যখন মন চাইবে আপনি তখনই আন্টিকে নিয়ে কুমিল্লায় চলে যাবেন। হিমুকে দেখতে, আমাকে দেখতে। তাছাড়া হিমু তো বললই মাসের পনেরো দিন আমরা আপনাদের কাছে থাকব। আর বাকি পনেরো দিন কুমিল্লায়। তাই বলছি, প্লিজ মন খারাপ করবেন না৷ কান্না কাটি ও করবেন না।”

আঙ্কেল কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,,

“তোরা খুব সুখে থাক রে মা। প্রাণ ভরে দো”আ করি। আমার ছেলে বেঁচে থাকলে হয়তো তোর মতো একটা লক্ষি বৌমা আমার বাড়িতে ও থাকতো।”

“তাতে কি হয়েছে আঙ্কেল? হিমু তো আপনার ছেলেই। আর আমি ও আপনার ছেলের বৌ!”

আঙ্কেল কান্না মুখে ও হালকা হাসলেন। মাথা তুলে আমি আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে বললাম,,

“কাল ই আপনারা আমাদের সাথে কুমিল্লায় যাবেন। একেবারে আপনাদের ছেলের বিয়ে দিয়ে এরপর চট্টগ্রামে ফিরবেন।”

আঙ্কেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,,

“হুম৷ তা তো অবশ্যই।”

রাতের ডিনার করে সবাই সবার রুমে চলে গেলো ঘুমুতে। লামিয়া আর নীলা সেই দু ঘন্টা যাবত আমাকে ঝাপটে ধরে কেবল কেঁদেই যাচ্ছে৷ ওদের সাথে আমি ও খুব কাঁদছি। বিয়ের দুদিন আগে লামিয়া আর নীলা কুমিল্লায় যাবে। এর আগে অফিস কামাই করে আমাদের সাথে কুমিল্লায় যাওয়া সম্ভব না। রাত একটায় কেঁদে কেটে আমরা ঘুমিয়েছি। লোপা ও আজ রাতটা আমাদের সাথেই ছিলো।

ঘুমের মাঝেই মনে হলো কেউ আমার চুল ধরে খুব আস্তে আস্তে টানছে। জানালার বরাবার শুয়েছি আমি। চুল গুলো খোঁপা থেকে খুলে ছন্নছাড়া হয়ে আছে। চুল আচড়ানোর ও সময় পাই নি। অবশ্য সময় না, ইচ্ছে হয়ে উঠে নি। খোলা চুল গুলোকেই কেউ অবিরত টেনে চলছেন। ভূত ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারবে না। কারো সাধ্য নেই ব্যালকনী ছাড়া সোজা তিন তালা ফ্ল্যাটের জানালা দিয়ে কারো চুল ধরে টানা। এতে লম্বা পায়ের মানুষ পৃথিবীতে আছে নাকি? ভাবতেই গাঁ টা শিউরে উঠছে। চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে আমি ভয়ে নাগাতাড় কেঁপেই চলছি। বিছানার চাঁদর খামঁছে ধরে আমি বিড়বিড় করে বলছি,,

“লামিয়া প্লিজ আমাকে বাঁচা। ভূত আমার চুল ধরে টানছে।”

পরক্ষনে বুঝতে পারলাম আমার গলা দিয়ে তো কোনো শব্দই বের হচ্ছে না। লামিয়া তো থাক, আমি নিজেই নিজের কথা শুনতে পারছি না। হঠাৎ আমার কানে হিমুর গলার আওয়াজ এলো। কান খাঁড়া করতেই শুনলাম উনি ছোট স্বরে বলছেন,,,

“রূপা। আমি হিমু৷ একবার জানালার দিকে তাকাও।”

তাড়াহুড়ো করে আমি শোয়া থেকে উঠে জানালার দিকে তাকাতেই দেখলাম হিমু খুব হাঁফাচ্ছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন,,

“জলদি নিচে নেমে এসো৷ কথা আছে।”

আমি মুখে হাত দিয়ে কাঁপা কাঁপা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“আআপনি এখানে উউঠলেন কিভাবে হিমু? আআআপনার পা এতো বড় হলো কিভাবে?”

উনি বেশ অধৈর্য হয়ে বললেন,,

“উফফফ রূপা। মই বেয়ে উঠেছি। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে এসো।”

#চলবে…🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here